ঔষধি গাছ কি? | কোন গাছের কি উপকারিতা
ঔষধি গাছ কি? | ঔষধি গাছের উপকারিতা | কোন গাছের কি উপকারিতা
ঔষধি গাছ এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান বা কোন কোন গাছে কি কি উপকার হয়? মানব রোগের জন্য সেগুলো সম্পর্কে আজ আমরা আপনাদেরকে জানাবো।
আমরা সকলেই জানি, অক্সিজেন ছাড়া আমরা বেঁচে থাকতে পারি না। আর এই অক্সিজেন আসে গাছ থেকে তাই গাছ আমাদের জীবনের এক অমূল্য রতন। শুধু গাছ আমাদের অক্সিজেনের যোগান দেয় এমনটা নয়, গাছ আমাদের খাদ্য যোগান দেয়। এছাড়াও আমাদের বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে। চলুন তাহলে জেনে নেই ঔষধি গাছের উপকারিতা সম্পর্কে।
ঔষধি গাছ কাকে বলে?
প্রকৃতির যেসকল গাছ বা উদ্ভিদ মানুষের রোগপ্রতিরোধ কাজে ব্যবহার করা হয় সেই সকল গাছকে ঔষধি গাছ বলে। সাধারণত অন্যান্য গাছের বৈশিষ্ট্যের সাথে এই ঔষধি গাছের বৈশিষ্ট্য গুলো ভিন্নতা রয়েছে। আর এই সকল গাছগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করে মানব দেহের ক্ষতিকর স্থানে বা রোগের ভিন্নতা অনুসারে সেবন করা হয়।
আদিমকাল থেকে আজ পর্যন্ত এই সকল গাছের চাহিদা ঠিক সমানভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষ এখন হোমিওপ্যাথি এবং অ্যালোপ্যাথি ঔষধের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের গাছের লতা পাতার রস বা বড়ি তৈরি করে নিজেদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াচ্ছে।
ঔষধি গাছ কোথায় পাওয়া যায়
ঔষধি গাছ পাওয়ার কোন নির্দিষ্ট স্থান নেই। তবে অঞ্চল এবং আবহাওয়া জনিত কারণে উদ্ভিদ এর ভিন্নতা রয়েছে। প্রতিটি উদ্ভিদের কিছু ঔষধি গুণ থাকে। আর এই ওষুধের গুণ গুলোকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাত করে ঔষধ তৈরি করা হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে সাড়ে পাঁচ হাজারের অধিক উদ্ভিদ রয়েছে। আর এ সকল উদ্ভিদ গুলোর মধ্যে বহু প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে যেগুলো ঔষধ তৈরিতে কাজে লাগে। তবে এই সকল উদ্ভিদ গুলো সারা বিশ্বের ঔষধ তৈরি শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যাপক সাড়া দিয়ে থাকে।
বিশেষ করে ঔষধি গাছগুলো বন-জঙ্গলে বেশি জন্মায়। তবে রাস্তার ধারে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গাছ রোপন করা হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলের ঔষধি গাছগুলো বেশি পাওয়া যায়। এছাড়াও আপনারা ঔষধি গাছ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের পার্বত্য এলাকায় পেয়ে যাবেন।
ঔষধি গাছ সমূহ
আপনারা যারা এখন পর্যন্ত ঔষধি গাছগুলো সম্পর্কে জানেন না বা ওষুধি গাছ গুলো চিহ্নিত করতে পারেন না তাদের জন্য আমরা নিম্নে কিছু ঔষধি গাছ উল্লেখ করেছি।
মেন্দা:
মেন্দা নামক এই গাছটি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায। তবে এই ঔষধি গাছটি একেক অঞ্চলের মানুষ একেক নামে চিনে থাকে। শুদ্ধ ভাষায় এর নাম মেন্দা হলেও আঞ্চলিক ভাষায় চাপাইত্তা, কারজুকি, রতন, খারাজুরা নামেও পরিচিতি রয়েছে।
এটি পেটের পীড়া, রক্ত আমাশা হলে সেবন করা হয়। এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, এই ওষুধি গাছটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। তাছাড়াও হাড় ভেঙে গেলে এই ঔষধি গাছটি মিশ্রণ তৈরি করে প্লাস্টারিংয়ে ব্যবহার করা হতো এবং বুকের ব্যাথা হলে সেখানে মালিশ করে দেয়া হতো এই গাছের রস।
নিম:
আমরা সকলেই জানি যে নিম গাছ মানুষের জীবনে অন্যতম একটি ঔষধি গাছ হিসেবে ভূমিকা পালন করে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে শুরু করে বাহ্যিক এবং ত্বকের যে কোন এই গাছের বাকল এবং পাতা কাজে লাগানো হয়। তাছাড়াও ডায়বেটিকস রোগীদের জন্য নিম গাছের পাতার ছোট ছোট বুড়ি তৈরি করে প্রতিদিন সকাল এবং বিকেলে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে।
ত্বকে বিভিন্ন ধরনের চিকেন ফক্স, এলার্জি, ব্রণ ইত্যাদি জনিত সমস্যায় নিমের পাতা বেটে দেয়ার ফলে সমস্যা দূর হয়। পায়ের নখ থেকে শুরু করে একদম চুল পযর্ন্ত মানব দেহের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ব্যথা-যন্ত্রণা নিরাময় করে থাকে এই নিম পাতা।
চুল পড়া রোধ করে নিম পাতার তেল ব্যবহার করলে। দাঁতের মাড়ি ব্যথা করলে নিম পাতার ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের মাড়ির ব্যথা দূর হয় এবং দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
আরো দেখুনঃ
তুলসী:
বাঙালির চির-পরিচিত একটি ঔষধি গাছ হচ্ছে তুলসী গাছ। তুলসী গাছ আমরা হরহামেশাই যেখানে সেখানে দেখতে পাই। মূলত এই গাছটি আমাদের সর্দি জনিত রোগ প্রতিরোধ করে। ঠান্ডা লাগলে তুলসী পাতার রস খেলে তা সেরে যায় এবং নিয়মিত তুলসী পাতার চা খেলে বুকের কফ জমা বন্ধ হয় এবং মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
চিরতা:
আমরা অনেকেই জানি রাতে জ্বর আসলে চিরতার পানি খেলে তা সেরে যায়। তবে চিরতা জ্বর হলে যে সেবন করা যায় তা এমন কোন কথা নয়। চিরতা বা কালমেঘ ডায়াবেটিকস হলেও খাওয়া যায়। এছাড়াও পেটের যেকোনো সমস্যা অথবা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা হলে চিরতার রস খেলে তা সেরে যায়।
তোকমা:
তোকমা হচ্ছে এক প্রকার ঔষধি গাছের বীজ। আর এই বীজটি দেখতে কালো এবং ছোট ছোট হয়। তোকমা পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে সাদা হয়ে ফুলে উঠে। মূলত পেটের পীড়া জনিত কারণে তোকমা সেবন করা হয়। তবে সবচেয়ে বেশি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়াও যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রয়েছে তারা যদি ইসুবগুলের একসাথে মিশিয়ে খায় তাহলে তা সেরে যায়।
পাথরকুচি পাতা:
আমরা অনেকেই পাথরকুচি পাতার কথা শুনেছি এই পাতাটি যেখানে-সেখানে হয়ে থাকে। কিন্তু এই পাতার যে কতটা উপকারি তা আমরা অনেকেই জানিনা। এই পাতা সেবন করলে আমাদের পেট ফাঁপা এলার্জি এবং ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হয়।
অর্জুন:
অর্জুন গাছের ছাল কাণ্ড লতাপাতা ফলমূল সবকিছুই ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই গাছের কোন অংশ বৃথা যায় না। হৃদরোগ থেকে শুরু করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। এছাড়াও শরীর যেকোনো অংশে মচকে গেলে বা ব্যথা হলে অর্জুন গাছের ছালের সাথে রসুন একসাথে মিশিয়ে সে স্থানে লাগিয়ে দিলে খুব তাড়াতাড়ি সেরে যায়।
ধুতুরা:
আমরা ছোটবেলায় ধুতুরা ফুলের কথা শুনেছি, কিন্তু ধুতুরা যে কত উপকারী একটি ঔষধি গাছ তা আমরা আদৌ ঠিকমত জানিনা। বর্তমানে এই ঔষুধি গাছ বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। ধুতুরা গাছ মূলত এ্যাজমা রোগের জন্য খুবই উপকারী একটি ঔষধি গাছ।
থানকুনি পাতা:
বাংলাদেশের ঔষধি উদ্ভিদ গুলোর মধ্যে থানকুনি পাতা বহুল প্রচলিত একটি পাতা। এই পাতার রস বা ভর্তা খাওয়া হয়। বিশেষ করে যাদের হজম শক্তির অভাব রয়েছে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের জন্য এটি খুবই উপকারে আসে। এছাড়াও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে চুল পড়া রোধ করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
স্বর্ণলতা:
এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, জন্ডিস তলপেট ব্যথা এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে স্বর্ণলতা। এই পাতা সেদ্ধ করে তার পানি সেবন করা হয়। এছাড়াও এই পাতার পানি পিত্তনাশক কৃমি দমন অতি দ্রুত কাজ করে এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করে থাকে।
ঔষধি গাছের গুনাগুন
ঔষধি গাছের অনেক গুণাগুণ রয়েছে। তবে এক এক গাছের গুনাগুন একেক রকম হয়ে থাকে। তাই রোগ নির্ণয় করার পরে ঔষধ গাছ সেবন করতে হয় নতুবা বিপরীত কিছু হতে পারে। নিম্নে কিছু ঔষধি গাছের গুনাগুন উল্লেখ করা হলো।
- জন্ডিস নিরাময় করে।
- তলপেট ব্যথা রোধ করে।
- দেহের রোগপ্রতিরোধ করে।
- দেহের ক্ষত উপশমে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- কৃমি দমন এর সহায়তা করে।
- ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে।
- বন্ধ্যাত্ব নিরাময় করে।
- শক্তিবর্ধক হিসেবে ভূমিকা পালন করে।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনে।
- ডায়াবেটিস নিরাময় করে।
- চুল পড়া রোধ করে।
- চর্ম রোগ নিরাময় করে।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ।
- অ্যাজমা জনিত সমস্যা প্রতিরোধ করে।
- যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে।
- রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ করে।
- অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট তৈরি করে।
- ডায়রিয়া রোগ প্রতিরোধ করে।
- আমাশয় প্রতিরোধ করে।
- হাত পায়ের জ্বালা-পোড়া কমায়।
- হৃদরোগের ব্যথা উপশম করে।
- হাত পায়ের হাড় মচকে গেলে বা ফেটে গেলে তা উপশম করে।
- ঠান্ডা জনিত সমস্যা এবং ফুসফুস জনিত যেকোনো সমস্যা দূর করে।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
উপসংহার: ঔষধি গাছ আমাদের জীবনে অতি প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে। কারণ ওষুধি গাছ গুলো আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সহ অন্যান্য সকল সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে থাকে। আপনাদের যদি এই ঔষধি গাছ সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট সেকশনে এসে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।