ডায়াবেটিস কমানোর উপায় | ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল
ডায়াবেটিস কমানোর উপায় | ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
মানবদেহে সচরাচর আমরা যে সকল রোগের নাম শুনে থাকি তার মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। কারণ এই ডায়াবেটিস মানবদেহে একবার জায়গা করে নিলে সেটি মানুষকে ধীরে ধীরে কষ্ট দিতে থাকে। আর ডায়াবেটিস রোগে যারা আক্রান্ত তারা ডায়াবেটিস কমানোর উপায় জানতে চান।
তাই আজ আমরা আপনাদের জন্য ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সম্পর্কে একটি আর্টিকেল উপকার হিসেবে নিয়ে এসেছি। কারণ যে সকল ব্যক্তি ডায়াবেটিস রয়েছে শুধুমাত্র তারাই জানেন যে ডায়াবেটিস হলে তাদের কি কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক আজকের আলোচনা ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সম্পর্কে।
ডায়াবেটিস কি? | What is diabetes?
ডায়াবেটিস কমানোর উপায় জানার আগে আমাদের জানতে হবে ডায়াবেটিস কি বা What is diabetes? যদি আমরা ডায়াবেটিস সম্পর্কে না জানি তা হলে এর প্রতিরোধ করা সহজসাধ্য হয়ে উঠবে না।
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। মূলত আমরা খাবার খেয়ে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখি। যাদের অতিরিক্ত পরিমাণে ডায়াবেটিস রয়েছে তারা ইনসুলিন ব্যবহার করে থাকেন। ইনসুলিন মুলত একটি হরমোন। শরীরের কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট এর বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
ডায়াবেটিস কত প্রকার?
ডায়াবেটিস ২ প্রকার হয়ে থাকে। যথাঃ
- ডায়াবেটিস টাইপ-১ এবং
- ডায়াবেটিস টাইপ-২।
ডায়াবেটিস টাইপ-১
এ ধরনের ডায়াবেটিস বেশিরভাগ কম বয়সী বা 20 বছরের কম বয়সী ছেলে-মেয়েদের মধ্যে হয়ে থাকে। আর এটি ডায়াবেটিসে টাইপ ১ ইনসুলিন শরীরে তৈরি হয় না।
ডায়াবেটিস টাইপ-২
এ ধরনের ডায়াবেটিস বেশিরভাগ ব্যক্তিদের হয়ে থাকে। আর এটি ডায়াবেটিসে টাইপ ২ ইনসুলিন শরীরে তৈরি হয়। তবে এটি শরীরে সঠিকভাবে কাজ করে না।
ডায়াবেটিস এর লক্ষন
ডায়াবেটিকস হয়েছে কিনা সেটি জানার জন্য অবশ্যই আপনাকে ডায়াবেটিস এর লক্ষন গুলো সম্পর্কে অবগত হতে হবে। নতুবা আপনি বুঝতে পারবেন না যে ডায়াবেটিক আপনার হয়েছে কিনা। আর আপনি যদি এ ধরনের লক্ষণগুলো জেনে রাখেন তাহলে আপনারা খুব সহজেই বুঝতে পারবেন যে আপনার আইডি ঠিক হয়েছে। তাহলে অতিদ্রুত আপনি আপনার চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন। তবে ডায়াবেটিস হলে ভয়ের কোন কারণ নেই। কারণ এটি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে আপনি সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে পারবেন। চলুন তাহলে জেনে নেই ডায়াবেটিস হওয়ার লক্ষণ গুলো সম্পর্কে।
- ঘন ঘন তৃষ্ণা পাওয়া।
- অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা।
- অতিরিক্ত মলত্যাগ।
- ক্লান্ত ও দুর্বল হওয়া।
- কোথাও কেটে গেলে তা শুকাতে সময় লাগা।
- অসময়ে চামড়া ফেটে যাওয়া।
- শরীরের ওজন হ্রাস পাওয়া।
- ত্বকের সংক্রমণ হওয়া।
- আঘাত থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার।
ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল?
আমরা অনেকেই ডায়াবেটিকস হলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। এখানে ভয় পাওয়ার মত কিছু নেই তবে আপনাকে অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কিন্তু আপনি বুঝবেন কি করে যে ডায়াবেটিকস নর্মাল লেভেল কোনটি?
আর তার জন্য আমেরিকান ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন গাইডলাইন অনুযায়ী জানা যায় যে, ৫ .৭- এর নিচে থাকলে আপনার রক্তের সুগার লেভেল স্বাভাবিক আছে। আর যদি ৬.৫- এর বেশি থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে যে আপনার ডায়াবেটিস আছে। তবে যাদের ৫.৭-৬.৫ এর মধ্যে রয়েছে তারা প্রি ডায়াবেটিস ডায়াবেটিসের পূর্ব অবস্থায় হিসেবে বিবেচনা হবে।
ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
যাদের ডায়াবেটিস হয়েছে তারা খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন। নিয়ম করে চললে এবং খাবারের তালিকা ঠিক রাখলে নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব। ডায়াবেটিস কমানোর উপায় হচ্ছে-
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
- মিষ্টি এবং শর্করা জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
- পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
- ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে।
- ধূমপান পরিহার করতে হবে।
- প্রতিদিন ৩০-৬০ মিনিট হাঁটতে হবে।
- শাক-সবজি প্রচুর পরিমানে খেতে হবে।
- পূর্ণ শস্য জাতিয় খাবার খেতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা হচ্ছে- ডায়াবেটিক রোগীদের অবশ্যই খাদ্য পরিকল্পনা করতে হবে। কখন কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত, কি পরিমাণে খাওয়া উচিত, যে খাবারটি খাচ্ছেন সেটি আপনার শরীরের জন্য সুবিধা হচ্ছে কিনা সেটিও লক্ষ্য করা উচিত। এমন ধরনের খাবার খাওয়া উচিত যে খাবারে তাদের রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখবে এবং দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা বজায় থাকবে।
তবে একটি সুন্দর বাস্তবধর্মী এবং খাদ্য পরিকল্পনা আপনাকে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে। ডায়াবেটিক রোগীদের এমন শাকসবজি বাছাই করতে হবে যাতে কোন শ্বেতসার জাতীয় উপাদান না থাকে। যেমনঃ ব্রকলি, পালং শাক ইত্যাদি।
আরো দেখুনঃ
দানাদার খাবার এবং চিনি পরিহার করতে হবে। যেমনঃ সাদা আটা, সাদা চাল, চিনি ইত্যাদি।
খাদ্য তালিকায় যেটুকু কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেয়। তাই আপনাকে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যের পরিমাণ কম রাখতে হবে। ফাইবার সমৃদ্ধ কার্বোহাইড্রেট যুক্ত এবং নির্ধারিত পরিমাণ প্রোটিন ও ফ্যাট যুক্ত খাবার রাখতে পারেন। এ ধরনের খাবারগুলো রক্তে সুগার লেভেল দ্রুত বৃদ্ধি করে না।
ডায়াবেটিস রোগীর সকালের খাবার
সকাল ৭ঃ৩০-৮ঃ ০০ টা | |
রুটি | ১ টি |
দুধ | এক গ্লাস ফ্যাট ছাড়া |
ডিম | ১ টি |
শাক-সবজি | ১ কাপ |
ডায়াবেটিস রোগীর দুপুরের খাবার
দুপুর ১ঃ৩০-২ঃ ০০ টা | |
ভাত | এক থেকে দেড় কাপ |
শাক-সবজি | এক থেকে দেড় কাপ |
ডাল | ১ কাপ |
মাছ -মাংস | ৬০ গ্রাম ফ্যাট ছাড়া |
ডায়াবেটিস রোগীর বিকেলের নাস্তা
বিকেল ৫ঃ৩০-৬ঃ০০ টা | |
যে কোন ফল | ১ টি |
যেকোনো বাদাম | ১/৪ কাপ |
চা | ১ কাপ |
ডায়াবেটিস রোগীর রাতের খাবার
রাত ৯ঃ০০-৯ঃ৩০ টা | |
ভাত/রুটি | এক থেকে দেড় কাপ/ ১টি |
শাক-সবজি | এক কাপ |
মাছ -মাংস | ৬০ গ্রাম ফ্যাট ছাড়া |
যে কোন ফল | ১ টি |
ডায়াবেটিস নিয়ে পশ্ন উত্তর
১. খালি পেটে ডায়াবেটিস কত থাকে?
উত্তরঃ ৫.৭ এর নিচে।
২. ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে?
উত্তরঃ ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হয়না কিন্তু খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনের পরিবর্তন আনবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৩. ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট?
উত্তরঃ ৫.৭।
৪. সুগারের মাত্রা কত হলে বুঝবেন ডায়াবেটিস?
উত্তরঃ ৬.৫ এর উপরে।
৫. ডায়াবেটিস কেন হয়?
উত্তরঃ ডায়াবেটিস হওয়ার কারণ হচ্ছে রক্তের অধিক পরিমাণে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া।
৬. বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস কবে?
উত্তরঃ ১৪ই নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস।
৭. টাইপ ২ ডায়াবেটিস কি?
উত্তরঃ বয়স্ক ব্যক্তিদের যখন ডায়াবেটিস হয় তখন সেই ডায়াবেটিস টাইপ ২ ডায়াবেটিস বলা হয়।
৮. টাইপ ১ ডায়াবেটিস কি?
উত্তরঃ যাদের বয়স কম অর্থাৎ বিশ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের যদি ডায়াবেটিস হয় তখন তাদেরকে বলা হয় টাইপ ১ ডায়াবেটিস।
উপসংহার: আশা করি আপনারা আমাদের এই আর্টিকেল থেকে ডায়াবেটিস সম্পর্কে জানতে পেরে উপকৃত হতে পেরেছেন। আমরা আপনাদের ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা এবং ডায়াবেটিস হলে কি ধরনের খাবার খেতে হবে, কোন সময় খেতে হবে সেগুলো জানিয়েছি। তাছাড়াও আপনাদের যদি ডায়াবেটিক সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকে তাহলে কমেন্ট সেকশনে এসে কমেন্ট করতে পারেন।