খনিজ সম্পদ কাকে বলে?
খনিজ সম্পদ কাকে বলে? | বাস্তবে খনিজ সম্পদের ব্যবহার
আজকে আপনাদের মাঝে আর একটি শিক্ষণীয় বিষয় নিয়ে হাজির হয়েছি। আর সেটি হচ্ছে খনিজ সম্পদ কাকে বলে? আমরা প্রায়শই খনিজ সম্পদ সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য শুনে থাকি। তবে আমরা আসলে কি জানি যে খনিজ সম্পদ বলতে কি বুঝায়।
সুতরাং আজ আমরা আপনাদের মাঝে খনিজ সম্পদ কাকে বলে এবং এর বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
আরো দেখুনঃ সম্পদ কাকে বলে?
খনিজ সম্পদ কাকে বলে?
প্রাকৃতিক নিয়মে এক বা একাধিক উপাদান দিয়ে গঠিত বা সামান্য পরিবর্তিত হয়ে মাটির নিচ থেকে যে রাসায়নিক প্রক্রিয়া যৌগ পদার্থ শিলাস্তরের পাওয়া যায় তখন সেই উপাদানটিকে খনিজ পদার্থ বলে।
বিভিন্ন ধরনের শিলার উপাদানগুলো ভূতাত্ত্বিক সময় এর উপর নির্ভর করে ধীরে ধীরে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন হয়ে পরিবর্তিত যে পদার্থে পরিণত হয় সেটি মূলত। তবে খনিজ পদার্থ গঠনে মানুষের কোন ক্রিয়া নেই।
আমরা সকলেই জানি মাটির বিভিন্ন ধরনের স্তর রয়েছে আরে স্তরের মধ্যে মিশ্রিত অবস্থায় যে আক্ষরিক চূর্ণ হিসেবে যে পদার্থ থাকে সেটিকে খনিজ পদার্থ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। যেমনঃ চুনাপাথর, আকরিক লৌহ, গ্রাভেল, কঠিন শিলা, প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল, রুপা, কয়লা, হীরা, সোনা, ম্যাঙ্গানিজ, টাংস্টেন, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি।
বাস্তবে খনিজ সম্পদের ব্যবহার
আমরা খনিজ সম্পদ সম্পর্কে জেনেছি কিন্তু এই খনিজ সম্পদ গুলোকে আমরা খনিজ পদার্থ হিসেবে জানে। তবে এই খনিজ সম্পদ গুলো আমাদের বাস্তব জীবনে কি কি কাজে ব্যবহার করা হয় সে সম্পর্কে আমরা এখন জানব।
খনিজ সম্পদ কে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য শক্তি সম্পদ হিসেবে তৈরি করা হয়। যাতে করে খনিজ সম্পদ গুলোকে প্রক্রিয়াজাত করে শক্তি সম্পদের রূপান্তর করে মানুষের ব্যবহার উপযোগী করে তোলা যায়। নিম্নে খনির সম্পদের ব্যবহার উল্লেখ করা হলো-
- কয়লা
কয়লা হচ্ছে খনিজ সম্পদের অন্যতম একটি রূপান্তরিত শক্তি সম্পদ। কয়লা বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে কলকারখানা এবং যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় সব থেকে বেশি।
তাছাড়াও জাহাজ এবং রেলগাড়ি চালানোর জন্য কয়লা ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন জ্বালানি কাজে যেমনঃ তাপীয় বিদ্যুৎ, ইট ভাটা, গুড় তৈরি কারখানা, উৎপাদন কেন্দ্র ইত্যাদি এ ধরনের বিভিন্ন ধরনের কারখানায় কয়লা ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু বাংলাদেশে উন্নত মানের কয়লা পাওয়া যায় না। তবে কিছু কিছু অঞ্চলে নীট কয়লা পাওয়া যায়। যেমনঃ চরকাই, পাগলা, সিলেট, মৌলভীবাজার, খুলনা এবং ফরিদপুর অঞ্চল।
- খনিজ তেল
অশোধিত খনিজ তেল থেকে পেট্রোল, কেরোসিন, বিটুমিন ও অন্যান্য দ্রব্য পাওয়া যায়। আরে সকল দ্রব্য থেকে তেলের ব্যবহার ব্যাপক পরিমাণে হয়ে থাকে। দৈনন্দিন জীবনের রান্নাবান্না, যানবাহন সহ বিভিন্ন প্রকার জ্বালানি খনিজ তেল ব্যবহার করা হয়।
তবে বাংলাদেশের সর্ব মোট দুটি তেল ক্ষেত্র রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম ক্ষেত্রটি ১৯৮৬ সালে সিলেট জেলায় হরিপুরে ৬০০ ব্যারেল এবং বরমচাল দৈনিক ১২০০ ব্যারেল উত্তোলিত হয়ে থাকে। আরে সকল তেল আমাদের বাংলাদেশের প্রাপ্ত তেলের চাহিদার তুলনায় অনেক অল্প।
- চুনাপাথর
বিল্ডিং তৈরি করার জন্য সিমেন্টের প্রয়োজন হয় আর এই সিমেন্ট তৈরি করার জন্য যে প্রধান কাঁচামাল এর প্রয়োজন হয় সেটি হচ্ছে চুনাপাথর। এছাড়াও গ্লাস, ব্লিচিং পাউডার, সাবান,কাগজ পেইন্ট ইত্যাদি শিল্পগুলো চুনাপাথর ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের উত্তরের দিকে যে চিনা পাথর পাওয়া যায় ছাতক সিমেন্ট কারখানার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
- চীনামাটি
তোদের পত্র তৈরি এবং বৈদ্যুতিক ইনসুলেটর ও স্যানেটারি সরঞ্জামের কাঁচামাল হিসেবে চিনামাটি ব্যবহার করা হয়। তবে এই চিনামাটি কাগজ ও রাবার শিল্পে সামান্য পরিমানে ব্যাবহার হয়।
- তামা
তামা হচ্ছে বহুল পরিচিত একটি উপাদান। তামার তৈরি বিভিন্ন প্রকার তৈজসপত্র, বৈদ্যুতিক তার, স্ক্রু নাট, এবং ডেকোরেশন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের শোপিস তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
- সিলিকা বালি
সিলিকা বালি সাধারণত কাজ নির্মাণ শিল্প কারখানা গুলোতে ব্যবহার হয়। এছাড়াও রঙ এবং রাসায়নিক দ্রব্য ইত্যাদি তৈরি করার জন্য কি ব্যবহার করা হয়।
- গন্ধক
গন্ধক সাধারণত রাসায়নিক শিল্পে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে সালফার জাতীয় ঔষধ তৈরিতে, ম্যাচ কারখানা, কীট পতঙ্গ নাশক ঔষধ তৈরি, পেট্রোলিয়াম, আতস বাজি তৈরি, এবং এসিড তৈরি কারখানা গুলোতে এই গন্ধক ব্যবহার করা হয়।
- প্রাকৃতিক গ্যাস
মানবজাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ সম্পদ হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। বাংলাদেশ বর্তমানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সম্পদ হিসেবে পরিচিতি পায় এই প্রাকৃতিক গ্যাস।
আর এই প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যিক জ্বালানি ব্যবহারের 70 শতাংশের মধ্যে 16 শতাংশ পূরণ করে থাকে। বিশেষ করে শিল্প কারখানার জ্বালানি হিসেবে অত্যাধিক বেশি ব্যবহার করা হয় এই প্রাকৃতিক গ্যাস।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারখানা, কীটনাশক ঔষধ কারখানা, রাবার কারখানা, প্লাস্টিক এর কারখানা, কৃত্রিম তন্তুর কারখানা, কৃষি এবং শিল্প কারখানায় এই প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সিএনজি চালিত মোটর জানে এই গ্যাসের ব্যবহার রয়েছে। এছাড়াও এলপিজি রান্নার কাজে আমরা যে সকল সিলিন্ডার ব্যবহার করে থাকি সেসকল সিলিন্ডারের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস ব্যবহার করা হয়।
- পানি বিদ্যুৎ শক্তি
বিভিন্ন ধরনের শিল্প কারখানায় এবং গৃহে নিত্য প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি হিসেবে পানি বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করা হয়।
- আণবিক শক্তি
আণবিক শক্তি বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে এর কোন উৎপাদন নেই। তবে আণবিক শক্তি ব্যবহার করলে উৎপাদন খরচ সবচেয়ে কম হয়। উদাহরণ হিসেবে বলতে গেলে পানি বিদ্যুৎ শক্তির চেয়ে অনেক কম যদি আণবিক শক্তি ব্যবহার করা হয়।
- নুড়ি পাথর
নুড়িপাথর এক ধরনের ছোট আকৃতির পাথর। আর এই পাথর গুলো রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, রেলপথ ইত্যাদি নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়।
- তেজস্ক্রিয় বালি
তেজস্ক্রিয় বালি এক ধরনের খনিজ সম্পদ। যা বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পে এই তেজস্ক্রিয় বালি প্রধান ধাতব উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
- কঠিন শিলা
কঠিন শিলা হচ্ছে এক ধরনের পাথর। যা খনিজ সম্পদ হিসেবে জেনে থাকি। আর এই কঠিন শিলা রেলপথ, রাস্তা, গৃহ, সেতু এবং বাঁধ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। তবে বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণে এই শিলা অন্যতম কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
- পারমাণবিক খনিজ পদার্থ
পারমাণবিক খনিজ পদার্থ এক ধরনের ভারী ধাতব। আর এই পদ্ধতি বিভিন্ন ধরনের শিল্প কারখানায় ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে পারমাণবিক কার্যক্রম এর সব থেকে বেশি ব্যবহার করা হয়।
- লৌহ
আমাদের বসবাস করার জন্য বাড়ির প্রয়োজন হয় আর এই বাড়ি তৈরি করার জন্য লোহার প্রয়োজন পড়ে। আর ঘর বাড়ি, গাড়ি তৈরি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের শিল্প কারখানা গুলোতে লোহার ব্যবহার অধিক বেশি হয়।
আরে সকল লৌহ খনিজ থেকে আহরণ করা। তবে বাংলাদেশ শুধুমাত্র কিছু পরিমাণে আকরিক লোহা পাওয়া যায়।
- লবণ
লবণ নিত্যপ্রয়োজনীয় একটি উপাদান। এটি আমরা সাধারণত খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারি। বিশেষ করে চামড়া শিল্পে লবণের ব্যবহার প্রচুর হয়। চামড়া সংরক্ষণ করার জন্য চামড়ায় লবণ মাখিয়ে রাখা হয়। কস্টিক সোডা এবং সোডা অ্যাস তৈরি করার জন্য লবণ অপরিহার্য।
তবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোন খনিজ লবণ পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র সামুদ্রিক পানিতে লবণ সংরক্ষণ করা হয় সেটি একমাত্র লবণ।
আরো দেখুনঃ
উপসংহার: আশা করি আমরা আপনাদের খনিজ সম্পদ কাকে বলে? এবং এর কিছু ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আপনারা যদি আরও কিছু এই সম্পর্কিত জানতে চান তাহলে আমাদের কমেন্ট সেকশনে এসে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।