মহাবিশ্ব কাকে বলে?
মহাবিশ্ব কাকে বলে। মহাবিশ্ব সম্পর্কে অজানা তথ্য
দিনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আমরা সূর্যকে দেখি।রাতে দেখি চাঁদ ও তারা। এদের সৌন্দর্য আমাদের মোহিত করে।আমাদের মাথার উপর আছে বিশাল আকাশ,সীমাহীন মহাকাশ।ক্ষুদ্র পোকামাকড় ও ধূলিকণা থেকে শুরু করে আমাদের এই পৃথিবী, গ্রহ-নক্ষত্র,গ্যালাক্সি ইত্যাদি সৃষ্টিজগতের সবকিছুকে নিয়ে মহাবিশ্ব।
মহাবিশ্বের আয়তন নিয়ে আমরা কেউ জানি না। এর শুরু বা শেষ নেই। মহাবিশ্ব নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণার শেষ নেই।প্রতিনিয়ত এটা নিয়ে নতুন তথ্য আবিষ্কৃত হচ্ছে। তবুও আমাদের কাছে অচেনা এ মহাবিশ্ব। বিজ্ঞানীদের মতে মহাবিশ্বের অনেক কিছুই মহাকাশের ফাঁকা জায়গায় ছড়িয়ে আছে। তাই আজ জানব মহাবিশ্ব কাকে বলে। মহাবিশ্ব কি? মহাবিশ্ব কত বড়? মহাবিশ্ব সম্পর্কে অজানা তথ্য জানলেও জানাব।
মহাবিশ্ব কি?
পৃথিবী ও এর বাইরের সবকিছু নিয়ে এই মহাবিশ্ব। মহাবিশ্বের অংশ হলো মহাকাশ। মহাকাশের বিশাল জায়গায় মহাবিশ্বের অনেক কিছু বিদ্যমান রয়েছে। এসব বস্তু বা পদার্থ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পরিমানে রয়েছে। যে অংশে এই পদার্থ বা বস্তু বেশি পরিমানে ঘনীভূত হয়েছে সেটাকে নক্ষত্রজগৎ বলে। নক্ষত্রজগতে গ্রহ ও নক্ষত্র দল বেধে আছে। পৃথিবী যে নক্ষত্রজগতে অবস্থিত সেটির নাম ছায়াপথ। এরকম নক্ষত্রজগৎ কোটি কোটি পরিমাণে আছে এ মহাবিশ্বে।
আরো দেখুনঃ গ্রহ কি? গ্রহ কয়টি ও কি কি?
মহাবিশ্ব কাকে বলে?
মহাবিশ্বের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিখ্যাত তত্ত্ব হলো “বিগব্যাঙ তত্ত্ব” বা ” মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব”।এ তত্ত্ব অনুযায়ী মহাবিশ্ব একসময় অত্যন্ত গরম ও ঘন অবস্থায় ছিল এবং তা দ্রুত প্রসারিত হতে থাকে। এ প্রসারণের ফলে মহাবিশ্ব ঠাণ্ডা হয়ে বর্তমানের প্রসারিত অবস্থায় আসে। এ তত্ত্ব মতে ১৩৭৫ কোটি বছর পূর্বে এ মহাবিস্ফোরণ সংঘটিত হয় এবং মহাবিশ্বের বয়সও ১৩৭৫ কোটি বছর।বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এই তত্ত্বের পক্ষে সমর্থন করে এর ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন।
মহাবিশ্ব কত বড়
নক্ষত্রগুলো মহাকাশে দলে দলে ঘুরে বেড়ায়,যা দেখলে মনে হয় মৌমাছির ঝাঁক। মহাকাশের এসব নক্ষত্রগুলোকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় এরা খুব কাছাকাছি, কিন্তু আসলে তা নয়।এদের মাঝে অনেক দুরত্ব।
যেমন সূর্য একটি নক্ষত্র এবং আলোর উৎস।সূর্য থেকে আলো পৃথিবী ও অন্যান্য নক্ষত্র ও গ্রহউপগ্রহে যেতেও অনেক সময় লাগে। অথচ আলোর গতি সবচেয়ে বেশি। তাহলে আমরা বুঝতে পারি এক একটি নক্ষত্র থেকে আরেকটির দূরত্ব কতটা।আর এত বিস্তৃত নক্ষত্রজগতের অবস্থান যে মহাবিশ্বে তার বিশালতা কতটা তা এখন স্পষ্ট হয়ে গেল।
মহাবিশ্ব সম্পর্কে অজানা তথ্য
মহাবিশ্ব কি স্থির?
মহাবিস্ফোরণের পর থেকে মহাবিশ্বের প্রসারণ একইভাবে বাড়ছে । তবে নিকটবর্তী গ্যালাক্সি প্রসারিত হয় না একইভাবে।অর্থাৎ আমাদের সৌরজগৎও প্রসারিত হচ্ছে না কিংবা গ্রহদের থেকে পৃথিবীর দূরত্বও বাড়ছে না।
মহাবিশ্বের মৌলিক উপাদান হলো তিনটি।যথাঃ
- সৌরজহৎ,
- নক্ষত্রপুঞ্জ,
- গ্যালাক্সি।
মহাবিশ্বের বয়স কত?
মহাবিশ্বের বয়স কত তা আমরা জানি না কেউই।
বিগব্যাঙ তত্ত্বের পর থেকে মহাবিশ্বের বয়স গননা শুরু হয়।তবে মহাবিশ্বের আবির্ভাবের দিকে সময় ছিল শূন্য।
এ সময় গননার পরবর্তী ধাপে ০.০০১ ন্যানো সেকেন্ডে উইম্প বা ভারী কণার গঠন হয়।
০.০১ মিলি সেকেন্ডে কোয়ার্ক স্যুপ থেকে নিট্রন ও প্রোটনের গঠন হয়।
১০০ সেকেন্ডে পরমাণুর নিউক্লিয়াস গঠিত হয়।
৩ লক্ষ বছরে পরমাণুর গঠন হয়।
৩০ লক্ষ বছরে তারকাদের গঠন ও পরমাণু থেকে ইলেকট্রনের বিচ্যুতি ঘটে।
১০০ বছরে গ্যালক্সি গঠন।
৩০০ বছরে অভ্যন্তরীন ছায়াপথের গ্যাসে নতুন করে আবার তাপ দেওয়া বা তাপ বাড়ে।
১৪০০ বছরে গ্যালাক্সিগুচ্ছ তৈরি হয়।
মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্ন সময় নানান তত্ত্বের ধারণা দিয়েছেন। নিচে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ধারনা দেওয়া হলো।প্রাচীন কালে মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করার জন্য পুরাতন গ্রিক দার্শনিকরাই প্রথম এই বিশ্বতত্ত্বে গাণিতিক মডেলের সাহায্য নেন এবং পৃথিবী কেন্দ্রিক একটি মহাবিশ্বের ধারণা প্রণয়ন করেন।
তাদের মডেল অনুযায়ী আমাদের পৃথিবীই মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সমস্ত গ্রহ, সূর্য ও নক্ষত্ররা ঘুরছে। গ্রীকরা ভেবেছিলেন এই মহাবিশ্বের মোট আয়তন বর্তমানে জ্ঞাত বৃহস্পতি গ্রহের কক্ষপথের মধ্যেই ছিল।
তবে ১৪০০ শতকে কোপার্নিকাস সৌরকেন্দ্রিক মহাবিশ্বকে যৌক্তিক ভাবে তার বইয়ে উপস্থাপনা করার পর গ্রীকদের এ ধারনা পাল্টায় বা বাতিল হয় মানুষের মনে।পরবর্তীতে নিউটন তার গতি ও মহাকর্ষ সংক্রান্ত গভীর ধারণা পর্যবেক্ষণের সাথে সৌরকেন্দ্রিক জগতের সামঞ্জস্য নির্ধারণ করে।
এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে জ্যোতির্বিদরা আবিষ্কার করেন সূর্যের মতই কোটি কোটি তারা দিয়ে একটি গ্যালাক্সি গঠিত হয়েছে। কয়েক শত বছর পর্যন্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল সমগ্র মহাবিশ্ব বলতে আমাদের এই ছায়াপথ গ্যালাক্সিটিকেই বুঝায়। কিন্ত ১৯২০ সালের দিকে উন্নত দুরবীনের মাধ্যমে জ্যোতির্বিদরা আবিষ্কার করলেন ছায়াপথের বাইরে আরও অনেক গ্যালাক্সির।
মহাবিশ্ব কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল সে সম্পর্কে বিভিন্ন প্রচলিত তত্ত্বের মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব টি হল “মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব” বা “বিগ ব্যাঙ” থিওরি।জর্জ ল্যামাটার কে আধুনিক বিগ ব্যাং তত্ত্বের প্রবর্তক বলা হয়।তবে স্টিফেন হকিং এই তত্ত্বটির গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার পেছনে বেশ জোরালো কিছু যুক্তি তুলে ধরে এটিকে সবার কাছে জনপ্রিয় করে তোলেন।
মহাবিশ্বে শত শত কোটি গ্রহ, তারা, গ্যালাক্সি, নক্ষত্র ইত্যাদি রয়েছে। আর মহাবিশ্বের অপরিহার্য অংশ হল শক্তি। আইনস্টাইনের সমীকরণ অনুযায়ী E = mc2 হলে, কণা এবং শক্তি কোনও আলাদা রূপ হতে পারে না। এখন আমরা যদি মহাবিশ্বের মোট কণার সংখ্যা হিসাব করি তাহলে একটি ধনাত্মক সংখ্যা পাবো।
আবার মহাবিশ্বের মোট শক্তি হিসাব করি যদি তাহলে একটি ঋণাত্মক সংখ্যা পাবো। এর কারণ হলো মধ্যাকর্ষণ শক্তি একটি ঋণাত্মক শক্তি। এই দুটি শক্তি যোগ করলে আমাদের প্রাপ্ত ফলাফল হবে শূন্য। সুতরাং আমরা পেলাম মহাবিশ্ব তৈরির জন্য কোন অতিরিক্ত কণা এবং শক্তির প্রয়োজন নেই।
আরো দেখুনঃ নক্ষত্র পতন কাকে বলে?
পরিসমাপ্তি: মহাবিশ্ব কাকে বলে এ বিষয়ে মোটামুটি ধারনা মিলেছে আজকের লেখায়।তবে মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও এর মহাজগতিক বস্তুর সৃষ্টি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের অবতারনা হয়েছে এবং হবে। কেউ কেউ এই তত্ত্ব গুলোকে ভিত্তিহীন দাবি করে থাকেন।
তবে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময় এসব তত্ত্বের প্রমাণও দেখিয়েছেন।মানুষের জ্ঞানের পরিসীমা খুবই নগন্য।তাই মানুষ কখনো এই মহাবিশ্বের পরিধি সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে পারবে কি না বলা কঠিন।তবে পৃথিবী যতদিন আছে ততদিন এ গবেষণা চলবে আর নতুন তথ্যও আবিষ্কার হবে।