আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা
আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা | আনারসের পুষ্টিগত মান
আনারস একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল। এতে বিভিন্ন ভিটামিন রয়েছে। ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, খনিজ উপাদান ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ইত্যাদি উপাদান শরীরের জন্য খুবই উপকারী। নিয়মিত আনারসের রস খেলে অনেক ধরণের উপকার পাওয়া যায়।
আবার আনারসে কিছু প্বার্শ-প্রতিক্রিয়া রয়েছে যদি তা অতিরিক্ত পরিমাণে না খাওয়া হয়। আবার কিছু বিশেষ রোগীদের ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী আনারস সেবন করা উচিত। আনারস অনেক রোগের বিকল্প ওষুধ হিসেবেও কাজ করে থাকে। তাই আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা জানা দরকারি আমাদের জন্য। নিচে আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হলো।
আরো দেখুনঃ খেজুর খাওয়ার উপকারিতা.
আনারসের পুষ্টিগত মান | Nutritional Value Pineapple
এক কাপ আনারসে ১৬৫ গ্রাম পুষ্টিগুণ থাকে যার পরিমাণগুলো নিচে দেয়া হলো :
- ২৯ মাইক্রো গ্রাম ফোলেট।
- ১৮০ মিলিগ্রাম পটাসিয়া।
- ১২ মিলিগ্রাম ফসফরাস।
- ১৯ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম।
- ২১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়া।
- ৯৫IU ভিটামিন সি।
আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা
আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। এর পাশাপাশি অতিরিক্ত আনারস খাওয়াও শরীরের জন্য খারাপ। তাই আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা জরুরি।
আনারসের উপকারিতা | Benefits Pineapple
আনারসে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম যার কারণে আনারসের রয়েছে প্রচুর উপকারিতা। নিচে তা এক এক করে উল্লেখ করা হলো :
1.ক্ষুধামন্দায় আনারসের উপকারিতা:
ক্ষুধামন্দা বা রুচির সমস্যা যদি থেকে থাকে আপনার তাহলে আপনি আনারসের রস করে খেতে পারেন। একটানা ৭ – ৮ দিন খান। এটি আপনি আপনার ক্ষুধামন্দায় কার্যকরীভাবে কাজ করবে। ১৫ – ২০ দিনের জন্যও আপনি আনারস এমনিই খেতে পারেন রস করা ছাড়া।
2.আনারস মূত্রনালীর সমস্যা নিরাময় করে:
মূত্রনালীর সমস্যায় আপনি আনারস খেতে পারেন। আনারসের রসের সঙ্গে গুড় মিশিয়ে তারপর একটানা সাত থেকে আট দিন খান। ঘন ঘন প্রস্রাব সংক্রান্ত যে সমস্যায় আপনি ভুগছেন তা দূর হবে। এটি একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। তাই এই সময় খাবারে শুধু দুধ খান। হব। আনারস যেই পরিমাণ নিবেন সেই পরিমাণ খেজুরেরও টুকরো নিন তারপর এর সাথে মধু ও ঘি মিশিয়ে পাত্রে রেখে দিন। প্রতিদিন এখান থেকে নিয়মিতভাবে ৬ থেকে ১২ গ্রাম পরিমাণে মিশ্রণটি খেলে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার যে সমস্যা তার সমাধান হবে।
3.আনারস শ্বাসকষ্টের চিকিৎসায় কার্যকরী:
আনারসের রসের সঙ্গে বহেরা, চিনি ও লিকোরিস মিশিয়ে খেলে আপনি শ্বাস-কষ্টের সমাধান হবে। গ্রাম ক্যাটেরি মূলের গুঁড়া, ৫০০ মিলিগ্রাম জিরার গুঁড়া, ২ গ্রাম গুজবেরির গুঁড়ার সঙ্গে | ৫০ – ১০০ মিলিগ্রাম আনারসের রস নিন এবং সাথে মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়মিত কাশি নিরাময়ে পান করুন।
4.আনারসের রস যক্ষ্মা থেকে মুক্তি পেতে উপকারী:
টিবি বা যক্ষ্মা রোগ নিরাময়ে আনারস খুবই উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে আনারস যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
5.কিডনি সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসায় আনারসের উপকারিতা:
আনারসের রস বা শুধু আনারস কিডনির সমস্যায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। বিশেষত যদি কিডনিতে পাথর থাকে তাহলে নিয়মিত আনারস সেবনে তা দূর হয়।
6.ধূমপানের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পুনরুদ্ধার করতে আনারসের উপকারিতা:
ধূপপানের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচতে আনারস খুবই উপকারী। আনারসে থাকা ভিটামিন সি হাঁপানি রোধে ভূমিকা রাখে। আনারস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে ধূমপানের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমায়।
আরো দেখুন: আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা.
7.রক্তের ঘাটতি দূর করতে আনারসের উপকারিতা:
আনারস খেলে যাদের রক্তস্বল্পতার সমস্যা রয়েছে তা দূর হয়। আনারস খেলে শরীরে আয়রনের শোষণ বৃদ্ধি পায় যার ফলে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং রক্তস্বল্পতা দূর হয়
8.পুষ্টির অভাব দূর করে:
পুষ্টিগুণে ভরপর এক ফল হচ্ছে আনারস আনারসে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি, যা দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব দূর করে। ভাইরাসজনিত রোগ থেকে বাঁচতে আনারসে রয়েছে অনেক বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি। যা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা যেমন : কাঁশি, হাঁপানি, জ্বর ও জন্ডিসের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। গলাব্যাথা, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে কাজ করে। ব্রংকাইটিসের ওষুধের বিকল্প হিসেবে আনারস বুবই কার্যকরী।
9.হজমশক্তি বাড়ায়:
আনারসে থাকা ব্রোমেলিন আমাদের হজমশক্তিতে সহায়তা করে। হজমশক্তি বৃদ্ধিতে আনারস খুবই কার্যকরী
1O.চোখের স্বাথ্য রক্ষায়:
চোখের ম্যাক্যুলুর ডিগ্রেডেশন রোগ যা চোখের রেটিনাকে নষ্ট করে দেয় এবং এর ফলে ব্যাক্তি আস্তে আস্তে অন্ধ হয়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, আনারস চোখের ম্যাক্যুলুর ডিগ্রেডেশন রোগ হওয়া থেকে রক্ষা করে। আনারসে থাকা বেটা ক্যারোটিন এটি করে থাকে। নিয়মিত আনারস খেলে এই চোখের এই রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায়।
11.হাড়ের সুস্থতায়:
আনারসে থাকে ম্যাঙ্গানিজ ও ক্যালসিয়াম যা হাড়ের জন্য খুবই দরকারি। ম্যাঙ্গানিজ হাড়কে করে মজবুত আর ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আনারসে থাকা এই ম্যাঙ্গানিজ ও ক্যালসিয়াম হাড়ের এই সমস্যাগুলি হতে প্রতিরোধ করে থাকে।
12.দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায়:
আনারসে থাকা ভিটামিন সি মাড়ির ও দাঁতের সমস্যায় করে করে আনারস খেলে দাঁত জীবাণুমুক্ত থাকে এবং দাত সুরক্ষিত থাকে।
13.ওজন কমায়:
আনারসে থাকা ফাইবার যা ফা কমাতে সাহায্য করে। তাই আনারস ওজন কমানোয় বই কার্যকরী। সকালের নাস্তায় অনান্য ফলের সাথে আনারস রাখলে তা ওজন কমানোয় সহায়তা করে। আনারসকে সালাদ বা জুস করে খাওয়া যায় এক্ষেত্রে।
14.ক্যানসার এবং হৃদরোগোরে উপকার করে:
হ্রদরোগ বা কোষের ক্যানস প্রতিরোধে আনারস খুবই দরকারি একটি ফল। নিয়মিত এটি খেলে হ্রদরোগের ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।
15.ত্বকের যত্নে আনারস:
আনারসের থাকা ক্যালরি শরীরে শক্তির যোগান দেয়। ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে, তুককে বার্ধ্যক্য থেকে রক্ষা করতে আনারসের জুরি নেই। চেহারার ধ্রুণ ও তৈলাক্ত ত্বক মসৃণ ও ঠিক রাখতে আনারসের খুব দরকারি।
16.ক্রিমিনাশক হিসেবে;
পেটের কৃমির সমস্যা দূর করতে সকালে খালি পেটে আনারস খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। ক্রিমিনাশক হিসেবে আনারসের রস খুব কাজ করে।। নিয়মিত রসটি খেলে উপকার পাওয়া যায় খুব।
আরো দেখুনঃ পাথরকুচি পাতার উপকারিতা
আনারসের অপকারিতা | Disadvantages Pineapple
1.এলার্জির আক্রমণ:
যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা আনারস খেলে তা বাড়তে পারে। যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তার আনারস খাওয়ার আগে আনারস কাটার লবণ পানি দিয়ে ধুয়ে তারপর খান তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। তাই আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হবে।
2.রক্তে চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি;
অতিরিক্ত আনারস খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। আনারসের অন্যতম উপাদান হচ্ছে করোড ও সক্রোজ যা রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়ায়। তাই পরিমিত আনারস খাওয়া উচিত ডায়াবেটিস রোগীদের।
3.মুখ ও গলার জন্য ক্ষতিকর:
যাদের এসেডিটির সমস্যা রয়েছে তাদের আনারস কম খাওয়া উচিত। আনারস খেলে পেটে ব্যথা হতে পারে। আনারসে এসিডিটি থাকার কারণে তা গলা ও মুখের এক প্রকার মো সৃষ্টি করে যা মুখ ও গলা জন্য ক্ষতিকর।
4.দাঁতের জন্য ক্ষতিকর:
অতিরিক্ত আনারস দাঁতে সমস্যা তৈরি করতে পারে। যাদের দাঁতে আগে থেকেই বেটি সমস্যা আছে তারা আনারস খেলে দাঁতে শিরশির জনিত সমস্যা হতে পারে এবং মাড়িতে ব্যথা হতে পারে।
5.গর্ভপাত জনিত সমস্যা:
গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে গর্ভপাত জনিত সমস্যা হতে পারে। বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় আনারস এড়িয়ে যাওয়া উচিত। আনারস খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত অবশ্যই।
আরো দেখুনঃ থানকুনি পাতার উপকারিতা.
জিজ্ঞেসিত কিছু প্রশ্ন
আনারস খাওয়ার নিয়ম?
আনারসে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসিডিটি তাই যাদের এসিডিটির সমস্যা আছে তা বেড়ে যেতে পারে। কৃমির সমস্যা দূর করণে আনারস খুব উপকারী। আনারসের রস শরীরের জন্য উপকারী খুব।
বেশি আনারস খেলে কি হয়?
আনারসে থাকে ম্যাঙ্গানিজ ও ক্যালসিয়াম যা হাড়ের জন্য খুবই দরকারি। মাঙ্গানিজ হাড়কে করে মজবুত আর ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আনারসে থাকা এই ম্যাঙ্গানিজ ও ক্যালসিয়াম হাড়ের এই সমস্যাগুলি হতে প্রতিরোধ করে থাকে। আনারসে থাকা ভিটামিন সি মাড়ি ও দাঁতের সমস্যায় করে করে। আনারস খেলে দাঁত জীবাণুমুক্ত থাকে এবং দাত সুরক্ষিত থাকে।
খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা?
আনারসে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সি এবং এনজাইম। এই দুটি উপাদন বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। খালি পেটে এই আনারস খেলে শরীরের উপকার হয় খুব।
আনারসের জুসের উপকারিতা?
আনারসে রয়েছে অনেক বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি। যা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা যেমন : পড়া ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে কাজ করে। ব্রংকাইটিসের ওষুধের বিকল্প হিসেবে আনারস কাঁশি, হাঁপানি, জ্বর ও জন্ডিসের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। গলাব্যাথা, নাক দিয়ে পানি খুবই কার্যকরী।
আনারসের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া?
যাদের এসেডিটির সমস্যা রয়েছে তাদের আনারস কম খাওয়া উচিত। আনারস খেলে পেটে ব্যথা হতে পারে। আনারসে এসিডিটি থাকার কারণে তা গলা ও মুখের এক প্রকার শ্লেমা সৃষ্টি করে যা মুখ ও গলা জন্য ক্ষতিকর।
আরো দেখুনঃ তুলসী পাতার উপকারিতা
পরিসমাপ্তি: উপরোক্ত ইনফোটিতে আমারা আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনেছে। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উপকারিতা। হাড়ের সমস্যা সমাধানে আনারস খুবই উপকারী। এতে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ ও ক্যালসিয়াম। আনারসের ভিটামিন সি দাঁত ও মাড়ির সমস্যায় অনেক বেশি কার্যকরী।
অপরদিকে আনারসে রয়েছে এডিসিটি তাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় আনারস না খাওয়াই ভালো, গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত তাই অতিরিক্ত আনারস না খাওয়াই ভালো।