বিসিএস পরীক্ষার যোগ্যতা
বিসিএস পরীক্ষার যোগ্যতা (শিক্ষাগত, বয়স, নাগরিকত্ব)
গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর সবারই একমাত্র লক্ষ্য থাকে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়া। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন কাজের জায়গা। কারন দেশের প্রতিটি বড় বড় সেক্টরে বিসিএস ক্যাডারদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তাই বিসিএস ক্যাডার হওয়াটা এখন সবারই ঝোঁক অনেক বেশি। আর সেজন্য প্রতিযোগিতাও তুলনামূলক অনেক অনেক বেশি হয়ে থাকে।
বিসিএস পরীক্ষার যোগ্যতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই ঠিকমতো জেনে নেই না। আগে থেকে প্রিপারেশন নিতে এ সম্পর্কে ভালভাবে ধারণা নেওয়া প্রয়োজন। অনেকে অনার্স মাস্টার্সে ভাল সিজিপিএ নেই বলে চিন্তিত থাকেন। ভাবেন আপনি হয়তো বিসিএস দিতে পারবেন না বা টিকবেন না। আবার অনেকে চোখের সমস্যা বা এইরকম বিভিন্ন সমস্যার কারনে মানসিকভাবে পিছিয়ে থাকেন। আসলে এগুলো ভুল।
গুরুত্বপূর্ণ: ৪৪ তম বিসিএস নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি.
আগে থেকে সঠিকভাবে জেনে নিন বিসিএস পরীক্ষার জন্য আসলে আপনার কি কি যোগ্যতা দরকার। আসুন আজকে সঠিকভাবে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নেই বিসিএস পরীক্ষার যোগ্যতা সম্পর্কে যেনো পরবর্তীতে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে আমাদের বিপাকে না পরতে হয়। চলুন তাহলে বিসিএস পরীক্ষার যোগ্যতার পরের অংশে।
বিসিএস পরীক্ষার যোগ্যতা | BCS Exam Qualification
বিসিএস পরীক্ষার যোগ্যতা নিয়ে আমাদের মাথায় অনেক রকম অনেক দুশ্চিন্তা থাকে। গ্রাজুয়েশন থেকেই আমাদের মাথায় এসব চিন্তাগুলো ঘুরপাক খেতে শুরু করে। তবে সমাধান একটাই। সঠিকভাবে জানা। মূলত চারভাবে বিসিএস পরীক্ষার যোগ্যতা যাচাই করা হয়। সেগুলো হলঃ
- ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা।
- বয়সসীমা।
- নাগরিকত্ব।
- শারিরীক যোগ্যতা।
মাত্র এই চারটি দিক বিবেচনা করলেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনি বিসিএস দেওয়ার জন্য যোগ্য কিনা। নিচে এ বিষয়ে আলোচনা করা হল।
বিসিএস এর নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হলে অবশ্যই স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে। স্নাতক ছাড়া এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যায় না। আবার স্নাতকের ফলাফল নিম্নমানের হতে হবে। যেমনঃ এসএসসি ও স্নাতক এই দুইটি পরীক্ষা বিসিএস এর পরীক্ষার যোগ্যতা যাচাই এর জন্য ধরা হয়। এই দুইটি পরীক্ষার যেকোনো একটিতে তৃতীয় শ্রেণী বা সমমান এবং দুইটি তে দ্বিতীয় শ্রেণীর বা সমমান পেতে হবে। এর নিচে ফলাফলকারীরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এই হিসাবটা যারা স্নাতক পড়ছেন বা পড়েছেন তাদের জন্য। যাদের চার বছর মেয়াদি কোর্সে পড়াশোনা করতে হয়।
এবার আসি যারা তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রিতে পড়াশুনা করেন তাদের প্রসঙ্গে। তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রিতে পড়াশুনা করলে আপনি স্নাতক শেষ করেই বিসিএস এর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এইজন্য আপনাকে মাস্টার্স পাশ করতে হবে। মাস্টার্স শেষ করার পর বিসিএস এর পরীক্ষায় আবেদন করতে পারবেন।
গুরুত্বপূর্ণ: জিপিএ, সিজিপিএ গ্রেডিং পদ্ধতি।
বিসিএস এর বয়সসীমাঃ
বিসিএস পরীক্ষার যোগ্যতা যাচাই করার জন্য বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যেকোনো বয়সে আপনি চাইলেই পরীক্ষা দিতে পারবেন না। এর জন্য আপনার যেই যেই বিষয়গুলো জানা দরকার তা নিম্নে দেওয়া হলঃ
সাধারণঃ সাধারণের জন্য বিসিএস পরীক্ষার সার্কুলার দেওয়ার মাসের প্রথম তারিখে বিসিএস এ আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ২১-৩০ বছরের মধ্যে। অর্থাৎ পি এস সি যে মাসে এই পরীক্ষার সার্কুলার জারি করবে সেই মাসের ১ তারিখে ২১-৩০ বছরের মধ্যে বয়স থাকলে আপনি অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ২১ বছরের কম হলে অথবা ৩০ বছরের বেশি হলে আপনি এই পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
বিশেষঃ বিশেষ বলতে মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলেমেয়েদের, প্রতিবন্ধীদের বা স্বাস্থ্য ক্যাডারের আবেদনকারীদের কথা বোঝানো হয়েছে। এদের বয়সসীমা সাধারণের চেয়ে ২ বছর বেশি। ৩২ বছর পর্যন্ত এরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
বিশেষ(উপজাতি): বিশেষদের মধ্যে আবার উপজাতি রয়েছে। যেমন সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ক্যাডারের উপজাতি। এদের ও ২ বছর বয়সসীমা বেশি দেওয়া হয়। অর্থাৎ ৩২ বছর পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ আছে।
বিসিএস এর নাগরিকত্বঃ
বিসিএস পরীক্ষার যোগ্যতা যাচাই করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারন বিসিএস এ আবেদন করতে পারবে কিনা তা দেশের নাগরিকত্বের উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব না থাকলে এই আবেদন করা সম্ভব নয়। আবার সরকারের অনুমতি ছাড়া বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করলেও বিসিএস আবেদন করতে পারবেন না। তাই বিসিএস পরীক্ষায় নাগরিকত্ব বেশ বড় একটা ইস্যু।
বিসিএস এর শারীরিক যোগ্যতাঃ
শারীরিক যোগ্যতা প্রথমেই যাচাই করা হয় না। আগে প্রিলিমিনারি, রিটেন ও ভাইভা পরীক্ষা দিতে হয়। এই পরীক্ষাগুলোতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরে মূলত শারীরিক যোগ্যতা দেখা হয়। শারীরিক যোগ্যতার মধ্যে অনেকগুলো দিক রয়েছে। যেমনঃ ওজন, বক্ষ, চোখ, উচ্চতা, মূত্র পরীক্ষা ইত্যাদি। লিখিত, ভাইভা সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও যদি মেডিকেল টেস্টে উত্তীর্ণ না হতে পারেন তাহলে নিয়োগ পাবেন না। তাই আগে থেকে এগুলো জেনে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য যথাসাধ্য প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
মেডিকেল টেস্টে যা যা টেস্ট করা হয়ে থাকেঃ
- উচ্চতা, ওজন ও বক্ষ পরিমাপ।
- মূত্র পরীক্ষা।
- দৃষ্টি শক্তি পরীক্ষা
উচ্চতা, ওজন ও বক্ষ পরিমাপঃ
আরো দেখুন: PSC, JSC, JDC, SSC, HSC, BCS, Full Meaning
পুরুষঃ পুরুষের ক্ষেত্রে বিসিএস এ আবেদন করতে হলে সর্বনিম্ন উচ্চতা ৫ ফুট বা তার বেশি হতে হবে। সর্বনিম্ন ওজন হতে হবে ৪৯.৯৯ কেজি। পুলিশ ও আনসার ক্যাডারদের জন্য উচ্চতা লাগবে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি এবং ওজন লাগবে ৫৪.৫৪ কেজি। তবে ওজন রিকোয়ারমেন্টের চেয়ে কম থাকলে বাড়ানো জন্য সময় ও সুযোগ দেওয়া হবে।
মহিলাঃ মহিলার ক্ষেত্রে বিসিএস এ আবেদন করতে হলে সর্বনিম্ন উচ্চতা ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি হতে হবে। আর সর্বনিম্ন ওজন হতে হবে ৪৩.৫৪ কেজি। তবে পুলিশ ও আনসার মহিলা ক্যাডারদের জন্য উচ্চতা ৫ ফুট লাগবে এবং ওজন লাগবে ৪৫.৪৫ কেজি। তবে ওজন রিকোয়ারমেন্টের চেয়ে কম থাকলে বাড়ানো জন্য সময় ও সুযোগ দেওয়া হবে।
বক্ষ পরিমাপঃ
জুতাসহ উচ্চতা (সেঃমিঃ) | পূর্ণ প্রসারণের মাধ্যমে বক্ষ পরিমাণ (সেঃমিঃ) | সর্বোচ্চ প্রসারণের মাত্রা (সেঃমিঃ) |
১৫২.৪০ থেকে ১৬৫.১০ সেঃমিঃ এর নিম্নে | ৭৬. ২০ | ৫.০৮ |
১৬৫.১০ থেকে ১৭২.৭২ সেঃমিঃ এর নিম্নে | ৭৮.৭৪ | ৫.০৮ |
১৭২.৭২ থেকে ১৭৭.৮০ সেঃমিঃ এর নিম্নে | ৮১.২৮ | ৫.০৮ |
১৭৭.৮০ থেকে ১৮২.৮৮ সেঃমিঃ এর নিম্নে | ৮৩.৮২ | ৫.০৮ |
১৮২.৮৮ সেঃমিঃ থেকে তদুর্ধ্ব | ৮৬.৩৬ | ৫.০৮ |
মূত্র পরীক্ষাঃ মূত্র পরীক্ষা মেডিকেল টেস্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মূত্র পরীক্ষাগার থেকে সরাসরি রিপোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। তারা রিপোর্ট দেখে মূত্র পরীক্ষার ফলাফল বের করে আনে। এই স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক একটি মেডিকেল টিম গঠন করেন। এই পরীক্ষা বাদে বাকি সব পরীক্ষায় পাশ করে গেলে এই পরীক্ষার ফলাফল বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনকে জানানো হয়।
দৃষ্টি শক্তি পরীক্ষাঃ
মানদণ্ড ১
ডান চোখ | বাম চোখ | |
দূর দৃষ্টি | ৬/৬ | ৬/৬ |
নিকট দৃষ্টি পঠন | ০.৬/টি আই/ এন৫ | ০.৬/যে আই / এন৫ |
মানদণ্ড ২
ত্রুটিমুক্ত চোখ | ত্রুটিপূর্ণ চোখ | |
দূর দৃষ্টি | ৬/৬ | গ্লাস/চশমা ছাড়া ৬/৬০ এর নিম্নে নহে সংশোধিত হওয়ার পর চশমাসহ ৬/১২ এর নিচে নহে |
নিকট দৃষ্টি পঠন | ০.৬/টি আই/ এন৫ | ১/টি ২/ এন৬ |
মানদণ্ড ৩
ত্রুটিমুক্ত চোখ | ত্রুটিপূর্ণ চোখ | |
দূর দৃষ্টি | গ্লাস/চশমা ছাড়া ৬/৬০ এর নিম্নে নহে সংশোধিত হওয়ার পর চশমাসহ ৬/৬ এর নিচে নহে | গ্লাস/চশমা ছাড়া ৬/৬০ এর নিম্নে নহে সংশোধিত হওয়ার পর চশমাসহ ৬/১২ এর নিচে নহে |
নিকট দৃষ্টি পঠন | ০.৬/টি আই/ এন৫ | ১/টি৪/এন৮ |
আরো দেখুন: বিসিএস অনলাইন আবেদন
উপসংহার: বিসিএস বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জব সেক্টর। এই পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার আসল মেধা যাচাই করার সুযোগ রয়েছে। তবে কম্পিটিশন বেশি আর সিট তুলনামূলক কম হওয়ার কারন এখানে ঠাঁই পাওয়া বেশ কঠিন। আবেদন করার যোগ্যতা খুব বেশি জটিল না। বলতে গেলে বয়সসীমা থাকলে যেকেউ আবেদন করতে পারে। আসল মেধা যাচাই করার জন্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। তবেই না বোঝা যাবে আপনি বিসিএস এর ক্যাডার হওয়ার যোগ্য কিনা। আশা করি বিসিএস পরীক্ষার যোগ্যতা সম্পর্কিত সকল তথ্য পেয়ে গেছেন। আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন আমাদের কমেন্ট সেকশনে।