ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটুকু হবে তা অনেকে অনেক কথা বলেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এটা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এই রকমের কোন প্রজ্ঞাপনও জারি হয়নি এখনও। যদি জারি হতো তাহলে সরকারিভাবেই তা সবাইকে জানিয়ে দেয়া হতো।
অনেকেরই প্রশ্ন থাকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটুকু? এর উত্তরে বলা যায় এটার কোন স্পষ্ট ধারণা সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়নি। তাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে হবে।
মো. হায়দার আলী যিনি স্থানীয় সরকার বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা তিনি গণমাধ্যকে বলেছেন যে, “চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সরকার কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। এটি নিতান্তই গুজব। এ ধরণের গুজব থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”
আরো দেখুন: ভোটার তালিকা দেখার উপায়.
চেয়ারম্যান মেম্বারদের শিক্ষাগত যোগত্য
চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের শিক্ষাগত যোগ্যত কেমন হবে তা কিছু এখনও সরকারিভাবে জানা যায়নি। এটার কোন বাধ্যবাধকতা নেই যে কতটুকু হবে শিক্ষাগত যোগ্যতা। তাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যত সম্পর্কে জানতে হবে।
মেম্বার শিক্ষাগত যোগ্যতা
আমাদের দেশে আমরা দেখতে পাই যে মেম্বার পদপ্রার্থী যাদের বেশিরভাগেরই শিক্ষাগত যোগ্যত এসএসসির ও কম।
অনলাইনে এই বিষয়ে অনেক কথা হয়েছে যে মেম্বার পদপ্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা অন্তত এসএসসি পাশ হওয়া উচিত। অনেকেই এই বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন আবার অনেকেই দ্বিমত। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে সরকারি মন্ত্রণালয় থেকে কিছু জানানো হয়নি যে কতটুকু শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে একজন বাংলাদেশের নাগরিক মেম্বারপদপ্রার্থী হতে পারবেন।
মেম্বার হওয়ার যোগ্যতা বয়স:
মিম্বারপদের জন্য আবেদন করতে অভ্যুত ২৫ বছর বয়স লাগে। নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে যে, এর নিচে বয়সী কোন ব্যাক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
চেয়ারম্যান শিক্ষাগত যোগ্যতা
শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি বৈষম্যের একটি যুক্তিকে তুলে ধরে। তাই স্থানীয় নির্বাচনে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি আনা হচ্ছে না। সরকার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কিছু বলা হয়নি।
নির্বাচন কমিশনারকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেছেন যে, নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা হওয়ায় এই ব্যাপারে তিনি কোন মতামত দিতে পারবেন না। তাই চেয়ারম্যানের শিক্ষাগত যোগ্যতার কতটুকু হবে তা বলা যাচ্ছে না।
চেয়ারম্যান হওয়ার যোগ্যতা বয়স:
চেয়ারম্যানপদের জন্য আবেদন করতে অন্ত্যত ২৫ বছর বয়স লাগে। নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে যে, এর নিচে বয়সী কোন ব্যাক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা যুক্ত হচ্ছে না।
চেয়ারম্যান-মেম্বারদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি গুজব
স্থানীয় সরকার বিভাগে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের নূন্যতম এইচএসসি ও এসএসসি করার কথা উঠেছে। কিন্তু সরকার পক্ষ থেকে কোন ধরণের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।
অনলাইনে একটি কথা ভেসে বেড়াচ্ছে যে মেম্বার পদপ্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস ও চেয়ারম্যানপদপ্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাশ লাগবে। যা একটি যোগ্য লিডারশীপের জন্য খুবই দরকার আধুনিক বিশ্বায়ানের যুগে। কিন্তু এই বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথা, বানোয়াট ও গুজব বলেই নির্বাচন কমিশন থেকে ও স্থানীয় সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যুক্ত হচ্ছে না শিক্ষাগত যোগ্যতা
জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সময় দলীয়গতভাবে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ফোরামে কোন প্রকার আলোচনাই হয়নি। বিভিন্ন আইনপ্রণীতা বিষয়টির দুটি দিকই উল্লেখ করেছেন ইতিবাচক ও নেতিবাচক। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা যুক্ত হচ্ছে না।
শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটুকু হবে তা নির্ধারণ করা হলে “বৈষম্যের” একটি ব্যাপার থাকে। কারণ অনেকেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা অনেক বেশি থাকে কিন্তু একটি বিশেষ বিষয়ে তার যোগ্যতা আর দক্ষতা অনেক বেশি থাকতেই পারে। শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়ে কখনোই ব্যাক্তির দক্ষতাকে যাচাই করা যায় না।
আবার যার জনপ্রতিনিধি হবেন তারা সবাই প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তাদের দায়িত্বশীলতা, স্মার্টনেস ও কাজের ইফিশিয়েন্ট করার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি যোগ করা যায়।
সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ একটি পত্রিকার কাছে বলে যে, “স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থীদের সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসটি বা এসএসসি করার কোনো উদ্যোগ নেই আমাদের। এ বিষয়ে ফেসবুকে যে ব্রটি ভাসছে, সেটি গুজব।”
আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণ সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন যে, “শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি দলীয়ভাবে এখনও আলোচনা করা হয়নি। সাধরণত দেখা যায় যে, নির্বাচনী পদগুলোর জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি থাকে না। উপমহাদেশের ইতিহাসে আমি এটি দেখিনি। দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া।”
আবার একটি প্রশ্ন থেকেই যায় যে, শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করলে তা আইনগতভাবে সিদ্ধ হবে কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরে আইনবিদ ড. সেলিম মাহমুদ বলেন যে, “এটির পক্ষে-বিপক্ষে যৌক্তিক মতামত দেয়ার সুযোগ আছে। প্রথমত সংবিধানের আলোকে বা আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। সে দৃষ্টিকোণ বিবেচনা করলে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের সুযোগ নেই। কারণ একটা যুক্তি আসতে পারে যে, যোগ্যতা দিয়ে বৈষম্য করা হচ্ছে।
আরেকটি বিষয় সাধারণ যুক্তি আসতে পারে যে, যিনি স্থানীয় প্রতিনিধি হবে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, স্মার্টনেস এগুলো নির্ধারণ করা যেতে পারে। চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাউন্সিলর এই পদগুলো সরকারি স্থানীয় নির্বাচনী পদ। স্থানীয় এই নির্বাচনের মাধ্যমেই স্থানীয় নেতা থেকে তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে যান। তাই শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি যোগ করা যেতে সারে। নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হচ্ছে, এই বিষয়ে তাদের কাছে কোন প্রকার তথ্য নেই আপতত। এগুলো সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক বিষয়।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তা আইনে পরিণত করবেন তারা। নির্বাচন কমিশন শুধু নির্বাচনের আয়োজন ও তত্ত্বাবধান করে থাকে।
কিন্তু অনলাইন মাধ্যমে এর পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি তর্কের শেষ নেই। অনেকেই শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টিকে আধুনিক ও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এটিকে যুগান্তরী সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন। তাই এটি নির্ধারণ করা প্রয়োজন সময়ের দাবি হিসেবে দেখছেন অনেকে জ্ঞানী-গুণীরা।
পরিসমাপ্তি: সমাপ্তিতে এটাই বলা যায় যে, শিক্ষাগত বিষয়টি যোগ হচ্ছে না নির্বাচন কমিশনের যোগ্যতা-অযোগ্যতার মধ্যে। যেহেতু এটি দলীয়ভাবেগ্রহণ করা হয়নি এবং কোন আইনও পাশ হয়নি তাই এই বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনও চুপ। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা যুক্ত হচ্ছে না। তাই সমগ্র বিষয়টি যে স্পষ্ট গুজব তা আপনারা বুঝতেই পারছেন এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে।