দৌলতখান উপজেলার ইতিহাস
দৌলতখান বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের অধীনে ভোলা জেলার একটি অন্যতম শহর। মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরটি দৌলতখান উপজেলার প্রধান শহর এবং উপজেলা সদর দপ্তর হিসেবে কাজ করে।
দৌলতখানের পুরোনো ইতিহাস থেকে জানা যায়, এই শহরের নামকরণ করা হয়েছিল স্থানীয় এক সম্ভ্রান্ত পরিবার “দৌলত খাঁদের” নামানুসারে। ঐতিহাসিকভাবে, দৌলতখান ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র।
দৌলতখান নামকরণের ইতিহাস
দৌলতখান নামটির ইতিহাস বহু পূর্বের। মুঘল আমলে যখন বাংলা সুবাহদারি স্থাপিত হয়, তখন সুবেদার নিযুক্ত হন শায়েস্তা খান। মুঘল বাহিনীর দুর্ধর্ষ সেনাপতি শাহাবাজ খাঁ তার একজন সাহসী সামন্ত সেনা দৌলত খাঁর সহায়তায় পর্তুগীজ জলদস্যু ও মগদেরকে বিতাড়িত করে এই এলাকায় বসতি স্থাপন করেন।
মুঘল রীতিনীতি অনুসারে, মেঘনা তীরের বিজিত এলাকাকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। ইলিশা নদীর উত্তর দিকের অংশের নাম রাখা হয় উত্তর শাহাবাজপুর এবং দক্ষিণ অংশের নামকরণ করা হয় দৌলতখান।
নামকরণের বিকল্প ব্যাখ্যা-
কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, দৌলতখান নামটি এসেছে দৌলত (সম্পদ) এবং খান (বাজার) শব্দ থেকে। কারণ, এই এলাকাটি এক সময় সমৃদ্ধ বাজার হিসেবে পরিচিত ছিল।
সন্দ্বীপ: ইতিহাসের এক অধ্যায়
মুঘল আমলের প্রথম দিকে সন্দ্বীপ ছিল আরাকান রাজ্যের মগ, জলদস্যু ও পর্তুগীজ ফিরিঙ্গিদের আশ্রয়স্থল। ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলার মুঘল সুবেদার মীর জুমলার মৃত্যুর পর সম্রাট আওরঙ্গজেব তার মামা এবং সম্রাজ্ঞী নুরজাহানের ভাই আসক খানের পুত্র শায়েস্তা খানকে বাংলার সুবেদার নিযুক্ত করেন।
শায়েস্তা খান চট্টগ্রামের পর্তুগীজদের দুর্গ জয় করার পর মুঘল বাহিনীর সেনাপতি শাহাবাজ খাঁ ও তার সাহসী সামন্ত সেনা দৌলত খাঁর সহায়তায় বঙ্গোপসাগর ও মেঘনার সঙ্গমস্থল সন্দ্বীপ এবং মেঘনার উপকূলে পর্তুগীজ জলদস্যু ও আরাকানের মগদেরকে পরাজিত করে এই এলাকায় মুঘল আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন।
মুঘলদের আগমন-
মুঘলদের আগমনের পূর্বে সন্দ্বীপ ছিল একটি স্বাধীন রাজ্য। আর মগ রাজারা এই এলাকায় শাসন করতেন। তবে পর্তুগীজরাও এই এলাকায় তাদের প্রভাব বিস্তার করেছিল। তারা সন্দ্বীপে একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিল এবং এখান থেকে জলদস্যুতা চালাত।
শাহাবাজ খাঁর অভিযান-
১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে শাহাবাজ খাঁ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আদেশে সন্দ্বীপ আক্রমণ করেন। তার সঙ্গে ছিলেন সাহসী সেনাপতি দৌলত খাঁ। দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর শাহাবাজ খাঁ মগ ও পর্তুগীজদের পরাজিত করে সন্দ্বীপ দখল করেন।
মুঘল আমলে সন্দ্বীপ-
মুঘল আমলে সন্দ্বীপ একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়। এখান থেকে মসলিন, সুতি, এবং অন্যান্য পণ্য রপ্তানি করা হত। মুঘলরা সন্দ্বীপে একটি দুর্গ নির্মাণ করে এবং এখানে একটি সেনানিবাস স্থাপন করে।
মুঘল আমলের পর-
মুঘল আমলের পর সন্দ্বীপ ব্রিটিশদের অধীনে আসে। ব্রিটিশরা এখানে একটি চা-বাগান স্থাপন করে। বর্তমানে সন্দ্বীপ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র।
দৌলতখান: ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক অপূর্ব মেলবন্ধন
ভোলার পূর্বপ্রান্তে মেঘনার তীরে অবস্থিত দৌলতখান শহর। প্রচলিত কথায় এবং ইতিহাসের ভাষায় এটি ভদ্র লোকদের বাসস্থান হিসেবে পরিচিত।
ইতিহাসের পাতায়-
১৬৮৬ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে শাহাবাজপুর, হাতিয়া, সন্দ্বীপ সহ আরও ক্ষুদ্র দ্বীপ, সমুদ্রউপকূল ভাগের শত শত মানুষ ও গৃহপালিত পশু জলোচ্ছ্বাসে অকালে প্রাণ হারায়।
একই ঘূর্ণিঝড়ে দৌলতখানের শাহ মুহাম্মদ ও আমির মুহাম্মদ স্বীয় পরিবারের লোকজন নিয়ে পানশি/গদু নৌকায় চড়ে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে শিকলবাহ গ্রামে নোঙ্গর করেন। পরবর্তীতে শাহ মুহাম্মদ চট্টগ্রামে মোগল আমলের ফৌজদারদের সহায়তা করার জন্য শাসন কাজে একজন বকশি এবং রাজস্ব কাজে একজন দেওয়ান নিয়োগ দিয়েছিলেন।
দৌলতখান: এক ঐতিহাসিক শহরের গল্প
ভোলা জেলার পূর্ব প্রান্তে মেঘনার তীরে অবস্থিত দৌলতখান শহর। এক সময় ভোলা অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এই শহরের ইতিহাস দীর্ঘ ও ঐতিহ্যবাহী।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট-
বকশি মোহাম্মদ নইম (১৬৮৯-১৬৯৯) এবং দেওয়ান মোহাম্মদ খানের (১৬৮৮-১৬৯৯) অধীন রাজস্ব সংগ্রাহক কর্মচারী পদে নিযুক্ত হন। শতবর্ষ পূর্বে দৌলতখানে মহকুমা সদর স্থাপিত হয়েছিল। ১৮৪৫ সালে ভোলাকে নোয়াখালী জেলার অধীনে মহকুমা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং এর প্রশাসনিক কেন্দ্র স্থাপিত হয় দৌলতখান শহরে।
তখন সর্বপ্রথম দৌলতখান শহর মহকুমা শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৮ সালে নাগরিক সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে দৌলতখান পৌরসভা স্থাপিত হলে এ শহর পৌরশহরের মর্যাদা লাভ করে।
দৌলতখান উপজেলার অর্থনৈতিক ইতিহাস
ভোলা জেলার পূর্ব প্রান্তে মেঘনার তীরে অবস্থিত দৌলতখান শহর। ঐতিহাসিক ঐতিহ্য এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত এই শহরটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্যও পরিচিত।
জনজীবিকা-
দৌলতখান শহরের বেশিরভাগ জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মেঘনা নদীর উপর নির্ভরশীল। মৎস্য জীবীরা নদী থেকে ইলিশ, রুই, কাতলা, পমফ্রেট, চিংড়ি সহ বিভিন্ন ধরণের মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। কৃষকরা ধান, পাট, সবজি, সুপারি, আখ ইত্যাদি উৎপাদন করে। এছাড়াও, শহরের অনেক মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, এবং অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত।
অর্থনীতি-
দৌলতখান থেকে জাতীয় ইলিশ মাছ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ও বিদেশে রপ্তানী হয়ে থাকে। এ এলাকায় উৎপাদিত সবজি ও সুপারি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। গুপ্তগঞ্জ বাজার, মিয়ার হাট, মৃধার হাট, বাংলাবাজার -ইত্যাদি হল দৌলতখান শহরের হাট-বাজার এবং বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্রস্থল। এখানে অটো রাইস মিল, ইট ভাটা, বিস্কুট ফ্যাক্টরী, ফিলিং স্টেশন এবং ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এক নজরে দৌলতখান পৌরসভা ও স্থানীয় সরকার
ভোলা জেলার পূর্ব প্রান্তে মেঘনার তীরে অবস্থিত দৌলতখান শহর। ঐতিহাসিক ঐতিহ্য এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত এই শহরটি একটি স্থানীয় সরকার সংস্থা, দৌলতখান পৌরসভা দ্বারা পরিচালিত হয়।
পৌরসভার কার্যক্রম-
দৌলতখান পৌরসভা ৯ টি ওয়ার্ড এবং ৯ টি মহল্লায় বিভক্ত। ২.৪৯ বর্গ কি.মি. আয়তনের দৌলতখান শহরের পুরোটাই পৌরসভা দ্বারা শাসিত হয়। পৌরসভার মূল কাজ হলো শহরের নাগরিকদের পৌরসেবা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা। এর মধ্যে রয়েছে: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, জলাভাব, বিদ্যুৎ সরবরাহ ইত্যাদি।
আপনার জন্য আমাদের বার্তা
এই আর্টিকেলে দৌলতখান উপজেলার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের টিম সেই ইতিহাসের তথ্য গুলো অনলাইন সোর্স থেকে সংগ্রহ করেছে। তাই এই ইতিহাসে নতুন তথ্য যুক্তকরন ও ভুল সংশোধনে নিযুক্ত থাকবে। যেন আপনারা আমাদের থেকে দৌলতখান উপজেলার সঠিক ইতিহাস জানতে পারেন।
More: ভোলা জেলার ইতিহাস.