জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় | শিশুর জ্বর ১০২ হলে করণীয়
আমাদের শরীরে স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রা থাকে ৯৮ ডিগ্রি। স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে তাপমাত্রা বাড়লেই তাকে জ্বর বলা হয়। সাধারণত যে কোন রোগের প্রধান উপসর্গ প্রকাশ পায় জ্বর এর মাধ্যমে। আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় অধিকাংশ মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হয় বলে ধারণা করা হয়।
আমরা সবাই কমবেশি জ্বরে আক্রান্ত হলেও শিশু এবং বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশী এর কবলে পরেন। এছাড়া ও ঠাণ্ডা/ সর্দি লাগলে, মশা কামড়ালে, রোগ প্রতিরোধ কমে গেলে ঘনঘন জ্বর, পেটের সমস্যা ছাড়াও আরো নানা কারণে জ্বর হতে পারে। জ্বর হয়েছে কিনা তা কিছু লক্ষণ খেয়াল করলেই বুঝা যায়। আসুন জেনে নেই জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো।
জ্বর এর লক্ষন
- => তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর বেশী হবে।
- => প্রচন্ড মাথা ব্যথা এবং চোখ জালাপোড়া করা।
- => শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা।
- => ক্ষুদামন্দা এবং শারীরিক ভাবে দুর্বল অনুভব করা।
- => শীত শীত অনুভূত হওয়া এবং শরীর কাপুনি দেয়া।
আরো দেখুনঃ
জ্বর হলে করণীয় কি?
আমরা অনেকেই মনে করি যে, জ্বর হলো একটি রোগ। কিন্তু যারা এই বিষয়টি মনে করি তাদের ধারণা সম্পন্ন ভুল। কারণ জ্বর কোন ধরনের রোগ নয়। বরং এই জ্বর হল বিভিন্ন রোগের লক্ষণ। অর্থাৎ আপনার শরীরে বর্তমানে জ্বর আছে। তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে যে, এর পরবর্তীতে আপনার শরীরের মধ্যে আরো অন্য কোন রোগ এর প্রদুর্ভাব দেখা দিবে। তবে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সাহায্য যখন কোন একজন ব্যক্তির শরীর আক্রান্ত হয়। তখন স্বাভাবিক ভাবে সেই ব্যক্তির শরীর পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি তাপমাত্রা বেড়ে যায়। আর যখন আপনি জানতে পারবেন যে। আপনার শরীরের মধ্যে জ্বর রয়েছে। তখন আপনাকে বেশ কিছু করনীয় কাজ করতে হবে। যেমন:
- যখন আপনার শরীর জ্বরে আক্রান্ত হবে। তখন আপনাকে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা যাবে না। বরং আপনাকে হালকা কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে।
- জ্বর আসলে আমরা অধিকাংশ সময় জলপট্টি বা বরফ ব্যবহার করে থাকি। তবে আপনি এই পদ্ধতি টি অনুসরণ করার পাশাপাশি আপনার বগলের নিচে বরফ কিংবা জলপট্টি ব্যবহার করতে পারেন।
- যখন আপনার শরীরে অতিরিক্ত মাত্রার জ্বর থাকবে। তখন আপনাকে তরল পুষ্টিকর খাবার গুলো খেতে হবে। তবে ভুলেও আপনি অতিরিক্ত খাবার একসাথে খেতে যাবেন না।
- একটি মানুষের শরীরে যখন জ্বর হয়। তখন সেই মানুষটি কে যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়ার দরকার। এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ঘুমানো উচিত।
- যখন আপনার শরীরে জ্বর লক্ষ্য করা যাবে। তখন আপনি পরিমিত পরিমাণ পানি পান করার চেষ্টা করবেন। কারণ জ্বর হলে শরীরের মধ্যে পানি শূন্যতার আশঙ্কা থাকে।
জ্বর হলে করণীয় কি তার প্রাথমিক বিষয় গুলো সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যারা আসলে জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় খুঁজে থাকেন। তারা এই উপায় গুলো অনুসরণ করলে জ্বরের প্রদুর্ভাব থেকে মুক্তি পাবেন।
জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে হালকা শরীর গরম হলেই আমরা অনেকেই জ্বরের ওষুধ খেয়ে ফেলি। মাথা একটু ঝিমঝিম করছে, কিংবা রাস্তায় হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া এমন সকল কিছুর মনে হয় একটাই সমাধান, নাপা কিংবা প্যারাসিটামল।
কিন্তু জানেন কি চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর উপরে না হলে কোনভাবেই জ্বর এর ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। কারণ আমাদের সবার শরীরের নিজস্ব একটা প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকে। যখন তখন নিয়ন না মেনে জ্বর এর ওষুধ খেয়ে আমরা নিজেদের বিপদ ডেকে আনছি। আর তাই এই অসচেতনমূলক কাজ থেকে আমাদের সকলের বিরত থাকা উচিৎ।
জ্বর হলে জ্বর কমানোর ঘরোয়া কিছু উপায় আছে, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি ওষুধ না খেয়ে দিব্যি জ্বর দূর করতে পারবেন। আসুন আজকে আমরা জেনে নেই কিছু জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়.
১। শরীর স্পঞ্জ করা
জ্বর হল আমাদের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক এর তুলনায় বেড়ে যাওয়া। এখন তাহলে প্রশ্ন হল শরীরের তাপমাত্রা কিভাবে কমানো যায়? কুসুম গরম পানিতে গামছা বা রুমাল ভিজিয়ে গা বার বার স্পঞ্জ করা। অনেকে হয়ত ভাবতে পারেন ঠাণ্ডা পানি দিয়ে স্পঞ্জ করলে আরও দ্রুত ঠাণ্ডা হবে।
কিন্তু জ্বর কমানোর জন্য ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার ঠিক হবে না কারণ জ্বর এর কারণে অনেকেরই শীত শীত অনুভূত হয়। তাই এই সময় একেবারে ঠাণ্ডা পানি স্পঞ্জ করলে রোগীর আরও বেশী কাপুনি আসতে পারে।
২। আদা
জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় মদ্ধে অন্যতম হচ্ছে আদা। আদার অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং একসাথে এটি শরীরের তাপমাত্রা কমায়।
আদা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। যেমনঃ আদা কুচি করে ফুটন্ত পানির মধ্যে দিয়ে ২-৩ মিনিট ফুটাতে হবে। এরপর এই আদা পানি মগে করে চায়ের মত করে খেলে দ্রুতই আরাম বোধ হয়। গরম কোন খাবার খেলে শরীর গরম হয় এবং শরীর ঘামে। শরীর ঘামানোর ফলে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায় দ্রুতই।
৩। তুলসি পাতা
কমবেশি আমাদের প্রায় বাসাতেই তুলসি গাছ দেখতে পাওয়া যায়। যদিও আমরা অনেকেই জানি সর্দি, কাশির ক্ষেত্রে তুলসি পাতা খুব উপকারি। কিন্তু তুলসি পাতা শুধুমাত্র সর্দি, কাশির জন্য উপকারি তা নয়। তুলসি পাতা শরীরের জ্বর কমাতেও বেশ কার্যকরী। জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় এর মধ্যে তুলসি পাতা অন্যতম।
পানি এবং তুলসি পাতা একত্রে গরম করে সেই পানি প্রতিদিন সকালে পান করলে জ্বর খুব দ্রুত কমে যায়। তুলসি পাতাতে থাকে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান যা শরীরের মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
দেখুনঃ তুলসী পাতার উপকারিতা.
৪। মধু
জ্বর কমাতে মধুর বিকল্প যেনো কিছুই হয় না। আমাদের প্রায় সকলের বাড়িতে মধু থাকেই। আর এই মধুর সাথে অর্ধেকটা লেবুর রস এবং সাথে কুসুম গরম পানি মিশিয়ে যদি পান করা হয় তবে জ্বর কমে যায়।
৫। গ্রিন টি
আমাদের অনেকের বাসাতে গ্রিন টি যেনো এখন হাতের নাগালে। গ্রিন টি শুধু যে শরীরের মেদ কমায় তা কিন্তু নয়। বরং শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে সাহায্য করে। শরীরে জ্বর হলে এক কাপ গ্রিন টি যদি পান করা যায় তবে শরীরের জ্বর কমতে শুরু করে।
৬। দারুচিনি
দারুচিনিতে আছে অ্যান্টিফাংগাল, অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল উপাদান। আর এই দারুচিনিই হতে পারে জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় মধ্যে অন্যতম। দারুচিনির সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে শরীরের বিভিন্ন ভাইরাস জনিত সংক্রমণ কমতে থাকে। ফলে শরীরে জ্বর হলেও তা কমিয়ে যেতে সাহায্য করে এই দারুচিনি।
শিশুর জ্বর ১০২ হলে করণীয়
জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো জানার পাশাপাশি। আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন। যারা আসলে জানতে চায় যে, শিশুর জ্বর ১০২ হলে করণীয় কি। যদি আপনার ঘরের শিশুর জ্বর ১০২ হয়। তাহলে আপনি বেশ কিছু করণীয় কাজ করতে পারবেন। যেমন:
- যখন আপনার শিশুর জ্বর ১০২ হবে। তখন আপনার শিশুর মলদ্বারের মধ্যে প্যারাসিটামল সাপোজিটরি ব্যবহার করতে হবে।
- আপনার শিশুকে যথেষ্ট পরিমাণে খাবার স্যালাইন খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন।
- সেই সাথে জ্বরে আক্রান্ত হওয়া আপনার শিশু কে শরবত এবং বিভিন্ন প্রকারের পুষ্টিকর ফলের রস খাওয়াবেন।
- মনে রাখবেন, আপনার শিশুর জ্বর ১০২ হলে পরিমিত পরিমাণে তরল খাবার খাওয়াবেন।
- এর বাইরেও যে সকল খাবার স্বাভাবিক সে গুলো খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন।
- আর এই খাবার গুলো খাওয়ানোর পাশাপাশি। আপনি যত দ্রুত সম্ভব অভিজ্ঞ কোন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
তো একটি শিশুর জ্বর ১০২ হলে করণীয় কি এই বিষয় টি নিয়ে আমি কিছু করণীয় কাজ উল্লেখ করেছি। আর এই করণীয় কাজ গুলো করার পাশাপাশি। অবশ্যই আপনি ভালো একটি ডক্টরের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিবেন। কারণ উপরে আমি আপনাকে বলেছি যে। জ্বর কোন ধরনের রোগ নয়। বরং জ্বর অন্যান্য রোগের আভাস দিয়ে থাকে।
How To Reduce Fever At Home FAQ
Q: দ্রুত জ্বর কমানোর উপায় কি?
A: যখন আপনার শরীর জ্বরে আক্রান্ত হবে। এবং আপনি যদি দ্রুত জ্বর কমানোর উপায় খুঁজে থাকেন। তাহলে আমি আপনাকে বলব যে। সেই সময়ে আপনার প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। এই ধরনের ফলমূল গুলো খেতে হবে। আর ভিটামিন সি যুক্ত ফল গুলো হল, কমলা, জাম্বুরা, সবুজ, আপেল, মালটা ইত্যাদি। এর পাশাপাশি আপনি চাইলে আনারস এর রস খেতে পারেন। যে গুলো খেলে আপনার জ্বর খুব দ্রুত কমে যাবে।
Q: কত ডিগ্রী তাপমাত্রায় জ্বর হয়?
A: একজন মানুষের শরীরের তাপমাত্রা যেটাই হোক না কেন। আপনি যদি আন্তর্জাতিক মানদন্ড এর দিকে লক্ষ্য করেন। তাহলে দেখতে পারবেন যে তাদের মতে ১০০.৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা কে জ্বরের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এবং কোন একজন মানুষের শরীরে যখন এই তাপমাত্রা বিরাজমান থাকে। তখন সেই ব্যক্তি কে অসুস্থ বলে ধরা হয়।
Q: জ্বর এর ইংরেজি কি?
A: অনেক সময় আমরা ভুলে যাই যে, জ্বর এর ইংরেজি Fever.
Q: নাপা সিরাপ এর কাজ কি?
A: আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে নাপা সিরাপ এবং নাপা ট্যাবলেট ব্যাপক ভাবে পরিচিত। আর সে কারণেই আমরা অনেক সময় জানতে চাই যে। নাপা সিরাপ এর কাজ কি। তো অধিকাংশ সময় এই নাপা সিরাপ শিশুদের জ্বর প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োগ করা গেলেও। এই নাপা সিরাপ এর আরো অনেক ধরনের কাজ রয়েছে। যেমন:
- নাপা সিরাপ শরীরের ব্যথা কমিয়ে দেয়।
- এই সিরাপ টি স্নায়ু প্রবাহ জনিত ব্যথা কমিয়ে দেয়।
- যদি আপনার কানে ব্যাথা থাকে। তাহলে নাপা সিরাপ সেই ব্যথা কমিয়ে দিবে।
- যদি আপনার শরীরের কোন অংশ মচকে যায়। তাহলে সেই অংশের ব্যথা নাপা সিরাপ কমিয়ে দিবে।
মূলত অধিকাংশ সময় এই নাপা সিরাপ জ্বরের ক্ষেত্রে সময় ব্যবহার করা হলেও। একজন মানুষের শরীরের ব্যথা কমিয়ে দেয়ার জন্য। নাপা সিরাপ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সর্বশেষ বলা যায়, জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় অবলম্বনের পাশাপাশি রোগীকে নিতে হবে বিশ্রাম, শরীর আর্দ্র রাখতে হবে, তরল ও গরম খাবার খেতে হবে এবং ফ্রিজের খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। এভাবে নিয়ম মাফিক চললে খুব সহজেই ঘরোয়া উপায়ে জ্বর কমানো সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।