তারাবির নামাজ কত রাকাত? | তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল
তারাবির নামাজ কি? | তারাবির নামাজ কত রাকাত | তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল
রমজান মাসে তারাবি নামাজ নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক প্রশ্ন জেগে ওঠে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তারাবির নামাজ কত রাকাত? 2022 সালে রমজান আসতে আর মাত্র দেড় মাস বাকি। তাই আপনারা যাতে তারাবি নামাজ সম্পর্কে আগে বিস্তারিতভাবে জানতে পারেন তার জন্য আমরা আপনাদের জন্য এই আর্টিকেলটি নিয়ে হাজির হয়েছি।
যাতে করে আপনারা খুব সহজেই তারাবি নামাজের সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যান। এবং সেইসাথে তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল জানতে পারবেন। তারাবি নামাজ সুন্নত নাকি নফল এটি নিয়ে অনেকের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। তাই আজ আমরা আপনাদের সকল বিতরকের অবসান এবং তারাবির নামাজ কত রাকাত সেটি জানিয়ে দিব। চলুন তাহলে শুরু করি আমরা আজকের বিষয়টি সম্পর্কে।
তারাবির নামাজ কি?
তারাবি নামাজ হচ্ছে এ রমজান মাসে এশার সালাতের ফরজ চার রাকাত সুন্নত দুই রাকাত পড়ার পর এবং বেতের নামাজের পূর্বে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ নিয়ত করে, এভাবে চার রাকাত সম্পন্ন করে মুনাজাত এবং দোয়া পাঠ করে, একই রকম ভাবে ২০ রাকাত পর্যন্ত যে নামায আদায় করা হয় তাকে তারাবি নামাজ পড়া হয়।
তবে আপনারা একসাথে 20 রাকাত নামাজ বিশ্রামহীন ভাবে পড়তে পারেন কিন্তু বিশ্রাম নিয়ে 20 রাকাত সালাত আদায় করলে সওয়াব বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু আপনি কি তারাবি শব্দের অর্থ জানেন? না জেনে থাকলে আমরা আপনাদের কে জানিয়ে দিচ্ছি।
তারাবি শব্দের মূল ধাতু হচ্ছে “রাহাতুল”। আর এই রতন শব্দের অর্থ হচ্ছে আরাম করা। শরীয়ত মতে প্রতি চার রাকাত নামাজ আদায় করার পর কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম করে নেওয়া খেয়ে তারাবি নামাজ বলা হয়।
তারাবি নামাজের ফজিলত এবং মর্যাদা সম্পর্কে আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে পূর্ণ লাভের আশায় রমজানের রাতে তারাবি নামাজ আদায় করেন, সে ব্যক্তির অতীত কিতাবগুলো ক্ষমা করা হয়।” (বুখারী এবং মুসলিম)।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বাণীতে বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইমনের সঙ্গে সওয়াব লাভ করার আশায় রোজা রাখেন এবং তারাবি নামাজ পড়েন, সেইসাথে কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর এবাদত করেন তার জীবনে আগের সব গুনাহ মাফ করা হবে।” (বুখারী এবং মুসলিম)।
তারাবির নামাজ কত রাকাত?
তারাবি নামাজ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু তারাবির নামাজ ২০ রাকাত। তবে শারীরিক কারণে বা অন্যান্য কারণে যদি কেউ ৮ রাকাত, ১২ রাকাত সালাত আদায় করে তাহলে সেটি আদায় করতে পারবে। কিন্তু ইসলামে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে তারাবির নামাজ ২০ রাকাত পড়তে হবে।
তাছাড়া তারাবি নামাজের রাকাত নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। তবে হানাফি, শাফিয়ি এবং হাম্বলী ফিকহ অনুসারে তারাবি নামাজ ২০ রাকাত। অন্যদিকে মালিকি ফিকহ অনুযায়ী তারাবি নামাজ ৩৬ রাকাত এবং আহলে হাদিসরা অনুযায়ী তারাবি নামাজ ৮ রাকাত।
তবে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত তারাবি নামাজের রাকাত হচ্ছে ২০ রাকাত। আমাদের মুসলিমদের উচিত পরিমাণের উপর নজর না দিয়ে স্বভাব এর উপর নজর দেয়া। যে এবাদাত করলে সওয়াব বেশি হবে ঠিক এবাদাত করা।
আমরা সকলেই জানি যে রমজান মাস হচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস। তাই এই মাসে তারাবি নামাজের কত রাকাত তা নিয়ে বিতর্কে না গিয়ে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগী হওয়া।
তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল
আমরা যখন রমজান মাসের তারাবির নামাজ আদায় করতে যায় তখন আমাদের মধ্যে আরেকটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় তারাবি নামাজ সুন্নত নাকি নফল। আমরা এ নিয়ে অনেক সময় অনেক বড় বিতর্কে যুক্ত হয়ে যায় এবং নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করে ফেলি।
কিন্তু আজ আমরা আপনাদেরকে একদম সঠিক তথ্যটি জানাবো। যাতে করে আপনাদের মধ্যে তারাবি নামাজ সম্পর্কিত কোন দ্বন্দ্ব না থাকে। তারাবি নামাজ যেহেতু বিশেষ একটি নামাজ সেহেতু আমাদের এই নামাজের প্রতি সচেতন থাকতে হবে।
তারাবি নামাজ হচ্ছে সুন্নত নামাজ। যখন কোন মুসলিম তারাবি নামাজ আদায় করবেন তখন তার এই নামাজ টি সুন্নাত হিসেবে গণ্য করা হবে। এবং যখন আমরা নামাজের নিয়ত করব তখন এই নামাজের নিয়ত হিসেবে সুন্নত হবে।
সুতরাং তারাবি নামাজ কোনমতেই সফল নয়। তারাবি নামাজ হচ্ছে একটি সুন্নত ইবাদাত।
আরো দেখুনঃ তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন.
তারাবির নামাজ না পড়লে কি রোজা হবে?
আমরা সকলেই জানি যে তারাবি নামাজ পড়া হয় রমজান মাসে। আর সিয়াম পালন করা হয় রমজান মাসে। তাই আমাদের মধ্যে অনেকেই ভেবে থাকেন যে তারাবি নামাজ না পড়লে রোজা হবে না আমাদের সিয়াম পালন করা হবে না।
এ তথ্যটি একদম ভুল। কারণ তারাবি নামাজের সাথে সিয়াম পালন করার কোন সংযুক্ত নেই। তারাবি নামাজ হচ্ছে একটি সুন্নাত এবাদাত। অন্যদিকে রোজা রাখা হচ্ছে আমাদের প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয ইবাদত। আমরা সকলেই জানি যে ফরজ সুন্নত নফল ইবাদতের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।
তাই আমাদের উচিত এই বিভ্রান্তি থেকে নিজেদেরকে বের করে আনা। তবে নিজ ইচ্ছাকৃতভাবে তারাবি নামাজ বাদ দেয়া উচিত নয়। এতে গুনাহের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই আমাদের উচিত রমজান মাসে রোজা রাখার পাশাপাশি তারাবির নামাজ আদায় করা।
সুতরাং তারাবি নামাজের সাথে রোজার কোন সম্পর্ক নেই।যদি কোন ব্যক্তি রোজা রাখেন এবং তারাবী নামাজ না পড়ে তাহলে তার রোজা কবুল হবে। তবে তারাবি নামাজ পড়লে ঐ ব্যক্তি যে ছোঁয়া পাবে সে সব পাওয়া থেকে দূরে থাকবে। তাই প্রত্যেকমুসলিমের উচিত রোজা রাখার পাশাপাশি তারাবি নামাজ আদায় করা। এতে করে তারাবি নামাজের সওয়াব এবং রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে।
আরো দেখুনঃ তারাবির নামাজের মোনাজাত.
উপসংহার: আশা করি সকল মুসলিম ভাই ও বোনেরা আমাদের তারাবির নামাজ কত রাকাত এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন। আমরা এখানে তারাবির নামাজ কত রাকাত হয় এবং তারাবী নামাজ সুন্নত নাকি নফল সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এর পাশাপাশি আপনারা যদি তারাবি নামাজ সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্য জানতে চান তাহলে আমাদের নিম্নের কমেন্ট সেকশনে এসে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। জাযাকাল্লাহ খাইরান।