উপস্থাপনা ও কথা বলার কলাকৌশল
উপস্থাপনা ও কথা বলার কলাকৌশল
উপস্থাপনা ও কথা বলার কলাকৌশল জানতে চান? তাহলে সঠিক স্থানে এসেছেন। আপনার সুন্দর কথা বলতে চান এবং যে কোনো বিষয়বস্তু সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে চান আমরা তাদের জন্য একটি আর্টিকেল নিয়ে এসেছি। এই আর্টিকেল থেকে আপনারা সুন্দরভাবে উপস্থাপন সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং কথা বলার খুঁটিনাটি কৌশল গুলো জানতে পারবেন।
আমরা অনেকেই আছি যারা কথা বললে গুছিয়ে বলতে পারিনা। বা যে কোন বিষয়ে কারো তুলে ধরতে চাইলে এসেই বিষয়বস্তুটি আমরা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারিনা। তার একটি মাত্র কারণ হচ্ছে আমরা ভয় পাই, নিজেদের মধ্যে ইতস্ত বোধ কাজ করে। তাই এ সব ধরনের ছোট ছোট ভুলগুলো থেকে নিজেদের বিরত রাখার জন্য উপস্থাপনা ও কথা বলার কলাকৌশল জানতে হবে। চলুন তাহলে জেনে নেই আমাদের আজকের উপস্থাপনা ও কথা বলার কলাকৌশল বিষয়টি সম্পর্কে।
উপস্থাপনা কৌশল
আপনারা যারা উপস্থাপনা করতে চান অথবা উপস্থাপনা কে পেশা হিসেবে নিতে চান। তারা উপস্থাপনা করার জন্য কিছু কৌশল শিখতে পারেন। এতে করে আপনারা খুব সহজেই যেকোন বিষয় উপস্থাপন করতে পারবেন এবং নিজের মধ্যে জড়তা কাটিয়ে ওঠে উপস্থাপনাকে একটি সুন্দর পেশা হিসেবে নিতে পারেন।
আরো দেখুনঃ বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য.
কারণ যেকোন বিষয় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করলে সেই উপস্থাপনার ওপর একটি সেক্টরের কাজ এগিয়ে যায়। আপনারা যদি সুন্দরভাবে একটি বিষয়টি উপস্থাপন করতে পারেন তাহলে সেই বিষয়টির ওপর অন্যান্য মানুষের ভরসা তৈরি হবে এবং সেই কাজটি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে। আমরা আপনাদের সুবিধার জন্য নিম্নে কিছু উপস্থাপনা কৌশল দিয়ে দিচ্ছি-
- উপস্থাপনা করার আগে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে।
- উপস্থাপনার ব্যাপারে নিজেকে জিরো সংকল্প রাখতে হবে।
- নিজের ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের উপস্থাপনার অনুষ্ঠান দেখা।
- উপস্থাপনা ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা।
- ভাষার সঠিক ব্যবহার করা।
- উচ্চারণ শুদ্ধ করে তোলা।
- মিশ্রিত ভাষা থেকে বিরত থাকা। যেমনঃ বাংলা, ইংলিশ, হিন্দি একসাথে না বলা।
- সুন্দর বাচনভঙ্গি।
- নিজের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে।
- বক্তব্য উপস্থাপন করার জন্য কন্ঠের নিয়মিত চর্চা করা।
- ভালো শ্রোতা হয়ে ওঠা।
- উপস্থাপনাকে যদি পেশা হিসেবে নেয়া হয় তাহলে উপস্থাপনার উপর পড়াশোনা করা এবং প্রয়োজনীয় অনুশীলন করা।
- উপস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ নেওয়া।
- উপস্থাপনার ব্যাপারে ইতিবাচক চিন্তা করা।
- কুসংস্কার বক্তব্য থেকে নিজেকে রক্ষা করা।
- উপস্থাপনের ক্ষেত্রে অবশ্যই আধুনিকতার চিন্তা চেতনা তৈরি করা।
- নিজের মধ্যে ইতস্ত বোধ করলে তা পরিহার করা।
- উপস্থাপনা করার সময় যখন কোন ভয় কাজ করে তাহলে নিজেকে সেই ভয় থেকে দূরে রাখা।
- উপস্থাপনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সুন্দর সুন্দর বাক্য ব্যবহার করা এবং বাক্যগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে বলা।
- উপস্থাপনার জন্য অবশ্যই পোশাক সচেতন থাকা।
- উপস্থাপনার ক্ষেত্রে শুধু নিজেকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্যকে কথা বলার সুযোগ দেয়া।
কিভাবে উপস্থাপনা শুরু করতে হয়?
উপস্থাপনা যারা করতে চান তারা সবার আগে ভাবেন কিভাবে উপস্থাপনা শুরু করতে হবে? চিন্তার কোন কারণ নেই কারণ আমরা আপনাদেরকে জানিয়ে দিব উপস্থাপনা করার শুরু সম্পর্কে। আপনারা যেভাবে উপস্থাপন করলে আপনাদের উপস্থাপনার ক্যারিয়ার এবং উপস্থাপনা সুন্দর হয় সে অনুযায়ী আমরা আপনাদেরকে কিছু টিপস দিয়ে দিব। যাতে করে আপনারা খুব সহজে প্রস্তাবনা করতে পারেন।
উপস্থাপনার শব্দটি সাথে ইংরেজি শব্দ Perfect শব্দটির অনেক মিল রয়েছে। কারণ পারফেক্ট হচ্ছে সব দিক থেকে একদম স্বয়ংসম্পূর্ণ। আর উপস্থাপনা ঠিক এইরকমই একটা বিষয়। কারণ কোন বিষয়বস্তুর ওপর যখন উপস্থাপনা করা হয় তখন সে বিষয়বস্তু সম্পর্কে উপস্থাপনা করবে তাকে একদম স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হয়।
উপস্থাপকের একদম বাহ্যিক দিক থেকে শুরু করে তার বচনভঙ্গি পর্যন্ত সকল দিক স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হয়। উপস্থাপনা ব্যর্থ হয়ে যায়। আপনারা যাতে উপস্থাপনা দিক থেকে ব্যর্থ না হন তাই উপস্থাপনা যেভাবে শুরু করবেন তার কিছু দিক তুলে ধরছি।
১০ মিনিট স্কুল থেকে কোর্স দেখতে পারেন- News Presentation Course
উপস্থাপনা ও কথা বলার কলাকৌশল
উপস্থাপনা করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে উপস্থাপনা শুরু করা।আপনারা যখন বক্তব্য বা উপস্থাপনাকে পেশা হিসেবে বেছে নিবেন তখন আপনার সেই পেশাটির সফল হবে আপনি কিভাবে শুরু করেছেন তার ওপর ভিত্তি করে। তাই এই ক্ষেত্রে উপস্থাপনা শুরু করার জন্য গতানুগতিকভাবে আপনাকে অবশ্যই সৃজনশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
আমরা সকলেই জানি যে মানুষ সাধারণভাবে গল্প শুনতে পছন্দ করে। কিন্তু আপনি যদি সুন্দরভাবে উপস্থাপনা করতে পারেন একদম শুরু থেকে তাহলে আপনার গল্পের শ্রোতা বৃদ্ধি পাবে এবং শ্রোতাদের মধ্যে একঘেয়েমিও তার কাজ করবে না। সুতরাং তাদেরকে আপনার বক্তব্য যত্নসহকারে শোনাতেই হবে যাতে তাদের মধ্যে মনোযোগের বিঘ্ন না হয়।
সুতরাং আপনারা যদি উপস্থাপনার শুরু করাটা সুন্দরভাবে করতে পারেন তাহলে আপনাদের উপস্থাপনা অনেক সুন্দর হবে।
নিজের পরিচয় প্রদান:
উপস্থাপনা শুরু করার পর আপনার পরিচয় সুন্দরভাবে সৃজনশীল উপস্থাপন করতে হবে। কারণ তারা সব সময় আপনার বক্তব্য শোনার আগে অবশ্যই আপনার পরিচয় জানতে চাইবে। তাই পরিচয় সুন্দরভাবে তুলে ধরতে হবে। এতে করে বক্তার বক্তব্য শোনার জন্য শ্রোতারা আরো উৎসাহিত থাকবে।
তাহলে অবশ্যই বক্তব্য বা যেকোনো বিষয়ে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে অবশ্যই সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরতে হবে।
রকমারি ডট কম থেকে এই বইটি পড়তে পারেন-
সুন্দর ও স্পষ্ট বাচনভঙ্গি:
একজন উপস্থাপক এর উপস্থাপনা ও স্পষ্ট বাচনভঙ্গি থাকতে হবে। যদি উপস্থাপকের বচনভঙ্গি স্পষ্ট না হয় তাহলে শ্রোতাদের শুনতে সমস্যা হয়। এতে করে শ্রোতারা বিরক্ত হয়ে যায়। কারণ তারা নিজের সময় এবং সুযোগ করে উপস্থাপনা শুনতে আসে।
আর সেই উপস্থাপনা যদি সুস্থ এবং সুন্দর বাচনভঙ্গির না হয় তাহলে তাদের মধ্যে বিরক্ত আসবে এটাই স্বাভাবিক। আর উপস্থাপনা করার জন্য অবশ্যই আমাদের সুন্দরও স্পষ্ট বাচনভঙ্গি প্রয়োজন।
নিজের মধ্যে আঞ্চলিকতা পরিহার করা:
উপস্থাপনা করার জন্য উপস্থাপক যখন নিজের বচন প্রকাশ করে তখন তাকে অবশ্যই নিজেকে আঞ্চলিকতা থেকে দূরে রাখতে হবে। কারণ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত তাই সকলের বোঝার জন্য অবশ্যই চলিত ভাষার ব্যবহার করতে হবে।
এক কথা নিজের মধ্যে থেকে আঞ্চলিকতা পরিহার করে সুন্দর এবং স্পষ্ট ভাষায় বক্তব্য দিতে হবে।
উক্তি বা কোটেশন ব্যবহার করা:
বক্তব্যের মধ্যে অবশ্যই কোন ব্যক্তির উক্তি এবং প্রবাদ বাক্য রাখা উচিত। এতে করে বক্তব্য আরো সুন্দর হয়ে ওঠে তাই উপস্থাপনের ক্ষেত্রে উক্তি এবং প্রবাদ বলার ক্ষেত্রে কোটেশন ব্যবহার করা উচিত। যদি কোন প্রশ্ন করা হয় তাহলে প্রশ্ন এমন ভাবে করতে হবে যাতে শ্রোতা বুঝতে পারে যে এটি প্রশ্নবোধক বাক্য ছিল।
আবার যদি আশ্চর্যজনক দুঃখজনক কোন কথা হয় তাহলে অবশ্যই বাক্যটি সেভাবে বলতে হবে যাতে শ্রোতারা বুঝতে পারে এই বাক্যে আশ্চর্যজনক কিছু ঘটেছে এবং এই বাক্যে দুঃখজনক কিছু ঘটেছে। তাই উপস্থাপকের উপস্থাপনা ক্ষেত্রে উক্ত বা কোটেশন ব্যবহার করা।
পর্যাপ্ত তথ্য ও উপাত্ত ব্যবহার করা:
উপস্থাপনা করার ক্ষেত্রে অবশ্যই যে বিষয়টি নিয়ে আপনি উপস্থাপনা করবেন সে বিষয়টি সম্পর্কে আপনার পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। এবং পর্যাপ্ত তথ্য ও উপাত্ত ব্যবহার করা প্রয়োজন। এতে করে তাদের শুনতে সুবিধা হয় এবং শ্রোতাদের যদি সম্পূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয় তাহলে তারা বুঝতে পারে সম্পূর্ণ বিষয়বস্তু সম্পর্কে।
শ্রোতারা যদি সম্পূর্ণ বিষয়বস্তুটি বুঝতে না পারে তাহলে উপস্থাপনা ব্যর্থ হয়ে যাবে। আপনাদের উপস্থাপনাটি যাতে না হয় তার জন্য অবশ্যই আপনাদের পর্যাপ্ত তথ্য ও উপাত্ত ব্যবহার করা উচিত আপনাদের উপস্থাপনার সময়।
কন্ঠে অনুভুতি প্রকাশ করা:
উপস্থাপনা করার সময় আপনার কন্ঠে অবশ্যই আপনার বক্তব্যের অনুভূতি প্রকাশ পেতেই হবে। উপস্থাপনা মধ্যে যদি আপনার কন্ঠে বিষয়বস্তু বিষয়বস্তুটি সম্পূর্ণ প্রকাশ শ্রোতাদের বুঝতে। যেমন ধরুন আপনি প্রশ্ন বোধক বাক্য বললেন। তখন আপনাকে প্রশ্ন বোধক বাক্যটি এমন ভাবে বলতে হবে যাতে শ্রোতা বুঝতে পারে আপনি এখানে প্রশ্ন করেছেন।
আর যদি আপনি যদি সাধারণভাবে বাক্যটির রিডিং পড়ে যান তাহলে শ্রোতারা বুঝতেই পারবে না যে আপনি এখানে প্রশ্ন করেছেন তাই অবশ্যই আপনাদের উচিত কোনো বক্তব্য পেশ করার সময় কন্ঠের অনুভূতিতে আপনার বাক্যের সঠিক ব্যবহার করা।
শ্রোতাদের সাথে যোগাযোগ তৈরি করা:
উপস্থাপনা ও কথা বলার কলাকৌশল গুলোর মধ্যে শ্রোতাদের মাঝে অবশ্যই সুন্দর যোগাযোগ তৈরি করা প্রয়োজন। আপনারা যারা উপস্থাপনা করেন তারা শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে করে থাকেন কিন্তু তাদের সাথে যদি আপনারা যোগাযোগ তৈরি না করেন তাহলে আপনাদের সাথে সুন্দরভাবে যোগাযোগ বা সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে না।
এতে করে আপনার উপস্থাপনার মধ্যে একটি ব্যবধান লক্ষ করা যাবে। আপনার উপস্থাপনাটি কেমন হয়েছে তা জানার জন্য অবশেষে তাদের সাথে সুন্দরভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। আপনার উপস্থাপনা আর যদি কোন সুন্দর ফলাফল না পান তাহলে আপনার উপস্থাপনাটি করাটা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে যাবে। আর তাই আপনার বিষয়বস্তুটি উপস্থাপনা করার জন্য আপনাকে অবশ্যই শ্রোতাদের সাথে সুন্দর যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে।
আরো দেখুনঃ
উপসংহার: আশা করি আপনারা আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে উপস্থাপনা ও কথা বলার কলাকৌশল সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এখন আপনাদের উপস্থাপনা বিষয়টি নিয়ে এগোতে অনেক সহজ হবে। আর যদি আপনি উপস্থাপনা পেশা হিসেবে বেছে নেন তাহলে আপনাকে অনেক সুবিধা দিয়ে থাকবে। তাহলে অবশ্যই আপনাকে উপস্থাপনা পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার পর প্রশিক্ষণ বা চর্চা করতে হবে। আমাদের এই আর্টিকেল সম্পর্কে আপনার আরও জানতে চান তাহলে আমাদের নিচের কমেন্ট সেকশনে ও জানাতে পারেন।