ফিতরা দেওয়ার নিয়ম | ফিতরা কার উপর ওয়াজিব
ফিতরা কি? | ফিতরা দেওয়ার নিয়ম | ফিতরা কার উপর ওয়াজিব
ফিতরা সম্পর্কে অনেকে জানেন আবার অনেকে জানেন না। কিন্তু কমবেশি ফিতরা শব্দটির সাথে আপনারা অনেকেই পরিচিত। আর তাই আমরা আপনাদের জন্য ফিতরা দেওয়ার নিয়ম নিয়ে এসেছি। যাতে করে আপনারা সঠিক হিসাব করে ফিতরা দিতে পারেন এবং এই ফিতরা দেওয়ার মাধ্যমে আপনাদের ইবাদাত এবং কর্তব্য পালন করতে পারেন।
ইবাদাতের পাঁচটি ফরজ এর মধ্যে রমজান মাসে রোজা রাখা হচ্ছে অন্যতম ফরজ। আরে রমজান মাস হচ্ছে রহমতের মাস এবং এই মাসে মুসল্লীরা যত বেশি এবাদত করবে তত বেশি সওয়াব লাভ করতে পারবে। এছাড়াও আমাদের সামর্থ্য অনুসারে আমরা সকল মুসলিম ভাই বোনদের সাহায্য এবং সহযোগিতা করে থাকি। ফিতরা হচ্ছে রমজান মাসের অন্যতম ইবাদাত। চলুন তাহলে আমরা সম্পর্কে জানি এবং কোন নিয়মে দেওয়া হয় এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জেনে নেই।
ফিতরা কি?
ফেতরা দেয়ার আগে আমাদেরকে অবশ্যই জেনে নিতে হবে ফিতরা কি এবং ভিতর কেন দেয়া হয়। ফিতরা বা ফেতরা আরবি শব্দ। কিন্তু ইসলামী পরিভাষায় যাকাতুল ফিতর বা সাদাকাতুল ফিতর নামে পরিচিত চিত্রা সাধারণত সকালের খাবার কে বোঝানো হয় যাহা ধারা রোযাদারগণ রোজা ভঙ্গ করেন। কারণ রোজাদার ব্যক্তির রোজা পালনের পর সন্ধ্যায় ইফতার বা সকালের খাদ্য গ্রহণ করে। তাই গরিব দুঃখী ব্যক্তিদের মাঝে রোজাদারদের কে বিতরণ করার দানকে যাকাতুল ফিতর বলা হয়। আর এই ফিতরা দেওয়া হয় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে।
সুতরাং রমজান মাসে এইরকম দানকে যাকাতুল ফিতর বলা হয়। তবে ঈদের দিন সকালে যে ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকবেন অর্থাৎ সাড়ে সাত ভরি সোনার শাড়ির উপর মালিক এবং এর সমতুল্য অন্যান্য অর্থ বা ব্যবসার পণ্য মালিক থাকেন তাহলে অবশ্যই নিজের ও পরিবারের সবার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করতে হবে। আরে ফিতরা আদায় করা হচ্ছে ওয়াজিব। কিন্তু অবশ্যই ফিতরা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে আর সেই নিয়ম অনুসারে ফিতরা দিতে হয়।
আরো দেখুন: যাকাত দেওয়ার নিয়ম.
ফিতরা কার উপর ওয়াজিব
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মহান আল্লাহতায়ালা একাধিকবার তার নির্দেশে করার কথা বলেছেন। বান্দা যদি আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য উত্তম প্রতিদান ফিরে আসে। ঈদুল ফিতরের দিন সদকা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) অসংখ্য হাদিস দিয়েছেন। এমন একটি হাদীস রয়েছে যেখানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যেন মক্কার অলিগলিতে এ ঘোষণা দেয়া হয় সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব ( তিরমিজি দ্বিতীয় খণ্ড পৃষ্ঠা ১৫১)।
ফিতর সম্পর্কে হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেছেন, হযরত আনোয়ার সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন “ যতক্ষণ পর্যন্ত সদকায়ে ফিতর আদায় হয় না ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার রোজা জমিন ও আসমান এর মাঝখানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে”। ( কানযুল উম্মাল, অষ্টম খন্ড)। এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেছেন, “ রাসুল সাঃ সদকায়ে ফিতর নির্ধারণ করেছেন এবং জাতীয় কথাবার্তা থেকে রোজাগুলো পবিত্রতার অর্জন করেন। অনুরূপভাবে মিসকিনদের কে খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যায়”। ( সুনানে আবু দাউদ, দ্বিতীয় খন্ড)।
ইসলাম ধর্মের বিধান অনুসারে সদকা হচ্ছে ওয়াজিব। মানুষের মৌলিক চাহিদার অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে এবং সেই সম্পদের এক সমপরিমাণ জব, খেজুর, কিসমিস অথবা পানি অথবা এর সমপরিমাণ টাকা আদায় করতে হয়। আর যদি ফিতরা আদায় করার না তাহলে গুনা হবে।
ফিতরা কার উপর ওয়াজিব এই সম্পর্কের হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিস রয়েছে। সেখানে তিনি বলেন, প্রত্যেক গোলাম, আজাদ, নারী পুরুষ, প্রাপ্ত অপ্রাপ্ত মুসল্লিদের ওপর রাসুল সাঃ সদকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর অথবা অথবা এর সমপরিমাণ অর্থ আদায় করা হচ্ছে ফরজ। আর এই ফিতরা আদায় করার সময় হচ্ছে লোকজন ঈদের সালাত আদায় বের হওয়ার আগেই দিতে হবে। (সহি বুখারী)।
ফিতরা কত টাকা ২০২৪
এখন অবশ্যই আপনাদের মনে প্রশ্ন আসবে তাহলে সরকার কত টাকা আমরা সেটি কিভাবে নির্ধারণ করবো। যেহেতু প্রত্যেকদিন ধরবো মূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং নিম্ন গতি থাকে সেহেতু প্রত্যেক বছর ফিতরার টাকা এক রকম হয় না। তাই বায়তুল মোকাররমের হুজুরদের আলোচনায় প্রত্যেক বছর যে ফিতরার টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয় সেটি প্রত্যেক মুসলমান ভাই-বোনদের পালন করতে হয়।
২০২৪ স্যার অনুসারে ফিতরা কত টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে তা নিম্নে একটি টেবিল এর মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলো।
পণ্যের নাম | পণ্যের পরিমাণ | বর্তমান বাজার মূল্য/ ফিতরার পরিমাণ |
আটা এবং গম | ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম | ৭৫ টাকা |
জব | ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম | ২৮০ টাকা |
কিসমিস | ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম | ১৩২০ টাকা |
খেজুর | ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম | ১৬৫০ টাকা |
পনির | ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম | ২৩১০ টাকা |
ফিতরা দেওয়ার নিয়ম
ফিতরা দেওয়ার নিয়ম এবং ফিতরা কখন আদায় করতে হয় তা নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন থাকতে পারে। তাই আমরা এই সকল সবকিছু আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার জন্য ফিতরা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে এসেছি। যাতে করে আপনারা সহযোগিতা দিতে পারেন এবং ঠিক সময়ে ফিতরা আদায় করতে পারেন।
ইসলামী শরীয়ত অনুসারে ঈদুল ফিতরের নামাজের পূর্বে প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তি কে ফিতরা আদায় করতে হবে। আর এটি হচ্ছে তার ওয়াজ। আর যদি নাবালক ছেলে মেয়ে থাকে তাহলে তাদের পক্ষ থেকে তার বাবাকে ফিতরা আদায় করতে হবে।
কিন্তু প্রসিদ্ধ ফতোয়া গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে- মৌলিক চাহিদার অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদ মালিক হলে ওই মুসলমান ব্যক্তিকে অবশ্যই ফিতরা দিতে হবে এবং এটি তার উপর ওয়াজিব।
ফিতরা সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে যে- ফিতরা আদায়ের উত্তম সময় হচ্ছে ঈদের দিন শুভেচ্ছা দিকের পর থেকে ঈদের নামাজ আদায় করার পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার পরবর্তী সময় থেকে ঈদের নামাজ আদায় করার পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত। তবে ফিতরা তাদের জন্য উপযুক্ত যারা যাকাতের জন্য উপযোগী হয়, আর যারা যাকাত দিন না তাদের ফিতরা দিতে হয় না। ( ফতোয়া আলমগীরী, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৯৪)।
অন্যদিকে হযরত সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বংশধর নিতে পারতেন না অর্থাৎ তাদের কোনভাবেই ফিতা দেওয়া যাবে না। ( আর এই হাদীসটি এসেছে ফতোয়া আলমগীরী থেকে)।
আপনাদেরকে পূর্বে এ বছরের ফিতরা দেওয়ার কত টাকা এসেছে তা আমরা দিয়ে দিয়েছি। আপনার ওপর একটি নিয়মগুলো অনুসরণ করে ফিতরা দিতে পারবেন।
উপসংহারঃ আশা করছি আপনারা আমাদের এই আর্টিকেল থেকে ফিতরা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এবং ফিতরা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এবং ফিতরা দেওয়ার জন্য কারা কারা উপযুক্ত সেটি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তাই আপনারা আপনাদের সম্পদের ওপর নির্ভর করে পালনের উদ্দেশ্যে সঠিকভাবে ফিতরা প্রদান করতে পারবেন। তাছাড়া আপনারা যদি আমাদের এই আর্টিকেল সম্পর্কে এবং ফিতরা সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকে তা আমাদেরকে কমেন্ট এর মাধ্যমে জানাতে পারেন। জাযাকাল্লাহ।