তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম | তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম | তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল | তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত
তাহাজ্জুদ নামাজ আমাদের জীবনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদাত। আর এই ইবাদতটি করলে আপনারা বিনা হিসাবে জান্নাতে যেতে পারবেন। তবে অবশ্যই এই নামাজ আদায় করার সময় আপনাদেরকে যত্নসহকারে এ নামাজ আদায় করতে হবে। তাই আমাদের সকলের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জানা অত্যাবশ্যকীয়।
আপনারা যারা তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জানেন না এখন পর্যন্ত আমরা তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি নিয়ে এসেছি। যাতে করে আপনারা তাজত নামাজের নিয়ম জানতে পারে এবং তাহাজ্জুদ নামাজের সকল খুঁটিনাটি বিষয়বস্তু জানতে পারেন। তবে অবশ্যই এই নামাজ প্রত্যেক মুসলমানের আদায় করা উচিত কারণ এটি গুরুত্ব এত বেশি যে, শুধুমাত্র এই এবাদতের কারণে আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের বিনা হিসাবে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। চলুন তাহলে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম এবং এর খুটিনাটি বিষয়।
তাহাজ্জুদ নামাজ কি?
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জানার আগে আমাদের অবশ্যই তাহাজ্জুদ নামাজ কি তা জানতে হবে। কারণ আমরা যদি তাহাজ্জুদ নামাজ কি সেটি না জানে তাহলে কিভাবে নামাজ আদায় করব এবং কেন করব তা বুঝতে পারবোনা। তাই আমাদের অবশ্যই তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জানার পূর্বে তাহাজ্জুদ নামাজ কাকে বলে জেনে নিতে হবে।
তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ ঘুম থেকে জাগা বা ঘুম থেকে জেগে ওঠা। তাহাজ্জত মূলত মধ্যরাতের পড়তে হয়। অর্থাৎ ফজরের নামাজের পূর্বে এবং এশার নামাজের পরবর্তী সময়ে। তবে ফরজ নামাজের পর অন্যান্য সুন্নত এবং নফল নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত অত্যাধিক বেশি।
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সা:) কে বলতে শুনেছি আফজালুস সালাতে বাদাল মাহফুজ আতি সালাতুল লাইনে। আর এর মানে হচ্ছে- ফরজ নামাজ সবচেয়ে নামাজ। ( মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)।
আমরা সকলেই জানি যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে রাসূলুল্লাহ (সা:) এর উপর তাহাজ্জুদ নামাজ বাধ্যতামূলক ছিল। আর এর জন্য তিনি তার জীবনে কখনো তাহাজ্জত নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকে নি। তবে তিনি উম্মতে মুহাম্মদীর তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত গায়রে মুয়াক্কাদা বলেছেন। অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করলে অসংখ্য পূর্ণ লাভ করা যায় তবে এ নামাজ আদায় যদি না করতে পারে তাহলে এর কোন গুনা হবে না।
আরো দেখুনঃ সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম.
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল
আমাদের সকলের মধ্যে একটি দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে সেটি হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল। তবে এক কথায় বলতে গেলে তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত। আর তাজুদ নামাজ সুন্নত হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে আমরা রাসূলুল্লাহ (সা:) এর যত আমল করি অথবা রাসূলুল্লাহ (সা:) এর যে কোন আমল তার বান্দাগণ অনুসরণ করে সেটি হচ্ছে সুন্নাত।
যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সা:) প্রতিদিন তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন সেহেতু আমাদের কাছে সুন্নাত হিসেবে গণ্য হবে। শুধু মাত্র পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ ছাড়া বাকি যত নামাজ আছে সবগুলো নফল ইবাদাত হিসেবে গণ্য হয়। তবে রাসূলুল্লাহ (সা:) এর সুন্নাহ হল দুটি। একটি হচ্ছে সেই সুন্নাহর উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং অন্যটি হচ্ছে অতিরিক্ত সুন্নাহ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
সুতরাং তাহাজ্জুদ সালাতের সুন্নত। আর যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সা:) তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতেন সেহেতু এই তালাকে সুন্নাহ বলে গণ্য করা হয়।
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত
আমরা ইতিমধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব জেনে গেছি। তাই তাজত নামাজ আদায় করার পূর্বে আমাদের অবশ্যই জানতে হবে তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত হয়ে থাকে। আর আমরা আপনাদের জন্য তাহাজত নামাজ কত রাকাত এই সম্পর্কে এবং সর্বনিম্ন কত রাকাত নামাজ পড়া যাবে তা নিয়ে আলোচনা করব।
তাহাজ্জুদ নামাজ এর কোনো নির্দিষ্ট রাকাত এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট হয়নি। কোন কোন হাদিসে এসেছে ৮ রাকাত আবার কোন কোন হাদীসে এসেছে ১২ রাকাত। তবে আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) ৮ রাকাত নামাজ আদায় করতেন। তাই আমাদের উচিত রাসূলুল্লাহ (সা:) এর দিক নির্দেশনা অনুসারে ৮ রাকাত নামাজ আদায় করা। কারণ আর ৮ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম।
রাসূলুল্লাহ (সা:) তাজুদের ৮ রাকাত নামাজ আদায় করতেন এবং বেতের তিন রাকাত নামাজ আদায় করতেন। সর্বমোট তিনি ১১ রাকাত নামাজ আদায় করতেন। তবে আপনারা চাইলে সর্বনিম্ন দু রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারবেন।
সুতরাং সকল মুসলিমদের জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ ৮ রাকাত পড়া উত্তম এবং সর্বনিম্ন 2 রাকাত পর্যন্ত পড়তে পারবেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
এখন পর্যন্ত আমরা জেনেছি যে তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত এবং তাহাজ্জুদ নামাজ ৮ রাকাত পড়া উত্তম। কিন্তু এখন নামাজ পড়ার নিয়ম জানা আবশ্যক। কারণ আমরা যদি তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম না জানতে পারে তাহলে তাজত নামাজ আদায় করা সম্ভব নয়। তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সঠিকভাবে জেনে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা।
- তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার জন্য আপনাদের তাহাজ্জুদ নামাজে যে সকল নিয়ম গুলো জানতে হবে তা হচ্ছে-
- প্রথমে অজু করে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াতে হবে।
- এরপর দু’রাকাত করে নিয়ত করতে হবে।
- নিয়ত করা হয়ে গেলে আল্লাহু আকবার বলে সানা দোয়া পড়তে হবে এবং এরপর সূরা ফাতিহা সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে। ( তবে এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা:) তাজত নামাজ আদায় করার পর সময় সূরা ইখলাস পাঠ করতেন।)।
- এরপর সাধারন নফল না সুন্নত নামাজের মত করে নামাজের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে এবং দু’রাকাত হলে তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ এবং সূরা পাঠ করে সালাম ফিরিয়ে মোনাজাত ধরতে হবে।
তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট মুসলমান ভাই ও বোনেরা নিজেদের প্রয়োজন এবং চাহিদা অনুসারে মহান আল্লাহতালার কাছে দোয়া প্রার্থনা করতে হবে এবং অবশ্যই আল্লাহর কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায় করতে হবে। কারণ এই সময়ে অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজের সময় আল্লাহতালা সাত আসমানের নিচে চলে আসেন এবং বান্দার মনের সকল কথা শুনেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ
আমরা সকলেই জানি যে নিয়ত সুস্পষ্টভাবে উচ্চারণ না করলেও হয়। কারণ নামাজ পড়ার সময় আপনি জানেন আপনি কোন নামাজ কি পড়েছেন এবং তা মনে মনে সংকল্প করি আপনারা নামাজ পড়তে এসেছেন সুতরাং সেখানে নিয়ত হয়ে যায়। তাই উচ্চারণ না করে মনে মনে নিয়ত করলে হয়। কারণ নিয়ত হচ্ছে মূলত ইচ্ছা পোষণ করা। তবে আপনারা যদি কেউ উচ্চারণ করে নিয়ত করতে চান তাদের জন্য আমরা নিম্নে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থ দিয়ে দিচ্ছি।
তাহাজ্জুদ নামাজে কোন সূরা পড়তে হয়?
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত অতিগুরুত্বপূর্ণ বলে সকলের মনে করেন তাজত নামাজের বিশেষ সূরা রয়েছে। কিন্তু তা নয় তাজত নামাজ পড়ার জন্য কোন বিশেষ সূরা নেই। আপনারা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়তে পারবেন।
তবে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করার সময় লম্বা কেরাত পাঠ করতেন এবং সেইসাথে লম্বা রুকু ও সিজদা দিতেন। আর একান্ত নিবিষ্ট হয়ে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতেন। তাই আমাদের সকলের উচিত তাহাজ্জুদ সালাতের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পথ অনুসরণ করা উত্তম। আর আপনারা চাইলে কেরাত উঁচু-নিচু উভয় আওয়াজে পাঠ করতে পারেন এবং এটি জাহেজ রয়েছে কিন্তু যদি এই কেরাতের উঁচু আওয়াজে অন্য কারো কষ্ট হয় তাহলে অবশ্যই আপনাদের চুপিচুপি কেরাত পাঠ করতে হবে।
আরো দেখুনঃ সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম.
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
কুরআন কারীমের মহান আল্লাহতালা রব্বুল আলামীন প্রিয়র নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর উদ্দেশ্যে বলেছেন যে, “ রাত্রের কিছু অংশক তাহাজ্জুদ,ইহা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করি তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠা করবে প্রশংসিত স্থানে।- মাকামে মাহমুদে” ( সূরা- ১৭ ইসরা, আয়াতঃ ৭৯)।
পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পরে আরো যত অন্যান্য সালাত রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম সালাত হচ্ছে তাহাজ্জুদ সালাত। কারণ এই সালাতের ফজিলত অনেক বেশি এবং এই সালাতের উপকারিতা বলে সবার মত নয়। বান্দারা যদি প্রতিদিন তাহাজ্জুদ সালাত পাঠ করে তাহলে সেই বান্দা মহান আল্লাহতায়ালার নিকট যা চাইবে তাই পাওয়া যাবে।
কারণ তাহাজ্জুদ সালাতের সময় পড়া হয় ঠিক সেইসময় মহান আল্লাহতালা সাত আসমানের নিচে বান্দাদের জন্য অপেক্ষা করেন। আর ঠিক সেই সময় যদি তাহাজ্জুদ সালাতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাআলার নিকট এবং অর্থপূর্ণ প্রার্থনা করেন তাহলে সেটি মহান আল্লাহতালা তাদেরকে পুরস্কারস্বরূপ প্রদান করে থাকেন।
তাছাড়া রমজান মাস হচ্ছে রহমতের শ্রেষ্ঠ মাস। আর এই শ্রেষ্ঠ মাসে তাহাজ্জুদের সময় আরো বরকতময় হয়ে ওঠে। কারণ প্রত্যেক ঈমানদারগণ রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সেহেরী জন্য ঘুম থেকে উঠে থাকেন। তাই আপনারা চাইলে সেই সেহরির পূর্বমুহূর্তে ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করার পর সেহরির খাবার খেয়ে ফজরের সালাত আদায় করে নিতে পারেন। সাধারণভাবে বলতে গেলে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করার সুবর্ণ একটি সুযোগ হচ্ছে রমজান মাস। এই মাসে আপনারা নিয়মিত সালাত আদায় করতে পারবেন এবং নিজেদের ইচ্ছাগুলো মহান আল্লাহ তাআলার নিকট পোষণ করতে পারবেন।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাহাজ্জুদ সালাত রাতে আদায় করতেন। আর এই সালাত রাতে আদায় করা সুন্নত এবং অতিরিক্ত হিসাবে নফল। তবে নবীজী (সাঃ) এর ওপর তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করা ছিল অতিরিক্ত দায়িত্ব। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাহাজ্জুদ সর্বোকৃষ্ট একটি আমল। হযরত আলী (রা.) বলেছেন যে, “ যে সকল ব্যক্তি রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়েছেন, তারাই আধ্যাত্মিক জগতের আল্লাহর নৈকট্য লাভের ঊর্ধ্ব আহরণ করেছেন”।
তবে এখন পর্যন্ত মানুষের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়ে কিছু কুসংস্কার বিদ্যমান রয়েছে। আর সেগুলো হচ্ছে- তাহাজ্জুদ অন্ধকার, তাহাজ্জুদ নামাজ গোপনে পড়তে হয়, তাহাজ্জুদ আদায় করার সময় দিন আসে এবং তাহাজ্জুদ নামাজ একবার শুরু করলে প্রতিনিয়ত পড়তে হয়। এগুলো হচ্ছে সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর এবং কুসংস্কার। কারণ এসকল কুসংস্কারের কোন বাস্তবতা নেই। তাই আপনারা এ ধরনের কুসংস্কারে বিশ্বাসী না হয়ে সঠিক তথ্য জেনে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করা উচিত।
তাহাজ্জুদ সালাত আপনারা মধ্যরাতে যেকোনো সময় আদায় করতে পারবেন। তবে অবশ্যই ফজর ওয়াক্তের আগে এবং এশার ওয়াক্ত পরে। তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করার সময় আপনাদের অন্ধকারে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই। আপনারা চাইলে তাহাজ্জুদ সালাতের কিরাত সমূহ উচ্চস্বরে পাঠ করতে পারেন তবে পার্শ্ববর্তী কারো ঘুমের ব্যাঘাত অথবা অন্য কারোর সমস্যা যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
সুতরাং পরিশেষে এটি বুঝা যায় যে, সকল মুমিনগণ সালাত আদায় করার সময় অবশ্যই যত্ন সহকারে এবং সতর্ক হয়ে এর সালাত আদায় করতে হবে। যদি আপনারা নিয়মিত সালাত আদায় করতে পারেন তাহলে এটি আপনাদের জন্য অতি উত্তম কাজ হবে।
আরো দেখুনঃ
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম -FAQ
১. তাহাজ্জুদ এর অর্থ কি?
তাহাজ্জুদ একটি আরবি শব্দ (আরবি: تهجد) যাকে রাতের নামাজ বা কিয়ামুল লাইলও বলা হয়ে থাকে। তাহাজ্জুদ অর্থ হলো রাত জাগরণ বা নিদ্রা ত্যাগ করে রাতে নামাজ আদায় করা। ইসলামে এটি একটি ঐচ্ছিক ইবাদত কিন্তু এর ফজিলত ও গুরুত্ব মহান রবের কাছের অনেক বেশি। শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান ব্যক্তিরাই এই নামাজ আদায় করতে পারেন।
কিন্তু এই নামাজ বাধ্যতামূলক না পড়া। কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী ও সাহাবীরা এই নামাজ পড়তে উৎসাহ দিয়েছেন কারণ এর মর্যাদা এতে বেশি যে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। আল্লাহর নৈকট্য লাভের সবচেয়ে উত্তম ইবাদাত হিসেবে গণ্য করা হয় এই তাহাজ্জুদকে।
২. তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত না নফল?
তাহাজ্জুদ নামাজ নফল নামাজ। সকল নফল নামাজের মধ্যে এই নামাজের মর্যাদা ও গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি কারণ এই নামাজ ঘুম থেকে জেগে রাতের শেষ প্রহরে পড়তে হয় যা সকলের জন্য সহজ না। তাই এই নামাজের গুরুত্ব এত বেশি মহান রবের কাছে।
৩. এশার নামাজের পর তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যাবে কি?
তাহাজ্জুদ নামাজের সর্বোত্তম সময় হলো রাতের শেষ তিন ভাগে উঠে এই নামাজ আদায় করা। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আদায় করা যায়। কিন্তু সবচেয়ে বেশি উত্তম রাতের শেষ প্রহরে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে এই নামাজ আদায় করা। এশার পর তাহাজ্জুদ নামাজের সময় শুরু হলেও এশার নামাজের পর ঘুমিয়ে নিয়ে এবং ঘুম থেকে উঠে এই নামাজের জন্য দাঁড়ানো।
৪. বেতের নামাজের পর তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যাবে কি?
হ্যাঁ, বেতের নামাজের পর তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যাবে, এতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু সকল নামাজ শেষে বেতের নামাজ পড়া উত্তম। এশার নামাজের পর বেতের নামাজ রেখে পরে শেষ প্রহরে ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে তারপর বেতের পড়া ভালো। কিন্তু কারো যদি সন্দেহ থাকে যে সে শেষ প্রহরে উঠতে পারবে কিনা তাহলে এশার পরই বেতের পড়ে নিতে পারবেন।
৫. মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম কি?
তাহাজ্জুদ নামাজ নফল নামাজের মতোই। অন্যান্য ২ রাকাত নফল নামাজ যেভাবে সূরা ফাতেহার সাথে একটি সূরা, বৈঠকে তাশাহুদ, দরূদ শরীফ, দোয়া মাসুরা পাঠ করে সালাম ফেরানো হয় ঠিক এইভাবেই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে হবে। তাহাজ্জুদ নামাজের কোন মহিলা বা পুরুষ নেই, সবার তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম একই। এক্ষেত্রে মহিলাদের আলাদা কোন নিয়ম নেই।
৬. তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত?
তাহাজ্জুদ নামাজের কত রাকাত এর নির্দিষ্টতা নেই। আপনি ২ রাকাত থেকে শুরু করে ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়তে পারবেন। ব্যক্তি তার ইচ্ছানুযায়ী তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারবেন। সর্বনিম্ন ২ রাকাত ও সর্ব্বোচ্চ ১২ রাকাত পড়া হয় এই নামাজ সাধারণত। কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী ও সাহাবীগণ ৮ রাকাত পড়তে অভ্যস্থ ছিলেন এই তাহাজ্জুদের নামাজ।
উপসংহারঃ আশা করি আপনারা আমাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম এই আর্টিকেল থেকে তাহাজ্জুদ সালাত সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছেন এবং তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জানতে পেরেছেন। তাই সকল মুমিনগণ উচিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পাশাপাশি তাহাজ্জুদ সালাত নিয়মিত পাঠ করা কারণ এই সালাত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিয়মিত পাঠ করতেন। কারণ আমরা সকল মুমিনগণ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবন যাপন অনুসরণ করে থাকি। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পথ অনুসরণ করা মুসলিমদের সুন্নত। আপনারা যদি তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে আরো অন্যান্য বিস্তারিত কোনো তথ্য জানতে চান তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।