কম্পিউটার ভাইরাস কি? | এর লক্ষণ ও যেভাবে ছড়ায়
কম্পিউটার ভাইরাস কি? | কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ
সাধারণ আমরা ভাইরাস বলতে বুঝি মানব দেহে যেসব ভাইরাস আছে যেমন ধরেন করোনা ভাইরাস। কিন্তু আপনি কি জানেন কম্পিউটারে ও কিছু ভাইরাস আছে। আর এইসব ভাইরাস ধীরে ধীরে কম্পিউটারের কাজের ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেই। মানব দেহের ভাইরাসের মতো এইসব ভাইরাস এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ছড়িয়ে যায়।
বর্তমান যেহতু প্রযুক্তি দিকে এগিয়ে চলছে আর এই এগিয়ে চলার প্রথম বাহকই হচ্ছে কম্পিউটার। তাই আমাদের অনেক সাবধানতা অবলম্বন করে কম্পিউটার ব্যবহার করতে হবে। কোনো ভাবেই যেন কম্পিউটারে ভাইরাস আক্রমণ না করে। তার আগে চলুন আমরা জেনে নেই কম্পিউটার ভাইরাস কি।
আরো দেখুনঃ কম্পিউটারের গতি বৃদ্ধি করার উপায়.
কম্পিউটার ভাইরাস কি?
কম্পিউটার ভাইরাস হচ্ছে এমন এক ধরনের ভাইরাস যা আমাদের অজান্তেই কম্পিউটারে সকল সিস্টেম নষ্ট করে দেয়। যা চাইলেও পরর্বতীতে ঠিক করা আমাদের দ্বারা সম্ভব না। সাধারণ কম্পিউটার বিভিন্ন প্রোগ্রাম দ্বারা পরিচালিত হয়। তাই কোনো প্রোগ্রাম যদি নষ্ট হয়ে যাই তাহলে কম্পিউটার কাজ করে না।
সর্বপ্রথম ১৯৮৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণির ছাত্র ফ্রেড কোহেন পেনসিলভানিয়ার লেহিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তাবিষয়ক এক সেমিনারে প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস দেখান। তাই বলা যায় ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর কম্পিউটার ভাইরাস এর জন্ম হয়।
আর একটু সহজ ভাবে বলতে গেলে কম্পিউটার ভাইরাস হলো প্রোগ্রাম যা কম্পিউটারের স্বভাবিক কাজ কর্মকে অস্বাভাবিক করে তোলে।
কম্পিউটার ভাইরাস কোনো প্রোগ্রামে যুক্ত হয়ে কম্পিউটারে প্রবেশ করে এবং অতি অল্প সময়েই পুরো কম্পিউটারে ছড়িয়ে পরে। কম্পিউটারে সংরক্ষিত সকল তথ্য নষ্ট করে দেয়। এছাড়া কম্পিউটার ভাইরাস এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ছড়িয়ে পরে। ফলে অন্য কম্পিউটারেও সমস্যা দেখা দেই।
কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার ও কি কি?
বর্তমান ইন্টারনেট এর দুনিয়ায় অগনিত ভাইরাস আছে এদের আকার কাজের ধরন ক্ষেত্র ও পরিধির দিক দিয়ে বিভিন্ন ধরনের তে পারে। চলুন তাহলে জানা যাক কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার ও কি কি?
কম্পিউটার ভাইরাস প্রধানত দুই প্রকার।
যেমনঃ
- নিবাসী ভাইরাস।
- অনিবাসী ভাইরাস।
নিবাসী ভাইরাস:
নিবাসী ভাইরাস হচ্ছে কম্পিউটারের এমন এক ধরনের ভাইরাস যা কম্পিউটারে ক্ষতিকর প্রোগ্রাম মোমরিতে প্রবেশ করে এবং স্থানীভাবে অবস্থান নেয় তখন যদি আপনি অন্য কোনো প্রোগ্রাম ওপেন করেন সাথে সাথেই আপনার কম্পিউটারের সকল প্রোগ্রামে সংক্রমিত করবে। এই ভাইরাসটি কম্পিউটারের জন্য কতটা ক্ষতিকর আশা করি ইতিমধ্যেই আপনি বুঝতে পারছেন। তাই আমাদের নিবাসী ভাইরাস সম্পর্কে সর্তক হতে হবে। আপনার একটু অসচেতন এর জন্য আপনার কম্পিউটারের সকল প্রোগাম নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
অনিবাসী ভাইরাস:
অনিবাসী ভাইরাস (Non-Resident Virus) এমন একটি ক্ষতিকর প্রোগ্রাম যা সক্রিয় হয়ে অন্য সকল প্রোগ্রামকে খুজে বের করে এবং মূল প্রোগ্রামের কাছে নিয়ন্ত্রণ দিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। নিবাসী ভাইরাস এর মতো অনিবাসী ভাইরাসও কম্পিউটারের জন্য ক্ষতিকর।
কম্পিউটার ভাইরাস কি ধরনের প্রোগ্রাম
আপনি কি জানেন কম্পিউটার ভাইরাস কি কোন ধরনের প্রোগ্রাম? কম্পিউটার ভাইরাস হচ্ছে এমন এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা ব্যবহারকারীর অনুমতি বা ধারণা ছাড়াই নিজে নিজেই কপি হতে পারে। মেটামর্ফিক ভাইরাসের মত তারা প্রকৃত ভাইরাসটি কপিগুলোকে পরিবর্তিত করতে পারে অথবা কপিগুলো নিজেরাই পরিবর্তিত হতে পারে।
একটি ভাইরাস এক কম্পিউটার থেকে অপর কম্পিউটারে যেতে পারে কেবলমাত্র যখন আক্রান্ত কম্পিউটারকে স্বাভাবিক কম্পিউটারটির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। যেমন: কোন ব্যবহারকারী ভাইরাসটিকে একটি নেট ওয়ার্কের মাধ্যমে পাঠাতে পারে বা কোন বহনযোগ্য মাধ্যম যথা ফ্লপি ডিস্ক, সিডি, ইউএসবি ড্রাইভ বা ইণ্টারনেটের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
এছাড়াও ভাইরাসসমূহ কোন নেট ওয়ার্ক ফাইল সিস্টেম কে আক্রান্ত করতে পারে, যার ফলে অন্যান্য কম্পিউটার যা ঐ সিস্টেমটি ব্যবহার করে সেগুলো আক্রান্ত হতে পারে। ভাইরাসকে কখনো কম্পিউটার ওয়ার্ম ও ট্রোজান হর্সেস এর সাথে মিলিয়ে ফেলা হয়। ট্রোজান হর্স হল একটি ফাইল যা এক্সিকিউটেড হবার আগ পর্যন্ত ক্ষতিহীন থাকে।
গুরুত্বপূর্ণ:
কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে?
আমরা যারা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহার করি তারা সকলেই জানি যে কম্পিউটারে ভাইরাস আক্রান্ত করে থাকে। আর এই ভাইরাসগুলো কম্পিউটারকে অকেজো করে ফেলে। তাই কম্পিউটারকে ভাইরাসমুক্ত রাখার জন্য অবশ্যই কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে সে সম্পর্কে আমাদেরকে জানতে হবে। পৃথিবীতে যত কম্পিউটার ব্যবহারকারী রয়েছে তাদের মধ্যে হতে ৬০% মানুষ আছে যারা কম্পিউটারে ক্ষতিকারক ভাইরাস সম্পর্কে জানেনা এবং কম্পিউটারে ভাইরাস আক্রান্ত করলে তা বুঝতে পারেনা। তার একমাত্র মূল কারণ হচ্ছে কম্পিউটারে যে ধরনের ভাইরাস আক্রান্ত করে সে ধরনের ভাইরাস সম্পর্কে অনেকের ধারণা থাকে না বলে তারা বুঝতে পারে না।
আর এই ধরনের ভাইরাস কম্পিউটারকে এমনভাবে ক্ষতি করে দিতে পারে যে অনেক সময় কম্পিউটার একেবারে হয়ে যায় এবং গুরুত্বপূর্ণ ফাইল গুলো নষ্ট হয়ে যায়। তবে জোর করে বিজ্ঞাপন দেখানো adware এর জন্য ভাইরাসগুলো বেশি কাজ করে থাকে। আরে ধরনের ভাইরাস গুলো কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া থাকে তখন কাজ শুরু করে দেয় এবং আপনার গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নষ্ট করে দিতে পারে। তবে আপনি যখন কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন না তখন এ ধরনের ভাইরাস গুলো কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
আপনার ব্যবহৃত কম্পিউটার ডিভাইস এ malware, overwrite, Trojan বা worms ভাইরাস ঢুকে আপনার প্রোগ্রাম ফাইল কে ডেমেজ করে দিতে পারে এবং আপনার গুরুত্বপূর্ণ ফাইল এর কিছু অংশ ডিলিট করে আপনার কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তবে কম্পিউটারের ভাইরাস সমুহ যেভাবে কম্পিউটারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে সেগুলো হচ্ছে-
- এমন কিছু বাইরাজ আছে যেগুলো কম্পিউটারের গতি কমিয়ে দেয় অর্থাৎ কম্পিউটার স্লো করে দেয়। ফলে কম্পিউটার বন্ধ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা। এর ফলে কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ টা নষ্ট হয়ে যায় এবং সেভ না হওয়ার কারণে এমন কিছু ডাটা আছে যেগুলো আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
- এমন কিছু ভাইরাস আছে যেগুলো হার্ডডিক্স এর বুটিক সেক্টরকে আক্রান্ত করে এবং হাড ডিস্ক অকেজো করে দেয়। তখন হার্ডডিস্ক ফরম্যাট দেয়া ছাড়া আর অন্য কোন উপায় থাকেনা। আর এতে করে হার্ডডিক্সে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হারিয়ে যায় এবং তথ্যগুলো ধ্বংস হয়ে যায়, পুনরায় উদ্ধার করা সম্ভব নয়।
- কম্পিউটারের ভাইরাস গুলো বায়োসের প্রোগ্রাম মুছে দিয়ে কম্পিউটারকে একদম অচল করে দেয় তখন কম্পিউটার একটি কালো বক্স এর মত দেখায়।
- কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামের এক্সেল ফাইলকে ভাইরাস আক্রান্ত করে তা নষ্ট করে দেয় এবং সেই প্রোগ্রামটি কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
- এমন কিছু আছে যেগুলো কম্পিউটারের মাধ্যমে ওয়েব পেজে প্রবেশ করে কোম্পানির ওয়েব পেজের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিকৃতি করে দেয় এবং ওয়েব পেজের কোম্পানিকে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়।
- এমন কিছু প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি রয়েছে যারা কম্পিউটার সিস্টেম ব্যবহার করে অনুপ্রবেশ করা এবং গোপন তথ্য পাচার করে নেয় এবং কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো ক্ষতি করে।
- আবার এমন কিছু ভাইরাস রয়েছে যেগুলো সামান্য পরিবর্তন করে সম্পূর্ণ হিসাব নিকাশ কাকে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন করে দেয় এবং হিসাবের বিকৃতি ঘটিয়ে থাকে হিসাবের অর্থনৈতিক অমিল হয়ে যায়।
- এমন কিছু প্রোগ্রাম আছে যা সামান্য পরিবর্তন করে স্বাভাবিক কাজকর্ম কে অসাভাবিক করে তোলে এবং ক্ষতির পরিমাণ অকল্পনীয়ভাবে বৃদ্ধি করে ব্যক্তি বা কোম্পানিকে লোকসানের সম্মুখীন করে। সেই সাথে ট্রাফিক কন্ট্রোল এবং নিরাপত্তা এমন দিকে চলে যায় যার ফলে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
সুতরাং কম্পিউটার ভাইরাস এমনভাবে কম্পিউটার এর প্রোগ্রাম সহ কম্পিউটার ডিভাইস এর ওপর আক্রান্ত করে যে সম্পূর্ণ সিস্টেম করে দিতে পারে। এবং সিস্টেম অকেজো করে দেয়ার কারণে ব্যক্তির নিরাপত্তা এবং প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তা ঘাটতি হয়।
কম্পিউটার ভাইরাস মুক্ত রাখার উপায়?
আপনার ব্যবহৃত কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কে ভাইরাস মুক্ত করার জন্য আপনাদেরকে অবশ্যই এন্টিভাইরাস ইন্সটল করতে হবে। নতুবা আপনারা আপনাদের কম্পিউটার ডিভাইস কিভাবে ভাইরাস মুক্ত করতে পারবেন না। তবে বর্তমানে কম্পিউটারে যে অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়, সেই অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ১০ ইনস্টল করার ফলে নিয়মিত উইন্ডোজ আপডেট নিয়ে থাকে এবং সেই উইন্ডোস এর সকল সিস্টেমকে সিকিউরিটি দিয়ে থাকে।
আপনারা যারা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন তারা অবশ্যই অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করবেন এতে করে আপনার কম্পিউটার আলাদাভাবে এন্টিভাইরাস এর প্রয়োজন হয় না। কারণ উইন্ডোজ ১০ প্রতিনিয়ত তার নিজস্ব সময় অনুসারে আপডেট নিয়ে থাকে এবং কম্পিউটারকে ভাইরাসমুক্ত রাখে।
এক কথায় বলতে গেলে আপনার কম্পিউটার ভাইরাস মুক্ত রাখার উপায় হচ্ছে 2 টি।
- কম্পিউটারে এন্টিভাইরাস ইন্সটল করে অথবা।
- কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করে।
FAQ
১. কম্পিউটার হতে ভাইরাস দূর করার জন্য কোন সফটওয়্যার ইন্সটল করতে হয়?
উত্তরঃ কম্পিউটার হতে ভাইরাস দূর করার জন্য এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইন্সটল করতে হয়।
২. কম্পিউটার হতে ভাইরাস দূর করার জন্য যেসকল এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় তার কয়েকটি নাম লিখ।
উত্তরঃ কম্পিউটার হতে ভাইরাস দূর করার জন্য যে সকল অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা হয় সেগুলো হচ্ছে- Avast, Kaspersky,
৩. কম্পিউটারকে ভাইরাস দূর করার জন্য এন্টিভাইরাস ব্যবহার না করে কিভাবে কম্পিউটার হতে ভাইরাস দূর করা যায়?
উত্তরঃ কম্পিউটারকে ভাইরাস থেকে দূর করার জন্য এন্টিভাইরাস এর পরিবর্তে আপনারা কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করতে পারেন।
৪. কম্পিউটারের হার্ডডিক্স এর যখন ভাইরাস অ্যাটাক করে তখন হার্ডডিক্স কি করতে হয়?
উত্তরঃ কম্পিউটার হার্ডডিক্স যখন ভাইরাস অ্যাটাক করে তখন হার্ডডিস্ক ফরম্যাট করে দিতে হয়।
৫. কম্পিউটারে ভাইরাস মুক্ত রাখতে হয় কেন?
উত্তরঃকম্পিউটারকে ভাইরাসমুক্ত রাখার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হচ্ছে- প্রয়োজনীয় তথ্য যাতে নষ্ট না হয়, প্রয়োজনীয় ডাটা যাতে অন্য কেউ চুরি করতে না পারে এবং প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক হিসাব যাতে নষ্ট না হয়ে যায়।