জাতীয় সম্পদ কাকে বলে?
জাতীয় সম্পদ কাকে বলে? | জাতীয় সম্পদ সংরক্ষণের উপায়
আজ আপনাদের জন্য সম্পদ সম্পর্কিত অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ সম্পর্কে জানাবো। আর সেটি হচ্ছে জাতীয় সম্পদ কাকে বলে? চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
জাতীয় সম্পদ কাকে বলে?
জাতীয় সম্পদ হচ্ছে- রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের ব্যক্তিগত সম্পদ এবং সমাজের সকল ব্যক্তিবর্গের সম্পর্কে একত্রিত করলে যে সম্পদ পাওয়া যায় সে সকল সম্পদ কেই বোঝায়।
এছাড়াও রাষ্ট্রের ব্যক্তিদের গুণবাচক বৈশিষ্ট্য জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেমনঃ উদ্ভাবনী শক্তি, কর্মদক্ষতা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান ইত্যাদি।
তবে সংক্ষিপ্ত জাতীয় সম্পদ হচ্ছে- রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত সম্পদ কে একত্রে জাতীয় সম্পদ বলে।
জাতীয় সম্পদ সংরক্ষণের উপায়
একটি দেশের প্রত্যেক নাগরিকের উচিত তার মাতৃভূমির সম্পদ গুলো সংরক্ষন করা এবং অপচয় রোধ করা। এটি মূলত একটি নাগরিকের মৌলিক কাজ। আর এই কাজ প্রত্যেক নাগরিকের করা উচিত।
জাতীয় সম্পদ সংরক্ষণ করলে অর্থনৈতিকভাবে দেশের অগ্রগতি হয়। কারণ জাতিগত উন্নত গুণাবলী অর্জন করা এবং এ গুনাবলী গুলো ধরে রাখা আবশ্যক। কারন একটি দেশের মানুষ যদি শান্তিপ্রিয়, কঠোর পরিশ্রমী, সত্যবাদী, আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন করে থাকে তাহলে সেই দেশের উন্নয়ন এর গতি বৃদ্ধি পায়।
দেশের যত ব্যক্তিগত এবং সামাজিক সম্পদ রয়েছে সে সকল সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে দেশের নাগরিকের একান্ত কর্তব্য। বিভিন্ন যাতায়াত ব্যবস্থা উৎকর্ষ সাধন, উন্নত আর্থসামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, রপ্তানি বৃদ্ধি করা এবং আমদানি হ্রাস করা।
এছাড়াও রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে কর নেয়া হয় আর এই সকল কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে এবং ব্যক্তির সম্পদের উপর বিচার-বিশ্লেষণ করে কর নির্ধারণ করতে হবে।
জাতীয় সম্পদ গুলোর মধ্যে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি সকল নাগরিক ব্যবহার করে থাকে তাই নিজ দেশের উন্নয়ন করার জন্য এ সকল জাতীয় সম্পদ সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে কোনভাবেই অপচয় করা যাবে না। প্রয়োজনীয় সময় প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করতে হবে এবং প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে সে সকল সম্পদ অপচয় করা যাবে না। যেমনঃ অযথা চুলার গ্যাস জানিয়ে রাখা যাবে না।
আরো দেখুনঃ সামাজিক সম্পদ কাকে বলে?
সুতরাং নিজ দেশের উন্নয়নের জন্য নিজ দেশের জাতীয় সম্পদ সংরক্ষণ করতে হবে নিজ দায়িত্বে। নতুবা দেশের উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
জাতীয় সম্পদ অপচয় রোধ
জাতীয় সম্পদ মানুষের প্রয়োজন এবং চাহিদা মিটিয়ে থাকে। আরে সকল সম্পদ অতিরিক্ত ব্যবহার করে অপচয় করা থেকে নিজেদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে। কারণ সকল সম্পদ বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ ব্যবহার করে থাকি তাহলে সেই সম্পদের সময় বিলুপ্তি হয়ে যেতে পারে।
তাই আমাদের সকলের উচিত জাতীয় সম্পদের যোগান অব্যাহত রাখা, সম্পদের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করা, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা, পুনর্ভব সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি দায়িত্ব গড়ে তোলা, জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ ইত্যাদি।
নিম্নে জাতীয় সম্পদ অপচয় রোধ করার কিছু পন্থা উপস্থাপন করা হলো-
- অগ্রাধিকার ভিত্তিক জাতীয় সম্পদ ব্যবহার
জাতীয় সম্পদ অপচয় রোধ করার জন্য যে সম্পদ যেখানে প্রয়োজন সেখানেই ব্যবহার করা উচিত। কারণ এতে করে প্রয়োজন এবং উদ্দেশ্য সম্পন্ন হবে।
- অপচয় রোধ এবং বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে জাতীয় সম্পদ ব্যবহার
সম্পদ রক্ষা করার জন্য অবশ্যই বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত। কারণ এতে করে অনেক সম্পদের অপচয় কমে যায়। আর বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি ব্যবহার করলে সময় এবং সম্পদ দুটোই সঞ্চয় করা যায়। যেমনঃ মাটির নিচে থেকে খনিজ সম্পদ আহরণ করার জন্য বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি ব্যবহার করলে কম সময়ে অনেক খনিজ সম্পদ আহরণ করা যায়।
- পরিবর্তনশীল দ্রব্য ব্যবহার
যে সকল সম্পদের ব্যবহার বেশি হয় সে সকল সম্পদ এর ব্যবহার দ্রুত শেষ হয়ে যায়। আর এ এদিক এর কথা চিন্তা করে সেই সম্পদের পরিবর্তে অন্য একটি সম্পদের ব্যবহার করা যেতে পারে।
যেমনঃ বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য আমরা সকলেই জানি যে কয়লা ব্যবহার করা হয়। তবে এই কয়লার পরিবর্তে যদি পানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ তৈরি করা যায় তাহলে কয়লা সংরক্ষিত থাকে এবং কয়লার অপচয় হ্রাস পায়।
- উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধি
জাতীয় সম্পদ অপচয় রোধ করার জন্য আমাদের অবশ্যই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। এতে একটি সঠিকভাবে অপচয় রোধ হওয়া থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। কারণ দেশে এমন অনেক সম্পদ রয়েছে যা পচনশীল সম্পদ। আর এ সকল পচনশীল সম্পদ নষ্ট যাতে না হয় তার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা সংরক্ষন করা যেতে পারে।
- জাতীয় সম্পদ ব্যবহারে বাহুল্য হ্রাস
আমরা আগেই জেনেছি যে অতিমাত্রায় সম্পদ ব্যবহার করলে শীঘ্রই তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। আর সেই অনুযায়ী নিজের প্রয়োজন অনুসারে উৎপাদন এবং ব্যবহার করার পর অতিরিক্ত যে সম্পদ থাকবে তা অপচয় না করে, সে সকল সম্পদ সংরক্ষন করে রাখতে।
- উৎপাদন বিশেষীকরণ
শ্রমিকের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য উৎপাদনের ওপর বিশেষীকরণ প্রয়োজন। কারণ এতে করে সম্পদের গুণগতমান ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়।
- জাতীয় সম্পদের পুর্নব্যবহার
একটি বস্তু একবার ব্যবহারের ফলে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে পুনরায় ব্যবহার করা সম্ভব হয় তাহলে জাতীয় সম্পদের অপচয় রোধ হয়। যেমনঃ একটি পানির বোতলের পানি ব্যবহার করার পর সেই বোতলটি ফেলে না দিয়ে তা পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে।
- কারিগরি উৎকর্ষতা বৃদ্ধি
জাতীয় সম্পদের অপচয় রোধ করার অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে কারিগরি উৎকর্ষতা বৃদ্ধি। কারণ এতে করে কাঁচামাল দিয়ে বেশি পরিমাণে শিল্প দ্রব্য উৎপাদন করা যায়। পূর্বে ৪ টন কয়লা দিয়ে মাত্র ১ টন ইস্পাত তৈরি করা যেত কিন্তু এখন তা ১ টন কয়লা দিয়ে ১ টন ইস্পাত তৈরি করা সম্ভব। আর এটি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র কারিগরি উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে।
আরো দেখুনঃ খনিজ সম্পদ কাকে বলে?
বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ কি?
একটি দেশের জাতীয় সম্পদ দুই ধরণের হয়ে থাকে একটি হলো অ-আর্থিক সম্পদ আর আরেকটি হলো আর্থিক সম্পদ। বাংলাদেশের অ-আর্থিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে জনগণের নিজস্ব সম্পদ যেমন: জায়গা, জমি ইত্যাদি। আমাদের রয়েছে বিশাল এক সমুদ্র যেখানের খনিজ উপাদানও আমাদের সম্পদ। উন্নত বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার সময়েও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের শক্তিশালী ট্র্যাকে থাকার রেকর্ড রয়েছে।
একটি শক্তিশালী জনসংখ্যা আয় থেকে লভ্যাংশ, শক্তিশালী তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি, স্থিতিস্থাপক রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা যা বাংলাদেশের আর্থিক জাতীয় সম্পদই নয় এগুলো বাংলাদেশকে আরো উন্নত ও শক্তিশালী করছে দিন দিন।
জাতীয় সম্পদ কাকে বলে FAQ
১. জাতীয় সম্পদ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জাতীয় সম্পদ একটি দেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। একটি দেশের উন্নয়ন ও অন্য দেশের কাছে নিজেদের পরিচয় ও ক্ষমতার জন্য নিজস্ব সম্পদ থাকা জরুরী।
২. সম্পদকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়?
সম্পদকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় যেমন: প্রাকৃতিক সম্পদ এবং মানব সৃষ্ট সম্পদ।
৩. জাতীয় সম্পদের উদাহরণ কোনটি?
জাতীয় সম্পদ: বাস্তব, বা অ-আর্থিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে প্রকৃত সম্পদ, বাড়ি এবং ব্যবসা থেকে শুরু করে গাড়ি পর্যন্ত। বিপরীতে, আর্থিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে ব্যাঙ্ক আমানত, কর্পোরেট স্টক এবং বন্ড এবং ট্যাক্স-বিলম্বিত অবসর অ্যাকাউন্টের মতো বিষয়বস্তু।
৪. কোন দেশগুলো জাতীয় সম্পদে ভরপুর?
বিশ্বের 10 টি দেশ যারা জাতীয় সম্পদের দিক থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছে। তালিকায় রয়েছে:
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র – $18.62 ট্রিলিয়ন।
- চীন – $11.22 ট্রিলিয়ন।
- জাপান – $4.94 ট্রিলিয়ন।
- জার্মানি – $3.48 ট্রিলিয়ন।
- যুক্তরাজ্য – $2.65 ট্রিলিয়ন।
- ফ্রান্স – $2.47 ট্রিলিয়ন।
- ভারত – $2.26 ট্রিলিয়ন।
- ইতালি – $1.86 ট্রিলিয়ন।
৫. জিডিপি (GDP) কি জাতীয় সম্পদের অন্তর্ভূক্ত?
মাথাপিছু জিডিপি দেখায় যে প্রতিটি পৃথক নাগরিকের কত পরিমাণ অর্থনৈতিক উৎপাদন মূল্য রয়েছে। এটি সামগ্রিক জাতীয় সম্পদের একটি পরিমাপকেও অনুকরণ করে কারণ প্রতি ব্যক্তির জিডিপি বাজার মূল্য সহজেই একটি সমৃদ্ধির পরিমাপ হিসাবে কাজ করে।
৬. জাতীয় সম্পদের উৎস কি?
একটি জাতির জাতীয় সম্পদ হলো তাদের শিক্ষিত জনগণ ও অর্থনৈতিক অবস্থা। সমগ্র জাতির অর্থনৈতিক মূল্য মিলিয়ে যে হিসাব করা হয় তাকেই জাতীয় সম্পদ বলা হয়। জাতীয় সম্পদের উৎসগুলো হলো:
- উত্তরাধিকার থেকে প্রাপ্ত সম্পদ।
- বিনিয়োগ।
- ব্যবসা মালিকানা অংশ।
- নির্দিষ্ট কর্মসংস্থান থেকে আয়।
৭. কোন ধরনের মূলধন সবচেয়ে বেশি জাতীয় সম্পদ?
মানব সম্পদ,
মানব পুঁজি বিশ্বব্যাপী সম্পদের বৃহত্তম উপাদান, যা বিশ্বব্যাপী মোট সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ।
৮. সম্পদ এবং জিডিপি এর মধ্যে পার্থক্য কি?
জিডিপিতে উৎপাদিত পণ্য এবং পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত থাকে। যখন সম্পদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে – মানব মূলধন, প্রাকৃতিক মূলধন, উৎদিত মূলধন এবং নেট বিদেশী সম্পদ।
৯. জাতীয় আয় ও জাতীয় সম্পদ বলতে কী বোঝায়?
জিডিপি হল এক বছরে তৈরি জাতীয় আয়, যেমন আয়, যা সম্পদের অন্তর্ভূক্ত নয়। জাতীয় সম্পদ হল মূলধন সম্পদ যেমন: নির্মিত অবকাঠামো, মানব পুঁজি, প্রাকৃতিক মূলধন এবং উৎপাদিত মূলধন।
উপসংহার: আশা করি আপনারা জাতীয় সম্পদ কাকে বলে এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জেনেছেন। এছাড়াও যদি জাতীয় সম্পদ কাকে বলে সম্পর্কিত আপনাদের আরো কিছু জানার থাকে তাহলে আমাদের নিজের কমেন্ট সেকশনে ও জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।