অংক কাকে বলে? | অংক এর প্রকারভেদ
অংক কাকে বলে? | অংক এর প্রকারভেদ | অংক এর আবিষ্কারক কে?
ছোট বেলায় মা কিংবা বাবার হাতের পিটুনি কে না খেয়েছে? কম বেশি আমরা সকলেই পিটুনি খেয়ে বড় হয়েছি। কারণে অকারণে প্রায় সময়ই পিটুনি যেনো একটা থ্যারাপি ছিল। আর এই থ্যারাপি টা যেনো বেশি দেয়া হতো পড়তে বসার পর।
এতসব সাবজেক্ট এর মধ্য থেকে কেনো জানি অংক সাবজেক্টটাতে ভীতি কাজ করতো সব সময়। অংক ও সংখ্যার মধ্যে তালগোল পাকিয়ে ফেলা যেনো নিত্য দিনের কাজ ছিল। স্কুলের গণিত স্যারও এই পিটুনি থ্যারাপি দেয়া থেকে যেনো বাদ যেতো না। একটা সময় যেনো এই অংক, সংখ্যার প্রতি বিরক্ত জন্ম নিত। এই অংক কে আবিষ্কার করেছে এমন সব অদ্ভুত প্রশ্ন মাথায় আসত আর বিরক্তিতে মাথা ফেটে পরতো!
তবে হ্যাঁ, আমার কাছে এই সময়ে এসে মনে হয় স্কুলের স্যাররা যদি ভয় না দেখিয়ে, পিটুনি থ্যারাপি না দিয়ে যদি আনন্দ নিয়ে পড়াতেন তাহলে হয়তো আমরা অনেক কিছু সহজে শিখতে পারতাম।
চলুন, আজ তাহলে অংকের ভীতি কাটিয়ে জেনে নেই অংক কাকে বলে। চেষ্টা করব “অংক কাকে বলে” তা মজা করে উপস্থাপন করার যাতে ছোটবেলার মত ভয় কিংবা বিরক্ত কোনোটাই যেনো না লাগে।
আরো দেখুনঃ পর্যায় সারণি কাকে বলে?
অংক কি?
অংক হলো সংখ্যা গঠণের জন্য ব্যবহৃত প্রতীক ও গাণিতিক যুক্তি যা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের প্রতিনিধিত্ব করে এবং গণনা করতে ব্যবহৃত হয় তাকেই অংক বলে। যেমন: ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, এবং ৯ ইত্যাদি।
অংক কাকে বলে? | What is math?
গণনার কাজে সংখ্যা গঠনের জন্য যেসকল প্রতীক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে অংক বলে।
অর্থাৎ, শুন্য থেকে নয় পর্যন্ত একক প্রতীক সমূহই হচ্ছে অংক। অংকের মোট প্রতীক সংখ্যা হলো ১০ টি। আর এই প্রতীক সংখ্যা সমূহ গুলো হলোঃ ০, ১,২,৩,৪,৫;৬,৭,৮,৯
নিচে একটি উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করছি। আশা করছি তাহলে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। যেমনঃ ৭৮৬ একটি সংখ্যা। এই সংখ্যা কে প্রকাশ করা হয়েছে যথাক্রমে ৭,৮ এবং ৬ তিনটি ভিন্ন ভিন্ন প্রতীক বা অংকের মাধ্যমে।সুতরাং আমরা বলতেই পারি, প্রতিটি অংকই হচ্ছে এক একটি সংখ্যা।
অংক এর প্রকারভেদ
এতক্ষণ আমরা জানার চেষ্টা করলাম, অংক কাকে বলে এবং ঠিক কোনগুলো অংক। অংক সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানা যাবে এর প্রকারভেদ সম্পর্কে জানলে। তবে এখানে বলে রাখা প্রয়োজন গনিতের ব্যবহার ও কাজ অনুযায়ী কয়েক ধরনের সংখ্যা পদ্ধতি আছে। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে একেক ধরনের সংখ্যা পদ্ধতিতে একেক রকমের অংকের মাধ্যমে হিসাব করতে হয়।
প্রথমেই বলে নিচ্ছি, জনপ্রিয় সংখ্যা পদ্ধতিগুলো নিয়ে। যেমনঃ
- দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি (Decimal number system)
- বাইনারী সংখ্যা পদ্ধতি (Binary number system)
- অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি (Octal number system)
- হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি (Hexadecimal number system)।
জনপ্রিয় এই ৪ টি সংখ্যা পদ্ধতি থাকলেও হিসাবের কাজে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয় প্রথম জনপ্রিয় পদ্ধতি টি অর্থাৎ, দশমিক পদ্ধতি। আর উপরে যে শুন্য থেকে নয় পর্যন্ত অংকগুলো নিয়ে যে আলোচনা করা হয়েছে তা আসলে দশমিক পদ্ধতি অনুসারেই।
এদিকে দশমিক পদ্ধতিতে অংক আবার ২ প্রকার। যেমনঃ
- সার্থক অংক এবং
- সহকারী অংক।
চলুন বিস্তারিত জানা যাক।
সার্থক অংকঃ যে অংকগুলোর নিজস্ব মান থাকে তাকে সার্থক অংক বলে। বুঝতে কঠিন মনে হচ্ছে? আচ্ছা, সহজ করে বুঝিয়ে বলি তাহলে।
যেসব অংকগুলো মূলত কোন সংখ্যার সাথে সামনে, পিছনে কিংবা মাঝখানে বসে নতুন সংখ্যা গঠন করে তাকে সার্থক অংক বলে।
- সার্থক অংকগুলো হলঃ ১,২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯
সহকারী অংকঃ যে অংক সংখ্যার শেষে ও মাঝেখানে বসে সংখ্যার মান পরিবর্তন করতে পারলেও, সংখ্যার প্রথমে বসে মানের কোন পরিবর্তন করতে পারেনা তাকে সহকারী অংক বলে। সহকারী অংক মাত্র ১ টি, তা হল ০ উদাহরণ দিয়ে যদি বলি তবে সহজেই বুঝতে পারবেন।
যেমনঃ ৭৮৬ একটি সংখ্যা। এই সংখ্যাটির শেষে ০ যোগ করলে নতুন আরেকটি সংখ্যা ৭৮৬০ হয়। কিন্ত ৭৮৬ সংখ্যাটির পূর্বে ০ বসালে সংখাটির মানের কোন পরিবর্তন হয় না। আর নতুন সংখ্যা গঠন করতে পারে না বলেই এটি সহকারী সংখ্যা নামে পরিচিত।
দশমিক পদ্ধতিতে অংক কাকে বলে ও প্রকারভেদ আমরা জানলাম। এবার জানবো সংখ্যা পদ্ধতির অংক সম্পর্কে। চলুন বিস্তারিত জেনে নেই।
বাইনারি পদ্ধতিঃ সাধারণত কম্পিউটার হিসাব সংরক্ষণে বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি বেশী ব্যবহৃত হয়। বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে অংক দুইটি। যেমনঃ ০ এবং ১।
অক্টাল পদ্ধতিঃ নাম শুনেই বুঝতে পারছেন, অক্টাল পদ্ধতিতে অংক সংখ্যা ৮ টি। এটিও কম্পিউটার হিসাবে সংরক্ষণে বেশী ব্যবহৃত হয়।
- এই পদ্ধতির অংকগুলো হল – ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭
হেক্সাডেসিমেল পদ্ধতিঃ হেক্সাডেসিমেল পদ্ধতিতে অংক সংখ্যা ১৬ টি।
- এই পদ্ধতির অংকগুলো হল – ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ এবং A, B, C, D, E, F
অংক এর আবিষ্কারক কে?
অনেকেই আছে অংক এর জনক এর কথা জানতে চায় কিংবা অংক এর জনক এর নাম জানতে চায়। কিন্তু যদি বলি, অংক এর জনক নেই আছে আবিষ্কারক। কারণ অংক কোনো উদ্ভাবন নয়। যা উদ্ভাবন করা হয় সেটির মূলত জনক থাকে। অংক মূলত আবিষ্কার করা হয়েছে হিসেব রাখার সুবিধার্থে। আর অংক এর আবিষ্কারক হচ্ছে আর্কিমিডিস। উনি গ্রিস অধিবাসী। এদিকে আবার ভারতে অংক এর আবিষ্কার বলা হয় আর্যভট্ট কে।
আরো দেখুনঃ
অংক কাকে বলে? FAQ
১. অংক কত প্রকার?
অংকের কয়েকটি প্রকারভেদ রয়েছে। তার মধ্যে আছে:
- প্রাকৃতিক সংখ্যা।
- পূর্ণ সংখ্যা।
- মূলদ সংখ্যা।
- অমূলদ সংখ্যা।
- বাস্তব সংখ্যা।
- জটিল সংখ্যা।
২. মৌলিক সংখ্যা কি?
প্রথম দশটি সংখ্যা গণিতের মৌলিক সংখ্যা হিসাবে পরিচিত। এই মৌলিক সংখ্যাগুলির তালিকা ০ থেকে শুরু হয় এবং ৯ এ গিয়ে শেষ হয়৷ মৌলিক সংখ্যাগুলি হল ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, এবং ৯ ইত্যাদি।
৩. গণিতের জনক কে?
আর্কিমিডিস হলো গণিতের জনক। গণিতের বিকাশে তার উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তাকে গণিতের জনক বলা হয়। আর্কিমিডিসের উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবনগুলি হলো: একটি বৃত্তের পরিমাপের গণনা।
৪. গণিতের পূর্ণরূপ কি?
MATH এর অর্থ বা পূর্ণরূপ হল “Mathmatics”।
৫. গণিত সহজ নাকি কঠিন?
অনেক শিক্ষার্থীর মনে হয় গণিত সবচেয়ে কঠিন একটি বিষয়। গণিতকে অনেকে সবচেয়ে স্কোরিং বিষয় হিসাবে বিবেচনা করে। প্রকৃতপক্ষে, অন্য বিষয়ের তুলনায় গণিতে সহজেই ১০০/১০০ (বা পূর্ণ নম্বর) স্কোর করা যায়।
উপরের আলোচনায় অংক কাকে বলে এবং কোন সংখ্যা পদ্ধতিতে কি অংক ব্যবহৃত হয় আলোচনা করেছি। আপনাদের বোধগম্যের জন্য সহজ করে উপস্থানপন করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি অংক কাকে বলে তা সহজেই আপনারা বুঝতে পেরেছেন। পরিশেষে একটা কথাই বলবো অংক তে কোন ভীতি নয়, শান্ত ভাবে বোঝার চেষ্টা করলেই দেখবেন অংক এর চেয়ে মজার কিছু নেই।