গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
২, ৩, ৫, ৬, ৭,৮ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সমূহ | Gorvoboti Mayer Khabar Talika
আপনি যদি গর্ভবতী হন, তাহলে উইকিপিডিয়া বাংলা এর লেখাটি আপনার জন্য। আমরা এখানে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা দিয়েছি। আপনি স্বাভাবিক অবস্থায় যে খাবার খাবেন, গর্ভবস্থায় সে খাবার খেলে পারবেন না। কারন, এখন আপনার পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন। তাই আমরা আপনার জন্য, একটি পুষ্টিকর খাবারের তালিকা দিয়েছি। তার সাথে সাথে গর্ভকালীন অবস্থায় যেসব খাওয়া যাবে না, তা উল্লেখ্য করেছি। আপনি ভালো করে আমাদের লেখাটি পড়ুন।
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা লিস্ট
১. ক্যালসিয়াম:
গর্ভবস্থায় মায়ের প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খেতে হবে। ক্যালসিয়ামে শিশুর হাড় গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মা যদি প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার না খায়, তাহলে শিশুর হাড় শক্ত হবে না। যেমন: দুধ, দধি ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। নিয়মিত শাক-সবজি খেতে হবে। মাছের কাটায় প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকে।
আপনি যখন বড় মাছের কাটা খাবেন, তখন মাছের কাটার বাজে বাজে আলটা জাতীয় পানীয় পাবেন, এ গুলো খাবেন। অনেক সময় দেখা যায় গর্ভবস্থায় ক্যালসিয়ামে অভাবে মায়ের হাত ও পায়ের জোড়া ব্যাথা করে। এ সমস্যাটি ক্যালসিয়ামেন জন্য হয়ে থাকে। তারপরেও যদি কোনো সমস্যা হয়ে থাকে,তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে, ঊষধ সেবন করুন।
২. আয়োডিন:
গর্ভবস্থায় শিশুর মায়ের জন্য আয়োডিন জাতীয় খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। এর অভাবে শিশু প্রতিবন্ধীগত সমস্যা হয়ে থাকে। তাই গর্ভবস্থায় মায়ের জন্য আয়োডিন যুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি। আয়োডিন যুক্ত খাবার গুলো: দুধ, টুনা মাছ, চিংড়ি, সেদ্ধ ডিম, টকদই, কলা, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি। এতে প্রচুর পরিমান আয়োডিন থাকে।
৩. জিংক:
জিংক জাতীয় খাবার, গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা এর অন্যতম একটি খাবার। গর্ভবস্থায় শিশুর মায়ের জিংঙ্ক জাতীয় খাবারের পরিমাণ কম হলে, শিশু জম্মানোর সময় কম ওজনের হয়ে থাকে। এর অভাবে শিশুর ডায়েরিয়া, নিউমনিয়া, জিহ্বায় ক্ষত, মুখের চার পাশে ক্ষত দেখা দেয়। জিংঙ্ক জাতীয় খাবার গুলোর তালিকা: মাংস, এতে জিংক রয়েছে, ভেড়ার মাংসে প্রচুর জিংক থাকে। গরুর ১০০ গ্রাম মাংসে ৪.৮ মিলিগ্রাম জিংক থাকে। এ ছাড়া রয়েছে ডিম, গরু-খাসির কলিজা, আটার রুটি, মসুর ডাল, সয়াবিন, বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাবার।
৪. আয়রন:
অনেক শিশু জম্মের পরে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়, এটি আয়রনের অভাবে হয়ে থাকে। আয়রন জাতীয় খাবারে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই, যে খাবার গুলোতে আয়রন আছে তা নিয়মিত খেতে হবে। খাবার গুলোর তালিকা: লাল শাক, পালং শাক, কচু শাক, কাঁচা শাক, বাদাম, ছোলা, ডালিম, শিং মাছ, মাগুর মাছ ইত্যাদি। এই সব খাবার গুলো খাওয়া গুলো বেশি বেশি খাবেন।
৫. ভিটামিন:
শিশুর মায়ের জন্য ভিটামিন জাতীয় খাবারের ঘাটতি হওয়া যাবে না। তবে, ভিটামিন এ ও ভিটামিন ডি অনেক ভূমিকা পালন করে।ভিটামিন এ এর অভাবে শিশুর দৃষ্টিশক্তি হীনতা হতে পারে বলে মনে করেন ডাক্তারা। তাই ভিটামিন এ চোখের জন্য একটি কার্যকরী উপাদান। সকল প্রকার সাক-সবজি তে ভিটামিন এ রয়েছে, মলা এবং ঢেলা মাছ ও ডিমের কুসুমেও এটি বিদ্যমান।
ভিটামিন ডি, এটি দেহের অন্ত্র থেকে ক্যালসিয়ম গুলো শোষণ করে থাকে। ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুর হাড় পরিপূর্ণ ভাবে বৃদ্ধি পায় না। এতে শিশুর হার বাঁকা হয়ে যায়। ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার গুলো: দুধ, দধি, পনির, ডিম, সামুদ্রিক মাছ, গরুর কলিজা, মাছের তেল এবং মাশরুম ইত্যাদিতে ভিটামিন ডি আছে।
মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে বিভিন্ন শারিরীক সমস্যার সম্মুখীন একজন মা হয়ে থাকেন তার মধ্যে রয়েছে বুক জ্বালাপোড়া করা, কোন কিছু খেতে ইচ্ছা না করা আর এই সমস্যার কারণে একজন মা পর্যাপ্ত পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হন এতে এটি তার শরীরের জন্য যেমন খারাপ তেমনি বাচ্চার জন্যও। তাই গর্ভধারণের প্রথম ১ মাস খুব সাবধানে ও ভালো মানের খাবার খেতে হবে। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে স্বাস্থ্যকর খাবার আপনার খেতে নাও ইচ্ছা করতে পারে যেমন: টাটকা সবজি বা চর্বিহীন মাংস কিন্তু তারপরও একজন মাকে খাবার খেতে হয়।
এক্ষেত্রে ১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকার মধ্যে যে খাবারগুলি অবশ্যই থাকতে হবে তার মধ্যে রয়েছে: চর্বিহীন মাংস, আয়রন জাতীয় খাবার, প্রোটিনেন ভাল উৎস, ভালোভাবে রান্না করা চর্বিহীন মাংস, মুরগির মাংস, দই, কলা, মটরশুটি, মসুর ডাল, আদা চা ইত্যাদি। মাংস নতুন কোষের বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে ও কোষকে শক্তি প্রদান করে।
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবারের তালিকা | ৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
গর্ভবতী মহিলার জন্য প্রথম তিন মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রথম থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। নিয়মিত ব্লাড প্রেসার পরিক্ষা করতে হবে। হালকা কিছু ব্যায়াম করতে হবে। আমরা গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকা দিলাম, তবে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করবেন। এখনে বিস্তারিত ভাবে বলার কিছু নেই। তবে উপরে আলোচনা করা গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা টি মেনে চলুন। এ ছাড়া দুই মাস পরপর ওজন মাপতে হবে।
গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খাওয়া যাবে না
১. অতিরিক্ত পরিমানে শর্করাযুক্ত খাবার যেমন, মিষ্টি খাবার, ফাস্টফুড, তেলের পিঠা খাওয়া যাবে না।
২. চা-কপি ক্যাফেইন যুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। এতে আয়রন শোষণে বাধা দেয়।
৩. অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। এতে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
একজন নারী যখন গর্ভবতী হন তখন তাকে যেমন পুষ্টিকর খাবারের দিকে মনোযোাগ বাড়তি করে দিতে হয় ঠিক তেমনি এমন কিছু খাবারও তাকে এড়িয়ে চলতে হয় যা তার অনাগত সন্তানের জন্য ও তার জন্য ভালো নয়। গর্ভাবস্থায় এমন কিছু ফল ও সবজি রয়েছে যা আপনাকে অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।
গর্ভাবস্থায় যে সবজি আপনার সচেতনভাবে এড়িয়ে চলা উচিত তার মধ্যে রয়েছে বেগুন। বেগুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোহরমোনস যা গর্ভবতী নারীদের জন্য খারাপ আবার অনেক নারীদের এলার্জির মতো সমস্যা থাকতে পারে তাই এই অবস্থায় এই সবজিটি এড়িয়ে চলা উচিত। এছাড়া কাঁচা সবজি খাওয়া উচিত না কারণ কাঁচা সবজিতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকে তাই সবজি খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে নিন। আর রান্নার সময়ও পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ভালো করে রান্না করুন।
আরো দেখুনঃ
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা FAQ
১. গর্ভবস্থায় কোন ফল এড়িয়ে চলা উচিত?
গর্ভাবস্থায় আপনাকে তিনটি ফল এড়িয়ে চলতে হবে। তার মধ্যে রয়েছে পেঁপে, আনারস, আঙ্গুর।
পেঁপে: কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপেতে ল্যাটেক্স থাকে যা অকাল গর্ভপাত করে তাই এটি আপনার অনাগত শিশুর জন্য মারাত্মক হতে পারে। তবে পাকা পেঁচে ভিটামিন ও আয়রনে সমৃদ্ধ থাকে। এটি পরিমাণ মতো খেলে কোন ক্ষতি হবে না কিন্তু কাঁচা পেপে খাওয়া উচিত নয় একদম।
আনারস: আনারসে নির্দিষ্ট এনজাইম থাকে যা জরায়ুর গঠণ পরিবর্তন করে যা অকাল গর্ভপাত করাতে পারে এবং ডায়রিয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে খেলে।
আঙ্গুর: আঙ্গুর শরীরে অতিরিক্ত তাপ উৎপাদন করে যা মা এবং শিশু উভয়ের জন্য খারাপ।
২. একজন গর্ভবতী মহিলার প্রতিদিন কী খাবার খাওয়া উচিত?
প্রচুর ফল এবং শাকসবজি খান কারণ এগুলি ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে, সেইসাথে ফাইবার, যা হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। প্রতিদিন বিভিন্ন ধরণের ফল এবং শাকসবজির অন্তত 5টি মেন্যু রাখুন – এর মধ্যে তাজা ও সবুজ ফল ও শাক-সবজি, প্রোটিণ জাতীয় খাবার, টিনজাত, শুকনো বা জুস অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
৩. গর্ভবতীর মায়ের সকালে কি খাওয়া উচিত?
আপনার এবং আপনার শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি গ্রহণের জন্য প্রাতঃরাশ বা সকালের নাস্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাবার। সকালের নাস্তায় যে খাবারগুলো আপনার খাওয়া উচিত যেমণ: দই, শিম সেদ্ধ, দুধ (বা উদ্ভিদজ খাবার দুধ, ডিম, বাদাম এবং বীজ। এই খাবারগুলো মধ্যে রয়েছে বি ভিটামিন, ফোলেট, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সি যা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য খুব জরুরী।
৪. একজন গর্ভবতী মায়ের দুপুরের খাবার কি হওয়া উচিত?
ক্যালসিয়ামের জন্য একটি ছোট স্মুদি, ফাইবার এবং ভিটামিনের জন্য একটি সালাদ এবং প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেটের জন্য পুরো শস্যের রুটি পাশাপাশি জলপাই তেল, বাদাম বা অ্যাভোকাডো ফল, ভাল চর্বির উৎস ইত্যাদি।
৫. ভাত কি গর্ভবতী মায়ের জন্য ভালো?
সাদা চাল এবং বাদামী চাল উভয়ই একজন গর্ভবতী মায়েদর জন্য দুর্দান্ত খাবার, এর কারণ হল চাল প্রাকৃতিকভাবে ক্যালসিয়াম, ফাইবার, রিবোফ্লাভিন, থায়ামিন এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ, যা সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং ভাতে থাকা স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেটগুলিকে যথেষ্ট শক্তি জোগাতে সাহায্য করে।
পরিশেষে: আমরা আপনাদের জন্য যে লেখা গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা, গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা এবং গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খাওয়া যাবে না। যদি আমাদের লেখাটি আপনার পছন্দ হয়, তাহলে কমেন্ট করুন। শেয়ার করে রাখুন।