ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
ঈদের নামাজ কি? | ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত
পবিত্র মাহে রমজানের পর সকল মুসলমানরা ঈদুল ফিতর পালন করেন। আর ঈদ হচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এবং প্রধান ধর্মীয় উৎসব। মুসলিম উম্মাহর জন্য ঈদ রয়েছে। একটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর এবং অন্যটি হচ্ছে ঈদুল আযহা। তবে ঈদ উদযাপনের পূর্বে ঈদের সকল আচার-আচরণ শুরু হয় ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্যে দিয়ে। তাই আপনার যারা ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম এখন পর্যন্ত জানেন না তাদের জন্য আমরা এইনিয়মটি নিয়ে এসেছি।
আরো দেখুনঃ ঈদ মোবারক স্ট্যাটাস.
যাতে করে আপনারা বছরের দুই ঈদে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন সুষ্ঠুভাবে এবং সঠিক নিয়মে। আপনারা যারা এখন পর্যন্ত ঈদের নামাজ সম্পর্কে জানেন না এবং ঈদের নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম জানেননা তারা আমাদের সাথে থাকতে পারেন এবং আমাদের পোস্টে দেয়া ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম পড়ে ঈদের নামাজ সম্পর্কে জানতে পারেন। তবে তাহলে চলুন শুরু করি আমাদের আজকের মূল বিষয় ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম।
ঈদের নামাজ কি?
ঈদের নামাজ হচ্ছে সুন্নাত মক্কা দা ইবাদাত। তবে ঈদের নামাজ ছাদবিহীন অর্থাৎ খোলা স্থানে আদায় করা সুন্নত। আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ঈদের নামাজ আদায় করতেন। তবে কোন কারণে যদি খোলা স্থানে ঈদের সালাত আদায় করা সম্ভব না হয় তবে মসজিদে সালাত আদায় করা যাবে। তবে ঈদের সালাত খোলা অথবা ছাদযুক্ত যেকোনো স্থানে পড়া যাবে কিন্তু অবশ্যই ঈদের সালাত জামায়াতের সাথে পড়তে হবে। আমরা যখন জুমার নামাজ আদায় করি এবং জুম্মা নামাজ আদায়ের জন্য যে সকল শর্ত আরোপ করা হয় ঠিক তেমনি ঈদের সালাতের জন্য একই শর্ত প্রযোজ্য।
ঈদের সালাতের জন্য আযান ও ইকামত দেওয়ার নিয়ম নেই তবে অবশ্যই ঈদের সালাত আদায় করার জন্য জুমার নামাজের মতই উচ্চস্বরে কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে এবং সেই সালাত জামাতের সাথে আদায় করতে হবে। তবে ঈদের সালাতের পার্থক্য হচ্ছে অতিরিক্ত ৬ তাকবীর দিতে হয়। ঈদের সালাত সাধারণ নামাজের মত নয় কিন্তু এই নামাজের বিশেষ নিয়ম রয়েছে আর এই নিয়ম অনুসারে নামাজ আদায় করতে হয়।
সুতরাং ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য অবশ্যই আমাদেরকে জামায়াতের সাথে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে এবং ৬ তাকবীরের সাথে ঈদের নামাজ সম্পন্ন করতে হবে।
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম
আপনারা যারা এখন পর্যন্ত ঈদের সালাতের নিয়ম জানেন না, অর্থাৎ ঈদের সালাত কিভাবে আদায় করতে হয় তা জানেন না তাদের জন্য আমরা নিম্নে ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম জানিয়ে দিচ্ছি। যাতে করে আপনারা আমাদের এই ওয়েবসাইট থেকে এই নিয়মটি জেড এর জ্ঞান অর্জন করতে পারেন এবং ঈদের সালাত জামাতের সাথে আদায় করতে পারেন।
ঈদের দুই রাকাত ওয়াজিব সালাত আদায় করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাদেরকে ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নিতে হবে এবং অজু করে নিতে হবে। এদেশে তাদের জন্য অবশ্যই আপনাদেরকে নতুন পোশাক অথবা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করতে হবে।
ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম-
- প্রথমে আপনাদেরকে স্বাভাবিক নামাযের মত করে তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত পাততে হবে অর্থাৎ ( আল্লাহু আকবার) বলতে হবে। অবশ্যই আপনাদেরকে ঈদের দুই রাকাত সালাত এর নিয়ত করার পর আল্লাহু আকবার বলতে হবে।
- এরপর সানা পড়তে হবে।
- অতিরিক্ত তাকবীর দিতে হবে। (প্রথম দুই তাকবীর দেয়ার পর হাত তুলে ছেড়ে দিতে হবে এবং তৃতীয় তাকবীরে আবার হাত বেঁধে ফেলতে হবে)।
- এখন বিসমিল্লাহি রহমানের রাহিম পাঠ করার পর ইমাম সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়বেন। আমাদের সকলকে এই সকল সূরা মনে মনে পাঠ করতে হবে আর যদি আমরা এ সকল সূরা মুখস্ত না পারে তাহলে ইমাম যে সূরা পাঠ করছেন তা মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে।
- আমরা যেভাবে স্বাভাবিক নামাজ পড়ার সময় রুকু এবং সিজদা দিয়ে থাকি ঠিক সেভাবে রুকু এবং সেজদা দেয়ার মধ্য দিয়ে প্রথম রাকাত নামাজ সম্পন্ন করতে হবে।
- তারপর দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম যখন কিরাত পাঠ করবেন প্রথম রাতের মতো করে কিরাত মুখস্ত হলে পড়তে হবে আর মুখস্ত না থাকলে মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে। কেরাত পাঠ করার পর অর্থাৎ রুকুতে যাওয়ার পূর্বে অতিরিক্ত তাকবীর দিতে হবে। উঠাবেন এবং ছেড়ে দিবেন তারপর চতুর্থ তাকদীর বলে রুকুতে চলে যেতে হবে।
- এখন প্রথম রাকাতে মত করে দ্বিতীয় রাকাতে রুকু এবং সেজদা শেষ করতে হবে এবং তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ এবং মাসুদা পড়ে সালাম ফিরিয়ে ঈদের দুই রাকাত সালাত সম্পন্ন করতে হবে।
- ইমাম সাহেব খুতবা দিবেন মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনতে হবে এবং কোন ধরনের বিশ্বাস না করে মনোযোগ সহকারে সেসকল খুতবা সমূহ শুনতে হবে। খুতবা শেষ হয়ে গেলে
- খুতবা শোনা শেষ হয়ে গেলে মসজিদ ট্যাগ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনারা নামাজে যাওয়ার জন্য যে পথ বেছে নিয়েছেন আর নামায শেষ করার পর তার বিপরীত পথে বাড়িতে ফিরতে হবে। তবে আপনাদের যদি বিকল্প কোন পথ না থাকে তাহলে কোন সমস্যা নেই।
আরো দেখুনঃ ঈদুল আজহা ২০২২ কত তারিখে?
ঈদের নামাজের আরবি নিয়ত
ঈদের নামাজের নিয়ত হচ্ছে ঈদের নামাজ আদায় করার পূর্বে আপনারা যে নিয়োগ করবেন সেটি। আর এই ঈদের নামাজের নিয়ত আপনারা চাইলে নিজ ভাষায় বলতে পারেন আবার আরবি ভাষায় বলতে পারেন। তবে আপনারা যারা আরবিতে উচ্চারণ করে ঈদের নামাজের আরবি নিয়ত করতে চাইছেন তারা আমাদের দেয়া নিম্নে ঈদের নামাজের আরবি নিয়ত থেকে জেনে নিতে পারেন।
ঈদের নামাজের তাকবীর
ঈদের নামাযের তাকবীর হচ্ছে ৬ টি। তবে এই তাকবীরের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মতবাদ রয়েছে এবং বিভিন্ন হাদিসে বিভিন্নভাবে তাকবীরের সংখ্যা উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ৬টি তাকবীর ঈদের সম্পন্ন হয়ে আসছে। কারণ আমরা সকলে জানি ঈদের সালাত জামাতের সাথে আদায় করা হয় তাই বেশিরভাগ জামায়াতে ঈদের সালাত ৬ তাকবীরের মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন করে থাকে। আর এই ঈদের সালাত আদায়ের জন্য যে সকল হাদীস রয়েছে সে সকল হাদীস নিম্নে দেয়া হলো-
মালেকী হাম্বলী মাযহাবের আলেমগণ ঈদের নামাযের তাকবীর সম্পর্কে বলেছেন- ঈদের নামাজের প্রথম রাকাতে তাকবীর সংখ্যা হবে ৬ টি এবং দ্বিতীয় রাকাতে ৫ টি। ( মদিনার সাত ফকীহ, ওমর ইবনে আবদুল আজিজ, যুহরী এবং মুযানী)।
শাফী মাযহাবের আলেমগণ ঈদের সালাতের তাকবীর সম্পর্কে বলেছেন- ঈদের সালাতের প্রথম রাকাতে অতিরিক্ত ৭ টি এবং দ্বিতীয় রাকাতে ৫ টি।
সুতরাং এভাবে একেক দেশে একেক রকম ভাবে তাকবীর সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে তবে বর্তমানে ৬ তাকবীর এর মধ্যে দিয়ে ঈদের সালাত সম্পন্ন করা হয়।
FAQ
১. ঈদের সালাত কখন পড়া হয়?
উত্তরঃ ঈদের সালাত ঈদের দিন সকাল বেলা পড়তে হয়।
২. ঈদের সালাত সুন্নত নাকি ওয়াজিব?
উত্তরঃ ঈদের সালাত হচ্ছে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
৩. ঈদের সালাত কত রাকাত?
উত্তরঃ ঈদের দুই রাকাত পড়তে হয়।
৪. ঈদের সালাত আদায় করা কি?
উত্তরঃ ঈদের সালাত আদায় করা সুন্নাত। যেহেতু ঈদের সালাত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আদায় করতেন সেহেতু ঈদের সালাত আদায় করা সুন্নাত।
৫. ঈদের সালাতের জন্য আযান দেয়া হয়?
উত্তরঃ ঈদের সালাতের জন্য আযান দেয়া হয় না।
উপসংহারঃ আপনারা যারা ঈদের সালাতের নিয়ম জানতেন না তো আশা করছি তারা আমাদের এই আর্টিকেল থেকে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এবং ঈদের সালাতের অন্যান্য বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। আপনারা যদি ঈদের সালাত সম্পর্কিত আরো অন্যান্য তথ্য জানতে চান তাহলে আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আমরা আপনাদেরকে যথাসাধ্য জানানোর চেষ্টা করব। জাযাকাল্লাহ।