শবে কদরের নামাজের নিয়ম | শবে কদরের নামাজ নফল না সুন্নত
শবে কদরের নামাজের নিয়ম | শবে কদর নামাজের নিয়ত | শবে কদরের নামাজ নফল না সুন্নত
শবে কদরের নামাজের নিয়ম কি? এটি আপনাদের অনেকের মনে প্রশ্ন। তাই আজ আমরা আপনাদের জন্য এই প্রশ্নের উত্তর এবং শবে কদর সম্পর্কে কিছু তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি। যাতে করে ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাই ও বোনেরা রমজান মাসের শেষ দশ দিনের যেকোনো বিজোড় রাত গুলোতে সঠিকভাবে এবাদত করতে পারেন।
কিন্তু সাধারণত বাংলাদেশ এবং অন্যান্য ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোতে ২৭ রমজান রাতকে শবে কদর বা লাইলাতুল কদর হিসেবে ধরা হয়। আর ১০০০ রাতের বেশি ইবাদত করার ফলে যে সাওয়াব পাওয়া যাবে তা একরাতে বা বা শবে কদরের রাতে পাওয়া যাবে। কিন্তু শবে কদরের নামাজের নিয়ম আমরা অনেকেই জানি না। আর তার জন্য আমরা শবে কদরের নামাজের নিয়ম সম্পর্কিত একটি আর্টিকেল নিয়ে হাজির হয়েছি। চলুন তাহলে জেনে নেই শবে কদরের নামাজের নিয়ম মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে।
শবে কদর নামাজ কত রাকাত
আপনাদের মনে এখন প্রশ্ন আসতে পারে শবে কদরের জন্য কত রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়? কিন্তু শবে কদরের নামাজের কোন বিশেষ উঠানে দৃষ্ট রাকাত নেই। আপনার সামর্থ্য অনুসারে আপনি যত খুশি তত নফল নামাজ আদায় করতে পারবেন। তবে একটি শর্ত হচ্ছে লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের রাতে নফল নামাজ পড়ার সময় অবশ্যই সে নামাজ যত সুন্দর করে পড়া এবং মনোযোগ সহকারে পড়া উত্তম।
শবে কদরের নামাজ পড়ার সময় অবশ্যই দুই রাকাত করে নফল নামাজ নিয়ত করতে হবে। কিন্তু এই দুই রাকাত নামাজ পর্যন্ত সমাপ্তি নয়। আপনার যতো খুশি ততো নামাজ পড়তে পারেন এবং যেকোন সূরা ব্যবহার করে এই নামাজ পড়তে পারবেন। নামাজের পাশাপাশি এড়াতে কোরআন তেলাওয়াত করা উত্তম।
সুতরাং শবে কদর নামাজের কোন নির্দিষ্ট রাকাত নেই। তবে নামাজ পড়ার সময় দুই রাকাত নফল নামাজ নিয়ত করতে হবে।
আরো দেখুন: শবে কদরের দোয়া.
শবে কদরের নামাজ নফল না সুন্নত
অনেক মুসলমান ভাই ও বোনদের মধ্যে প্রশ্ন থাকে শবে কদরের নামাজ নফল হিসেবে ধরা হয় নাকি সুন্নাত হিসেবে ধরা হয়। যেহেতু শবে কদরের নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক নয় এবং শবে কদরের নামাজের কোন নির্দিষ্ট রাকাত নেই সেহেতু আপনারা যদি এই শবে কদরের রাত কে উদ্দেশ্য করে নামাজ পড়তে চান তাহলে অবশ্যই সেই নামাজ নফল হিসেবে নিয়োগ করতে হবে এবং মহান আল্লাহতালার কাছে এই নামাজের সওয়াব নফল হিসেবে ধরা হবে।
আমরা অযথা শবে কদরের নামাজ নফল নাকি সুন্নত এ ব্যাপারে বিতর্ক না করে সঠিক হাদিস জেনে আমল করা উত্তম। আমরা সকলেই জানি যে মহান আল্লাহতালা তার বান্দাদের ক্ষমা করতে ভালোবাসেন আর তাই এই নামাজের মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহতালার কাছে ক্ষমা পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করতে পারি এবং নিজের পাপ কাজের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহ তাআলার নিকট গুনাহ মাফের জন্য আবেদন করতে পারি।
সুতরাং শবে কদরের নামাজ হচ্ছে নফল নামাজ।
শবে কদর নামাজের নিয়ত
নিয়ত হচ্ছে যেকোনো কিছুর জন্য মনে মনে ইচ্ছা পোষণ করা। শবে কদর নামাজের জন্য মনে মনে নিয়ত করতে পারেন। মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু অবশ্যই শবে কদর নামাজের পূর্বে আপনাকে মনে মনে নিয়ত করতে হবে এবং সেই নামাজ যে নফল নামাজ সেটি উল্লেখ করতে হবে।
এছাড়াও আপনারা আরবীতে উচ্চারণ করে নিয়ত করতে পারবেন। কিন্তু যদি আপনারা উচ্চারণ করে নিয়ত করতে না চান তাহলে এর জন্য কোন গুনাহ হবে না। আপনি যে মহান আল্লাহ তাআলার নিকট শবে কদরের জন্য নামাজ পড়বেন আর এর জন্য ইচ্ছা পোষণ করেছেন তখনই এর নিয়োগ করা হয়ে গিয়েছে। তাই সুস্পষ্টভাবে মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই।
তবুও আপনারা যারা শবে কদর নামাজের নিয়ত জানতে চান এবং মুখে উচ্চারণ করতে চান তাদের জন্য আমরা নিম্মে শবে কদরের নামাজের নিয়ত আরবিতে উল্লেখ করছি-
‘নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়া’লা রাকআ’তাই ছালাতি লাইলাতিল কদর-নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কা’বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার’।
নোটঃ শবে কদর নামাজ পড়ার জন্য অবশ্যই আপনাদের দুই রাকাত করে নফল নামাজ নিয়ত করতে হবে।
শবে কদরের নামাজের নিয়ম
আমরা সবাই জানি যে শবে কদরের রাতের ইবাদত করা হচ্ছে ১০০০ রাতের চেয়েও বেশি রাত এবাদত করার সব পাওয়া যায়। সুতরাং সকল মুসলিম ভাই ও বোনেরা এ রাতকে অবহেলা না করে অবশ্যই এর গুরুত্ব সহকারে পালন করা উচিত। এবং যে ভাই বোনেরা যতবেশি এই রাতে এবাদত পালন করবে তত বেশি সওয়াব পাবে।
আপনারা যারা শবে কদরের জন্য নফল নামাজ পড়তে চান তাদের জন্য আমরা নিম্নে শবে কদরের নামাজের নিয়ম উল্লেখ কর-
- শবে কদরের নামাজের জন্য প্রথমে আপনাদের অজু করে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াতে হবে। আপনারা যারা দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পারেন না তারা বসে নামাজ পড়তে পারবেন।
- এরপর নিয়ত করতে হবে। আপনারা মনে মনে নিয়ত করতে পারেন অথবা উচ্চারণ করে নিয়ত করতে পারেন। তবে উচ্চারণ করে নিয়ত করা বাধ্যতামূলক নয়।
- নিয়ত করার সময় অবশ্যই আপনাদের উল্লেখ করতে হবে শবে কদরের দুই রাকাত নফল নামাজ।
- এরপর আপনারা সাধারণত যেভাবে নফল নামাজ পড়ে থাকেন ঠিক সেভাবেই নফল নামাজ আদায় করতে হবে।
- সানা পাঠ করতে হবে, সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে এবং এর সাথে যে কোন সূরা সংযুক্ত করে পাঠ করতে হবে।
- এরপর রুকু এবং সেজদা দিতে হবে। প্রথম রাকাত সম্পন্ন হয়ে গেলে দ্বিতীয় রাকাতে একই নিয়মে পড়তে হবে।
- দ্বিতীয় রাকাতে রুকু এবং সেজদা দেয়ার পর। তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ এবং মা সূরা পাঠ করতে হবে। শেষে সালাম ফিরিয়ে মোনাজাত ধরতে হবে।
এখানে আপনাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে শবে কদরের নফল নামাজ যত সুন্দর করে পড়া যায় এবং যত মনোযোগ সহকারে পড়া যায় তত বেশি সওয়াব এবং উত্তম।
আরো দেখুনঃ সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম.
শবে কদরের নামাজের নিয়ম F&Q
১. শবে কদরে নামাজ কত রাকাত?
উত্তরঃ শবে কদরের নামাজের কোন নির্দিষ্ট রাকাত নেই।
২. রমজান মাসের কত তারিখে শবে কদর পালন করা হয়?
উত্তরঃ রমজান মাসের শেষের দশ দিন অর্থাৎ নাজাতের ১০ দিন বিজোড় রাতগুলো হচ্ছে শবে কদরের রাত। ( যেমনঃ ২১, ২৩, ২৫, ২৭, এবং ২৯ রমজান)।
৩. লাইলাতুল কদর বা শবে কদর কেন পালন করা হয়?
উত্তরঃ লাইলাতুল কদর বা শবে কদর এই রাতে পবিত্র আল-কুরআন নাযিল করা হয়েছে। তাই এই রাত এত ফজিলতপূর্ণ এবং বরকতময় বলেই শবে কদর পালন করা হয়।
৪. শবে কদরের নামাজ নফল নাকি সুন্নত?
উত্তরঃ শবে কদরের নামাজ হচ্ছে নফল নামাজ।
৫. শবে কদরের নামাজ কত রাকাত করে নিয়ত করতে হয়?
উত্তরঃ শবে কদরের নফল নামাজ আদায় করার জন্য দুই রাকাত করে না কোন নামাজের নিয়ত করতে হবে।
উপসংহারঃ আশা করছি আপনারা আমাদের এই আর্টিকেল থেকে শবে কদরের নামাজের নিয়ম জানতে পেরেছেন। এবং শবে কদর সম্পরকিত অন্যান্য বিষয়ে জানতে পেরেছেন। আমাদের সকল ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের উচিত এই শবে কদরের রাত গুলোকে গুরুত্ব সহকারে পালন করা এবং নিজেদের পূর্বের পাপের জন্য মহান আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা চাওয়া। আপনাদের মধ্যে শবে কদর সম্পর্কিত যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। জাযাকাল্লাহ।