কোষ বিভাজন কাকে বলে? | কোষ বিভাজন কত প্রকার?
কোষ বিভাজন কাকে বলে? | কোষ বিভাজন কত প্রকার? / what is cell division?
কোষ বিভাজন! শব্দটি শুনলেই কেমন কোষ ভাগ হওয়া এমন একটি বিষয় বুঝায় তাই না? হ্যাঁ, কোষ মূলত ভাগ হয়েই একটি থেকে আরেকটি কোষ এ রূপান্তরিত হয়। আর এই একটি কোষ থেকে আরেকটি কোষ কিংবা একাধিক কোষ এ রূপান্তরিত হওয়াই হচ্ছে কোষ বিভাজন বা কোষ ভাগ হওয়া।
পৃথিবীর প্রায় সকল জীব একটি কোষ দিয়েই তাদের জীবন চক্র শুরু করে। আর এই একটি কোষ থেকেই পরবর্তীতে বিভাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একাধিক কোষের সৃষ্টি হয়। একাধিক কোষ থেকে তৈরি হয় ভ্রুণ আর ভ্রুণ থেকে তৈরি হয় জীব। আর এভাবেই কোষ বিভাজন এর মাধ্যমে জীবের বৃদ্ধি, জনন এবং জীবের বিভিন্ন অঙ্গের ক্রমবিকাশ ঘটে।
আরো দেখুনঃ
কোষ বিভাজন কাকে বলে?
যে পদ্ধতিতে একটি কোষ থেকে অর্থাৎ, মাতৃকোষ থেকে এক বা একাধিক কোষ সৃষ্টি হয় বা অপত্য কোষ সৃষ্টি করে তাকে কোষ বিভাজন বলে। একটি কোষ থেকে যখন কোষ বিভাজন এর মাধ্যমে দুইটি অপত্য কোষ এর সৃষ্টি হয় তখন ঐ দুইটি কোষ থেকে একটি কোষ কে বলা হয় ক্যারিওকাইনেসিস এবং অপরটি কে বলা হয় সাইটোকাইনেসিস।
এবার আসি, ক্যারিওকাইনেসিস কোষ সম্পর্কে। ক্যারিওকাইনেসিস কোষ হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যে পদ্ধতিতে কোষ এর নিউক্লিয়াস বিভাজন ঘটে এবং দুটি নিউক্লিয়াস কোষ এর সৃষ্টি হয়।
এর পরের কোষ হচ্ছে, সাইটোকাইনেসিস কোষ। সাইটোকাইনেসিস কোষ হচ্ছে এমন পদ্ধতি যে পদ্ধতি অনুসরণ করে একটি কোষ থেকে বিভাজন বা ভাগ হয়ে দুইটি সাইটোপ্লাজম কোষ এর সৃষ্টি করে।
কোষ বিভাজন কেনো হয়?
কোষ বিভাজন মূলত সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস এই দুটির পরিমাণ সঠিকভাবে রাখার জন্য কোষ বিভাজন হয়ে থাকে। কারণ কোষ এর সাইটোপ্লাজমীয় যত কার্যকলাপ আছে সব কিছুই নিউক্লিয়াস দ্বারা পরিচালিত হয়। সাইটোপ্লাজম এর উপর নিউক্লিয়াস এর নিয়ন্ত্রণ ঠিক রাখার জন্য এই কোষ বিভাজন খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং আরেকটি বিষয় হচ্ছে, নিউক্লিয়াস এ যখন DNA-এর পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায় ঠিক তখনই এই বিভাজন ঘটে থাকে।
কোষ বিভাজন কত প্রকার? | Types Of Cell Division
কোষ বিভাজন মূলত ৩ প্রকার। যথাঃ
- ০১) মিয়োসিস।
- (০২) অ্যামাইটোসিস। এবং
- (০৩) মাইটোসিস।
কোষ বিভাজন কে আবিষ্কার করেন?
১৮৮২ সালে ও্য়াল্টার ফ্লেমিং (Walter Flemming) নামক এক ব্যক্তি সামুদ্রিক সালামানডার কোষে সর্ব প্রথম কোষ বিভাজন হতে দেখে। সে থেকে তিনিই কোষ বিভাজন ব্যাপারটি আবিষ্কার করে প্রথম।
কোষ বিভাজন কাকে বলে FAQ
১. জীববিজ্ঞানে কোষ বিভাজন কি?
বেশিরভাগ সময় যখন আমরা “কোষ বিভাজন” শব্দিটি শুনে থাকি তখন এর অর্থ মাইটোসিস, শরীরের নতুন কোষ তৈরির প্রক্রিয়া। মিয়োসিস হল কোষ বিভাজনের প্রকার যা ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু কোষ তৈরি করে। মাইটোসিস জীবনের জন্য একটি মৌলিক প্রক্রিয়া।
২. কেন কোষ বিভাজন গুরুত্বপূর্ণ?
আমাদের দেহের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য কোষ বিভাজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই পুরনো কোষগুলোর অবশ্যই নতুন কোষ তৈরি করতে হবে-এবং পুরানো কোষের নিঃশেষ হবে। কোষ বিভাজনও আঘাত মেরামতের জন্য একটি অপরিহার্য প্রক্রিয়া। যদি আমাদের কোষগুলি নুতনভাবে বিভক্ত না হয় এবং নতুন কোষ তৈরি করতে না পারে, তাহলে আমাদের শরীর কখনই আঘাত বা ঘা নিরাময়ের জন্য নতুন ত্বকের কোষ তৈরি করতে পারবেন না এবং এগুলো আঙুলের নখ বৃদ্ধিও করতে পারবেন না।
৩. মাইটোসিস কোষ বিভাজন এবং মিয়োসিস কোষ বিভাজন কি?
মাইটোসিস একটি একক “পিতামাতা” কোষ থেকে দুটি জিনগতভাবে অভিন্ন কোষ তৈরি করে, যেখানে মিয়োসিস এমন কোষ তৈরি করে যা পিতামাতার থেকে জেনেটিকালি অনন্য এবং মাত্র অর্ধেক ডিএনএ ধারণ করে। শরীরের বেশিরভাগ কোষ নিয়মিত মাইটোসিস প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়।
৪. কোষ বিভাজনের 4টি কাজ কী কী?
একটি কোষকে মাইটোটিকভাবে বিভক্ত করার প্রয়োজন হতে পারে এমন চারটি মূল কারণ হলো:
- টিস্যু মেরামত/প্রতিস্থাপন।
- জীবগত বৃদ্ধি।
- অযৌন প্রজনন।.
- ভ্রূণের বিকাশ।
৫. কোষ বিভাজনের ধাপ গুলো কি?
কোষ বিভাজনের ধাপ বা পর্যায়গুলি হলো প্রোফেস, প্রোমেটাফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ এবং টেলোফেজ। সাইটোকাইনেসিস হল চূড়ান্ত ভৌত কোষ বিভাজন যা টেলোফেজ অনুসরণ করে এবং তাই কখনও কখনও মাইটোসিসের ষষ্ঠ পর্যায় হিসাবেও একে বিবেচনা করা হয়।
৬. কোষ বিভাজনের গঠন ও কাজ কী?
কোষ বিভাজন হল সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শরীরে বৃদ্ধি, মেরামত এবং প্রতিস্থাপনের জন্য নতুন কোষ তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক উপাদানের বিভাজন এবং সাইটোপ্লাজমের বিভাজন। দেহের সমস্ত কোষ (সোমাটিক কোষ), যেগুলি ডিম এবং শুক্রাণুর জন্ম দেয় (গেমেটস) ব্যতীত, মাইটোসিস দ্বারা পুনরুৎপাদন করে।
সর্বশেষে: বলা যায়, কোষ বিভাজন এমন একটি বিষয় যা প্রতিটি জীব কোষেই হয়ে থাকে। কারণ জীব দেহে সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস এর নিয়ন্ত্রণ ঠিক রাখতে হয়। আর এই নিয়ন্ত্রণ ঠিক রাখার পরিপ্রেক্ষিতে কোষ বিভাজন প্রয়োজন প্রতিটি জীব দেহে।