নেটওয়ার্ক কি?
নেটওয়ার্ক কি? | কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কত প্রকার
নেটওয়ার্ক কি? আমরা প্রায় নেটওয়ার্ক শব্দটি শুনে থাকি। কিন্তু আসলে নেটওয়ার্ক শব্দটি সম্পর্কে আমরা কতটা জানতে পেরেছি। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা সারা বিশ্বে একজন আরেকজনের সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত আমরা নেটওয়ার্কের সাথে সম্পৃক্ত থাকি।
তাই আজ আমরা আপনাদের মাঝে নেটওয়ার্ক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। নেটওয়ার্ক সম্পর্কিত সকল তথ্য জানবো এবং এই নেটওয়ার্ক কিভাবে আমাদের মধ্যে যোগাযোগ সম্পন্ন করছে সে সম্পর্কে জানব। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক আজকের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে।
নেটওয়ার্ক কি? | Network Ki
নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানার আগে সবার আগে আমাদের জানতে হবে নেটওয়ার্ক কি? এক বা একাধিক কোন কম্পিউটার বা যে কোন মাধ্যম একটির সাথে আরেকটি সংযোগ করার ফলে যে কানেকশন তৈরি হয় তাকেই নেটওয়ার্ক বলে।
আরো সহজ ভাষায়, একটি কম্পিউটারের সাথে অন্য একটি কম্পিউটারের সংযোগ স্থাপনের কারণে কানেকশন তৈরি হয় এবং সেই সেই কানেকশনকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে তথ্য আদান-প্রদান করা যায় তাকে নেটওয়ার্ক বলে।
অন্যদিকে নেটওয়ার্কের সাথে যে সকল কম্পিউটার সংযুক্ত করা হয় সেগুলোকে নোড বলে। এবং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করার ফলে যে ডাটা তৈরি হয় সেটা একটি সার্ভারে জমা হয়। আর যে স্থানে ডাটা জমা হয় সেই স্থানকে সার্ভার বলে।
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ নেটওয়ার্ক হচ্ছে ইন্টারনেট। আর আমরা সাধারন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে নির্দিষ্ট একটি সার্ভার থেকে।
নেটওয়ার্ক কাকে বলে?
একটি নেটওয়ার্ক হল কম্পিউটার, সার্ভার, মেইনফ্রেম, নেটওয়ার্ক ডিভাইস, পেরিফেরাল বা ডেটা শেয়ার করার অনুমতি দেওয়ার জন্য সংযুক্ত অন্যান্য ডিভাইসের একটি মাধ্যম। একটি নেটওয়ার্কের উদাহরণ হল ইন্টারনেট, যা সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষকে সংযুক্ত করেছে।
Internet কে একটি নেটওয়ার্ক বলা হয় কারণ এটি রাউটার, সুইচ এবং টেলিফোন লাইন এবং অন্যান্য যোগাযোগ যন্ত্র এবং চ্যানেল ব্যবহার করে সারা বিশ্বের কম্পিউটার এবং সার্ভারগুলিকে সংযুক্ত করে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি?
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হচ্ছে দুই বা ততোধিক কম্পিউটার মধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপন করা এবং সেই কম্পিউটারগুলোর মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করাকে বোঝায়। এছাড়াও তথ্য আদান-প্রদান করার জন্য একাধিক কম্পিউটারের মধ্যে তার বা তারবিহীন সংযোগ প্রদান করা হয়। যেমনঃ রেডিও ওয়েভ, মাইক্রোওয়েভের, স্যাটেলাইট ইত্যাদি।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এর কার্যক্রম পরিচালনা করে ইন্টারনেট। আর যে কম্পিউটার তথ্য আদান প্রদান করতে প্রধান ভূমিকা হিসেবে কাজ করে তাকে সার্ভার কম্পিউটার বলা হয়। সার্ভার সবসময় শেয়ারিং করার সুবিধা প্রদান করে কিন্তু সার্ভার কোন শেয়ারিং সুবিধা নেয় না।
নেটওয়ার্ক প্রটোকল কি | What is network protocol
এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে নেটওয়ার্ক সংযোগ করার মাধ্যমে যে কমিউনিকেশন সিস্টেম তৈরি করা হয় সেটি সুনির্দিষ্টভাবে পরিচালনা করার জন্য যে সকল নিয়ম-নীতি পালন করতে হয় সে সকল নিয়ম-নীতিকে নেটওয়ার্কিং ভাষায় নেটওয়ার্ক প্রটোকল বলে।
নিম্নে কিছু নেটওয়ার্ক প্রটোকল দেয়া হলোঃ-
- TCP
- IP
- IPX/SPX
- NetBEUI
- HTTP
- FTP
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কত প্রকার | Computer Network Koto Prokar
কম্পিউটার নেটওয়ার্কে অনেক ভাবে ভাগ করা যায়। কিন্তু প্রধানত কম্পিউটার নেটওয়ার্কে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ
- PAN (Personal Area Network).
- LAN{ (Local Area Network)
- MAN (Metropolitan Area Network)
- WAN (Wide Area Network)
PAN (Personal Area Network) বা পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্কঃ
ব্যক্তিগত ব্যবহার করার জন্য বা ব্যক্তিগত তথ্য আদান-প্রদান করার জন্য যে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তাকে পার্সোনাল নেটওয়ার্ক এরিয়া বা PAN বলে।
আর ধরনের নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্য প্রয়োজন দুটি কম্পিউটার। এছাড়া ব্লুটুথ এর মাধ্যমে পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়। আর এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে টেলিফোন, মোবাইল ফোন, প্রিন্টার, ফ্যাক্স মেশিন, ডিজিটাল ক্যামেরা, নোটবুক ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।
LAN{ (Local Area Network) বা লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কঃ
দুই বা একাধিক কম্পিউটার এর মধ্যে ১০০ মিটার বা তার কম এরিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে যে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তাকে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা LAN বলে।
লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপন করার জন্য কোএক্সিয়াল ক্যাবল এবং টুইস্টেড ক্যাব এর ব্যবহার করা হয়।
MAN (Metropolitan Area Network) বা মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্কঃ
এক বা একাধিক কম্পিউটারে কমিউনিকেটিং ডিভাইস ব্যবহার করে একটি মেট্রোপলিটন শহরের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে সংযোগ প্রদান করার মাধ্যমে যে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তাকে মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক বা MAN বলে।
লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক এর তুলনায় মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক বড় এবং এর বিস্তৃতি ১০ কিলোমিটার থেকে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। অর্থাৎ একটি শহরের মধ্যে যে নেটওয়ার্ক সিস্টেম তৈরি করা হয় মূলত সেটি হচ্ছে মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক আর এর জন্য নেটওয়ার্ক স্পিড ৩৪ mbps থেকে ১৫৫ mbps পর্যন্ত প্রয়োজন হয়।
WAN (Wide Area Network) বা ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্কঃ
একাধিক কম্পিউটার বা ডিভাইসের মাধ্যমে টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপন করার ফলে একাধিক শহর বা একটি দেশ বা সম্পূর্ণ পৃথিবী জুড়ে যে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তাকে ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক বা WAN বলে।
অন্য সকল এরিয়ার তুলনায় ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক সবচেয়ে বড় এবং সবথেকে বেশি নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপন করা যায়। এই নেটওয়ার্ক সিস্টেম এর মাধ্যমে আপনারা এক দেশ থেকে অন্য দেশে তথ্য আদান-প্রদান খুব সহজেই করতে পারবেন আর। আর এই নেটওয়ার্ক সিস্টেম সম্পন্ন করার জন্য এর স্পিড সাধারণ ১২০০ mbps থেকে ২৪০০ mbps পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এই সকল নেটওয়ার্কিং প্রকারভেদ ছাড়াও আরো অন্যান্য অনেকগুলো নেটওয়ার্কে বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছেঃ-
- প্রাইভেট নেটওয়ার্ক।
- পাবলিক নেটওয়ার্ক।
- স্টার টপোলজি।
- রিং টপোলজি।
- বাস টপোলজি।
- মেস টপোলজি।
- পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক।
- ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক।
- সার্কিট সুইচিং নেটওয়ার্ক।
- মেসেজ সুইচ নেটওয়ার্ক।
- প্যাকেট সুইচিং নেটওয়ার্ক।
- point-to-point নেটওয়ার্ক।
- ব্রডকাস্ট বা মাল্টি-পয়েন্ট নেটওয়ার্ক।
নেটওয়ার্ক উদ্দেশ্য কি?
নেটওয়ার্কের অনেকগুলো উদ্দেশ্য রয়েছে তার মধ্যে প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে গিয়ে মানুষের মধ্যে কমিউনিকেশন সিস্টেম তৈরি করা এবং সেই কমিউনিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে মানুষের তথ্য আদান প্রদান করা। এছাড়াও নেটওয়ার্কের অনেকগুলো উদ্দেশ্য রয়েছে তা নিম্নে দেয়া হলঃ-
- একাধিক কম্পিউটারে নেটওয়ার্ক সংযোগ তৈরীর মাধ্যমে সহজে ফাইল আদান প্রদান করা যায়। এবং ফাইলগুলো জমা রাখা যায়। প্রয়োজনমতো সেই ফাইলে প্রবেশ করে কাজ করা যায়।
- নেটওয়ার্ক সিস্টেমের মাধ্যমে যদি ভগবানই করা হয় তাহলে এর খরচ অনেক কম হয়।
- একাধিক কম্পিউটারে কাজ করার সময় প্রত্যেক কম্পিউটারে একই ধরনের সফটওয়্যার ইন্সটল না করে নেটওয়ার্ক সিস্টেম এর মাধ্যমে যেকোনো একটি কম্পিউটারের সফটওয়্যার ইন্সটল করে অন্যান্য কম্পিউটারে ব্যবহার করা যায়।
- নেটওয়ার্ক সিস্টেম এর মাধ্যমে ফাইল আদান প্রদান করার ফলে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল চুরি হওয়ার ভয় বা নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না।
- নেটওয়ার্ক সিস্টেম করার মাধ্যমে হার্ডওয়ারের কিছু ডিভাইস প্রত্যেক কম্পিউটারের জন্য আলাদা আলাদা হবে সংযোগ না করে একটি কম্পিউটারে সংযোগ করার মাধ্যমে অন্য কম্পিউটারে কাজ সম্পাদন। যেমন কম্পিউটারের সাথে একটি প্রিন্টার সংযোগ করার ফলে দুটি কম্পিউটারে প্রিন্টার ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।
- নেটওয়ার্ক সিস্টেম করার মাধ্যমে অল্প সময়ে অনেক তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।
- নেটওয়ার্ক সিস্টেম করার মাধ্যমে ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সঠিকভাবে করা যায়। একটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ কিছু রক্ষণাবেক্ষণ করা এর ব্যবস্থাপনা করা নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি খুব সহজে করা যায়।
- এর সকল নেটওয়ার্ক সিস্টেম করার মাধ্যমে একই স্থানে বসে বিশ্বের সকল তথ্য আদান-প্রদান করার মাধ্যমে সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজ খুব সহজেই করা যায়।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রশ্নের উত্তর
১. সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা কোন ধরনের নেটওয়ার্ক সিস্টেম ব্যবহার করে?
উত্তরঃ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক সিস্টেম ব্যবহার করে। যেমনঃ- ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ইত্যাদি।
২. আমরা নিজেদের বাসায় কোন ধরনের নেটওয়ার্ক সিস্টেম ব্যবহার করে থাকি?
উত্তরঃ আমরা নিজেদের বাসায় সাধারণত ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি আর সেই ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সিস্টেম হচ্ছে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক সিস্টেম।
৩. রাউটারের কাজ কি?
উত্তরঃরাউটার হচ্ছে একটি হার্ডওয়ার ডিভাইস। যে ডিভাইসের মাধ্যমে আমরা ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করে বিশ্বজুড়ে তথ্য আদান প্রদান করে থাকি।
উপসংহার: আশাকরি আমাদের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা নেটওয়ার্ক সম্পরকিত তথ্য জেনে উপকৃত হয়েছেন। বর্তমান যুগে আমরা সম্পূর্ণ ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে পড়েছে আর সেই ইন্টারনেট সংযোগ কিভাবে কাজ সেটি জানা আমাদের অবশ্যই আবশ্যক। এছাড়াও আপনারা যদি নেটওয়ার্ক সম্পর্কিত আরোও অন্য কোন তথ্য জানতে চান তাহলে আমাদের নিচের কমেন্ট বক্সে এসে জানাতে পারেন।