অনুপাত কাকে বলে?
অনুপাত কাকে বলে? অনুপাত কত প্রকার ও কি কি?
অনুপাত, পাটিগণিতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনুপাতের বিষয়টি অনেক ছাত্রছাত্রীই বুঝতে পারে না। এই বিষয়টি সহজে বোঝার জন্যই তাই আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি নিয়ে আমরা এখানে এসেছি। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা অনুপাত কি? অনুপাত কাকে বলে? অনুপাত কত প্রকার ও কি কি প্রত্যেক প্রকারের উদাহরণসহ, অনুপাতের বৈশিষ্ট্য, অনুপাত পড়া ও লেখার নিয়ম, কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে অনুপাত বোঝা। তাই ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের আর্টিকেলের শেষ পর্যন্ত চোখ রাখতে হবে সম্পূর্ণ অনুপাত কাকে বলে বিষয়টি বোঝার জন্য।
অনুপাত কাকে বলে শুধু এই সংঙ্গা জানলেই হবে না পাশাপাশি এর সবকিছু বুঝতে পারলেই ধারণাটি একেবারে পরিষ্কার হবে। অনুপাতকে সবসময় সর্বনিম্ন আকারে প্রকাশ করা হয় এর গ.সা.ও সাধারণত যেন 1 হয়।
অনুপাত কি?
অনুপাত হচ্ছে সাধারণত দুটি সমজাতীয় রাশি যা একটির তুলনায় অপরটি কতবেশি অংশ বা পরিমাণে কতগুণ বেশি তাই তার প্রকাশই হচ্ছে অনুপাত। তাই অনুপাত কাকে বলে আমাদের জানতে হবে।
মাঝে মাঝে আমরা আনুমানিক পরিমাপ করতেও অনুপাতকে ব্যবহার করে থাকি। ধরুন, গরমকালে একজন ব্যাক্তি যে পরিমাণ পানি খেয়ে থাকেন, শীতকালে তার ৫ গুণ কম খান। এইক্ষেত্রে পানির পরিমাণ কত তা জানার দরকার নেই, অনুপাতের দিক থেকে কত কম বা বেশি তা জানলেই হবে। আবার আমরা পরিমাপ করা ছাড়াই বলে থাকি যে তোমার রান্নাঘর থেকে আমার রান্নাঘর দ্বিগুণ বড়। এখানেও আমরা আসল আয়তন কত তা জানি না। শুধু অনুপাত বা পরিমাপের একটা আনুমানিক হিসেব বুঝাতে আমরা তুলনা করে থাকি।
আরো দেখুন: উপাত্ত কাকে বলে?
অনুপাত কাকে বলে?
সমজাতীয় দুটি রাশির পূর্ব রাশি ও উত্তর রাশির তুলনা করাকে রাশিগুলোর অনুপাত বলে।
অনুপাতের কোন একক নেই। রাশিগুলো সমজাতীয় হয়ে থাকে সাধারণত। কোন ভিন্ন জাতীয় রাশির মধ্যে অনুপাত হতে পারে না।একটি উদাহরণের মাধ্যমে আমরা অনুপাত কাকে বলে তা বুঝে নিতে পারি।
উদাহরণ: একটি কলসে ৩ লিটার পানি আছে যা অপর কলসের ৪ গুণ। এই বাক্যটিকে যদি আনুপাতিক হারে প্রকাশ করা যায় তাহলে হবে, প্রথম কলসে পানি আছে- ৩ লিটার
দ্বিতীয় কলসে পানি আছে-১২ লিটার (যেহেতু ৪ গুণ তাই ৩ কে ৪ দ্বারা গুণ করা হয়েছে এখানে) তাহলে এর অনুপাত হবে- ৩ : ১২ – ১ : ৪ (এখানে অনুপাতের দুটি সংখ্যাকেই ৩ দিয়ে ভাগ করা হয়েছে)
অনুপাতের পূর্বপদ:
অনুপাতের প্রথম রাশিটিকে এর পূর্বপদ বলা হয়। যেমন : ১-২ এই অনুপাতটির ১ হচ্ছে পূর্বপদ।
অনুপাতের উত্তরপদ:
অনুপাতের পরের রাশিটিকে উত্তরপদ বলা হয়। যেমন : ২:৪ এই অনুপাতটির ৪ হচ্ছে উত্তর পদ বা উত্তর রাশি।
অনুপাত কত প্রকার ও কি কি?
অনুপাতকে কয়েকটি আলাদা আলাদা ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন
সরল অনুপাত:
যদি একটি অনুপাতে সাধারণত দুটি রাশি থাকে তাহলে তাকে সরল অনুপাত বলা হয়। এর প্রথম অংশকে পূর্ব রাশি ও পরের অংশকে উত্তর রাশি বলা হয়।
- উদাহরণ : ৭:৮ একটি সরল অনুপাতের উদাহরণ।
- উল্লেখ্য: এখানে ৭ হচ্ছে পূর্ব রাশি ও ৮ হচ্ছে উত্তর রাশি।
বৈষম্য অনুপাত:
কোন অনুপাতের উত্তর রাশি ও পূর্বরাশি অসমান হলে তাকে বৈষম্য অনুপাত বলা হয়। যেমন : a : b.
মিশ্র বা যৌগিক অনুপাত:
অনুপাত নির্ণয়ের ক্ষেত্রে যখন অনেকগুলো অনুপাত দেয়া হয় তাহলে এই একের অধিক অনুপাতগুলোর পূর্ব রাশিগুলোকে ধারাবাহিকভাবে গুণ করে এবং উত্তর রাশিগুলোকেও ধারাবাহিকভাবে গুণ করে যে ফলাফল পাওয়া যায় তাকে মিশ্র বা যৌগিক অনুপাত বলে।
উদাহরণ: ৪:৫, ৮:৯, ১০:৯, ৪:৫ চারটি অনুপাতের মিশ্র অনুপাত হবে…..
পূর্বরাশিগুলোর ধারাবাহিক গুণফল হলো = ৪ X ৮ × ১০ X ৪ = ১২৮০
উত্তররাশিগুলোর ধারাবাহিক গুণফল হলো = ৫ X ৯ X ৯ X ৫ = ২০২৫।
সুতরাং উপরোক্ত অনুপাতগুলোর মিশ্র বা যৌগিক অনুপাত হবে = ১২৮০: ২০২৫
গুরু অনুপাত:
কোন অনুপাতের উত্তর রাশি ছোট হলে এবং পূর্ব রাশি বড় হলে তাকে গুরু অনুপাত বলা হয়। উদাহরণ : ৯:৮।
এখানে ৯ পর্বরাশি উত্তর রাশ ৮ থেকে বড়
লঘু অনুপাত:
যদি একটি অনুপাতের উত্তর রাশি বড় হয় আর পূর্ব রাশি ছোট হয় তাহলে তাকে লঘু অনুপাত বলা হয়। একটি উদাহরণ হতে পারে এমন… ৮:১০।
এখানে পূর্ব রাশি ৮ উত্তর রাশি ১০ থেকে ছোট।
একক অনুপাত:
যে অনুপাতের দুইটি রাশিই সমান তাকে একক অনুপাত বলা হয়। উদাহরণ : ১৫ – ১৫ বা ৮ : ৮ বা ১ : ১।
উদাহরণগুলোতে প্রতিটি রাশিই সমান। এর পূর্বরাশি ও ১৫ আর উত্তর রাশিও ১৫।
ব্যস্ত অনুপাত:
সরল অনুপাতের ক্ষেত্রে উত্তর রাশিকে পূর্ব রাশি হিসেবে ধরে এবং পূর্ব রাশিকে উত্তর রাশি হিসেবে ধরে যে নতুন অনুপাত পাওয়া যায় তাকে অনুপাতের ব্যস্ত অনুপাত বলে। একটি উদাহরণ দেখলে.. ৯:৩ এর ব্যস্ত অনুপাতটি হবে ৩:৯।
দ্বিগুণানুপাত:
কোন সরল অনুপাতের উত্তর রাশি ও পূর্বরাশিকে বর্গ করলেই যে অনুপাত পাওয়া যাবে তাকে দ্বিগুণানুপাত বলা হয়।
উদাহরণ : ৩ : ৪ যার দ্বিগুণানুপাত হবে…৩ : ৪ = ৯:১৬
দ্বিভাজিত অনুপাত:
দ্বিভাজিত অনুপাত হলো সরল দুটি অনুপাতের বর্গমূল। উদাহরণ : ৪৯:৬৪ এর দ্বিভাজিত অনুপাত হবে = √৪৯:√৬৪ = √৭২ : √৮২ = ৭:৮
ধারাবাহিক অনুপাত:
দুটি অনুপাতের প্রথমটির উত্তর রাশি ও দ্বিতীয়টির পূর্ব রাশি যদি পরস্পর সমান হয় তাহলে তা ধারাবাহিক অনুপাত।
তাহলে ধারাবাহিক অনুপাত করা যায় একে। যেমন : ৪:৬ ও ৬:৫ এই দুইটি অনুপাতে ধারাবাহিক অনুপাতে প্রকাশ করলে ধারাবাহিক অনুপাতটি হবে ৪:৬:৫।
দুইটি অনুপাতকে ধারাবাহিক অনুপাতে প্রকাশ করার জন্য প্রথম অনুপাতের উত্তর রাশি ও ২য় অনুপাতের পূর্ব রাশি প্রথমে সমান করতে হবে। অর্থাৎ দুইটি রাশির ল.সা.গু করার পর এর ধারাবাহিক অনুপাত বের করতে হবে।
উদাহরণ : ৪:৫ এবং ৫:৬ কে ধারাবাহিক অনুপাতে প্রকাশ কর
প্রথম অনুপাতের উত্তরপদ ৫ ও দ্বিতীয় অনুপাতের পূর্বপদ ৫ যাদের ল.সা.গু হচ্ছে ২৫
৪ : ৫ = ৪/৫ = ৪×৫/৫ × ৫ = ২০/২৫ = ২০ : ২৫
৫:৬ = ৫/৬ = ৫×৫/৯×৫ = ২৫/৩০ = ৩০/২৫ = ২৫:৩০
সুতরাং ধারাবাহিক অনুপাতটি হলো – ২০:২৫:৩০ বা ৪:৫:৬
আরো দেখুনঃ
অনুপাতের বৈশিষ্ট্য
- ভাগের সংক্ষিপ্ত রূপই হচ্ছে অনুপাত
- অনুপাতের চিহ্নটি হচ্ছে ।
- অনুপাতের প্রথম রাণিকে পূর্ব রাশি ও পরের রাশিকে উত্তর রাশি বলে।
- অনুপাত করার সময় রাশিগুলোকে এককে প্রকাশ করতে হয়।
- অনুপাতের রাশিগুলোকে অন্য সংখ্যা দিয়ে গুণ বা ভাগ করলে মানের কোন পরিবর্তনই হয় না শুধুমাত্র শূণ্য ছাড়া।
- অনুপাতের ক্ষেত্রে রাশি দুটিকে অবশ্যই সমজাতীয় হতে হবে।
- ভিন্ন জাতীয় রাশির অনুপাত তৈরি সম্ভব না।
- অনুপাতের কোন একক হয় না কারণ রাশি দুটি সমজাতীয় হয়।
অনুপাত পড়া ও লেখার নিয়ম।
১. ৪:৫ = চার অনুপাত পাঁচ অথবা Four is to five.
৪:৫ = ৪/৫ = ৪ ÷ ৫
২. অনুপাত করার সময় রাশিগুলোকে এককে প্রকাশ করে নিতে হবে।
৩. অনুপাত শুদ্ধ সংখ্যার রাশি তাই এর একক নেই।
৪. ভিন্ন জাতীয় রাশির অনুপাত তৈরি সম্ভব নয়।
৫. ০ ছাড়া অনুপাতের রাশি দুটিকে যে কোন সংখ্যা দিয়ে গুণ অথবা ভাগ করলে তার মানের কোন পরিবর্তন হয় না।
অনুপাতের গুণ ও ভাগ
একটি অনুপাতের উভয় রাশিকে প্রয়োজন অনুসারে গুণ ও ভাগ করা যায়।
যেমন: ২:৪. কে লিখা যেতে পারে ২২:৪x৫ = 8:201
অনুপাতের রূপান্তর
অনুপাতের রাশিগুলো ধনাত্মক হয়। একে রূপান্তর করা যায় এইভাবে..
১. xy =pq_হলে, y x = qp [ব্যস্তকরণ করে
২. x y=p/q হলে, xp = y/q [একান্তকরণ করে]
৩. xy = p/q হলে, x+y/y = p + q/q [যোজন করে]।
৪. xy = p/q হলে, x-y/v = p-q/q[বিয়োজন করে]
৫. x/ y = p/q হলে, x+y/x-y = p+q/p-q (যোজন-বিয়োজন করে)।
৬. xy = p/q = r/s =t/u হলে, প্রতিটি অনুপাত = x+p+r+t/y+q+s+u
অনুপাতের উদাহরণ
এই অনুপাতই হলো ভাগের সংক্ষিপ্ত রূপ। অনুপাতের কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হলো।
উদাহরণ –১ একটি জারে জুস আছে ১০ লি. এর ভিতর পানি ও ট্যাংকের পরিমাণ ৪:১। এতে কি পরিমাণ ট্যাংক মিলালে এর অনুপাত হবে ৫:১?
পানি:ট্যাংক = ৪:১
সংখ্যা দুটির যোগফল হলো = ৪ + ১ = ৫ লি.
এখন জারে ট্যাংক মিশানো হবে কিন্তু পানির পরিমাণ একই থাকবে যার কোন পরিবর্তন করা হবে না। নতুন মিশ্রণে পানি ও ট্যাংকের পরিমাণ হবে ৫:১।
নতুন মিশ্রণে ট্যাংকের পরিমাণ ১০ x ৪/৫ = ৮ লিটার × ৮
পানির পরিমাণ হবে ১০ x ৫/১ = ২ লিটার
অতবএব অতিরিক্ত ট্যাংক মিশানো হলে তার পরিমাণ হবে ৮ লিটার
মানে হলো, ট্যাংক পানির চারগুণ হবে।
সুতরাং অতিরিক্ত ট্যাংক মিশাতে হবে (১০ – ২) = ৮ লিটার
উদাহরণ – ২ একটি বাঘ একটি হরিণকে ধরার জন্য তাড়া করছে। বাঘ যে সময়ে ৭ বার লাফ দেয় হরিণ দেয় ৮ বার। কিন্তু হরিণ ৮ লাফে যত দূর যায় বাঘ ৬ লাফে তত দূর যায়। হরিণ দুইজন সমপরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করে। তাহলে
বাঘ ও হরিণের গতিবেগের অনুপাত কত হবে?
হরিণ ৮ বার লাফ দেয় = বাঘের ৭ বার লাফ।
সুতরাং হরিণের ৮ লাফ = বাঘের ৬/৭ × 8 = ৪৮/৭ লাফ
সুতরাং বাঘ ও হরিণের গতিবেগের অনুপাত = ৭:৪৮/৭ = ৪৯:৪৮
উদাহরণ-৩ একটি ২০ গ্রাম ওজনের সোনার গহনায় সোন ও তামার অনুপাত ৪: ১। এতে কি পরিমাণ সোনা ও তামা আছে?
দেয়া আছে।
সোনা ও তামার অনুপাত ৪:১।
মনেকরি, সোনা আছে ৪x গ্রাম এবং তামা রয়েছে x গ্রাম।
প্রশ্নমতে,
৪x + x = 20
বা, ৪x = ২০
বা, x = ৫
“শর্টকাট নিয়ম :
সোনা : তামা = ৪ : ১
সংখ্যা দুটির যোগফল হলো, = (৪ + ১) = ৫
অতএব মিশ্রণের সোনার পরিমাণ হবে = ২০ x ৪/৫ = ১৬ গ্রাম
তামার পরিমাণ = ২০ × ১/৫ = ৪ গ্রাম।
পরিসমাপ্তি: উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে অনুপাত কাকে বলে, অনুপাতের সংঙ্গা, কত প্রকার ও কি কি, এর বৈশিষ্ট্য, অনুপাত লেখার নিয়ম ও পড়ার নিয়ম, অনুপাতকে কিভাবে রূপান্তর করতে হয় তা উল্লেখ করা হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে অনুপাত কাকে বলে তুলনা করে এর অনুপাত বের করা হয়েছে এবং একটি অনুপাতকে কিভাবে অন্য অনুপাতে রূপান্তরতি করা যায় তাও উল্লেখ করা হয়েছে আর্টিকেলটিতে।
ধারাবাহিকভাবে আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে ও চর্চার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা অনুপাত কাকে বলে থেকে শুরু করে এর উদাহরণ ও অঙ্ক করতে পারবে। তাই উপরোক্ত আর্টিকেলটি থেকে সুফল পাওয়ার জন্য ধারাবাহিকভাবে এটি পড়তে হবে এবং চর্চা করতে হবে অনুপাত কাকে বলে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে।