পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো মানুষ কে?
পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো মানুষ কে? | Who Is The Best Man In The World
পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো মানুষ কে? এই প্রশ্নটি অনেকেরই থাকে। সবচেয়ে ভালো মানুষ যিনি আসলে তার কি কি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আপনি যদি গুগল করেন যে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে তাহলে আপনি মাইকেল হার্টের বিখ্যাত বই “দ্যা হান্ড্রেড” অর্থাৎ “পৃথিবীর সবেচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ মনিষীর জীবনী” পড়লেই প্রথমেই আপনার চোখ এক নাম্বার ঘরটিতে যাকে দেখতে পাবে তিনি হলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানুষ যার জন্য আল্লাহপাক এই দুনিয়া সৃষ্টি করেছিলেন তিনি হলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তার জীবনের সর্বদিক গবেষণা করেই তাকে প্রথম স্থানে স্থান দেয়া হয়েছে।
একজন পিতা হিসেবে, স্বামী হিসেবে, রাজনৈতিক নেতা হিসেবে, শাসক হিসেবে, যোদ্ধা হিসেবে তিনি সর্বক্ষেত্রে ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। তিনি সবক্ষেত্রে একজন মহান ও আদর্শ ব্যক্তি ছিলেন। তাই পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো মানুষ কে তা উত্তরে তার নামই প্রথম এবং প্রধান তালিকায় রয়েছে।
আরো দেখুন: ইসলামিক উক্তি
পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো মানুষ কে?
পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো মানুষ কে সেই শিশুকাল থেকেই জীবনের রূঢ় বাস্তবতা দেখে দেখে বড় হতে হয়েছে। তিনি ছিলেন এতিম এক শিশু, যিনি মরুভূমির তপ্ত বালিতে পিতা-মাতাহীন এক অসহায় শিশু ছিলেন। অথচ এই অসহায় শিশুটি একসময় আরবে শ্রেষ্ঠ ও বিশ্বস্ত মানুষ হয়েছিলেন তার ব্যবহার ও কর্মের দ্বারা। তিনি এতটাই সৎ ছিলেন যে কাফের-মুশরিক এমনকি তার শত্রুপক্ষের লোকরাও তাকে বিশ্বাস করতো একজন রাষ্ট্রনায়ম হয়েও তিনি যেভাবে মাটির বিছানায় ঘুমাতেন তা অকল্পনীয় তার জীবন ব্যবস্থা ছিল খুবই সাধারণ তার আইনি ব্যবস্থায় সবাই সমান, ব্যক্তির অপরাধের জন্য কখনোই তার জাতিকে দোষারোপ করা যাবে না তিনি এই শিক্ষা দিয়েছেন।
তাই পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো মানুষ কে তার প্রতিউত্তরে তার নাম প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) যিনি তার সারাটি জীবন শুধু মানুষের আর ইসলামের উন্নতির জন্য কাজ করে গেছেন।
কেন তিনি পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো মানুষ তা নিচের উল্লেখিত পয়েন্টগুলো পড়লেই আপনারা জানতে পারবেন। তো চলুন স্বল্পভাষায় আমরা তা জানি আজ।
স্নেহময় পিতা হিসেবে:
একজন পিতা হিসেবে তিনি ছিলেন আদর্শ সন্তানকে কিভাবে ভালোবাসতে হয়, তাদের প্রতি যত্নশীর হতে হয়, তাদের ভালো মন্দের খেয়াল রাখতে হয় তা তিনি খুব সুন্দরভাবে আমাদেরকে শিখিয়ে গেছেন চার কন্যা সন্তানের মাঝে তার সবচেয়ে আদরের ছিল ফাতেমা (রাঃ) তিনি তার কলিজার টুকরো ছিলেন।
যে মানুষ এত রাজনৈতিক বুঝুট-ঝামেলায় থাকে তারপরও পিতা হিসেবে তিনি তার দায়িত্বে সবসময় অনড় ছিলেন। কখনো তার সন্তানদের পক্ষ থেকে এমন কোন বিষয় শোনা যায়নি যে তাদের পিতা তাদের খেয়াল সঠিকভাবে করেননি বা ভালোবাসায় কোন কমতি ছিল যা বিভিন্ন রাষ্ট্র নায়কদের দিকে তাকালে আমরা এর উল্টো চিত্রই দেখতে পাই। I
দায়িত্ববান স্বামী হিসেবে:
নবীজীর প্রথম স্ত্রী ছিলেন আম্মাজান খাদিজা (রাঃ), তিনি শুধু তার সহধর্মীনি ছিলেন না তার চলার পথের সাথী, তার বিপদের বন্ধু, হতাশায় আশাজাগানিয়া সবকিছু তিনিই ছিলেন। আম্মাজান খাদিজা (রাঃ) মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নবীজী দ্বিতীয় বিবাহ করেননি।
তার মৃত্যুর পর তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে ও বিভিন্ন অসহায় নারীর সম্মান রক্ষার্থে বিবাহ করেছিলেন। তার মোট ১১ জন স্ত্রী ছিলেন। ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই কোন স্ত্রীরই নবীজীর দায়িত্ববোধ বা ভালোবাসা নিয়ে কোন অভিযোগ ছিল না। সকলেই নবীর সাথে সাথে ছিলেন। কারো অধিকার কখনোই তিনি খর্ব হতে দেননি।
একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে:
এক খন্ড ভূমি আর কিছু জনসংখ্যা থাকলেই একটি রাষ্ট্র সমৃদ্ধি লাভ করতে পারে না বা উন্নতির দিকে এগোতে পারে না। সমৃদ্ধি ও উন্নতির জন্য প্রয়োজন হয় একজন ন্যায়ন্যাষ্ঠ শাসক, রাজনৈতিক নেতা। আর তিনি ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।
তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ সমাজ সংস্কারক যার সংস্পর্শে একটি বর্বর জাতি পৃথিবীর ইতিহাসে হয়েছিল শ্রেষ্ঠ জাতি। সামাজিক বিপ্লবের প্রথম সূচনাকারিই হলেন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তিনি সমাজ থেকে উঁচু-নিচুর, কালো সাদা, ধনী-গরিব ভেদ দূর করেছিলেন। সেই সময়ের আরব ছিল কুসংস্কারে পরিপূর্ণ যা তিনি আল্লাহর দয়ায় ও আল্লাহর মেহেরবানীতে তার চেষ্টা ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে সমূলে উৎপাটন করেছিলেন।
তিনি সমাজ থেকে সুদের ব্যবসা দূর করেছিলেন। মহান আল্লাহ পাক সুদকে হারাম আর ব্যবসাকে হালাল করেছেন এই শিক্ষার মাধ্যমে তিনি সমাজ থেকে এই বিষ প্রথা দূর করেছিলেন।
প্রজ্ঞাময় শিক্ষক হিসেবে:
তিনি কোন বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেননি কিন্তু তিনি ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। একজন ব্যক্তির সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়, কিভাবে সহজ-সরল পথে চলতে হয়, দ্বীন-দুনিয়ার সকল বিষয় তিনি তার অনুসারীদেরকে সামনা-সামনি শিখিয়েছেন সহজ ও সুন্দর ভাষায়।
একজন ব্যক্তি কিভাবে চললে সফল হবে ও আখিরাতে তা তিনি শিখিয়ে গেছেন আমাদেরকে। এই শিক্ষা যে শুধু মুসলিমদেরই কাজে লাগে ব্যপারটা এখন তিনি এমনই এক শিক্ষক যার এই নিয়ম নীতি যদি একজন অমুসলিমও অনুসরন করে তাহলে সেও লাভবান হবে।
আরো দেখুনঃ শরিয়ত অর্থ কি? শরিয়তের গুরুত্ব।
একজন শাসক হিসেবে:
এক নরম হৃদয়ের কোমল বালক থেকে তিনি এক বিশাল সাম্রাজ্যের শাসক হয়েছিলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় তার মতো শাসক পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোথাও নেই। তার শাসনামলে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সকলেই সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারতো। তিনি এমন এক কাছে যদি শাসকের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকতো তাহলে সেই সাধারণ ব্যক্তি তা নির্ভয়ে বলতে পারতো। যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে বা ইতিহাসের অনান্য শাসকদের দিকে তাকালে আমরা ভিন্ন চিত্রই দেখতে পাই। একজন কোমল হৃদয়ের মানুষ শাসনের ক্ষেতে ন্যায়ের ক্ষেত্রে একজন ন্যায়বিচারক শাসক হয়ে উঠতেন।
শাসক ছিলেন যিনি প্রজার কাছে জবাবদিহি করতেন। যে কোন সাধারণ একজন প্রজা তার রাজ্যের সে মুসলিম হোক বা হিন্দু তার ক্ষমার এক মূর্ত প্রতীক যেই মক্কার কাফেররা তাকে তার দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেছিল, তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিলো, তার উপর বর্বরচিত নির্যাতন করেছিল প্রতিনিয়ত তারপরও তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন যখন তিনি সেখানের রাষ্ট্রনায়ক হয়েছিলেন। অনান্য বিজয়ী রাজারা যেখানে রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার পর তাদের প্রথম এবং প্রধান কাজ থাকে তাদের অসহায় অবস্থায় যারা তাদের সাহায্য করেনি বা যারা তাদের ক্ষতি করেছে ও তাদের সাথে যুদ্ধ করেছে তাদের চিহ্নিত করা ও শাস্তির সম্মুখীন করা।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র ভিন্ন মানব ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ), তিনি রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার পর তার শত্রুদের প্রতি কোন প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি, নির্মম নির্যাতন ও মিথ্যা অপবাদের পরও। তার অনুসারীদেরকে তারা বিনা কারণে অবাধে হত্যা করেছিল। এরপরও তিনি তাদের প্রতি সাধারণ ক্ষমতা ঘোষণা করেন যা তাকে পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো মানুষ কে এর উত্তরে তিনিই সর্বপ্রথম চলে আসেন।
যুগের এক অন্ধকারচ্ছান্ন জাতির কাছে তাকে মানবতার দূত হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছিল যাতে তিনি তাদের হেদায়াতের পথে ডাকতে পারেন, তাকে পাঠানো হয়েছিল ক্ষমার এক মূর্ত প্রতীক ও দয়ার এক ভান্ডার হিসেবে। এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য তাকে সব রাষ্ট্রনায়ক ও পৃথিবীর সকল মানুষ থেকে আলাদা করেছে।
নারীর মর্যাদা বৃদ্ধিতে প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ):
সেই সময়ের আরবের বর্বর লোকরা নারীকে পণ্যে মনে করত। তাদের কোন সম্মান ছিল না। তাদেরকে বাজারে পণ্যের মতো এক হাত থেকে অন্য হাতে বেচাকেনা করা হতো, পশুর মতো তাদের সাথে ব্যবহার করা হতো। ভোগ-বিলাসের বস্তু ছাড়া তাদেরকে আর কোন কিছুই মনে করা হতো না। তারা এতটাই নিকৃষ্ট ছিল যে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে ফেলতো। তাদের পৈত্যক সম্পত্তিতেও কোন অধিকার ছিল না। তিনি নারীর প্রতি এই প্রকার সকল জুলুম সমাজ থেকে দূর করেন। তিনি বলেন যে, “কোন ব্যক্তির ঘরে কন্যা সন্তান হলো এবং সে তার যথাযথ লালন-পালন করলো তাহলে জান্নাতে সে আর ঐ ব্যক্তি খুব কাছাকাছি থাকবেন”। “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত” এই উক্তির মাধ্যমে নারী জাতিকে তিনি সর্বাধিক মর্যাদা দিয়েছিলেন।
আরো দেখুনঃ
পরিসমাপ্তি: আরবের মতো এক বর্বর জাতির আলোবর্তিকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন আমাদের প্রিয় নবী। অন্ধকারে নিমজ্জ্বিত সেই জাতিকে তিনি টেনে বের করে নিয়ে এসেছিলেন সেই খারাপ পরিস্থিতি থেকে। সকল আদর্শিক গুণে তিনি ছিলেন গুনান্বিত। তার বিশ্বাসযোগ্যতা, ভালোবাসা সকলকেই মুগ্ধ করতো এমনকি তার শত্রুরাও তাকে বিশ্বাস করতো। তাইতো তাকে আল-আমিন বা বিশ্বাসী বলে ডাকা হতো। তাই সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানুষ বা পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো মানুষ কে তা তিনি ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি হতে পারেন না তা সহজেই অনুমেয়।