নিজাম হাসিনা মসজিদ ভোলা
নীল আকাশের নিচে, সুন্দর নদীর তীরে, স্থাপত্যের এক অসাধারণ নিদর্শন দাঁড়িয়ে আছে নিজাম হাসিনা মসজিদ। সাদা মার্বেলের তৈরি এই মসজিদটি যেন স্বর্গের এক টুকরো হয়ে ধরণীতে নেমে এসেছে। যে মসজিদের গম্বুজ থেকে ঝলমল করছে সোনালি আলো, আর মিনার গুলো ছুঁয়ে ফেলছে আকাশ। ভেতরে প্রবেশ করলে মনে হবে যেন অন্য জগতে চলে এসেছেন। মার্বেলের মেঝে, রঙিন কাচের জানালা এবং সূক্ষ্ম কারুকাজ – সব মিলিয়ে এক অপার্থিব সৌন্দর্য।
এই নিজাম হাসিনা মসজিদটি কেবল একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, এটি ভোলার মানুষের গর্ব, এটি ঐক্য, বিশ্বাস এবং সৌন্দর্যের প্রতীক। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা এই অসাধারণ মসজিদের ইতিহাস, স্থাপত্যশৈলী এবং এর তাৎপর্য সম্পর্কে জানব। আমরা আপনাকে মসজিদের ভেতরে নিয়ে যাব, দেখাবো এর অসাধারণ স্থাপত্য এবং বলবো এর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য। তাহলে আর দেরি কেন? চলুন শুরু করা যাক!
নিজাম হাসিনা মসজিদ ভোলা
মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত ভোলা জেলার অন্যতম আকর্ষণ হলো নিজাম হাসিনা মসজিদ। সাদা মার্বেলের তৈরি এই মসজিদটি যেন স্বর্গের এক টুকরো ধরণীতে নেমে এসেছে। মসজিদের স্থাপত্যশৈলী, অসাধারণ কারুকাজ এবং ধর্মীয় তাৎপর্য এটিকে করে তুলেছে অনন্য।
মসজিদের নামকরণ-
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে এই মসজিদের নামকরণ করা হয়েছে। ২০১০ সালে তিনি মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। আর ২০১৫ সালে তোফায়েল আহমেদ, আলী আজম মুকুল ও বায়তুল মোকারম মসজিদটি উদ্বোধন করেন।
মসজিদের স্থাপত্যশৈলী-
মসজিদের স্থাপত্যশৈলী মুঘল এবং পারস্যিক স্থাপত্যের মিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে। মসজিদের মূল ভবনটি তিন তলা বিশিষ্ট এবং এর চারপাশে চারটি মিনার রয়েছে। মসজিদের গম্বুজটি সোনালী রঙে আঁকা এবং এর চারপাশে ছোট ছোট গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের দেয়ালে সূক্ষ্ম মার্বেলের কারুকাজ করা হয়েছে।
মসজিদের স্থাপত্য-
মসজিদের নির্মাণে সাদা মার্বেল, গ্রানাইট এবং টেরাকোটা ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের মূল প্রার্থনা কক্ষ টি ৩০০০ জন মুসল্লিকে (আনুমানিক) ধারণ করতে পারে। মসজিদের অভ্যন্তরে মার্বেলের মেঝে, রঙিন কাচের জানালা এবং সূক্ষ্ম কারুকাজ দেখা যায়।
মসজিদের মিনার, গম্বুজ এবং কারুকাজ-
মসজিদের চারটি মিনার ১২০ ফুট উঁচু। মসজিদের গম্বুজটি ৮০ ফুট উঁচু এবং এর ব্যাস ৬০ ফুট। মসজিদের দেয়ালে ফুল, লতাপাতা এবং জ্যামিতিক নকশার সূক্ষ্ম মার্বেলের কারুকাজ করা হয়েছে।
মসজিদের অভ্যন্তরীণ নকশা এবং সাজসজ্জা-
মসজিদের অভ্যন্তরীণ নকশাটি তাৎপর্যপূর্ণ এবং মার্জিত। মসজিদের মেঝে সাদা মার্বেলের তৈরি এবং দেয়ালে সূক্ষ্ম কারুকাজ করা হয়েছে। মসজিদের মিহরাব এবং মিনবারটি সাদা মার্বেলের তৈরি এবং খুব সুন্দরভাবে নকশা করা হয়েছে।
ধর্মীয় তাৎপর্য-
স্থানীয় জনগণের কাছে নিজাম হাসিনা মসজিদ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান। মসজিদে প্রতিদিন নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত জামাতের সাথে সাথে ঈদের জামাতও অনুষ্ঠিত হয়। মসজিদে রমজান মাসে বিশেষ ইবাদতের ব্যবস্থা করা হয়।
নিজাম হাসিনা মসজিদ কিভাবে যাবেন?
ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে লঞ্চে করে ভোলার ইলিশা ফেরি ঘাটে নেমে টমটমে মাত্র ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই আপনি পৌঁছে যাবেন এই অসাধারণ মসজিদে। এছাড়াও বিকল্প পথ হিসেবে ঢাকা থেকে লঞ্চে বরিশাল সদরঘাটে নেমে সেখান থেকে ভোলাগামী লঞ্চে ভেদুরিয়া ঘাট পর্যন্ত এসে অটোতে চড়ে ভোলা সদরের উকিল পাড়া এলাকায় নির্মিত নিজাম হাসিনা মসজিদে যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন ও কোথায় খাবেন?
ভোলা, মেঘনার তীরবর্তী মনোরম জেলাটি শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, বরং আধুনিক সুযোগ সুবিধা সমৃদ্ধ হোটেলের জন্যও খ্যাতি লাভ করেছে। ভোলা সদরে অবস্থিত দি পাপিলন হোটেল, হোটেল বে আইল্যান্ড এবং ক্রিস্টাল ইন সহো আরো অনেক হোটেলে পর্যটকরা রাত্রি যাপন করতে পারবে।
আপনার জন্য আমাদের কিছুকথা
নিজাম হাসিনা মসজিদ কেবল একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য, সাংস্কৃতিক প্রতীক এবং স্থানীয় জনগণের গর্ব। মসজিদের অসাধারণ স্থাপত্য, এর ধর্মীয় তাৎপর্য এবং স্থানীয় জনগণের বিশ্বাস – সব মিলিয়ে এটি একটি অনন্য স্থান।
More:
- দৌলতখান উপজেলার ইতিহাস.
- ভোলা জেলার ইতিহাস.
- লালমোহন উপজেলার ইতিহাস.
- অপরূপ সৌন্দর্যের মনপুরা দ্বীপ.
- বোরহানউদ্দিন উপজেলার ইতিহাস.
এই মসজিদে এসে আপনি শুধু ধর্মীয় ভাবনায় মনোনিবেশ করবেন না, বরং এর অসাধারণ সৌন্দর্যে আপনার মন হারিয়ে যাবে। আপনার মনে হবে যেন আপনি অন্য জগতে চলে এসেছেন। আপনার মন প্রশান্তিতে ভরে যাবে এবং আপনি অনুভব করবেন এক অপার্থিব শান্তি। আপনি যদি কখনো ভোলায় আসেন, তাহলে অবশ্যই এই মসজিদে একবার আসবেন।