কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
কলা নাম শুনলেই যেই ফলটির কথা মনে পড়ে সেটি একটি বারোমেসি ফল। বছরের অনান্য ফল পেতে হলে আপনাকে নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু কলার ক্ষেত্রে তা একেবারেই ভিন্ন। আপনি বছরের যে কোন সময় এই কলা পাবেন। সহজলভ্য ও দামে কম হওয়ায় এই ফল সবার কাছেই সমান জনপ্রিয়। ক্ষুধায় কলা হতে পারে আপনার শক্তিবর্ধক একটি তাৎক্ষণিক সমাধান।
এই কলায় রয়েছে ফাইবার যা শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। আরোও রয়েছে বিভিন্ন খনিজ, মিনারেল, পটাশিয়াম ও আয়রন, যা আমাদের দৈহিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যাপকভাবে জরুরি।
কলার অজস্র উপকারিতার পাশাপাশি রয়েছে এর কিছু অপকারিতা এটাকে ঠিক অপকারিতা না বলে নিয়মের বাইরে খাওয়া বলা যায়। আজকের এই ইনফোটিতে আমরা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো
কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
কলা একটি সুপার ফুড। সকল প্রকার ভিটামিন আপনি এই কলাতে পাবেন। প্রতি ১০০ গ্রাম কলায় কি পরিমাণ পুষ্টিগুণ থাকে তা আমরা জানবো এখন।
১০৯ কিলোক্যালরি, ৭ মিলিগ্রাম প্রটিন, ২৫ মিলিগ্রাম শর্করা, ০.৭ মিলিগ্রাম চর্বি, ০.১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২, ২৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৮০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ, ১৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ০.৯০ মিলিগ্রাম লৌহ উপাদান আপনি সহজেই পেয়ে যাবেন।
কলা খাওয়ার উপকারিতা:
কলাকে গরীবের ফলও বলা যায়। দামের দিক দিয়ে নাগালের মধ্যে কিন্তু মানের দিক দিয়ে একেবারেই উঁচু। এই কলাতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান।
কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। যা দেহের চাহিদা পূরণ করে। একটি কলা গ্রহণের মাধ্যমেই আপনি পটাশিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে পারেন।
কলা মিষ্টি ফল হলেও এটা প্রাকৃতিক মিষ্টি যার কারণের সুগার বাড়ে না শরীরে। তাই ডায়াবেটিসের রোগীরাও নিশ্চিন্তে খেতে পারেন এই ফল।
কলা একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল। তাই দুর্বলতা দূর করার জন্য আপনি প্রতিদিন একটি বা দুটি কলা খেতে পারেন। তাই কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হবে আমাদের
হাড়কে মজবুত করার জন্য দরকার হয় পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যা কলাতে পর্যাপ্ত রয়েছে। কলা পেট পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে এবং হজমের সমস্যা দূর করে হজমশক্তি বাড়ায়।
কলার ১০ গুণ:
কলা শক্তির উৎস হিসেবে পরিচিত। শক্তি বৃদ্ধিতে আপনাকে নিয়মিত কলা খেতে হবে। কলার এমাইনো এসিড মানসিক চাপ রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম মানসিক অবসাদ রোধে প্রতিকার হিসেবে ভালো কাজ করে।
কলায় ক্যালসিয়াম থাকায় তা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিরাট এক ভূমিকা পালন করে। অনেকেরই স্মৃতিশক্তির সমস্যা আছে মনে না রাখতে পারার সমস্যার জন্য অনেক ঝামেলাতে পড়তে হয় অনেককে। বাচ্চাদের বিশেষ করে এই সমস্যা দেখা যায়, পড়া ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। কলা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকে।
গর্ভবর্তী অবস্থায় বিভিন্ন দুর্বলতা ভুগে থাকেন মায়েরা। এই দুর্বলতা কাটানোর জন্য গর্ভবর্তী মায়েরা কলা খেলে বেশ উপকার পাবেন। রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক রেখে তা দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য
কলা পাকস্থলির এসিডকে বৃদ্ধি হতে রোধ করে, ফলে আলসার হওয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় একটি পাকা কলা আপনার কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যা খুব সহজেই দূর করে দিবে।
আরো দেখুন: পেটের গ্যাস কমানোর উপায়.
কলার অপকারিতা:
কলার উপকারিতা ও অপকারিতা উভয়ই আছে। তাই উপকারিতার পাশাপাশি আমাদের অপকারিতাও জানতে হবে যদিও তা খুবই সামান্য।
কলার যত ক্ষতিকর দিক:
কলা যেমন একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল তেমনি খেতেও ভালো। কলা খেলে অনেকটা সময় পর্যন্ত ক্ষুধা লাগে না, পেট ভর্তি হয়ে থাকে। দীর্ঘক্ষণ। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে এই ফল গ্রহণ আপনার শরীরে ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই কলার উপকারিতা ও অপকারিতা উভয়ই জানতে হবে আমাদের।
কলা ওজন নিয়ন্ত্রণের রাখে। একটি মাঝারি সাইজের পাকা কলায় ১০৫ ক্যালরি পরিমাণ শক্তি থাকে। তাই অতিরিক্ত খেলে কিন্তু ওজন বাড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তাদের কলা এড়িয়ে চলা উচিত। কলায় থাকা টাহরামাহন যা মাইগ্রেনের উদ্রেক ঘণ্টায়।
রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে হাইপারক্যালেমিয়া রোগ হয়। এই রোগের ব্যাক্তিরা কোন কিছুতে অল্পতেই কাবু হয়ে পড়েন। দ্রুত হৃদস্পন্দন উঠানামা করে। কলায় যেহেতু পটাশিয়াম রয়েছে তাই বেশি কলা খেলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
শরীরে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কলায় থাকা শর্করা যা ক্ষতির কারণ হতে পারে। কলার উপকারিতা ও অপকারিতা জানা অনেক জরুরি আমাদের জন্য, নিজে জানুন এবং অন্যকে জানতে সহায়তা করুন।
পাঁকা কলায় ট্রিপটোফ্যান অ্যামাইনো এসিড থাকায় তা মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা হ্রাস করে ফলে শরীরে ক্লান্তি ভাব আসে ও অতিরিক্ত ঘুম আসে।
ভিটামিন বি-৬ স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে। তাই অতিরিক্ত কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। অনেকের কলায় এলার্জি থাকে। তাই কলা খেলে ঠোঁট ফুলে যাওয়ার ও বুক জ্বালাপোড়া করে।
যাদের ঠান্ডা, এজমা ও শ্বাসপ্রক্রিয়ার সমস্যা আছে তার অতিরিক্ত কলা খাবেন না। ফলে শ্বাস প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে।
এখনকার বেশিরভাগ ফলই ক্যামিক্যালযুক্ত যা শরীরের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। কলাকে বেশিরভাগ সময়ই রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে পাকানো তাড়াতাড়ি বিক্রির জন্য ও দ্রুত পঁচন রোধ করার জন্য। তাই পেটে সমস্যা হতে পারে।
কলা যেমন কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে তেমনি অতিরিক্ত খেলে তা গ্যাসেরও সৃষ্টি করে। কলায় থাকা ফ্রুক্টোজ ও ফাইবার মিলে গ্যাস সৃষ্টি করে।
যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা অতিমাত্রায় কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কলায় প্রাকৃতিক সুগার থাকলেও অতিরিক্তগ্রহণ আপনার রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই নিয়মতান্ত্রিকভাবে গ্রহণ করা উচিত।
আরো দেখুন: কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার.
খালি পেটে কলা খেলে কি হয়?
কলা পুষ্টিসমৃদ্ধ ও শক্তিবৃদ্ধায়ক বিধায় সকাল সকাল উঠেই অনেকে কলা খেয়ে নেন। অনেকে ক্ষুধা দূর করার জন্য চট করে খালি পেটে কলা খেয়ে নেন। আপনি নিজেও বুঝতে পারছেন না কি পরিমাণ ক্ষতি আপনি নিজে নিজের করছেন এইভাবে খাওয়ার কারণে।
অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল হওয়ায় এটি খালি পেটে খাওয়া উচিত না। তাৎক্ষণিভাবে আপনার শক্তি বৃদ্ধি পেলেও তা খুব দ্রুতই শেষে হয়ে
কলায় খনিজ থাকায় খালি পেটে গ্রহণ করলে তা বদহজম ও গ্যাসের সৃষ্টি করে। তাই খালি পেটে কখনোই কলা খাওয়া উচিতনয়।
সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা
সকালের নাস্তায় কলা একটি পছন্দীয় খাবার অনেকের। ডিম, কর্নফ্লেক্সের সঙ্গে কলা খেয়ে থাকেন অনেকেই। এর ফলে ক্ষুধা দূর হয় ও পুষ্টিও পাওয়া যায়।
যারা শরীরচর্চা করেন তাদের কলা নিয়মিত খাওয়া উচিত। কারণ শরীরচর্চার মাধ্যমে আমাদের শরীরের অনেকখানি এনার্জিই চলে যায়। যা পুনরায় ফিরিয়ে আনতে কলা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
যারা ওজন নিয়ন্ত্রণের রাখতে চান তাদের জন্য কলা হতে পারে। সাহায্যকরী বন্ধুর মতো। কিন্তু আমাদের দেশের অনেকের ধারণা কলা ওজন বাড়ায় কিন্তু তা ভুল। ওজন নিয়ন্ত্রণের রাখতে চাইলে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেয়া কলাটি আবার গ্রহণ শুরু করুন। ও ঐ কলার উপকারিতা ও অপকারিতা আমরা আরো জানবো ও সবাইকে জানাবো।
পানি কম খাওয়ার অভ্যাস অনেক ব্যাক্তিরই থাকে। কলায় থাকা খনিজ ও মিনারেল আপনার পানির চাহিদা পূরণ করে।
পরিসমাপ্তি: কলার উপকারিতা ও অপকারিতা জানা খুবই জরুরি যেহেতু এটি একটি বহুমাত্রিক ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল। এটি খেলে কোন ভিটামিনের ভারসাম্য কেমন হবে কোন ব্যাক্তির জন্য তা জানতে হবে। উপরোক্ত তথ্যগুলো একান্ত আপনার উপকারের জন্য যাদের কলার ব্যপারে আগ্রহ একেক জনের একেক রকম। তাই সম্পূর্ণ তথ্যটি আপনার জন্য সঠিক জায়গায় ব্যয়িত সময় হিসেবেই গণ্য হবে আশা করছি।