খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এক উপকারী খাবার উপাদান হিসেবে আমাদের কাছে বেশ পরিচিত হল খেজুর। কিন্তু আপনি কি জানেন খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। খাদ্য আমাদের মৌলিক উপাদান। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিমাণে খাদ্যের বিকল্প নেই। খাদ্য আমাদের সঠিক পরিমাণে পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমাদের মেধাবিকাশের ক্ষেত্রে বেশ সাহায্য করে থাকে।কিন্তু আমরা প্রতিদিন প্রয়োজনে খুদা নিবারণের জন্য, বিভিন্ন ধরণের খাবার খেয়ে থাকি। কিন্তু তার মধ্যে ঠিক কোন ধরনের খাবারগুলো আমাদের শরীরের জন্য উপকারী আবার কোন ধরনের খাবার গুলো আমাদের শরীরের জন্য অপকারী তা কি আমরা জানি? তাই খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে সাথেই থাকুন।
খেজুর খাওয়ার নিয়ম
আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিকাশের জন্য সঠিক খাদ্য গ্রহণের কোন ধরণের বিকল্প নেই। কিন্তু আমাদের শরীরের পরিপূর্ণ চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের উচিত সঠিক খাদ্য উপাদান বেঁছে নেওয়া। যে সকল খাদ্য আমাদের শারীরিক চাহিদা পূরনের পাশাপাশি আমাদের মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে বেশ সাহায্য করে থাকে। তেমনি একটি খাদ্য উপাদান হল খেজুর।খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে হলে সাথেই থাকুন।
আরো দেখুনঃ পাথরকুচি পাতার উপকারিতা.
খেজুর আমাদের সকলের কাছে একটি পছন্দের খাবার। তাই আমরা অনেকেই কম বেশি খেজুর প্রতিদিন খেয়ে থাকি।কিন্তু আমরা কি জানি খেজুর খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে? চলুন জেনে নেওয়া যাক খেজুর খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে –
প্রতিদিন ৪ টি পরিমাণ খেজুর খেলে আমাদের শরীরের পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রনের অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে থাকে। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন সকালের নাস্তায় খেজুর খাওয়া।
এছাড়াও আপনি যদি সরাসরি খেজুর খেতে সমস্যা হয়ে থাকে আপনি চাইলে সেই খেজুর ভিজিয়ে রেখে খেতে পারেন। যা আমাদের পরিপূর্ণ পুষ্টি পেতে বেশ সাহায্য করবে।
আপনি চাইলে খেজুরের জুস বানিয়ে খেতে পারেন খেজুর। তার জন্য খেজুরের সাথে সামান্য দুধ কিংবা কফি মিশিয়ে ব্ল্যান্ড করে নিতে পারেন।এই পানিয় আপনাকে খেজুরের পরিপূর্ণ পুষ্টি পেতে বেশ সাহায্য করবে।
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে শারীরিক বৃদ্ধির জন্য এবং সঠিক মেধাবিকাশের জন্য প্রয়োজন হয়ে থাকে সঠিক পরিমাণ খাদ্যের। তাই যদি প্রশ্ন উঠে সঠিক এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার গ্রহণের সেই ক্ষেত্রে সবার আগে যে নামটি আসে তা হল খেজুর।খেজুর এমন একটি ফল যা হতে পারে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পুষ্টির পরিপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করে থাকে।এটিকে কেউ যদি শুধুমাত্র খাদ্য উপাদান মনে করে থাকে তাহলে তা ভুল হবে।বরং আমাদের শরীরের সঠিক পুষ্টির উৎস হিসেবে কাজ করে থাকে খেজুর। খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হল চোখ রাখুন আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে।
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের শরীরে সঠিক পরিমাণে পুষ্টির চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে বেশ সাহায্য করে থাকে খেজুর। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই জানে না খেজুরের উপকারীতার কথা।যার কারণে আমরা অনেকেই খেজুর খাই না। কিন্তু অপছন্দ করে থাকি।কিন্তু আপনি যদি খেজুর খাওয়ার উপকারিতার কথা জানেন তাহলে আপনি কোন ভাবেই খেজুর খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবেন না।
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে চোখ রাখুন আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে জেনে নেই খেজুর খাওয়ার উপকারিতার কথা-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে:
খেজুর এমন একটি উপাদান যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বেশ ভুমিকা পালন করে। কারণ খেজুরে বিদ্যমান রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বেশ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে:
আপনি জানেন কি?নিয়মিত খেজুর খেলে আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ ভূমিকা পালন করে থাকে।খেজুরে বিদ্যমান রয়েছে ফাইবার।যা আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে:
খানিকটা বয়স হলেও আমাদের শরীরে দেখা দিয়ে থাকে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা।কিন্তু আমরা চাইলে খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি আমাদের শরীরে রক্তচাপের মত সমস্যা।নিয়মিত খেজুর খেলে আমরা খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা।কারণ খেজুরে বিদ্যমান রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম। যা আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ ভূমিকা পালন করে।
ডায়বেটিক রোগিদের চিনির অভাব পূরণ করে খেজুর:
যারা ডায়বেটিকে আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে চিনি তেমন খাওয়া হয় না বললেই চলে। কিন্তু আপনি চাইলে চিনির পরিবর্তে নিয়মিত খেতে পারেন খেজুর। এতে আপনার চিনির অভাব যেমন পূরন হবে তেমনি আপনার শরীর থেকে ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমে যাবে।
পেশির গঠন মজবুত রাখতে সাহায্য করে:
খেজুরে বিদ্যমান রয়েছে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের পেশির গঠন মজবুত করার ক্ষেত্রে বেশ সাহায্য করে।
চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখে:
খেজুরে বিদ্যমান রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি। যা আমাদের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ ভূমিকা পালন করে থাকে।
রক্তশূন্যতা দূর করতে ভূমিকা রাখে:
আমাদের শরীরের সঠিক পরিমানে রক্তের অভাব দেখা দিলে শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দিয়ে থাকে। তাই আপনি যদি এই সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে আপনি নিয়মিত খেতে পারেন খেজুর। যার প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেল আপনার শরীরে রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করতে ভূমিকা পালন করে।
হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে:
খেজুরে বিদ্যমান রয়েছে প্রয়োজনীয় উপাদান যা আমাদের হার্টকে সুস্থ রাখতে যেমন সাহায্য করে ঠিক তেমনি করে আমাদেরকে নানান ধরণের হৃদরোগ প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে।
শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে:
মানবদেহে ঘাতকবাহী রোগের মধ্যে ক্যান্সার অন্যতম। তাই আপনি যদি আপনার শরীরকে ক্যান্সার এর প্রভাব থেকে দূরে রাখতে চান তাহলে আপনি খেতে পারেন খেজুর। কারণ খেজুরে বিদ্যমান রয়েছে প্রয়োজনীয় উপাদান যা আমাদের শরীরকে সুস্থ এবং স্বাস্থবান রাখার ক্ষেত্রে বেশ ভূমিকা পালন করে থাকে।
দেহকে কর্মচঞ্চল করে তুলতে সাহায্য করে:
খেজুরে বিদ্যমান রয়েছে প্রয়োজনীয় উপাদান যা আমাদের শরীরকে বেশ কর্মচঞ্চল করে তুলবে। সেই সাথে আমাদের শরীরে যে ক্লান্তিভাগ দেখা দেয় তা থেকে শরীরকে রক্ষা করবে।
চোখের রেটিনাকে সুস্থ রাখে:
খেজুরে বিদ্যমান রয়েছে নিউটন এবং জেক্সাথিন যা আমাদের চোখের ভেতরে রেটিনাকে সুরক্ষা প্রদান করে। রেটিনাকে সুস্থ রাখে এবং রেটিনার সুস্থতা প্রদান করে থাকে।
পাকস্থলির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
খেজুরে বিদ্যমান রয়েছে প্রয়োজনীয় উপাদান যা আমাদের পাকস্থলীকে সুস্থ রাখে। ফলে যেকোনো ধরনের পাকস্থলী জনিত রোগ যেমন ডায়রিয়া,কোষ্টকাঠিন্য সমস্যা সমাধানে ভূমিকা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে সাথেই থাকুন।
খেজুর খাওয়ার অপকারিতা
উপকারীতার পাশাপাশি খেজুরের রয়েছে বেশ কিছু অপকারিতা।চলুন তাহলে জেনে নেই খেজুর খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে-
অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার ফলে শরীরের মধ্যে চিনির পরিমাণ অনেকাংশে বেড়ে যায়।ফলে যারা ডায়বেটিকে আক্রান্ত রয়েছে তাদের ডায়বেটিক এর পরিমাণ বেড়ে যায়।ফলে ডায়বেটিক আক্রান্ত রোগিদের সমস্যা দেখা যায়।
খেজুরের মধ্যে পটাশিয়ামের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি থাকে।ফলে অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার ফলে শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে নানান ধরণের শারীরিক জটিলতা দেখা দিয়ে থাকে।
অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার ফলে পাকস্থলির নানান ধরণের জটিলতা দেখা যায়।
অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার ফলে শরীরে শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরো দেখুনঃ তুলসী পাতার উপকারিতা.
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে সাথেই থাকুন।
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা -F&Q
Q: দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত?
A: মূলত একজন মানুষ তার চাহিদা অনুযায়ী খেজুর খেতে পারবে। তবে স্বাভাবিক নিয়মে একজন ব্যক্তি দৈনিক চার থেকে পাঁচটি খেজুর খাওয়া ভালো।
Q: কোন খেজুর সবচেয়ে ভালো?
A: আমরা সবাই জানি যে, পুষ্টিগুণ এবং মানের দিক থেকে খেজুর হল অন্যতম একটি খাবার। তবে এই খেজুর এর মধ্যে বিভিন্ন প্রকার এর ভাগ রয়েছে। আর আপনি যদি সবচেয়ে ভালো খেজুর খুঁজে থাকেন। তাহলে আমি আপনাকে বলব যে, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে ভালো খেজুর হল, আজওয়া।
Q: পুষ্টিকর খেজুর কোনটি?
A: খেজুর এর মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে। কেননা খেজুর খাওয়ার সময় যেমন স্বাদ পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে আপনি যদি নিয়মিত খেজুর খান। তাহলে আপনার শরীরের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। আর আপনি যদি সবচেয়ে ভালো এবং পুষ্টিকর খেজুর খেতে চান। তাহলে আপনাকে সৌদি আরবের মদিনা তে যে সকল খেজুর চাষ করা হয়। সেই খেজুর গুলো খেতে হবে।
Q: শুকনো খেজুর খেলে কি হয়?
A: যখন আপনি নিয়মিত শুকনো খেজুর খাবেন। তখন আপনি আপনার শরীরের মধ্যে অনেক উপকার পাবেন। কেননা শুকনো খেজুর এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম। যার ফলে আপনার শরীরের উচ্চ রক্তচাপ এর পরিমাণ কমিয়ে আনবে। সেই সাথে আপনার শরীরের মধ্যে যে সকল বাজে কোলেস্টেরল রয়েছে। তা দূর করতে সহায়তা প্রদান করবে। এর পাশাপাশি একজন মানুষের শরীরের মধ্যে ভালো কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বৃদ্ধি করবে।
Q: খেজুর এর মধ্যে কি কি ভিটামিন রয়েছে?
A: খেজুর এর মধ্যে আপনি ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের যাবতীয় ভিটামিন গুলো দেখতে পারবেন। তবে ভিটামিন বি এর পাশাপাশি আপনি খেজুর এর মধ্যে ভিটামিন সি এর ভালো উৎস দেখতে পারবেন। যার ফলে নিয়মিত খেজুর খাওয়ার কারণে আপনার দৃষ্টি শক্তি অনেক বৃদ্ধি পাবে। এবং আপনার শরীরের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে।
Q: আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায় কি?
A: যখন আপনি আসল আজওয়া খেজুর কিনতে যাবেন। তখন অবশ্যই লক্ষ্য করবেন যে, এই ধরনের খেজুর গুলো দেখতে অনেক কালো কুচকুচে হয়। সেই সাথে অন্যান্য খেজুর গুলোর তুলনায় এই ধরনের খেজুর আকারের দিক থেকে একটু ছোট হয়। মূলত যেসব খেজুর দেখতে কালো কুচকুচে, এবং মাঝে মাঝে লালচে লালচে ভাব রয়েছে। এর পাশাপাশি যেসব খেজুরের দেখতে অনেক টা ভেজা এবং আকারের ছোট মনে হবে। তখন আপনি ধরে নিবেন যে, সে গুলো হলো, আসল আজওয়া খেজুর।
Q: আসল আজওয়া খেজুর এর দাম কত?
A: আমরা সবাই জানি যে গোটা বিশ্বের মধ্যে আজওয়া খেজুর হলো অন্যতম। আর এই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খেজুর গুলো আসে সৌদি আরব থেকে। যখন আপনি এই ধরনের আসল খেজুর কিনতে যাবেন। তখন আপনাকে উক্ত খেজুরের জন্য প্রতি কেজি হিসেবে 800 থেকে 2500 টাকা পর্যন্ত দিতে হবে।
উপসংহারঃ আমাদের শরীরকে সুস্থ এবং কর্মচঞ্চল রাখার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে খেজুর।আশা করি আজকের আলোচনার মাধ্যমে আপনারা সকলে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। নিয়মিত খেজুর খেয়ে শরীরকে সুস্থ এবং সুন্দর রাখবেন এই প্রত্যাশা ব্যক্ত রইলো।