ব্রাজিল কতবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে?
ব্রাজিল কতবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে? | ব্রাজিল কতবার বিশ্বকাপ খেলেছে?
আমাদের আশেপাশে অনেক ফুটবল প্রেমী মানুষ আছে, কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই জানেনা ব্রাজিল কতবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে? বর্তমানে সারা বিশ্বেই ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে টান টান উত্তেজনা। এরই মধ্যে কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এর নক আউট ও গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলো শেষ হয়ে গেছে। অংশগ্রহন করা ৩২ টি দেশের মধ্যে ৮ টি দেশ টিকে রয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালে।
এদের মধ্যে আছে আর্জেন্টিনা, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, ব্রাজিল, ক্রোয়েশিয়া, মরক্কো, পর্তুগাল। তবে এদের মধ্যে পূর্বে বিশ্বকাপ জিতেছে ৪ টি দল। এগুলো হলো আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স। অনেকেই হয়তো জানেন এদের মধ্যে ব্রাজিল সবচেয়ে বেশি বার বিশ্বকাপ জয়ী। তবে এটা অনেকেই জানেন না যে, ব্রাজিল কতবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে? আজ আমরা এই বিষয় নিয়েই আলোচনা করব।
আরো দেখুন:
ব্রাজিল কতবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে?
ইতিহাসে ফুটবল বিশ্বকাপের প্রথম আসর বসে ১৯৩০ সালে। এরপর মাঝখান থেকে অবশ্য দুইবার বিশ্বকাপ খেলা অনুষ্ঠিত হয়নি৷ কারণ, সেসময় বিশ্বজুড়ে বিরাজ করেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তবে এ নিয়ে মোট ২২ বার আসর বসেছ বিশ্বকাপের। এর মধ্যে ২২ তম আসরের খেলা শেষ হয়নি৷ বাকি ২১ বারের মধ্যে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়নের ট্রফি নিয়েছে ৫ বার। ব্রাজিল কতবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে, চলুন তা জেনে নিই।
ব্রাজিল একদম শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭ বার বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ খেলার জন্য ময়দানে নেমেছিল। তবে একদিক থেকে হিসাব করতে গেলে ব্রাজিল বেশ সফল দল। কারণ,
৭ বার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে তার মধ্যে ৫ বারই বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এই হলুদ সবুজ দল।
ব্রাজিল কতবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে ব্রাজিল যেমন সফল দল, ঠিক তেমনি অন্যান্য দিক থেকেও ব্রাজিল এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সফল দল হিসেবে পরিচিত। কারণ, কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে এ পর্যন্ত বসা বিশ্বকাপের আসর সংখ্যা ২২। আর ২২ টি আসরের প্রতিটিতেই ব্রাজিল অংশগ্রহন করেছে।
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, শুধু অংশগ্রহণ করেই থেমে থাকেনি এই দল। ২২ বারের আসরে প্রতিটি বারই ব্রাজিল গ্রুপ পর্বের বাধা পেরিয়ে উঠে গেছে নক আউটে। শুধু তাই নয়, ইতিহাসে ব্রাজিলই একমাত্র দল, যারা কিনা ৭ বার ফাইনালে উঠে ৫ বারই জয় করেছে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নের ট্রফি। বর্তমানে ফিফা ফুটবল র্যাংকিং এর দিকে লক্ষ করলেও অনুমান করা যায় ব্রাজিল কতটা শক্তিশালী দল। কারণ, ফিফা র্যাংকিং এ সর্বোচ্চ পয়েন্ট নিয়ে ব্রাজিল শীর্ষে আছে।
১৯৫০ বিশ্বকাপ ফাইনাল-
ব্রাজিল সর্বপ্রথম ফাইনাল ম্যাচ খেলেছিল ১৯৫০ সালে। সেবার ব্রাজিল প্রথমবারের মতো নিজেদেরকে তুলে নিয়েছিল ফাইনালে। ফাইনাল ম্যাচে ময়দানে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ছিল উরুগুয়ে। খেলার ভ্যেনু ছিল মারাকানা স্টেডিয়াম। ব্রাজিল ফাইনালে উঠতে পারলেও সেবার আর চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওঠা হয়নি তাদের।
প্রথম বারের মতো ফাইনালে ওঠা ম্যাচে তাদেরকে হেরে যেতে হয় উরুগুয়ের কাছে। ১৯৫০ সালের ম্যাচটি অবশ্য খুব একটা সিরিয়াস ছিল না। কারণ হলো, বিশ্বযুদ্ধের পরপর সবকিছু স্বাভাবিক করতে অনেক সময় লেগেছিল। তাই অনুশীলন থেকে শুরু করে সবকিছুতেই শুরুতে প্রতিটি দলের অসুবিধা হয়েছিল।
১৯৫৮ বিশ্বকাপ ফাইনাল-
ব্রাজিল ২য় বারের মতো ফাইনালে উঠেছিল ১৯৫৮ সালে। অর্থাৎ প্রথমবারের ফাইনালে ওঠার এক বার পরে। তবে ১৯৫০ সালের ফাইনালে উঠে হেরে যাওয়ার পর ব্রাজিল দলের মধ্যে জেদ জেগেছিল। আর সেই জেদ ও আত্মবিশ্বাসের মিশ্রণে ব্রাজিল ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপ জিতে গিয়েছিল। ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল সুইডেনের বিপক্ষে।
১৯৬২ বিশ্বকাপ ফাইনাল-
চ্যাম্পিয়নের শিরোপা জিতে নেয়ার পরের বছরেই তৃতীয় বারের মতো ফাইনালে উঠে গিয়েছিল ব্রাজিল। ১৯৬২ সালে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ছিল চেকোস্লোভাকিয়া। ১৯৫৮ সালের ম্যাচের মতো ১৯৬২ সালের ম্যাচেও ফাইনালে দুর্দান্ত খেলে চেকোস্লোভাকিয়াকে হারিয়ে দেয় ব্রাজিল। টানা দ্বিতীয়বারের মতো জয় করে নেয় চ্যাম্পিয়নের ট্রফি।
১৯৭০ বিশ্বকাপ ফাইনাল-
১৯৬২ সালের বিশ্বকাপের পর ব্রাজিল আবারো ফাইনালে উঠেছিল ১৯৭০ সালে। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে ফাইনাল ম্যাচে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারেনি ব্রাজিল। ১৯৭০ সালে চতুর্থ বারের মতো ফাইনালে ওঠে ব্রাজিল। ১৯৭০ সালের ম্যাচটিতে ব্রাজিল নিজেদের প্রতিপক্ষকে ঠেকিয়ে তৃতীয় বারের মতো চ্যাম্পিয়নের ট্রফি ছিনিয়ে নেয়। সেবারের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রতিপক্ষ হিসেবে ব্রাজিল পেয়েছিল ইতালিকে।
১৯৯৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা-
ব্রাজিল কতবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে, এই প্রশ্ন উঠলে তাদের ৫ম বারের ফাইনাল ম্যাচ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ব্রাজিল ৫ম বারের মতো ফাইনালে ওঠে ১৯৯৪ সালে। সেবারও ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ছিল ইতালি। ইতালির বিপক্ষে ম্যাচ খেলে নিজেদের ঝুলিতে ৪র্থ বারের মতো বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নের ট্রফি জিতে নেয় ব্রাজিল।
নিঃসন্দেহে ব্রাজিলের জন্য এটি সেরা জয় ছিল। কারণ, বিশ্বকাপের মাঠে ফাইনাল ম্যাচ হিসেবে ব্রাজিল বনাম ইতালি ১৯৭০ সাল ও ১৯৯৪ সাল মিলে মোট দুইবার প্রতিযোগিতা করে। আর ব্রাজিল যেহেতু ২ বারই ইতালিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। তাই তাদের জন্য ১৯৯৪ সালের ম্যাচটি বিশেষ ভাবে উদযাপন করার মতো ছিল।
১৯৯৮ বিশ্বকাপ ফাইনাল-
ষষ্ঠবারের মতো যখন ব্রাজিল ফাইনালে ওঠে তখনো অনেকে ভেবেছিলেন যে, সেবারের ম্যাচে হয়তো আবারো ব্রাজিল জিতে যাবে। আর পঞ্চম বারের মতো বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নের ট্রফি জয় করবে। কিন্তু ব্রাজিল ভক্তদের আশা আর পূর্ণ হয়নি। ব্রাজিল ৫ম বারের মতো ফাইনালে ওঠে ১৯৯৮ সালে।
১৯৯৮ সালের ম্যাচটিতে এক দিক ব্রাজিল যেমন ফাইনালে উঠে গিয়েছিল, তেমনি অন্য দিক দিয়ে ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলার জন্য ফাইনালে উঠেছিল ফ্রান্স। ফ্রান্সের সাথে ম্যাচ খেলে সেবার আর বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন খেতাব পাওয়া হয়নি ব্রাজিলের। ফ্রান্স জিতে নিয়েছিল নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক। বলে রাখা ভালো, ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপেও ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হয়। সে হিসেবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দল ফ্রান্স।
২০০২ বিশ্বকাপ ফাইনাল-
১৯৯৪ সালে ৫ম বারের মতো, ১৯৯৮ সালে ৬ষ্ঠ বারের মতো ফাইনালে ওঠে ব্রাজিল। আর সপ্তম ও শেষ বারের মতো ব্রাজিল ফাইনালে উঠেছিল ২০০২ সালে। টানা তিন বার ফাইনালে ওঠার বিষয়টি ব্রাজিলের জন্য ছিল সম্মানজনক। তাই ব্রাজিল কতবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে, এমন প্রশ্ন মনে জাগলে অবশ্যই ২০০২ বিশ্বকাপও স্মরণীয় হয়ে থাকবে ব্রাজিল ফ্যানদের কাছে। কারণ, ব্রাজিলের মতো অন্য কোনো দল টানা তিনবারের মতো ফাইনালে উঠতে পারেনি।
২০০২ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্রাজিলের সঙ্গী হয়, বর্তমান সময়ের ব্রাজিলের পরের অবস্থানে থাকা, এ পর্যন্ত ৪ বার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া দেশ জার্মানি। তবে মাঠের মধ্যে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে ব্রাজিল শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়। আর ২০০২ সালেই ব্রাজিল শেষবারের মতে বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নের শিরোপা জিতে নেয়। আর সেবারই ব্রাজিল সর্বশেষ ফাইনালে উঠেছিল। ২০০২ সালের পর আর একবারের জন্যও ফাইনালে ওঠা হয়নি সিলেকাওদের।
আরো দেখুন:
সর্বশেষ কথা: আশা করি আপনারা সকলেই ব্রাজিল কতবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। বিশ্বকাপ নিয়ে এরকম আরো নতুন নতুন লেখা পেতে চোখ রাখুন আমাদের সাইটে। আর লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই সাইটটি ফলো করে রাখবেন। আর লেখা নিয়ে কোনো প্রকার মন্তব্য কিংবা অভিযোগ থাকলে অবশ্যই তা জানিয়ে দেবেন কমেন্ট সেকশনে।