তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি?
তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি? (সুন্নত ও মুস্তাহাব)
তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি জানার জন্য যদি আপনারা আমাদের ওয়েবসাইটে এসে থাকেন তাহলে আপনাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা আপনাদেরকে তায়াম্মুম সম্পর্কে জানা বহু সেইসাথে তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি এবং অন্যান্য তথ্য সম্পর্কে জানাবো। তবে অবশ্যই আপনাদেরকে সবার আগে তাই এমন কি জানতে হবে।
আপনারা যদি তায়াম্মুম সম্পর্কে জানেন তাহলে তায়াম্মুমের ব্যাপারে সব পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে সুবিধা হবে। নতুবা আপনারা সঠিক উপায়ে তায়াম্মুম করতে পারবেন না অথবা তায়াম্মুম যে সঠিক হয়েছে তা বুঝতে পারবেন না। আমরা সকলেই জানি মুসল্লিদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। আর এই ফরজ ইবাদত পালন করার জন্য অবশ্যই তার মন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কারণ যেকোনো সময় তায়াম্মুম করার প্রয়োজন হতে পারে। তাহলে চলুন এবার জেনে নিই তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি সম্পর্কে।
আরো দেখুনঃ গোসল ফরজ হওয়ার কারণ।
তায়াম্মুম কি?
তায়াম্মুম হচ্ছে ইচ্ছা করা। তামিমকে শরীয়তের পরিভাষায় বলা হয় পবিত্র মাটি দ্বারা নিজেকে পাক-পবিত্র হওয়ার নিয়তে মুখমন্ডল এবং উভয় হাত কনুইসহ মাসেহ করা। তায়াম্মুম করার সময় কোন কোম্পানির স্পর্শ থাকবে না। থাকবেনা শুধু ওই পবিত্র মাটি দ্বারা নিজেকে পবিত্র করতে হবে।
যদি কখনো কোনো স্থানে পানির অভাব বা পানি অপরিষ্কার থাকে তাহলে নিজেকে পবিত্র করার জন্য ওযু এবং গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করা যায়। আর এই তায়াম্মুম করার পর আপনারা যে কোন সালাত আদায় করতে পারবেন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মত দের জন্য তায়াম্মুমের অনুমতি হে মহান আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ দান।
আমাদের পবিত্র হওয়ার জন্য পৃথিবীতে পানির ব্যবস্থা রয়েছে তবুও কোন কারনে যদি এই পানি সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় তার জন্য মহান আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের জন্য তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা বজায় রাখার উপায় জানিয়েছেন। কারণ আমাদের প্রত্যেক দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয় আর এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা বাধ্যতামূলক। যাতে করে মহান আল্লাহু তাআলার বান্দারা কোনভাবে অপবিত্রতার জন্য নামাজ কাযা দিতে না পারে সেজন্য আমার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
তাছাড়াও কোন অবস্থায় যদি পানি না পাওয়া যায় অথবা বান্দা অসুস্থ হয়ে পানি ব্যবহার করতে পারছে না সেইসময়ের বান্দার কি করবে?
এটার জন্য মহান আল্লাহতালা বলেছেন, “ অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও। অর্থাৎ মুখমণ্ডল এবং কনুইদ্বয় পবিত্র মাটি দ্বারা মুছে ফেলো। আল্লাহ তোমাদেরকে কোনভাবে অসুবিধায় ফেলতে চান না, কিন্তু তোমাদেরকে সবসময় পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্ত্রীর নেয়ামত পূর্ণ করতে চান। যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।”
আরো দেখুনঃ ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি?
তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি?
তায়াম্মুম কি তা আমরা জেনে গিয়েছি। কিন্তু এই তায়াম্মুমের ৩টি ফরজ রয়েছে। তাইমুম করার সময় অবশ্যই আমাদেরকে এই তিনটি ফরজের ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত। কারণ আমরা সকলেই জানি ইবাদতগুলো আমাদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে তায়াম্মুমের ৩টি ফরজ উল্লেখ করা হলো-
- তাইমুমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করার জন্য অনুরোধ করা।
- উভয় হাত পবিত্র মাটিতে মেরে সমস্ত মুখমন্ডল মাসেহ করা অর্থাৎ হাতের তালু পবিত্র মাটিতে অথবা মেরে সেই দুই হাত সমস্ত মুখমন্ডল মাসেহ করতে হবে।
- দুই হাত মেরে দুই হাতের কনুই পর্যন্ত মাসেহ করতে হবে। ঠিক যেমন করে মুখমন্ডল মাসে করা হয়েছে ঠিক তেমন ভাবেই দুই হাত মাসেহ করে নিতে হবে একদম উভয় হাতের কনুই পর্যন্ত।
তায়াম্মুমের সুন্নত কয়টি?
তায়াম্মুমের যেমন ফরজ রয়েছে ঠিক তেমনি সুন্নত রয়েছে। আর তায়াম্মুমের সুন্নত হচ্ছে ৭টি। নিম্নে এগুলো দেয়া হলো-
- তায়াম্মুম করার জন্য প্রথমে বিসমিল্লাহ বলা।
- দুই হাত অর্থাৎ উভয় হাত পবিত্র মাটিতে মেরে সামনের দিকে নিতে হবে।
- সেই দুই হাত আবার পেছন দিকে নিতে হবে।
- দুই হাতে মেরে অর্থাৎ উভয় হাত মাটিতে মারার পর মাটি জেনে নিতে হবে।
- যখন মাটিতে হাত মারবে তখন অবশ্যই আঙ্গুলগুলো ফাক করে রাখতে হবে।
- মাসেহের সময় তারতিব ঠিক রাখতে হবে।
- বিরতিহীন ভাবে তায়াম্মুম সম্পন্ন করতে হবে।
আরো দেখুনঃ আযানের জবাব দেওয়ার নিয়ম।
তায়াম্মুমের মুস্তাহাব কয়টি?
তায়াম্মুমের নির্দিষ্ট সংখ্যক কোন মুস্তাহাব নেই। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তির প্রবল ধারণা থাকে যে শেষ সময় পর্যন্ত পানি পাওয়া যাবে। তবে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা মুস্তাহাব। এবং শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর তায়াম্মুম করে মুস্তাহাব ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা যাবে।
তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ
তায়াম্মুম ভঙ্গের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। তাই তায়াম্মুম করার পূর্বে আমাদের উচিত ভঙ্গের কারণ গুলো জেনে নেওয়া। এতে করে আমরা তায়াম্মুম করার সময় সর্তকতা অবলম্বন করতে পারব। সুতরাং নিম্নে তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ গুলো উল্লেখ করা হলো-
- যে সকল কারণে ওযু নষ্ট হয় সে সকল কারণে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়।
- যে সকল কারণে গোসল করা ওয়াজিব হয় সেই সকল কারণে তা ভঙ্গ হয়।
- পানির অনুপস্থিতে তায়াম্মুম করা হয় কিন্তু যদি পানি চলে আসে অর্থাৎ কোনভাবে পানি পাওয়া যায় তাহলে সাথে সাথে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যায়।
- কোন অসুখের কারনে অর্থ্যাৎ ওজর এর কারণে তায়াম্মুম করা হয়ে থাকে তাহলে সেটি দূর হওয়ার সাথে সাথে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যায়।
কখন তায়াম্মুম করা জায়েজ
ইতিমধ্যে আপনাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে তায়াম্মুম কখন করতে হয় এবং তা এমন কেন করা হয়। কিন্তু তবুও আপনাদের কে আবার আমরা জানিয়ে দিচ্ছি কখন তায়াম্মুম করা জায়েজ হবে। যাতে করে আপনারা তায়াম্মুম করার সময় কোন দ্বিধা দ্বন্দের মধ্যে না থাকেন এবং নিজের পবিত্রতা বজায় রাখতে পারেন।
- যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি পানি ব্যবহারের জন্য কোন পানি না পেয়ে থাকেন এবং এক ক্রোশ দূরত্বে পানি থাকে অর্থাৎ ৪০০০ কদম দূরত্বে পানি থাকে তাহলে তায়াম্মুম করা জায়েয হবে।
- শারীরিক কোন অসুস্থতার কারণে পানি ব্যবহার করতে পারছেন না এমন কোনো আশঙ্কা থাকলে বা পানি ব্যবহার করলে অসুখের পরিমাণ আরো বৃদ্ধিপায় তাহলে কোন বিরম্বনা না করে তায়াম্মুম করা যাবে.
- পুকুর অথবা ডোবার পানিতে যদি কোন প্রাণীর ভয় থাকে বা পড়ার ভয় থাকে এবং কুয়ার পানি তোলার জন্য কোন বালতি পারসি না থাকে তাহলে তায়াম্মুম করা যাবে।
সুতরাং পরিস্থিতির ওপর বিবেচনা করে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার পর যদি ব্যবস্থা করতে না পারেন সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তায়াম্মুম করে ফরজ ইবাদত পালন করতে হবে।
তায়াম্মুমের রোকন এবং শর্ত কয়টি
তায়াম্মুমের রোকন ২টি। যেমনঃ
- মাটি বা মাটির জাতীয় এমন কিছু জিনিসের উপর দুইবার হাত মারতে হবে।
- চেহারা এবং উভয় হাত মাসেহ করতে হবে।
তায়াম্মুমের শর্ত ৬টি। যেমনঃ
- নিয়ত করতে হবে
- মাসেহ করতে হবে
- মাটি জাতীয় জিনিসের ওপর তেমন করতে হবে
- মাটি জাতীয় জিনিসটি অবশ্যই পাক হতে হবে।
- পানি না পাওয়া বা পানি ব্যবহার করার জন্য সেরকম সক্ষম না হওয়া।
- তিন বার বা তার অধিক আঙুল ধারা মাসেহ করতে হয়।
উপসংহারঃ আপনারা যারা তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি জানতে চেয়েছেন তারা আশা করছি আমাদের ওয়েবসাইট থেকে জানতে পেরেছেন। আমরা আপনাদেরকে তায়াম্মুম সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। এছাড়াও তায়াম্মুম হচ্ছে বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে অনুগ্রহ। তাই আমাদের সকলের উচিত যতক্ষণ না পর্যন্ত পানির না পাওয়া যাচ্ছে সেই সময় অপেক্ষা করার পর তায়াম্মুমের মাধ্যমে এবাদত পালন করা এবং নিজেদেরকে পবিত্র করে রাখা।
আপনারা যদি আমাদের পক্ষ হতে তায়াম্মুম এবং ইসলামের অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। জাযাকাল্লাহ খাইরান।