আযানের জবাব | আযানের দোয়া
আযানের জবাব এবং (আযানের দোয়া ও হাদিস)
আজান হচ্ছে সমগ্র সৃষ্টির প্রতি মহান আল্লাহতালা ও পালন করার আহবান। নামাজের কথা স্মরণ করা এবং নামাজের পড়ার জন্য যে আহ্বান বার্তা দেয়া হওয়ার তাই হচ্ছে আজান। আজান হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ধ্বনি। যে ধ্বনি শুনবে সকল মানুষের প্রাণ জুড়িয়ে যায়। আমরা সকলেই জানি যে আযান শুনলে আজানের জবাব দিতে হয়।
তাই আজ আমরা আপনাদের জন্য আযানের জবাব সম্পর্কিত একটি আর্টিকেল নিয়ে হাজির হয়েছি। যেখানে আপনারা আযানের প্রত্যেক বাক্যে কি জবাব দিতে হয় তা জানতে পারবেন এর পাশাপাশি আযান দেওয়ার নিয়ম আমরা আপনাদেরকে জানিয়ে দিব। চলুন তাহলে জেনে নিই আযানের জবাব সম্পর্কে।
আজানের জবাব দেওয়া কি?
মসজিদের মুয়াজ্জিন যখন সুমধুর কন্ঠে আযান উচ্চারিত করে তখন সেই আযানের জবাব দেওয়া হয়। আর আযানের জবাব দিলেন অনেক সওয়াব হয়। তাছাড়া হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, আযান সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এই সময়ে যারা মহান আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করেন তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের সে চাওয়া পূরণ করে দেন। তাছাড়া আজানের জবাব দিলে চিরস্থায়ী শান্তি জান্নাত পাওয়া যায়।
আযানের জবাব দেওয়া মুস্তাহাব। আযানের জবাব দেওয়ার ফলে আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের পুরস্কৃত করেন। সুতরাং আজানের সময় অযথা কথা না বলে মুয়াজ্জিনের আযান শোনার পর আযানের জবাব দেওয়া উত্তম।
আরো দেখুনঃ আকাইদ বলতে কি বুঝায়।
আযানের জবাব দেওয়ার নিয়ম
আপনারা যারা আযানের জবাব এখন পর্যন্ত জানেন না তাদের জন্য আমরা নিম্নে আযানের জবাব দেয়ার নিয়ম জানিয়ে দিব। তবে আযানের জবাব দেয়ার সময় আপনাদেরকে আন্তরিকতা সাথে জবাব দিতে হবে এবং আপনাদের মনের যা ইচ্ছে হয় তা মহান আল্লাহর কাছে বলতে হবে।
সকল মুসলিমদের আজানের জবাব দিতে হয় বলে বাধ্যতামূলকভাবে যে আজানের জবাব দিতে হবে এমনটি নয়। অবশ্যই প্রত্যেক মুসলিমদের আজানের জবাব দিতে হবে এবং সেই জবাব আন্তরিকতার সাথে দিতে হবে। আজানের জবাব দেওয়া কর্তব্য বলে মনে করে আজানের জবাব দিতে হবে এমন বিষয় নয়। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা অন্যতম একটি সুযোগ হচ্ছে আযানের জবাবের মাধ্যমে।
তাই আমরা আপনাদেরকে আজানের জবাব দেওয়ার নিয়ম নিম্নে উল্লেখ করছি-
আযানের আরবি উচ্চারণ | আযানের বাংলা উচ্চারণ | আযানের জবাব (আরবি) | আযানের জবাব ( বাংলা) |
ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ | “আল্লাহু আকবার, আল্লা-হু আকবার” | ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ | “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার”। |
ﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥْ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ | “আশহাদু আল লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ” | ﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥْ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ | “আশহাদু আল লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ” |
ﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ | “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্ল-হ” | ﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ | “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্ল-হ” |
ﺣَﻰَّ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ | “হাইয়্যা আলাস সলা-হ” | ﻻَ ﺣَﻮْﻝَ ﻭَﻻَ ﻗُﻮَّﺓَ ﺇِﻻَّ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ | “লা-হাওলা ওয়ালা- কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ”। |
ﺣَﻰَّ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻔَﻼَﺡِ | “হাইয়্যা ‘আলাল ফালা-হ” | ﻻَ ﺣَﻮْﻝَ ﻭَﻻَ ﻗُﻮَّﺓَ ﺇِﻻَّ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ | “লা-হাওলা ওয়ালা- কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ”। |
ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ | “আল্লাহু আকবার, আল্লা-হু আকবার” | ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ | “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার”। |
ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ | “লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ” | ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ | “লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ” |
আযানের দোয়া
আযান শেষ হওয়ার পর আযানের দোয়া এবং দুরুদ শরীফপাঠ করা উত্তম। তাই আমরা আপনাদের জন্য আযান শেষ হওয়ার পর দোয়া এবং দুর্যোগ নিয়ে হাজির হয়েছি। আপনার এই দোয়া গুলো সংগ্রহ করে আমল করতে পারেন।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন- ইবাদাতের একনিষ্ঠ ব্যক্তি অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট।
কারণ এই আমগুলো তে রয়েছে অনেক সওয়াব এবং উপকার। হাদীস শরীফে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এরকম অনেক সহজ এবং জানা আমলের তাগিদ দিয়েছেন। যাতে করে তার উম্মতেরা গুনা হতে মুক্ত হতে পারেন।
হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আযান শুনে দোয়া পাঠ করবে তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহ মাফ করে দিবেন। ( তিরমিজি, মুসলিম, ইবনে মাজাহ)।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু সাল্লাম এর হচ্ছে-
وَ اَنَا اَشْهَدُ اَنْ لَا اِلهَ اِلَّا اللهُ – وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ – وَ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَ رَسُوْلُهُ – رَضِيْتُ بِاللهِ رَبًّا – وَ بِالْاِسْلَامِ دِيْنَا – وَبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلَا
বাংলা উচ্চারণঃ ওয়া আনা আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু, রাদিতু বিল্লাহি রাব্বান, ওয়া বিল ইসলামি দিনান, ওয়া বিমুহাম্মাদিন রাসুলান’।
আযান শেষ হওয়ার পর যে দোয়াটি পড়তে হবে যে দোয়াটি নিম্নে দেয়া হলো-
আযানের জবাব সম্পর্কিত হাদিস
ইতিমধ্যে আমরা জেনে গেছি আজানের জবাব দেওয়ার ফলে আমাদের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা পুরস্কার হিসেবে জান্নাত রেখেছেন এবং আযানের জবাব দেওয়া উত্তম কাজ। আর এই আযানের জবাব দেওয়া সম্পর্কিত অনেক হাদীস রয়েছে। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো-
হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন- রাসুল (সাঃ) বলেছেন, আজান এবং ইকামতের মধ্যে যে দোয়া করা হয়, সে দোয়া ফেরত দেয়া হয় না। ( মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ)।
আরো দেখুনঃ শরিয়ত অর্থ কি? শরিয়তের গুরুত্ব।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন- এক ব্যক্তি বলল যে, হে আল্লাহর রাসূল- আমাদের চেয়ে মজুমদের মর্যাদা অনেক বেশি হয়ে যাবে। তখন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- তুমিও তাই বল, যা মুয়াজ্জিন বলে। তারপর আজান শেষ হলে মহান আল্লাহর কাছে চাও। তখন যা চাইবে, তাই তোমাকে দেয়া হবে। (আবু দাউদ, মেশকাত)।
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুল সাঃ বলেছেন- তোমাদের কেউ যদি মোয়াজ্জিনের-
“ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার” এর জবাবে “ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার” বলে।
“ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ” এর জবাবে “ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ” বলে।
“ হাইয়া আলাস সালাহ” এর জবাবে “ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বলে।
“ হাইয়া আলাল ফালা ” এর জবাবে “ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বলে।
“ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার” এর জবাবে “ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার” বলে।
“ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর জবাবে “ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলে।
তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। ( আবু দাউদ মুসলিম)
সুতরাং আযানের জবাব দেওয়ার ফলে প্রাপ্তি ও সর্বোত্তম জান্নাত পাওয়া যায়।
১. একসাথে একাধিক মসজিদে আজান শুনলে কোন মসজিদের আজান উত্তর দিব?
উত্তর: একসাথে একাধিক মসজিদে আজান শুনতে পেলে আপনারা যে মসজিদের আজান সুস্পষ্টভাবে শুনবেন এবং প্রথম বেঞ্চে মসজিদের আজানের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবেন। অথবা এলাকা বা মহল্লার মসজিদের আজানের উত্তর দিতে পারবেন।
২. ওযু ছাড়া আযান দেয়া যাবে?
উত্তরঃ আযানের অন্যতম একটি সুন্নত হচ্ছে পবিত্রতার সাথে আজান দেওয়া এবং সঠিক নিয়ম অনুসারে অজু করা। তবে যদি কেউ ওযু ছাড়া আযান দেয় তাহলে আজান হয়ে যাবে এতে করে কোন প্রকার গুনা হবে না কিন্তু যদি গোসল ফরজ অবস্থায় আযান দেয়া হয় তাহলে সেটি হারাম হিসেবে গণ্য হবে।
৩. আযানের পর হাত তুলে দোয়া করতে হয়?
উত্তরঃ আযানের পর হাত তুলে দোয়া করা কেউ বলে মুস্তাহাব আবার কেউ বলে বিদাত তবে আযানের দোয়ার জন্য হাত তুলতে হবে এমন কোন শর্ত নয়।
৪. কোরআন তেলাওয়াত করা কালীন সময়ে আযান দিলে কি করা উচিত?
উত্তরঃ কোরআন তেলাওয়াত করা কালীন সময়ে যদি আযান দেয়া হয় অর্থাৎ আজান শুনতে পারেন সেক্ষেত্রে আপনাকে আযানের জবাব দেয়া উচিত এবং কোরআন তেলোয়াত বন্ধ করে রাখা উচিত। কারণ কোরআন তেলাওয়াত করা হচ্ছে এবং আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।
৫. আযানের জবাব দেয়া কি?
উত্তরঃ আযানের জবাব দেয়া হচ্ছে ওয়াজিব।
উপসংহার: আশা করছি আপনারা আমাদের এই আর্টিকেল থেকে আজানের জবাব সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছেন। আপনারা যারা এখন পর্যন্ত আযান শুনে আন্তরিকতার সাথে আজানের জবাব দিচ্ছেন না তারা আশা করি এখন থেকে আজানের জবাব দিবেন এবং নিজেদের জন্য দোয়া প্রার্থনা করবেন।
আযানের জবাব দেয়ার ফলে আপনাদের জন্য রয়েছে মহান আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে জান্নাত। সুতরাং আপনারা যদি এই আমলটি নিয়মিত পালন করেন তাহলে আপনাদের জীবনে উপকার বয়ে আনবে এর পাশাপাশি সওয়াব যুক্ত হবে। আপনারা যদি আমাদের কাছ থেকে আজান সম্পর্কিত বা ইসলাম সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্য জানতে চান তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে। জাযাকাল্লাহ।