ইবাদত কাকে বলে?
ইবাদত কাকে বলে? | ইবাদত কত প্রকার
ইবাদত কাকে বলে? এবং ইবাদত কত প্রকার হতে পারে? তা আমরা অনেকেই জানি আবার অনেকেই এখন পর্যন্ত ইবাদত সম্পর্কে অবগত নই। তাই আজ আমরা আপনাদের জন্য ইবাদাত সম্পর্কিত একটি আর্টিকেল নিয়ে হাজির হয়েছি। আপনারা এখান থেকে ইবাদত সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং সেই সাথে ইসলামের ইবাদাত কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এ সম্পর্কে আপনারা জানতে পারবেন।
আরো দেখুন: শরিয়ত অর্থ কি? শরিয়তের গুরুত্ব.
ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের জন্য অন্যতম। কারণ এই ইবাদাত এবং আমলের মাধ্যমে একজন মুসলমান তার ইসলাম ধর্মকে পালন করতে পারে এবং সেইসাথে মহান আল্লাহতালা ও রাসুল (সাঃ) এর আদেশ পালন করতে পারে। তাই আপনারা যারা ইবাদত কাকে বলে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত জানেননা তারা আমাদের এই আর্টিকেল থেকে অনেক কিছু জানতে পারবেন আশা করছি। তাহলে চলুন শুরু করি আমাদের আজকের মূল আলোচনায় ইবাদত কাকে বলে।
ইবাদত শব্দের অর্থ কি?
ইবাদাত হচ্ছে আরবি শব্দ। ইবাদত শব্দের অর্থ আনুগত্য করা, দাসত্ব করা, বিনয়ী হওয়া, মেনে চলা, অনুগত হওয়া, গোলামী করা ( আল্লাহতালা). আরে বাদ শব্দটি এসেছে আবাদা শব্দের ক্রিয়ামূল হতে। যদি ইসলামিক পরিভাষা ইবাদত সম্পর্কে জানতে চায় তাহলে মহান আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদ কে মান্য করে তার আদেশ মেনে চলার নামই হচ্ছে ইবাদত।
সুতরাং মহান আল্লাহতালা হচ্ছেন আমাদের মানব জাতির মাবুদ এবং আমরা হলাম তার গোলাম বা অনুগামী। মানব জাতির মহান আল্লাহতালার আদেশ মেনে চলেন এবং তার আদেশ অনুসারে বিনয়ের সাথে তাঁর দাসত্ব করে যান।
ইবাদত কাকে বলে?
ইবাদত কাকে বলে? আমরা ইতিমধ্যে ইবাদত শব্দের অর্থ জেনে গিয়েছি, তাই এখন আমরা জানবো ইবাদত কাকে বলে বা ইবাদত বলতে কি বুঝায়।
ইবাদত হচ্ছে মহান আল্লাহ তাআলার আদেশ অনুসারে তার সকল আদেশ- উপদেশ মেনে চলা এবং যেসকল কাজ করলে গুনাহ হবে সে সকল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
ইবাদত সম্পর্কে ইসলামিক বিভিন্ন স্কলারগণ তাদের মত করে বিভিন্ন মতবাদ দিয়েছেন। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (র.) ইবাদত সম্পর্কে বলেছেন যে, “ ইবাদাত হচ্ছে সকল রাসূলগণের মাধ্যমে আল্লাহর বিধান দিয়েছেন তা সঠিকভাবে মেনে চলা এবং আল্লাহ ভালবাসেন অপছন্দ করেন তার সকল কাজ প্রকাশ্যে কাজ এবং কথা বলা সেই সাথে ইসলামের গোপনীয়তা রক্ষা করা”।
আল্লামা ইবনে কাসীর (র.) ইবাদত সম্পর্কে বলেছেন- “ ইবাদত শব্দের অর্থ হলো নমনীয়তা। আর পরিপূর্ণ ভিত্তি, বিনয় এবং ভালোবাসার সমষ্টিকে ইবাদত বলা হয়”।
আবুল আ’লা মওদুদী (র.) ইবাদত সম্পর্কে মত দিয়েছেন যে- “ ইবাদতের মূল কথা হচ্ছে কোন সত্তাকেমাথা পেতে মেনে নেয়া এবং তার মাঝে নিজেকে স্বাধীন ভাবে বিলিয়ে দেয়ার। অর্থাৎ মহান আল্লাহতালার আনুগত্য কে বরণ করে নেয়া”।
ইমাম কুরতুবী (র.) ইবাদত সম্পর্কে বলেছেন যে, ইবাদত হল মহান আল্লাহতালার একত্ববাদের ঘোষণা দেয়া এবং তার দিনের বিধান সকল মুসলমানদের অনুসরণ করা। সুতরাং ইবাদতের মূল বিষয় হচ্ছে এবং নিজেকে প্রকাশ করা মহান আল্লাহতালার কাছে।
ইতিমধ্যেই আমরা ইবাদত সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষীদের জেনেছি। তবে সবচেয়ে সহজ এবং সঠিকভাবে বলতে গেলে, ইবাদাত হচ্ছে একত্ববাদ বা তাওহীদ। সুতরাং মহান আল্লাহতালার একত্ববাদকে পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করে এবং সে বিশ্বাস অনুযায়ী নিজেদের কর্মকাণ্ডে মহান আল্লাহতালার আদেশ মেনে চলার নাম কি বলে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু আমরা যদি ইবাদত সম্পর্কে জানতে চাই আরো ভালোভাবে তাহলে আমাদের অবশ্যই তাওহীদ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
ইবাদত কত প্রকার
ইবাদাত হচ্ছে প্রধানত 2 প্রকার. যেমন:
- হাক্কুল্লাহ ইবাদত ( আল্লাহর হক)
- হাক্কুল ইবাদত ( বান্দার হক)
হাক্কুল্লাহ ইবাদাত হচ্ছে মহান আল্লাহতালার হক এবং হাক্কুল ইবাদত হচ্ছে বান্দার হক। আর সম্পর্কে মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেছেন যে, “ আমি গাধার উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পেছনে সওয়ার ছিলাম। ওই সময় হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মুআয!তুমি কি জানো বান্দাদের উপর আল্লাহর হক কি এবং আল্লাহর ওপর বান্দার হক কি? সেই সময় আমি বললাম, মহান আল্লাহ এবং তার রাসুল অধিক জানেন। তখন তিনি বললেন- বান্দার ওপর আল্লাহর হক এই যে সে তার ইবাদাত করবে এবং এতে তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরীক করবে না।
আর অন্যদিকে আল্লাহর উপর বান্দার হক এই যে ব্যক্তি তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরীক করিবে না তিনি তাহাকে আজাব দিবেন না। এরপর আমি বললাম হে রাসুল! আমি কি লোকদেরকে এ সুসংবাদ দিতে পারি? তিনি বললেন তাদেরকে সুসংবাদ দিও না কেননা, তারা এর ওপর ভরসা করে বসবে। ( বোখারীঃ ২৮৫৬)”।
আরো দেখুন: আকাইদ বলতে কি বুঝায়.
হাক্কুল্লাহ ইবাদত:
হাক্কুল্লাহ ইবাদত ( আল্লাহর হক) হচ্ছে- মহান আল্লাহ তায়ালার দেওয়া আদেশ নির্দেশ মেনে চলা এবং তার সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক না করা। মহান আল্লাহ তাআলার ইবাদত সঠিকভাবে পালন করা। মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ করেছেন যে, “ তোমরা আল্লাহর তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরীক করো না আর সদ্ব্যবহার পিতা-মাতার সঙ্গে, নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে, এতিম, মিসকিন, নিকটাত্মীয় প্রতিবেশী, প্রিয় প্রতিবেশী, মুসাফির, তোমাদের পাশবর্তী সাথী এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাসীদের সঙ্গে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহতালা পছন্দ করেন না তাদের যারা দাম্ভিক, অহংকারী‘। ( সূরা নিসাঃ ৩৬)।
হাক্কুল ইবাদত:
হাক্কুল ইবাদত ( বান্দার হক) হচ্ছে- সকল জাতি, ধর্ম, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে ভালোবাসা এবং সকলের সাথে সদ্ব্যবহার করা, সকলের বিপদে সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া এবং কেউ অসুস্থ হলে তাদেরকে সেবা করা। তাছাড়া একজন মুসলিম অন্য আরেকজন মুসলিমের সাথে দেখা হওয়া মাত্রই তাদের হক আদায়ের জন্য প্রথমে সালাম এর বিনিময় হয় এবং তাদের জীবন সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হাক্কুল ইবাদ এর অন্তর্ভুক্ত।
ইবাদতের গুরুত্ব
মহান আল্লাহতালা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার ইবাদাত করার উদ্দেশ্যে। আরে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “ আমি সৃষ্টি করেছি জ্বীন ও মানুষকে এজন্য যে তারা আমারই ইবাদত করবে”। (সূরা যারিয়াতঃ আয়াত নং- ৫৬)।
আমরা এই আয়াত সম্পর্কে বুঝতে পেরেছি যে আমাদের জীবনে ইবাদতের গুরুত্ব কতটা রয়েছে। তাই মহান আল্লাহতালার নির্দেশ অনুসারে আমাদের সকল মুসলমানদের উচিত সঠিকভাবে ইবাদত পালন করা এবং সকলে একত্ববাদ হে মহান আল্লাহতালার আদেশ মান্য করা। সেইসাথে কোন অবস্থাতেই আল্লাহতালার সাথে অন্য কাউকে শরীক না করা। যদি কেউ মহান আল্লাহতালার কাছে অন্য কাউকে শরিক করা হয় তাহলে এটি শিরক পর্যায়ে চলে যায়। আর এটি হচ্ছে অত্যন্ত ঘৃণিত এবং কবিরা গুনাহ।
উল্লেখ্য যে মানুষদের কিছু অংশ ছাড়া অন্য সকল বাকি অংশ সব আল্লাহর সৃষ্টির আল্লাহর ইবাদত করে থাকে এবং সকলেই মুসলিম। সুতরাং সকল মানব জাতি ও জিন জাতি আল্লাহর একত্ববাদ কে মেনে চলে।
তাছাড়া মহান আল্লাহতালা আরো বলেছেন, “ আমি শুধু তোমারই ইবাদত করি এবং শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।” ( সূরা ফাতিহাঃ আয়াত নংঃ ৪)। আর এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যে শুধু তারই এবাদত করতে হবে অর্থাৎ একত্ববাদকে মেনে চলতে হবে এবং সেইসাথে তিনি আরো শিক্ষা দিয়েছেন যে শুধুমাত্র তাঁরই নিকট চাইতে হবে।
সুতরাং আমরা এ থেকে বুঝতে পারি যে আমরা আমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনতে হবে এবং তার আদেশ উপদেশ নিষেধ সকল কিছু মেনে চলতে হবে। আর এর মাধ্যমে আমরা ইবাদতের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারি।
ইবাদাতের ধাপ সমূহ
আমরা এখন আপনাদের মাঝে ইবাদাতের ধাপ সমূহ সম্পর্কে আলোচনা করব। আপনারা আমাদের এই ইবাদাতের ধাপ সম্পর্ক জেনে সম্পর্কে আরো পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। ইবাদাতের ধাপ দুটি। যথাঃ ঈমান এবং ইসলাম। ইমান শব্দের অর্থ হচ্ছে অন্তরে বিশ্বাস করা এবং ইসলাম শব্দের অর্থ হচ্ছে শান্তি।
ব্যাপক অর্থে ঈমান হচ্ছে তাদের মধ্যে যা কিছু রয়েছে তার সকল বিষয়বস্তুকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা এবং সেগুলো কে মহান আল্লাহতালার নির্দেশে পালন করা হচ্ছে ইসলাম। কথা এবং কাজের সমন্বয় ইসলাম।
সুতরাং সুতরাং তাওহীদের সাথে সকল ইসলামে কর্মকাণ্ড বিশ্বাস করার মধ্য দিয়ে আল্লাহর সকল একত্ববাদকে মেনে চলা হচ্ছে ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য। মুখে উচ্চারণ করে মহান আল্লাহতালা কে স্বীকৃতি দিয়ে কিন্তু অন্তরে সেটি বিশ্বাস না করে ইবাদতে ধ্বংস হবে না। ঈমান হচ্ছে সেটি যে কাজ অন্তরে বিশ্বাস করে এবং সে কাজ বাহ্যিকভাবে তা পালন করা হয়।
অতএব তাদের যাবতীয় বিষয়বস্তুকে অন্তরে বিশ্বাস করা এবং মুখে স্বীকৃতি দেয়ার সেই সাথে কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করার নাম হচ্ছে ইবাদাত।
উপসংহারঃ আশা করছি আপনারা যারা ইবাদত সম্পর্কে জানতেন না তারা আমাদের এই আর্টিকেল থেকে ইবাদত কাকে বলে এবং সেইসাথে ইবাদাতের আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলেই ঈমানদার হওয়া যায় না ঈমানদার হতে হলে অবশ্যই মহান আল্লাহতালার আদেশ নির্দেশ পালন করতে হবে এবং তার সকল একত্ববাদকে মেনে চলতে হবে সেইসাথে মহান আল্লাহতালা কে অন্য কারো সাথে শরিক করা যাবে না। আপনারা যদি ইসলামিক অন্যান্য বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। জাযাকাল্লাহ।