উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের প্রধান বৈশিষ্ট্য
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের প্রধান বৈশিষ্ট্য
উইন্ডোজ একটি অপারেটিং সিস্টেম। ১৯৮৫ সালের মাইক্রোসফট কোম্পানি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম চালু করেছেন। ঠিক তখন থেকে বর্তমান পর্যন্ত উইন্ডোজ এর জনপ্রিয়তা সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এর ব্যবহারকারী সর্বাধিক।
কিন্তু আমরা অনেকেই উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের প্রধান বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবগত নই। উইন্ডোজ ব্যবহারকারী রয়েছে যারা উইন্ডোজ ব্যবহার করছেন ঠিক, কিন্তু উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। আজকে আপনাদের এ সম্পর্কে জানা অজানা সকল বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করব। চলুন তাহলে শুরু করি আজকের এই প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।
উইন্ডোজ কি?
আমরা সকলেই জানি কম্পিউটার সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম ছাড়া একদম অচল। আর এই কম্পিউটার সচল করার জন্য সবার আগে আমরা যে অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করি সেটি হচ্ছে উইন্ডোজ। যারা কম্পিউটারের হার্ডওয়ার গুলো পরিচালনা করে থাকে।
উইন্ডোস হচ্ছে একটি প্রোগ্রাম। যা মাইক্রোসফট কর্পোরেশন কর্তৃক একটি শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেম। আর এই উইন্ডোজ এর মাধ্যমে অন্যান্য অনেক অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার পরিচালনা করা হয়ে থাকে। ১৯৮৫ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত উইন্ডোজ প্রতিনিয়ত আপডেট হয়ে আসছে। সর্বপ্রথম মাইক্রোসফট কর্তৃক উইন্ডোজ বাজারজাত করেন সেটি হচ্ছে উইন্ডোজ ১.০ ভার্শন। এবং বর্তমানে সর্বশেষ মাইক্রোসফট কর্তৃক উইন্ডোজ বাজারজাত হয় উইন্ডোজ ১১ ভার্শন।
উইন্ডোজের ধারাবাহিকতা
উইন্ডোজ তৈরি হওয়ার সেই প্রথম দিন থেকে বর্তমান পর্যন্ত উইন্ডোজের বিভিন্ন ভার্শন ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। তবে নতুন ভার্সনগুলোতে নতুন নতুন সিস্টেম বা সুবিধা যোগ করাতে এগুলো ব্যবহার করে অধিক সুবিধা পাওয়া যায় বলে নতুন ভার্সনের প্রতি সকলের এত উদ্বেগ থাকে। তাই আজ আমরা আপনাদের মাঝে উইন্ডোজের কিছু জনপ্রিয় ভার্সন ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করছি।
উইন্ডোজ 1.0
উইন্ডোজ 1.0 হচ্ছে একটি ১৬ বিট এর অপারেটিং সিস্টেম। আর এর জন্য আপনার প্রয়োজন ১ এমবি কম মেমোরি। সেই সময়ে এটি সামান্য জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এই উইন্ডোজে ড্রপডাউন মেনু, ডায়ালগ বক্স, স্ক্রোল বার এবং আইকন গুলোর মত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কিছু সিস্টেম সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। আর ওএস এর এই সংস্করণে কয়েকটি প্রোগ্রাম যোগ করা হয়েছিল যেমন নোটপ্যাড, এসএমএডি, ক্যালকুলেটর ইত্যাদি।
আর এই উইন্ডোজ পরিচালনা জন্য সর্বনিম্ন প্রয়োজন ছিল ২৫৬ কেবি এবং ডাবল ফ্লপি ডিস্ক, ড্রাইভ এবং একটি গ্রাফিক্স এডাপ্টার কার্ড।
উইন্ডোজ 2.0
উইন্ডোজ 2.0 ১৯৮৭ সালে সংস্করণ করা হয়। আর এটি ব্যবহার করার জন্য আপনার কম্পিউটারটি ১৬ বিটের হলে হবে। এর মেমোরি ক্ষমতা ৩৮৬। এটি সংস্করণ করার মূল কারণ ছিল গতি এবং গ্রাফিক্স সমর্থনকে কেন্দ্র করে। এটি ব্যবহার করার ফলে আরো নতুন কিছু সিস্টেম যোগ করা হয়। যেখানে কীবোর্ড শর্টকাট, লেয়াউট, নিয়ন্ত্রণ স্কিন ইত্যাদি। তাছাড়া এটি সংস্করণে আত্মপ্রকাশ করেছিল কন্ট্রোল প্যানেলের জন্য।
উইন্ডোজ 3.0
উইন্ডোজ 3.0 ২৯ শে মে ১৯৯০ এটি সংস্করণ করা হয়। সংস্করণ করার পরবর্তী সময়ে এটি খুব শীঘ্রই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কারণ এতে উন্নত মানের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা হয়েছিল। সাথে উন্নত মানের গ্রাফিক্স যোগ করা হয়েছিল। এছাড়াও এতে প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফাইল ম্যানেজার এবং প্রিন্ট ম্যানেজার এর মত সিস্টেম যোগ করা হয়েছিল।
উইন্ডোজ 3.1
উইন্ডোজ 3.1 সংস্করণ করার মূল কারণ ছিল নেটিভ নেটওয়ার্কিং সমর্থন করা। আর এই উইন্ডোজ সংস্করণ করার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো কম্পিউটারে ক্লায়েন্ট/ সার্ভার কম্পিউটার একটি নতুন অংশ যুক্ত হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে এই সংস্করণটি ১০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়। ইতিহাসের নতুন একটি মাত্রা এনে দেয়। এছাড়াও এই অপারেটিং সিস্টেমে নতুন অনেক সিস্টেম যোগ করা হয় বলে এর সাফল্য দ্রুতগতিতে এগিয়ে যায়।
উইন্ডোজ 10
২০১৫ সালে ২৯ শে জুলাই মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১০ সংস্করন করেন। এটি ছিল সেই সময়ে সর্বশেষ সংস্করণ। আর এই উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে অনেকগুলি নতুন বৈশিষ্ট্য যুক্ত করেন। সেই সিস্টেম গুলোর মধ্যে অন্যতম অ্যাপ্লিকেশানগুলি সমর্থন, অ্যাপ্লিকেশানগুলি সম্প্রসারণ, অরিয়েন্টেড ইন্টারফেস এবং স্পর্শ ভিত্তিক ইন্টারফেস ট্রানজিট সমূহ যুক্ত করেন।
এই অপারেটিং সিস্টেমটি আপনার 32-bit কম্পিউটার বা 64-bit কম্পিউটারে ব্যাবহার উপযোগী। এটি ইন্সটল করার জন্য আপনার ন্যূনতম 4gb র্যামের প্রয়োজন। নির্দেশনাগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করতে পারলে এটি ইন্সটল করা অধিকতর সহজ।
মাইক্রোসফট উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এবং একই সাথে সামঞ্জস্য রেখে ডিজাইন করেছে। এছাড়াও এটি এন্টিভাইরাস সিস্টেম এবং multi-factor সিস্টেমগুলি থেকে আপনার উইন্ডোজ কে সুরক্ষিত রাখবে। বর্তমানে উইন্ডোজ ১০ এর ব্যবহারকারী অধিক বেশি কারণ এতে পূর্ববর্তী ইন্টারনেট এক্সপ্লোরের ওয়েব ব্রাউজার এর চেয়ে দ্রুত কাজ করে।
উইন্ডোজ 10 সংস্করণ করার আগে আরো কিছু উইন্ডোজ সংস্করণ করা হয়। সেগুলো যুগের সাথে তাল মিলিয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে উইন্ডোজ 7 বর্তমানে অনেক ব্যবহারকারী এখনো ব্যবহার করছেন। আর সেই উইন্ডোজ গুলো হচ্ছে- উইন্ডোজ NT, উইন্ডোজ 95, উইন্ডোজ 98, উইন্ডোজ মিলেনিয়াম সংস্করণ (উইন্ডোজ মি), উইন্ডোজ 2000, উইন্ডোজ XP, উইন্ডোজ VISTA, উইন্ডোজ 7 এবং উইন্ডোজ 8।
তবে 2020 সালে উইন্ডোজ 11 সংস্করণ করা হলেও বর্তমানে এখন পর্যন্ত এর জনপ্রিয়তা অধিকতর হয়নি। তবে আশা করা যায় ভবিষ্যতে এর ব্যবহারকারী বৃদ্ধি পাওয়ার মধ্য দিয়ে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে।
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের প্রধান বৈশিষ্ট্য
বর্তমানে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ছাড়াও অনেকগুলি নতুন অপারেটিং সিস্টেম বাজারে এসেছে। আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম অধিক ব্যবহার হলেও উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জনপ্রিয়তা বিশ্বের সর্বাধিক রয়েছে।
উইন্ডোজ শুধুমাত্র জনপ্রিয়তা অর্জন করে সীমাবদ্ধ থাকে নি, উইন্ডোজ ব্যবহারকারীরা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কারণ এর ব্যবহার এতটাই সহজে যে কোন ব্যবহারকারী প্রথমবার ব্যবহার করতে পারবে কোন ঝামেলা ছাড়াই। উইন্ডোজ ব্যবহার করা অধিক সহজ এবং সার্ভিস অনেক ভালো তাই অফিস-আদালত স্কুল-কলেজ সহজে কোন পেশার মানুষ এটি ব্যবহার করে থাকে। তবে যারা অপারেটিং সিস্টেমে প্রধানত বিশেষজ্ঞ অপারেটিং সিস্টেম এর প্রতি সম্পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে শুধুমাত্র তারাই লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে থাকে।
সুতরাং এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি ব্যবহার করা অধিকতর সহজ, এবং এটি ব্যবহার করে সহজেই যেকোন সফটওয়্যার ইন্সটল করা যায় এবং কম্পিউটারের যেকোন কাজ সহজে সম্পাদন করা যায়।
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের প্রশ্ন এবং উত্তর
১. অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করা সহজ?
উত্তরঃ উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করা সহজ। শুধুমাত্র ইন্সটল করার পদ্ধতি গুলো সঠিক ভাবে অনুসরণ করলেই খুব সহজেই আপনারা নিজেরাই উইন্ডোজ ইন্সটল করতে পারবেন।
২. সর্বশেষ উইন্ডোজ আপডেট ভার্সন কোনটি?
উত্তরঃ সর্বশেষ আপডেট ভার্সন হচ্ছে উইন্ডোজ ১১।
৩. উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমটি বিনা মূল্যে কোথায় পাবো?
উত্তরঃ উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেম আপনারা বিনামূল্যে এই microsoft.com ওয়েব সাইটে প্রবেশ করে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
৪. উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম আপডেট দিতে হয় কেন?
উত্তরঃ উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম আপডেট দেওয়ার কারণ হচ্ছে মাইক্রোসফট কোম্পানি প্রতিনিয়ত উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে নতুন কিছু সংযুক্ত করে। আর এই নতুন কিছু পাওয়ার জন্য বা এই নতুন কিছু ব্যবহারের সুবিধা নেয়ার জন্য আমাদের উইন্ডোজ আপডেট দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
৫. উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারে সেটাপ করার জন্য কোন টুলস ব্যবহার করতে হয়?
উত্তরঃ উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারে সেটআপ বা ইন্সটল করার জন্য টুইস বা হিসেবে পেনড্রাইভ, সিডি ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনারা নিজেরাই মাইক্রোসফট ওয়েবসাইট থেকে পেনড্রাইভে উইন্ডোজ ডাউনলোড করে নিতে পারেন। আর যদি আপনারা সিডি ব্যবহার করেন তাহলে আপনার উইন্ডোজের যে ভার্সনটি ইনস্টল করতে চান সেটির সিডি বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।
উপসংহার: যেহেতু উইন্ডোজ এর জনপ্রিয়তা এবং ব্যবহারকারী অধিক পরিমাণে রয়েছে সেহেতু নিঃসন্দেহে আপনারা উইন্ডোজ ব্যবহার করতে পারেন। আশা করি আপনারা যখন উইন্ডোজ ব্যবহার করবেন তখন বড় কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। কারণ উইন্ডোজ ব্যবহার করা অনেক সহজ। শুধুমাত্র তাদের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের প্রধান বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জেনে নির্দেশনা অনুসারে যদি আপনারা কাজ করে যান তাহলে অবশ্যই এটি ব্যবহার করে আপনারা আরাম পাবেন। এছাড়াও আপনাদের মধ্যে যদি উইন্ডোজ সম্পর্কিত কোন তথ্য জানার থাকে তাহলে নিচের কমেন্ট সেকশনে এসে জানাতে পারেন।