বাসর রাতে বিড়াল মারা কথাটির অর্থ কি?
বাসর রাতে বিড়াল মারা কথাটির অর্থ কি? | Basor Rate Biṛal Mara Kathaṭir Artha Ki
বিয়ের প্রথম রাত বা বাসর রাত ব্যপারটি সবার কাছেই একটি অন্যরকম আগ্রহের বিষয়। দুইজন নারী পুরুষ বিয়ের পর প্রথম রাত কাটায় একে অপরের সাথে। যারা হয়তো একে অপরকে জীবনের এতগুলো বছর ধরে চিনতোও না তাদেরকে আজ থেকে একসাথে থাকতে হবে।
বাসর রাতে বিড়াল মারা কথাটির অর্থ কি বলতে বোঝানো হয় যে, বিয়ের প্রথম রাতেই এমন কিছু করা যার মাধ্যমে একে অপরকে ভয় বা সমীহ করে চলবে পরবর্তী জীবনে (বিশেষ করে এখানে স্ত্রীদেরকে বোঝানো হয়েছে)। স্বামীরা তাই বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনের পরামর্শে কিছু একটা বউকে দেখাতে চায় বা করতে চায়৷ কিন্তু অনেকেই ভাবেন যে বিড়াল মারা কথাটি দ্বারা শারিরীক সম্পর্ককে বোঝানো হয়েছে কিন্তু বিষয়টি এমন নয়। এর দ্বারা বউয়ের কাছে নিজেকে জাহির করা বা বড়ত্ব দেখানো যার দ্বারা বউ স্বামীকে সম্মান দিয়ে চলবে আজীবন!
বাসর রাত হলো নতুন জীবন শুরু হবার প্রথম দিন, তাই এই দিনে এমন এক চমক দেখাতে হবে যাতে করে স্বামীকে স্ত্রী ভয় পায় এর ফলে বাকি জীবন তার ভয়েই কাটিয়ে দেয় আর কোন কথা বলতে না পারে, এমন এক ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকেই বাসর রাতে বিড়াল মারা কথাটির অর্থ কি বলতে বোঝানো হয়েছে।
বাসর রাতে বিড়াল মারা আসলে ফার্সী একটি গল্প থেকে আবির্ভূত হয়েছে। যেই গল্পের মূল বিষয়বস্তু ছিল, এক লোক বিয়ের পর চিন্তা করলো যে বিয়ের প্রথম রাতেই তার বউকে তার বাগে বা বশে আনার জন্য এমন কিছু করতে হবে যা দেখে বউ সারা জীবন একদম তার সামনে টুঁ শব্দটি করবে না। তাই সে ঐ রাতে খাটের নিচে একটি বিড়াল আর একটি তলোয়ার লুকিয়ে রাখে, যা সম্পর্কে নতুন বৌ কিছুই জানতো না।
লোকটি ঘরে ঢুকে বিছানায় উঠার পর বিড়াল তো ম্যাও ম্যাও শুরু করে এতে করে লোকটি বিড়ালকে উদ্দেশ্য করে থামতে বলে কিন্তু বিড়াল শুনে না। পরে লোকটি উঠে গিয়ে তলোয়ার নিয়ে এক ঝটকায় বিড়ালটিকে দু’টুকরো করে মেরে ফেলে। এটি দেখে তার বউ একদম ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং এরপর সারাজীবন একটি বারের জন্যও সে স্বামীর মুখের উপর কোন কথা বলেনি।
আরো দেখুন: বাসর রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কি হয়?
এই গল্পটি সত্য না মিথ্যা আমি ঠিক বলতে পারবো না, কিন্তু যেটাই হোক এই ধরণের কাজ তাও আবার নিজের বউয়ের সাথে এটি একেবারেই অনুচিত। দেখুন নারীটি আপনার স্ত্রী কোন শত্রুপক্ষের কেউ নন যে তাকে ধরাশয়ী করার জন্য আপনাকে হেন কর্মকান্ড করতে হবে যার দ্বারা সে আপনার দাসীতে পরিণত হবে।
বাসর রাতে বিড়াল মারা কথাটির অর্থ কি?
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত তা সম্পর্কে কোরআনে স্পষ্ট বলা আছে। কোরআনে আল্লাহ্ তাওয়ালা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ব্যপারে কি কি বলেছেন লক্ষ্য করুন,
-“এবং তাঁর নিদর্শনগুলির মধ্যে একটি হল যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে স্বামী-স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তাদের কাছে আরাম পেতে পার এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও করুণা স্থাপন করেছেন। এতে নিশ্চয়ই (সত্যের) প্রমাণ রয়েছে তাদের জন্য যারা গভীরভাবে চিন্তা করে।” (৩০:২১)।
“এবং তিনি তোমাদের মধ্যে প্রেম ও করুণা স্থাপন করেছেন।” “তারা (তোমাদের স্ত্রীরা) তোমাদের জন্য পোশাক (ঢাকনা) এবং তোমরাও তাদের জন্য পোশাক। (২:১৮৭)। – “আল্লাহ একে অপরের উপর যা দিয়েছেন এবং তারা তাদের সম্পদ থেকে যা ব্যয় করে তার [অধিকারে] পুরুষরা নারীদের দায়িত্বে রয়েছে…” (৪:৩৪)
এই আয়াতগুলো এটাই নির্দেশ করে যে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের শত্রু নয় পরিপূরক একজন ছাড়া অন্যজন সব দিক থেকেই কষ্টে থাকবেন। কোরআনিক আরেকটি অসাধারণ আয়াত লক্ষ্য করুন যেখানে বলা হয়েছে যে, “হে আমাদের প্রভু! আমাদের স্ত্রীদের এবং আমাদের বংশধরদের (সন্তান) থেকে চোখের শীতলতা দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা করুন।” (২৫:৭৪)
কোরআনের এই আয়াত কিন্তু এই দিকেই ইঙ্গিত করছে যে একজন নারী একজন পুরুষের জন্য চোখের ও অন্তরের শীতলতাদানকারী আর একজন নারীর মাধ্যমেই তার বংশ রক্ষা পাবে। আর সেই নারীকেই কিনা এত ভয়-ভীতি দেখাতে হবে তাও আবার বিয়ের প্রথম রাতেই?! যার কাছ থেকে আপনি চোখের শীতলতা পাবেন তার ভিতরে যদি আপনি ভালোবাসার বদলে ভয় সৃষ্টি করে দেন তাহলে তো চোখে শীতলতা না ভয় আর আতঙ্ক দেখতে পাবেন। তাই এবার আপনিই ভেবে দেখুন কি করবেন বা আপনার কি করা উচিত! তাই ভয়-ভীতি নয় আপনার স্ত্রীকে ভালোবাসুন, প্রথম রাত থেকেই তার কাছে নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করুন যেন সে আপনাকে ভালোবাসতে পারে।
আর বাসর রাতে বিড়াল মারা অর্থ বলতে যদি স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ককে বোঝান তাহলে বলবো ইনি আপনারই স্ত্রী, কোথাও চলে যাচ্ছেন না, ইনাকে আপনার জন্যই নির্ধারণ করা হয়েছে, তাই ধৈৰ্য্যশীল থাকুন। মেয়েরা এমনিতেই আতঙ্কিত থাকে এর উপর আবার একজন অপরিচিত লোকের সাথে একসাথে থাকতে হবে সেখানে যদি আপনি শুরুতেই হম্বিতম্বি শুরু করেন তাহলে তো সে আরো ভীত হয়ে পড়বে। তাই তাকে বলুন সে যেন ভয় না পায় বা স্বাভাবিকভাবেই থাকতে পারে। এমন কিছুই করুন যাতে করে সে আপনার আচরণে সন্তুষ্ট হতে পারে।
আর ধরাশয়ী যদি করতেই চান ভালোবাসা দিয়ে করুন, ভালোবাসা পেলে মানুষ এমনিতেই আপনার কথামতো চলবে। যেটা ভয় নিয়ে করতো সেটা ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা নিয়ে করবে।
সমাপ্তি: বাসর রাতে বিড়াল মারা কথাটির অর্থ কি আশাকরি এখন পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছেন। বিড়াল মারা কথাটি যেভাবেই আসুক না কেন স্বামী-স্ত্রী একে অপরের শত্রু নয় এই কথাটি সবসময় মাথায় রাখবেন, একে অপরের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের মাধ্যমেই একটি সুন্দর সংসারের সূচনা হবে।