আরবি মাসের নাম | আরবি বার মাসের নাম
আরবি মাসের নাম | আরবি বার মাসের নাম | Arabic 12 Month Names
আরবি মাসের নাম ইসলামের প্রথম বিজয় মক্কা থেকে গণনা করা হয়েছে এবং এর প্রচলন দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) শুরু করেন। আরবি বার মাসের নাম মূলত চন্দ্র গণনার মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। ইসলাম যে স্বতন্ত্র এ ইঙ্গিত আমরা আরবি বার মাসের নামের ভেতর পেয়ে থাকি। ইসলামিক যেকোনো শাসনকার্য এবং যেকোনো কাজ ও অনুষ্ঠান এ মাসের বিভিন্ন তারিখে করা হয়ে থাকে।
এ আরবি মাসগুলো সাধারণত ৩০ বা ২৯ দিন হয়ে থাকে। তাই আরবি মাসগুলোর দিন ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিন হয়ে থাকে। আরবি মাসের দিনগুলো কম হওয়ার কারণে এর সৌর বছর থেকে এ মাসের দিনগুলো ৩৬৫.২৫ দিন পিছিয়ে থাকে।
চলুন আরবি মাসের নাম অর্থসহ জেনে নেই- মুহররম, সফর, রবিউল আউয়াল, রবিউস সানি, জমাদিউল আউয়াল, জমাদিউস সানি, রজব, শাবান, রমজান, শাওয়াল, জিলক্বদ, জিলহজ্জ।
আরো দেখুনঃ আজকের তারিখ বাংলা ইংরেজি আরবি.
আরবি মাসের নাম | আরবি বার মাসের নাম
আরবি বারোটি মাস রয়েছে এর প্রতিটি মাসেরই নাম বিশেষ কোনো ঘটনা ও বিষয়ের কারণে রাখা হয়েছে। তাই একটি মাসের নাম মাথায় আসলে মনে পড়ে যায় সেই বিষয় বা ঘটনাটি! তাই আরবি বারো মাসের নাম আরবি, বাংলাসহ তালিকা আকারে ও এগুলো কি কারণে রাখা হয়েছিল সেই বিষয়গুলো তুলে ধরেছি।
আরবি বার মাসের নামগুলো হলো-
আরবি বার মাসের নাম বাংলায় | আরবি মাসের নাম আরবিতে | আরবি বার মাসের নাম ইংরেজিতে | অর্থ |
মহররম | مُحَرَّم | Muḥarram | নিষিদ্ধ |
সফর | صَفَر | Ṣafar | অকার্যকর |
রবিউল আউয়াল | رَبِيْعُ الأَوّل | Rabī‘ al-awwal | প্রথম বসন্ত |
রবিউল সানি | رَبِيْعُ الثَّانِي | Rabī‘ ath-thānī | দ্বিতীয় বসন্ত |
জমাদিউল আউয়াল | جَمَادِي الأَوّل | Jumādá al-ūlá | শুকনো জমির প্রথমটি |
জমাদিউল সানি | جَمَادِي الثَّانِي | Jumādá al-ākhirah | শুকনো জমির শেষ |
রজব | رَجَب | Rajab | সম্মান |
শাবান | رَمَضَان | Sha‘bān | বিক্ষিপ্ত |
রমজান | رَمَضَان | Ramaḍān | জ্বলন্ত তাপ |
শাওয়াল | شَوَّال | Shawwāl | উন্থাপিত |
জিলকদ | ذُوالْقَعْدَة | Dhū al-Qa‘dah | সত্য/বসা |
জিলহজ্জ্ব | ذُوالْحِجَّة | Dhū al-Ḥijjah | তীর্থযাত্রার এক |
মহররম-
“মহররম” শব্দটি আরবি শব্দ হরম শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ হারাম বা নিষিদ্ধ। মহরম একটি পবিত্র মাস। এই মাসকে পবিত্র বলার কারণ এই মাসে সব ধরনের যুদ্ধ এবং রক্তপাত নিষিদ্ধ (হারাম)। এই মহরম মাসেই রয়েছে “আশুরা” বা মাসের দশম দিন।
মহররম মাস হলো চারটি পবিত্র মাসের একটি। মহররম মাসের হযরত মুসা (সাঃ) ফেরাউনের থেকে বিজয় পায় আর সেই সম্মাননায় রোজা রাখা হয় যা পরবর্তীতে আমাদের শেষ নবী রেখেছেন।
সফর-
“সফর” শব্দটি আরবি শব্দ “সিফর”, শিস হিস এবং বাতাসের শিস। সিফর অর্থ খালি। আরবি সমাজের মানুষ যুদ্ধ বা নিজেদের খাবার সন্ধানের জন্য ঘর থেকে বের হওয়ার ফলে খালি হয়ে যেত তাই একে সফর বলে। আবার এটা বছরের বাতাসের সময় থাকার কারণে একে শিস বা বাতাসের শিস ও বলা হয়ে থাকে।
এই মাসটির নাম সফর করা হয়েছে কারণ প্রাক ইসলামী যুগে আরবদের বাড়িগুলো খালি থাকতো মরুভূমি ছেড়ে অন্য জায়গায় যেত। মরুভূমিতে বাস করার কারণে সবসময় যাযাবর জীবন যাপন করতো কয়েক মাস এখানে তো কয়েক মাস ওখানে খাবারের খোঁজে। অন্য একটি বিবরণে পাওয়া গেছে যে, তারা বাড়ি জিনিসপত্র নিয়ে এই জন্য ছেড়ে দিতে যাতে শত্রুরা তাদের বাড়ির ঘর লুট করতে না পারে।
রবিউল আউয়াল-
রবি অর্থ বসন্ত আর আউয়াল অর্থ প্রথম আর রবিউল আউয়াল অর্থ হলো প্রথম বসন্ত। চন্দ্র এর উপর এ মাস গণনা করার কারণে এ মাসে বসন্ত নাও পড়তে পারে।
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর জন্মের মাস। এই মাসে গবাদি পশু মাঠে চরানো হতো। এইজন্য সব দিক থেকে এটি একটি উৎসবের মাস। তাই এটির নাম রবিউল আউয়াল আর রাখা হয়েছে।
রবিউল সানি-
রবি অর্থ বসন্ত আর সানি অর্থ দ্বিতীয়। রবিউল সানি অর্থ দ্বিতীয় বসন্ত।যেহেতু চন্দ্ৰ গণনার মাধ্যমে এ মাস গণনা করা হয় তা তাই এ মাসের বসন্ত মাস নাও হতে পারে সৌর বছরের সাথে মিল রেখে।
জমাদিউল আউয়াল-
জমাদিউল আউয়াল, জুমাদা-আল-উলা বা জুমাদা নামেও পরিচিত৷ জমাদিউল আউয়াল এর অর্থ হলো শুষ্ক। এ সময় জমি শুষ্ক থাকে এবং কোনো বৃষ্টি না থাকার কারণে একে শুষ্ক মাসও বলা হয়ে থাকে৷
প্রাক ইসলামী যুগের ওই সময়টা সাধারণত গ্রীষ্মের সময় থাকতো। জুমাদা একটি ক্রিয়াপদের সাথে সম্পর্কিত যার অর্থ “হিমায়িত করা”। অন্য এক বিবরণে পাওয়া গেছে এর অর্থ, যে বছর জল জমে।
জমাদিউল সানি-
জমাদিউল সানি মাসে বৃষ্টি হয় না এবং জমি শুষ্ক থাকে এছাড়াও এ মাসে ঠান্ডা পড়ার কারণে পানি পযন্ত বরফে রূপ ধারণ করে।
রজব-
রজব মাসটি আরবি মাসের সপ্তম মাস। রজব মাস রজবা শব্দ থেকে উৎপত্তি যার অথ সম্মান করা। যে চার মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ তার মধ্যে রজব মাস একটি। এটি দ্বিতীয় পবিত্র মাস যেই মাসে যুদ্ধ একেবারেই নিষিদ্ধ। রজব একটি ক্রিয়াপদের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে যার অর্থ “সরানো”।
প্রাক-ইসলামী আরবরা তাদের বর্ষার মাথা সরিয়ে ফেলত এবং যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতো।
শাবান-
এ মাসকে শাবান বলার কারণ বছরের এই সময়ে আরব উপজাতিরা পানি খোজার জন্য চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তো। শাবান মাস এর মূল শব্দ থেকে এসেছে যা হলো জড়ো, সমাবেশ করা, ছড়িয়ে দেওয়া বা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়া। এ মাসে আরবরা তাদের পানি সরবারাহ করার জন্য বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ত।
শাবান একটি ক্রিয়াপদের সাথেও সম্পর্কিত হতে পারে যার অর্থ “দুটি জিনিসের মধ্যে থাকা”। অন্য বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, রজব এবং রমজানের মধ্যে মাসটি অবস্থিত বলে এটিকে এইভাবে বলা হয়েছে।
রমজান-
রমজান মাস মুসলমানদের আনন্দের মাস। এ মাসে তারা তাদের আচার-আচরণ ঠিক করার পাশাপাশি রমজানের এ দীর্ঘ মাস রোজ রেখে থাকে। এ মাসে আল-কুরআন নাজিল করা হয়েছিল।
এই মাসটির নাম রমজান কারণ এই মাসে একজন মুমিনকে আল্লাহর জন্য সারাদিন রোজা রাখতে হয়। একজন ব্যক্তির ভিতরে যে খারাপ বাসনা, হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার যে সকল পার্থিব বাসনা রয়েছে তা জ্বলেপুড়ে নষ্ট হয়ে যায় সারাদিন না খেয়ে থাকার কারণে।
আরো দেখুন: বাংলা বারো মাসের নাম.
অন্য এক জাগায় বলা হয়েছে যে, সূর্যের অত্যধিক তাপ থাকার কারণে এই মাসকে রমজান বলা হয়। রমজান হিজরী ক্যালেন্ডার এর সবচেয়ে সম্মানিত মাস। এই মাসে প্রতিটি মুসলমানকে ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখতে হবে এবং গরিব-দুস্থদেরকে দান করতে হবে।
শাওয়াল-
শাওয়াল “শালা” ক্রিয়াপদ থেকে উৎপত্তি পেয়েছে যার অর্থ উঠানো বা বহন করা। শাওয়াল মাসে আরববাসিরা এক স্থান থেকে অন্যস্থানে ভ্রমনে গিয়ে থাকত এ মাসে।
বছরের এই সময় উট বাছুর দেয় এবং তাদের লেজ বাড়ায়। এই জন্য এই মাসকে শাওয়াল মাস বলা হয়।
জিলকদ-
জিলক্বদ অর্থ বসা, বসার জায়গা, কোনো স্থান দখল করা ইত্যাদি বোঝায়। এ মাসের হজ যাত্রীরা হজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। এ মাসকে পবিত্র মাস বলা হয়ে থাকে।
বছরের এই মাসটিও একটি পবিত্র মাস। এই মাসেও সকল প্রকার যুদ্ধ নিষিদ্ধ। এই মাসে কেউ যদি কাউকে আক্রমণ করে তাহলে তার আত্মরক্ষার সুযোগ রয়েছে।
জিলহজ্জ্ব-
জিলহজ্জ্ব “জুল-হিজ্জাহ” থেকে নেওয়া হয়েছে। এ মাসের হজ যাত্রীরা হজ করে থাকে। সারা বিশ্বের মানুষ এ পবিত্র স্থানে হজ পালন করে থাকে। এটি হল আরবি মাসের শেষ মাস।
এই মাসে সারা বিশ্বের মুসলিম তীর্থযাত্রীরা কাবা দেখার জন্য মক্কায় জমায়েত হয়। এ মাসের অষ্টম নবম ও দশম তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। আরাফার ময়দানে নবম দিনে হজ্জ সম্পন্ন হয় ও দশম দিনে ঈদ-উল আযা হয় যা ত্যাগের উৎসব এবং এই উৎসব টানা তিন দিন পর্যন্ত থাকে যা দ্বাদশ দিনের সূর্যাস্তের সময় শেষ হয়।
সমাপ্ত: আরবি মাসের নাম ইসলামের যেকোনো অনুষ্ঠান যেমন: দুই ঈদ, নবীজির জন্ম, মৃত্যু, ইসলামের জয়- বিজয় এর সবকিছুই এ মাসগুলোর তারিখে হয়ে থাকে তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এ মাসগুলোর নাম মনে রাখা এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা।
আরবি মাস সম্পর্কে জানার গুরুত্ব রয়েছে অনেক প্রতিটি মুসলিম এর উচিত আরবি মাসগুলোর নামসহ এর অর্থ ও গুরুত্ব জানা। কেন এই নামকরণগুলো এইভাবে করা হয়েছে তাহলে তারা বুঝতে পারবেন। আজকের পোস্টে তাই আপনাদেরকে আরবি মাসের নাম গুলোর গুরুত্ব এবং কেনই বা এই নামকরণ করা হয়েছে তা উল্লেখ করেছি।