চন্দ্র গ্রহণ ২০২৩ বাংলাদেশ সময়
চন্দ্র গ্রহণ কি? | চন্দ্র গ্রহণ কেন হয়? | চন্দ্র গ্রহণ ২০২৩ বাংলাদেশ সময় | Lunar Eclipse 2023 Bangladesh
চন্দ্রগ্রহন, সূর্যগ্রহন সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জানি। বিজ্ঞান বইতে পড়ে আমরা সবাই জানি যে পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে সমসময় ঘুরছে, আবার একইভাবে চাঁদ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এই ঘুর্নায়মান অবস্থায় ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৪-৫ বার চাঁদ, পৃথিবী, এবং সূর্য একই সরলরেখায় চলে আসে। এই সরলরেখা বা লম্বালম্বিভাবে অবস্থানের কারণে সূর্যগ্রহণ কিংবা চন্দ্রগ্রহণ হয়ে থাকে।
চন্দ্র গ্রহণ কি?
আয়তনে চাঁদের তুলনায় পৃথিবী ৫০ ভাগ বড়। চাঁদ, পৃথিবী, এবং সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করে এবং পৃথিবী মাঝখানে থাকে তখন পৃথিবীর আয়তন বড় হলে চাঁদে সূর্যের আলো পৌছাতে পারে না। চাঁদে আলো পৌছায় না বিধায় চাঁদকে আংশিক বা পূর্ণ দেখা যায় না। আর এই অবস্থাকেই চন্দ্রগ্রহণ বলে।
চন্দ্র গ্রহণ কেন হয়?
চন্দ্র, সূর্য, পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার সময় একই অবস্থানে চলে আসলে চন্দ্রগ্রহণ এবং সূর্যগ্রহণ হয়।
পৃথিবীর ছায়া যদি চাঁদকে পুরো ঢেকে ফেলে তখন তাকে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ বলে। অন্যদিকে পৃথিবীর ছায়া যদি আংশিক ঢেকে ফেলে তখন তাকে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ বলে।
তবে ভৌগলিক অবস্থানের কারনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহনের অস্তিত্ব সমানভাবে দেখা যায় না। চন্দ্রগ্রহণ একই সময়ে বাংলাদেশে এক রকম এবং পাশের দেশ ভারতে আরেক রকম দেখায় যায়।
চন্দ্রগ্রহণ এবং সূর্যগ্রহণ একই কারণে হলেও সাধারণত সূর্যগ্রহণের তুলনায় চন্দ্রগ্রহণের সময় অনেক বেশী হয়ে থাকে। পৃথিবী চাঁদের তুলনায় ৫০ গুন বেশী বড় বলে চাঁদ ঘুরে পৃথিবীকে অতিক্রম করতে বেশী সময় লাগে। সূর্যগ্রহণ এর কয়েক মিনিট এর জন্য হলেও চন্দ্রগ্রহণের স্থায়িত্ব দুই থেকে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে।
আরো দেখুনঃ গ্রহ কি ? গ্রহ কয়টি ও কি কি?
চন্দ্র গ্রহণ কবে? | What Time Is Lunar Eclipse?
২০২৩ সালে বাংলাদেশে ৪ টি গ্রহণ দেখা যাবে। এর মধ্যে ২ টি সূর্যগ্রহণ এবং ২ টি চন্দ্রগ্রহণ। প্রথম চন্দ্রগ্রহণটি হবে ১৬ই মে আর দ্বিতীয় চন্দ্রগ্রহণ হবে নভেম্বর মাসের ৮ তারিখে।
২০২৩ সালে প্রথম সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখে, এটি হবে খন্ডগ্রাস সূর্যগ্রহণ এবং দ্বিতীয় সূর্য গ্রহণ দেখা যাবে ২৫ অক্টোবর।
চন্দ্র গ্রহণ ২০২৩ বাংলাদেশ সময়
বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী ২০২৩ সালের প্রথম চন্দ্র গ্রহণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে ১৬ ই মে। এই চন্দ্র গ্রহণ দেখা যাবে ভারত সহ দক্ষিণ পশ্চিম ইউরোপ, আফ্রিকা, দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগর, অ্যাটলান্টিক, উত্তর দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল জুড়ে। তবে নির্ধারিত সময় এখনো জানা যায়নি।
কিভাবে দেখবেন এই চন্দ্রগ্রহণ?
সূর্যগ্রহণ এর সময় অতিবেগুনী রশ্মি চোখের ক্ষতি করতে আশংকা থাকে বলে বিজ্ঞানীরা খালি চোখে সূর্যগ্রহণ না দেখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে চন্দ্রগ্রহণ দেখার ক্ষেত্রে এমন কোন বাধ্যবাধকতার কোনো নিয়ম নেই। খালি চোখেই যে কেউ চন্দ্রগ্রহণ দেখতে পারবেন। তবে টেলিস্কোপ এর সাহায্যে দেখলে গ্রহণ এর পূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
ইসলাম এর দৃষ্টিতে চন্দ্র গ্রহণ এবং করণীয়
মহানবী (সা.) বলেছেন চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ আল্লাহতালার কুদরতি নিদর্শন গুলোর একটি। তিনি সাহাবিদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন এই সময় তোমরা সবাই নামাজে দাড়িয়ে যাবে। সবাই মসজিদে জামাতের সঙ্গে সালাতুল কুসুফ (সূর্যগ্রহণের ক্ষেত্রে) ও সালাতুল খুসুফ (চন্দ্রগ্রহণের ক্ষেত্রে) নামাজ আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া নারীরা ঘরে বসে একাকী নামাজ আদায় করবে এবং জিকির, তসবিহ, দোয়া ও তাওবাহ ইস্তেগফার এ মগ্ন থাকবে।
চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে নানা প্রশ্ন
প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের কারণে জোয়ার ভাটা, চন্দ্রগ্রহণ সূর্যগ্রহণ হয়। আর এই গ্রহণ নিয়ে প্রচলিত আছে নানা কল্প কাহিনী। যেমনঃ রাহু সূর্যকে খেয়ে ফেলে কিংবা স্বর্গীয় ড্রাগন সূর্যকে গ্রাস করে নেয়ার ফলে সূর্যগ্রহণ হয়।
বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা থাকলেও এখনো সমাজে নানা মিথ প্রচলিত আছে এটা নিয়ে। পাশাপাশি আছে নানা ধরণের প্রশ্ন। যেমনঃ
1. চন্দ্র গ্রহণ এর সময় কি খাবার খাওয়া যাবে?
সমাজে প্রচলিত আছে যে গ্রহণের সময় খাবার খাওয়া যাবে না এবং আগের রান্না করা খাবার থাকলে ও তা ফেলে দিতে হবে। এই সময় খাবার খেলে কঠিন রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখাঃ গ্রহণ এর সাথে খাবার খাওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। বিজ্ঞানীদের মতে খাবার বিষাক্ত করতে পারে এমন কোন তেজস্ক্রিয় রশ্মির বিকিরণ গ্রহণের সময় হয় না
2. চন্দ্র গ্রহণ এর সময় গর্ভবতী মায়েদের নানা নিয়ম না মানলে বাচ্চা ঠোঁট কাটা হয়?
প্রচলিত আছে যে গ্রহণ এর সময় গর্ভবতী নারী কোন ধাতব বস্তু স্পর্শ করলে সন্তান ঠোঁট কাটা বা বিকলাঙ্গ হয়।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখাঃ ওষুধের পার্শপ্রতিক্রিয়া বা জেনেটিক কারণে বাচ্চা ঠোঁট কাটা হয়। এর সাথে চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ এর কোন সম্পর্ক নেই।
3. গ্রহণ এর সময় মাংস খাওয়া যাবে?
গ্রহণ এর সময় মাছ মাংস খাওয়া যাবে না, এমন কুসংস্কার প্রচলিত আছে।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখাঃ গ্রহণ চলাকালে স্বাভাবিক সময় এর মত যে কোন খাবার খেতে পারবেন। গ্রহণ এর সময় তাপমাত্রা এবং আলো কিছুটা কমে যায়। এর সাথে কোন ভাবেই সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মী বা ক্ষতিকর প্রভাব সংযুক্ত নয়।
4. চন্দ্র গ্রহণ এর পর কি গোসল করতে হয়?
গ্রহণ এর সময় পৃথিবীর উপর অশুভ শক্তির কালোছায়া ভর করে। তাই গ্রহণ এর পর গোসল করে শুদ্ধ হওয়া উচিত। এমন নানা উপকথা প্রচলিত আছে।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখাঃ পৃথিবীর কারণে চাঁদে সূর্যের আলো পৌছাতে পারে না বলে আলো কমে আসে। এটা নিতান্তই একটা প্রাকৃতিক বিষয়, কোন অশুভ শক্তি নয়।
আরো দেখুনঃ
পরিশেষে বলা যায়, চন্দ্র গ্রহণ বা সূর্যগ্রহণের সময় স্বাভাবিক সকল কাজই করা যাবে। প্রবীণ মানুষ বা সমাজে যে ধারণা গুলো প্রচলিত আছে কিংবা সকলে বলাবলি করে তা কেবলই কুসংস্কার। এগুলো থেকে আমাদের সকলের বের হওয়া উচিৎ।