ছয় ঋতুর নাম | বাংলা ৬ ঋতুর নাম
ঋতু শব্দের অর্থ কি? | ছয় ঋতুর নাম | ঋতু পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা
বাংলাদেশকে ষড় ঋতুর দেশ বলা হয়। ছয়টি ঋতু মিলে ষড় শব্দটির আবির্ভাব হয়েছে। পৃথিবীর আর কোথাও এত বৈচিত্র্যপূর্ণ ঋতুর দেশ দেখা যায় না। অধিকাংশ দেশে মোট চারটি ঋতুই পরিলক্ষিত হয়। ঋতুর ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আবহাওয়ার উপরেই নির্ভর করে।
উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতেই সাধারণত ৬ টি ঋতুর দেখা মিলে। বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের ছয়টি ঋতু হলো: গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত।
আরো দেখুনঃ আজকের তারিখ বাংলা ইংরেজি আরবি.
ঋতু শব্দের অর্থ কি?
ছয় ঋতুর নাম ঋতু শব্দের মূল অর্থ হলো প্রাকৃতিক অবস্থা অনুযায়ী বছরের একটি অংশ। ঋতু শব্দের আরেকটি অর্থ রয়েছে সেটি হল মেয়েদের মাসিক রজস্রাব বা স্ত্রীরজ।
বাংলাদেশের বিরাজমান রিতু বাংলাদেশের বিরাজমান ঋতুর সংখ্যা ৬টি। প্রতিটি ঋতুর সময়ই বাংলাদেশ এক অপরূপ রূপে সজ্জিত হয়। প্রতিটি ঋতু যেন এক একটি উৎসবের সাথে আবির্ভূত হয়।
ছয় ঋতুর নাম | বাংলা ৬ ঋতুর নাম
ষড় ঋতুর দেশ বাংলাদেশে প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর এক একটি ঋতুর আবির্ভাব হয়। যদিও আবহাওয়ার পরিবর্তন ও পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার কারণে এখন একটি ঋতু তার নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে আবির্ভূত হয়। বাংলা বারো ও ইংরেজি যেই মাসগুলো নিয়ে এই ষড়ঋতু গঠিত হয় সেটির তালিকা নিচে দেওয়া হলো।
বাংলাদেশে এখন কোন ঋতু চলছে-
ছয় ঋতুর নাম | বাংলা যে মাসগুলোর সমন্বয়ে গঠিত | ইংরেজি যে মাসগুলোর সমন্বয়ে গঠিত |
গ্রীষ্ম | বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ | মধ্যে এপ্রিল থেকে মধ্য জুন পর্যন্ত। |
বর্ষা | আষাঢ়-শ্রাবণ | মধ্য জুন থেকে মধ্য আগস্ট। |
শরৎ | ভাদ্র-আশ্বিন | মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য অক্টোবর। |
হেমন্ত | কার্তিক-অগ্রহায়ণ | মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য ডিসেম্বর। |
শীত | পৌষ-মাঘ | মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি। |
বসন্ত | ফাল্গুন-চৈত্র | মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য এপ্রিল। |
বাংলা ঋতু ও মাসের নাম-
- গ্রীষ্ম
- বর্ষা
- শরৎ
- হেমন্ত
- শীত
- বসন্ত
ছয় ঋতুর নাম ইংরেজি-
- স্প্রিং (Spring)
- সামার (Summer)
- মনসন (Monsoon)
- অটোম (Autumn)
- লেইট অটাম (Late- Autumn)
- উইন্টার (Winter)
আরো দেখুন: সকল জেলার আবহাওয়ার খবর.
ঋতু পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা
পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই ঋতু পরিবর্তন রয়েছে সর্বনিম্ন দুটি, সর্বোচ্চ তিনটি। এখন প্রশ্ন হলো যে এই ঋতু পরিবর্তন কেন হয়? ভূগোল অনুযায়ী পৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে ঋতু পরিবর্তন হয়ে থাকে। পৃথিবী তার নিজ অক্ষ থেকে ৩৬৫ দিন সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। এর ফলে ঝতু পরিবর্তন হয়। কিন্তু পৃথিবীর উভয় গোলার্ধে কখনোই একই সময় একই ঋতু থাকে না।
আমরা জানি, পৃথিবী পুরোপুরি গোল নয়, এটি কিছুটা চ্যাপ্টা দুইপাশ থেকে। এটিকে যদি আমরা মাঝ বরাবর ভাগ করে কল্পনা করি তাহলে মাঝের রেখাটিকে বলে বিষুবরেখা। এক পাশের অংশকে বলা হয় দক্ষিণ গোলার্ধ আর আরেক পাশের অংশকে বলা হয় উত্তর গোলার্ধ।
পৃথিবী যখন তার নিজ অক্ষ থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে তখন এটি সূর্যের দিকে কিছুটা হেলে থাকে। পৃথিবী যেহেতু নিজ অক্ষেও ঘুরছে তাই এটি বিভিন্ন সময়ে সূর্যের বিভিন্ন দিকে হেলে থাকে। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে সূর্য কখনো উত্তর গোলার্ধে এর কাছে চলে যায়, কখনো দক্ষিণ গোলার্ধের কাছে। যখন যেই অংশে পৃথিবী বেশি ঝুঁকে থাকে সেই অংশেই বেশি গরম পড়ে। আর অপর অংশ দূরে থাকার কারণে সূর্য থেকে সেই অংশে তাপ ও আলো কম পায় এর ফলে সেখানে শীতকাল হয়।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি ভিন্ন দেশ। পৃথিবীর খুব কম দেশেই এত বেশি ঝতু পরিবর্তন দেখা যায়। বাংলাদেশে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ঋতু পরিবর্তন হয়। ঋতুগুলির তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত ও বায়ুপ্রবাহ একটি থেকে অপরটি আলাদা। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম হওয়ার কারণে এই দেশের আবহাওয়াতে নিরক্ষীয় প্রভাব দেখা যায়।
নবান্ন উৎসব হয় কোন ঋতুতে?
নবান্ন শব্দের অর্থ হলো নতুন অন্ন, নতুন ধান বা খাবার। ষড়ঝতুর এই দেশে হেমন্ত হলো চতুর্থ ঋতু। অগ্র ও হায়ণ যার অর্থ যথাক্রমে “ধান” ও “কাটার মৌসুম”। ধান কাটার মৌসুম বলা হয় এই হেমন্ত ঋতুকে। এই মাসের প্রথম দিকেই ধান পরিপক্ক হয় কাটার জন্য। এই সময় ঘরে ঘরে নতুন ধান উঠার হিড়িক পড়ে যায়। কৃষকেরা ধান কাটতে নেমে পড়েন কোমর বেঁধে মাঠে। ঘরে ঘরে নতুন ধানের গন্ধে মৌঁ মৌঁ করে। যা কৃষকের মনে এক নতুন আমেজ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। উৎসব উৎসব রব পড়ে যায় চারদিকে।
আর ধান কাটার এই উৎসবকে ঘিরেই সূচনা হয় নবান্ন উৎসবের। এটি অনেক পুরনো একটি উৎসব বাঙালি কৃষকদের কাছে। এটি বাংলাদেশের সংস্কৃতির একটি অংশ।
এই হেমন্তের আগমন ঘটে শীতের আগেই। কার্তিক আর অগ্রহায়ণ মাস নিয়ে এই হেমন্ত ঋতু। বাংলাদেশের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য হচ্ছে এই নবান্ন উৎসব। নতুন ধান কাটা আর সেই ধানের চাল থেকে পিঠা, পায়েস, ক্ষীর সহ নানা রকম সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হয় এই উৎসবকে ঘিরে।
ছয় ঋতুর নাম -FAQ
১. ঋতু পরিবর্তন কেন হয়?
পৃথিবী নিজ অক্ষ ও সূর্যের চারপাশে প্রতিনিয়ত ঘুরছে আর এই নিজের অক্ষে ঘোরার সময় পৃথিবী কখনো কখনো সূর্যের দিকে কিছুটা হেলে থাকে আর এই জন্যই ঋতু পরিবর্তিত হয়।
২. শরৎকাল কবে?
ঋতুর মধ্যে তৃতীয় নাম্বার ঋতু টি হচ্ছে শরৎকাল। শরৎকাল গ্রীষ্ম ও শীতের মাঝামাঝি ঋতু হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই সময় পত্রঝরা বৃক্ষের সব পাতা ঝরে যায়। এ সময় রাতের আগমন তাড়াতাড়ি হয় এবং আবহাওয়া ঠান্ডা হতে থাকে।
৩. বাংলা কোন মাস কত দিনে?
বছরের প্রথম পাঁচটি মাস ৩১ দিনে গণনা করা হয়। পরের পাঁচটি মাস ৩০ দিনে গণনা করা হয়। কিন্তু ফাল্গুন ও মাসটি ২৯ দিনে পালন করা হয় লিপইয়ারের বছর হিসেবে। আর বাকি সময় ফাল্গুন মাস ৩০ দিনেরই হয়ে থাকে।
৪. বাংলা সনের প্রবর্তন হয় কত সালে?
বাংলা সনের প্রবর্তন হয় ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ বা ১১ মার্চ এ। কৃষকের মাঝে এটি “ফসলি সন” হিসেবে পরিচিত। পরে একে বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন হিসেবে ডাকা শুরু হয়।
আরো দেখুন:
সমাপ্তি: ছয় ঋতুর নাম বাংলাদেশ পৃথিবীর কোথাও আর এই ছয় ঋতুর নাম পাওয়া যায় না। সব দেশেই ঋতু দুটি বা সর্বোচ্চ তিনটি একটি গ্রীষ্ম আর একটি শীত। সবুজে লীলাভূমি এই বাংলাদেশ অপরূপ সৌন্দর্যে সেই বহু আগে থেকেই আচ্ছাদিত। ঋতু বৈচিত্রে ভরপুর হওয়ার কারণে এর সৌন্দর্য আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর এক একটি ঋতু আবির্ভূত হয় এই দেশে। এর মধ্যে অন্যতম একটি ঋতু হলো হেমন্ত। এই হেমন্তকে শস্যোৎসব বলা হয় কৃষকের কাছে।
আজকের পোস্টে ছিল ছয় ঋতুর নাম, ঋতু পরিবর্তনের কারণ, নবান্ন উৎসব কোন ঋতুতে হয় ও কোন কোন মাস নিয়ে ঋতুগুলো গঠিত। আজ এই পর্যন্তই আবার দেখা হবে নতুন কোন পোস্টে।