শবে মেরাজের আমল | শবে মেরাজের ফজিলত
শবে মেরাজের আমল ও ফজিলত | শবে মেরাজের বিস্তারিত ঘটনা
শবে মেরাজের আমল সম্পর্কে জানতে চান? আপনারা একদম সঠিক স্থানে এসেছে। আমরা আপনাদেরকে শবে মেরাজের আমল সম্পর্কে অবগত করব। যাতে করে আপনারা খুব সহজেই শবে মেরাজের আমল গুলো জেনে নিতে পারেন এবং কি করলে ভালো হবে এবং কি করা উচিত সেগুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন।
গুরুত্বপূর্ণ: আজকের নামাজের সময় সূচী।
তাছাড়া আপনারা আমাদের এই আর্টিকেল থেকে শবে মেরাজের বিস্তারিত ঘটনা জানতে পারবেন। এতে করে আপনাদের শবে মেরাজ সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা লাভ করতে পারবেন এবং সঠিক আমল গুলো পালন করতে পারবেন। চলুন তাহলে শুরু করি আমাদের আজকের বিষয় শবে মেরাজের আমল।
শবে মেরাজের ফজিলত
শবে মেরাজ রাতের ফজিলত অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যময়। কারণ এই রাতে ইসলাম ধর্মের পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ ফরজ করা হয়। আর এই রাতে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উপহারস্বরূপ নিয়ে এসেছেন।
ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এনৌঘ ওয়াতের দশম বছর ৬২০ খ্রিস্টাব্দে রজব মাসের ২৬শে তারিখের ফেরেশতার মাধ্যমে মক্কা শরীফ জেরুজালেমে অবস্থিত বায়তুল মোকাদ্দাসে গমন করেছেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়।
আপনারা এই ঘটনার প্রমাণ পাবেন পবিত্র কুরআন শরীফ এবং হাদীস শরীফে।
আরো দেখুনঃ শবে মেরাজের নামাজের নিয়ম.
শবে মেরাজের আমল
অধ্যাপক মুসলিমদের জন্য শবে মেরাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কিন্তু এই মেরাজের রাতে কোন নির্দিষ্ট করে আমল নেই। যদি কেউ এ রাতকে কেন্দ্র করে আমল করে তাহলে সেই আমল বিদআত হিসেবে গণ্য হবে।
তবে যেহেতু এ রাতের জন্য বিশেষ কোনো নির্দিষ্ট কোন নামাজ নেই বার্তা নেই তাহলে এই বিশেষ দিনের কোন আমল নেই। তবে কেউ যদি এই রাতে সাধারণভাবে নফল নামাজ আদায় করে তাহলে সেই আমলটি নফল আমল হিসেবে গণ্য হবে তবে শবে মেরাজ কে কেন্দ্র করে নফল নামাজ পড়লে সে আমল বিদআত হিসেবে ধরা হবে।
সুতরাং শবে মেরাজ কে কেন্দ্র করে কোন সালাত বা যে কোন আমল করা মানেই হচ্ছে সেটি বিদআত। এই রাত সম্পর্কেবিস্তারিত ঘটনা জেনে এবং পূর্বের ইতিহাস পর্যালোচনা করে এই রাতের আমলের ব্যাপারে সত্যতা উদঘাটন করা। পবিত্র কুরআন শরীফ এবং হাদিসে এমন কোথাও লেখা নেই এমন কোথাও উল্লেখ নেই যে শবে মেরাজের আমল করতে হয়। শবে মেরাজের কোন আমল নেই।
শবে মেরাজের বিস্তারিত ঘটনা
শবে মেরাজের ঘটনা প্রত্যেক মুসলমানদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কারণ এই শবে মেরাজের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বর্তমানে আমরা যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি সেই আমল আসে। তবে এর পেছনে অনেক ঘটনা রয়েছে আমরা আজ আপনাদের সাথে সে ঘটনাগুলো তুলে ধরব।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওয়াত প্রাপ্ত হওয়ার পর কাফেরদের সাথে তার বিভিন্নভাবে মতবিরোধ তৈরি হয়। আর এই মতবিরোধ গুলো কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা উদঘাটন হয়। আরবি হিজরী সালের ২৭শে রজবের রাতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ঊর্ধ্বাকাশে ভ্রমণে গিয়েছেন।
এই রাতে তিনি ঊর্ধ্ব আকাশে যাওয়ার কারণে এই রাতকে শবে মেরাজের রাত বলা হয। অনেক মুসলমান ভাই ও বোনেরা আছেন যারা এ ঘটনাটি এড়িয়ে যেতে চান। আমরা আপনাদেরকে যে ঘটনাটি জানাবো সেই ঘটনাটি প্রমাণ কুরআন শরীফে এবং হাদিস সহি হাদিস শরিফে পেয়ে যাবেন।
সেই রাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসূল সাঃ কে ঘোড়াকে করে মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসের উদ্দেশ্যে নিয়ে যান। এরপর সেখান থেকে আসমানের উপরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে নিয়ে যাওয়া হয়। আশ্চর্যকর একটি ঘটনা হচ্ছে ঠিক ওই রাতেই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আবার ফিরে আসেন জমিনে। ফিরে আসার পরে তিনি ওই রাতের ফজর নামাজের সালাত আদায় করেন। কিন্তু কোন মুসল্লী এই ঘটনাটি যদি কেউ অস্বীকার করেন তাহলে তার ঈমান থাকবে না।
যখন তিনি ফজরের সালাত আদায় করা শেষ করলেন তখন সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে একটি বৈঠক বসেন এবং তাদেরকে মেরাজের সম্পূর্ণ বর্ণনা শোনালেন-
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বললেন আমার কাছে দুজন ফেরেশতা এসেছিল। তারা আমাকে প্রথমে বায়তুল মোকাদ্দাসে নিয়ে যান এবং সেখান থেকে তারা আমাকে আসমানের উপরে নিয়ে যান। একেবারে আল্লাহর দরবার পর্যন্ত আমাকে পৌঁছে দেন।
সেখানে যাওয়ার পর আল্লাহর সাথে আমার কথোপকথন হয়। মহান আল্লাহর সাথে আমার পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত নিয়ে কথোপকথন হয়েছেন এবং মহান আল্লাহতালা সকল মুসলমানদের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। যখন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঊর্ধ্ব আকাশে ভ্রমণের বিবরণ দিচ্ছিলেন তখন মক্কার কাফের নেতারা তাকে নিয়ে উপহাস করতে ছিলেন।
এমনকি সেই ঘটনাটি কাল্পনিক ঘটনা বলে অনেক ধরনের উপহাস করেছেন। কারণ তারা বিশ্বাস করতে পারেননি যে একরাতে আসমানের উপর যাওয়া আবার ফিরে আসা। এভাবে তারা নানা ধরনের ঠাট্টা উপহাস করেছিলেন।
ঠিক ওই সময় কাফেররা হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক (রা.) এর কাছে ছুটে গেলেন। এবং তার কাছে এই ধরনের ঘটনা শুনতে চাইলেন তিনি বললেন ওই দিন ফজরের জামাতের তিনি ছিলেন না আরে ঘটনা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মুখ থেকে তখন পর্যন্ত তিনি শোনেন নি।ঠিক এভাবে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হল এবং বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হলো। এমনকি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাফেররা বিভিন্ন ধরনের অপবাদ দিতে থাকল।
কাফেররা যখন হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক (রা.) থেকে কোন কিছু জানতে পারল না তখন তারা বাধ্য হয়ে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে ছুটে এলেন। এবং তখন তারা হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে প্রমাণ করতে বললেন যে সে বায়তুল মুকাদ্দাস এগিয়েছে নাকি।
কাফেররা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে প্রশ্ন করলেন বায়তুল মুকাদ্দাসের কয়টি আছে? কতটি জানালা রয়েছে? কতটি দরজা রয়েছে? রাসুল সাঃ যদি এই প্রশ্নের উত্তর না দিতে পারেন তাহলে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে মিথ্যা বলে প্রমাণিত করতে পারবেন।
তখন রাসূল সাঃ এসব প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে গিয়েছেন। কারণ তিনি ওখানে এসব গণনা করতে যাননি। একপর্যায়ে তিনি চিন্তিত হয়ে ভাবতে থাকলেন আমি যদি এ প্রশ্নগুলোর উত্তর না দেয় তাহলে আমাকে মিথ্যুক বলে সাব্যস্ত করবে।
হাদীসে এসেছে এইরকম প্রশ্ন শুনে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) খুব পেরেশানিতে পড়ে যান এবং এরকম পেরেশানি আগে কখনো পড়েননি। হাদিস থেকে জানা যায় যে তখন আল্লাহ পাক বায়তুল মোকাদ্দাসকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর চোখের সামনে তুলে ধরলেন। আর কাফের প্রশ্ন করেছেন তা ঠিক ঠিক জবাব দিয়ে দিলেন।
কিন্তু মক্কার কাফেররা এটি বিশ্বাস করলেন না তারা উল্টো মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জাদুকর বলেছে। তখন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার বর্ণনা করতে শুরু করেছেন- তিনি বলেছেন আমার কাছে দুজন ফেরেশতা এসেছে। আর তখন আমি উম্মে হানির ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলাম। এরপর তারা আমাকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে বাইতুল্লাহর কাছে হাতিমের ভিতরে নিয়ে গিয়েছে।
সেখান থেকে আমাকে জমজম কুয়ার কাছে নিয়ে যায় এবং তখন তারা আমার সীনা চাক বা বক্ষ বিদারণ করে। বক্ষবিদারণ হচ্ছে সিনা ফেরে তার মধ্য থেকে হৃৎপিণ্ডকে বের করা হয়। আর সেই হৃদপিণ্ড থেকে একটি বস্তু বের করা হলো যা জমজমের পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়েছে। এর যথাস্থান যথা স্থানে স্থাপন যথা স্থানে স্থাপন করে দেয়া।
এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সপ্তম আকাশের বর্ণনা দিতে থাকলেন। তবুও কাফেররা অস্বীকার করতে লাগলেন।তারপর রাসূল সাঃ সেখানে যাওয়ার পর তার সাথে যত ঘটনা ঘটেছে তা সম্পূর্ণ বিবরণ দিতে থাকলেন এবং জান্নাত জাহান্নাম সম্পর্কে বিবরণ দিতে থাকলেন।
রাসুল (সাঃ) কে যে বাহন ধারা সাত আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এসে বাহনটির নাম হচ্ছে বরাক। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী এই বাহনটির সাদা রংয়ের জানোয়ার, যা দেখতে গাধার চেয়ে একটু বড় খচ্চরের চেয়ে একটু ছোট। আর এই বাহকের গতি হচ্ছে যতদূর চোখ যায় ঠিক শেষ সীমানা পর্যন্ত এক এক কদম রাখে।
এভাবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মেরাজের ঘটনা বর্ণনা করেন কিন্তু কেউ কেউ তার এই ঘটনাকে বিশ্বাস করে রাসূলের (সাঃ)সাথে যোগ দেন আবার কেউ কেউ তার এই ঘটনাটিকে অবিশ্বাস করে ঠাট্টা উপহার মেতে থাকেন। এছাড়াও তাকে বিভিন্ন ধরনের অপবাদ দিয়ে রাসুল (সাঃ) কে আঘাত করেছেন।
আরো দেখুনঃ রমজান মাসের ক্যালেন্ডার ২০২২.
উপসংহার: আশা করছি, আপনারা আমাদের শবে মেরাজের আমল এই আর্টিকেলটি পড়ে শবে বরাত সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। এবং শবে মেরাজের আমল নেই তা সুস্পষ্টভাবে জানতে পেরেছে। এছাড়াও আপনারা যদি শবে মেরাজ সম্পর্কে তথ্য জানতে চান তাহলে আমাদেরকে আপনারা জানাতে পারেন। আমরা অবশ্যই আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিব এবং আপনাদের অজানাকে জানতে সাহায্য করব। জাযাকাল্লাহ খাইরান।