ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস
ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস
একজন মানুষের চরিত্র তার জীবনের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য। একজন মুসলমান কখনই প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না যতক্ষণ না সে নিজেকে সকল প্রকার অশ্লীলতা থেকে বাঁচায়। এটি ইসলামের সবচেয়ে চমৎকার বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি যে এটি ইসলামের প্রতিটি অনুসারীকে সকল প্রকার অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকতে বলে। কিন্তু আজ ভালোবাসা ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের নামে ছেলে-মেয়েরা যেভাবে নিজেদের চরিত্রের অবক্ষয় ও পাপে জড়িয়ে পড়ছে তা সত্যিই চিন্তার বিষয়। কারণ ইসলামে বিবাহ-বহির্ভূত যে কোন ধরণের ভালোবাসা বিনিময় সম্পূর্ণরূপে হারাম। পবিত্র কুরআন পাকে আল্লাহ বলেছেন;
আরো দেখুনঃ 14 ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস.
قُلْ اِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّیَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَ مَا بَطَنَ وَ الْاِثْمَ وَ الْبَغْیَ بِغَیْرِ الْحَقِّ وَ اَنْ تُشْرِكُوْا بِاللّٰهِ مَا لَمْ یُنَزِّلْ بِهٖ سُلْطٰنًا وَّ اَنْ تَقُوْلُوْا عَلَى اللّٰهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ(۳۳)
“বলুন, আমার পালনকর্তা শুধু অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন – যা প্রকাশ্য এবং যা গোপন – এবং পাপ এবং অন্যায় অত্যাচার, এবং তোমরা আল্লাহর সাথে এমন কিছুকে শরীক করা যার জন্য তিনি কোন দলীল নাযিল করেননি এবং তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে বল। যা তুমি জানো না।”
ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস কি বা কেমন আর এটা নিয়ে ইসলাম কি বলে তা আমাদের জানা উচিত। যেহেতু এখন এই দিবসটি সারাবিশ্বের মতো আমাদের দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। এই পোস্টের মাধ্যমে তাই আপনাদের সাথে আজ শেয়ার করবো ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস কি সে সম্পর্কে। এই দিবসটি পালন করার আগে অবশ্যই আপনার একজন মুসলিম হিসেবে ভালোভাবে এটা সম্পর্কে জেনে নেয়া উচিত।
ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস
ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস কি? বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে উদযাপন এক ধরনের অনৈতিকতার প্রচার যা সমাজের নৈতিক কাঠামোকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। এই দিনটি আসে অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার বার্তা নিয়ে। বাস্তবে ফুলের তোড়ার নিচে অশ্লীলতকা ঢেকে রাখা হয় এবং চকলেটের মাধুর্যে অশ্লীলতার বিষ আস্বাদন ও ভাগ করা হয়। যদি আমরা এই দিনের উদযাপন প্রক্রিয়া পরীক্ষা করি তবে আমরা অন্তত নিম্নলিখিত পাপগুলি খুব স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পারবো।
ভালোবাসা দিবসে ছেলে-মেয়েরা একে অপরের প্রতি তাদের অবৈধ ভালবাসা দেখানোর জন্য ফুলের তোড়া, চকলেট এবং পেপার হার্ট ইত্যাদি উপহার বিনিময় করে। তারা বিভিন্ন জায়গায় একে অপরের সাথে মিলিত হয় এবং একসাথে একান্তে সময় কাটায়, যা ইসলামের দৃষ্টিতে পুরোপুরি হারাম অবিবাহিত ছেলে-মেয়েদের জন্য। এই সময় অনেক ক্ষেত্রে তারা একা থাকে বা নিজেদেরকে একা রাখতে চায়। আর এই অবস্থায় কি হয় সবাই জানে, কারণ একান্তে ছেলে-মেয়ে থাকলে তাদের সাথে তৃতীয় ব্যাক্তি হিসেবে শয়তান থাকে। যদি আমরা এই পরিস্থিতিকে ইসলামী শিক্ষা অনুসারে বিশ্লেষণ করি তবে আমরা নিম্নোক্ত অবৈধ বিষয়গুলো জানতে পারবো:
- অবৈধ সম্পর্ক জোরদার করার জন্য উপহার বিনিময়।
- একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের অবৈধ মিলন।
- তাদের নির্জনে একত্রিত হওয়া।
- অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক সম্পর্ক করা (ব্যভিচার ও জেনা)।
- এই সাক্ষাত ছেলে-মেয়েদের হায়া (লজ্জার অনুভূতি) দূর করে এবং একজন ব্যক্তিকে নির্লজ্জ করে তোলে।
ভালোবাসা দিবস নিয়ে ইসলাম কি বলে
এই ভালোবাসা দিবসের নামে ছেল-মেয়েরা একান্তের সময় কাটায় ও একে অপরের সাথে তথাকথিত ভালোবাসার নামে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয় এর জন্য ইসলামে কঠোর আইনী ব্যবস্থা রয়েছে ও এটি ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বেআইনি ও পাপ কাজ।
ইসলাম এ ধরণের উপহার বিনিময়কে হারাম ও পাপ কাজ বলে। এক্ষেত্রে উপহার বিনিময়কারী উভয়ই পাপী। তাছাড়া এগুলো এক ধরনের মাধ্যম যা অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিনিময় করা হচ্ছে। এই ধরণের কাজের জন্য ছেলে-মেয়ে উভয়কে এই উপহারগুলি ফিরিয়ে দিয়ে সত্যিকারের তওবা করা উচিত।
একটি ছেলে এবং মেয়ের মিলনের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোন কিছু ইসলাম কোনভাবেই জায়েজ করে না এবং যখন তারা নির্জনে মিলিত হয় তখন এটি আরও লজ্জাজনক কাজ হয় কারণ এই ক্ষেত্রে শয়তানও তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে আসে যে তাদের হারাম করার তাগিদ দেয় এবং তারা যিনা করে। ব্যভিচার)। এ অবস্থা বর্ণনাকারী একটি হাদীসে বলা হয়েছে; “কোন পুরুষ কোন মহিলার সাথে একা থাকে না তবে শয়তান তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত থাকে।”
বৈধ শরী‘আত ব্যতীত অ-মাহরামের সাথে যে কোন ধরণের শারীরিক সম্পর্ক হারাম ও পাপ। এমনকি এ ক্ষেত্রে অ-মাহরামের দিকে তাকানোও এক প্রকার ব্যভিচার। হাদিসে বলা হয়েছে, “কামপূর্ণ দৃষ্টি দেওয়া চোখের ব্যভিচার”। অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি চোখ দিয়ে হারাম করবে, কিয়ামতের দিন তার চোখ জাহান্নামের আগুনে পূর্ণ হবে।
ব্যভিচার বা জেনার করার শাস্থি খুবই ভয়াবহ, ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী ব্যক্তিটিকে শাস্তি না দেয়া হলেও তার নির্দিষ্ট কিছু শাস্তি হতেই থাকে। এক্ষেত্রে ছয়টি শাস্তি রয়েছে তার মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ভোগ করতে হয় আর তিনটি আখিরাতে।
এই পৃথিবীতে শাস্তিগুলো হলো:
- ব্যভিচারীদের মুখ থেকে নূর (দীপ্তি) মুছে যায়।
- এটা দারিদ্র্য এবং দুর্ভিক্ষ নিয়ে আসে।
- আয়ুষ্কাল কমে যায়।
পরকালের শাস্তিগুলো হলো:
- আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ ব্যভিচারীদেরকে তাঁর ক্রোধের অধীন করেন।
- বিচারের দিন তাদের কঠোর হিসাব করা হবে।
- তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
ইমাম শাফেঈ حْمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہ কবিতার আকারে যিনার পরিণাম বর্ণনা করার সময় হতভাগ্য পাপীকে কবিতার মাধ্যমে নিম্নোক্তভাবে তিরস্কার করেছেন:
إنَّ الزِّنا دَينٌ إذا أقرضتًه
كان الوفا مِن أهلِ بيتِك فاعلمِ
لو كنتَ حرًّا مِن سُلالةِ ماجدٍ
ما كنتَ هتَّاكًا لحرمةِ مُسلمِ
অনুবাদঃ “নিঃসন্দেহে যিনা হল এক প্রকার ঋণ যা আপনার পরিবারের নারীদের পরিশোধ করতে হবে। হে ব্যভিচারিণী যদি তুমি একজন মহৎ চরিত্রের মানুষ হতে এবং উচ্চ বংশের বংশধর হতে তাহলে কখনোই অন্য মুসলমানের সম্মান নষ্ট করতে পারতে না।” “নিশ্চয়ই ইমান ও হায়া একসাথে থাকে। যখনই তাদের কেউ চলে যায়, অন্যরাও চলে যায়।
আরো দেখুন:
ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস নিয়ে শেষকথা
ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস কেমনের শেষ কথায় বলতে চাই যে, ভালোবাসা সে তো শ্বাশত, পবিত্র। ভালোবাসার জন্যই এই পৃথিবী টিকে আছে। আল্লাহর তৈরিকৃত স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র ও আশ্চর্যজনক ভালোবাসা। আর এই ভালোবাসার উপরই পৃথিবী টিকে আছে। কিন্তু এই সম্পর্কের বাইরে গিয়ে যখন একজন নারী-পুরুষ আল্লাহকে অমান্য করে ভালোবাসা দিবসের মতো নির্লজ্জ্য ও বেহায়া জিনিস পালনের মাধ্যমে নিজেদের পবিত্রতা ও সম্মান নষ্ট করে তখন এই সমাজ কলুষিত হতে শুরু করে। ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস কেমন তাই সে সম্পর্কেই আমি আপনাদেরকে আজ জানালাম।