বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কত?
বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কত? | গড়ে আয়ু বৃদ্ধি পেতে কি করতে পারি
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল দেশ। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কত তা নিয়েই আজকের আলোচনা।
বাংলাদেশে প্রতি ১০ বছর পর পর আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। আদমশুমারির মাধ্যমে এদেশের জনসংখ্যার জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ, তালাক, আয়, ব্যয়, এদেশে আগমন ও দেশ হতে বহির্গমন ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তবে পরবর্তী দশ বছরে এসব তথ্যের পরিবর্তন ঘটে।
বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এদেশের জন্মলগ্নে যতটা ছিল, বর্তমানে কিন্তু তা বেড়েছে।মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে এদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৬ বছর। যা ১৯৮০ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩ বছরে। আর ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬৬ বছর। ২০১১ সালে মানুষের গড় আয়ু হয় ৭০ বছর। ২০২১ সালে গড়ে আয়ু হয় ৭২.৮ বছর।
আরো দেখুনঃ বাংলাদেশের আয়তন কত?
বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কত?
বর্তমানে বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু ৭২.৮ বছর (২০২১ সালের জুন মাসের জরিপ অনুযায়ী)। এ গড় আয়ু গত কয়েক বছরে বেড়ে ৭২.৮ বছরে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষের গড় আয়ু ৭১.২ বছর এবং নারীর গড় আয়ু ৭৪.৫ বছর। এ তথ্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর।
জরিপ অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৮২ লাখ। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ৪২ লাখ এবং নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৪০ লাখ। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও গড় আয়ু বৃদ্ধিতে তা তেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে নি।পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ৫ বছরে প্রতি বছরে .২৪ বছর হারে আয়ু বেড়েছে।
বর্তমানে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ১.৩০ শতাংশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ ঘনত্ব আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটার জায়গায় বসবাস করে ১,১৪০ জন মানুষ।
সারাবিশ্বে করোনা মহামারি সত্বেও দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরো দেখুনঃ ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলার দূরত্ব.
বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির কারন
গত ৫০ বছরে স্বাস্থ্য খাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কত তা তো সময়ের সাথে সাথে বদলায়।বর্তমানে এদেশে মানুষের গড় আয়ু পুর্বের তুলনায় বেড়েছে।এ গড় আয়ু বাড়ার প্রাথমিক কারণ হলো মৃত্যুর হার কমে যাওয়া। দেশে সরকারি-বেসরকারিভাবে গৃহিত বিভিন্ন উদ্যোগ এবং জনসচেতনার কারনে শিশু এবং বয়স্ক উভয় শ্রেণির জনসংখ্যার মৃত্যুহার কমেছে।
১. বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়ার অন্যতম কারণ হলো চিকিৎসা সুবিধা অনেকটা সহজলভ্য হওয়া। তাছাড়া শহরের পাশাপাশি গ্রামের মানুষও এখন স্বাস্থ্য সচেতন হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় নানা অসঙ্গতি ও দুর্বলতা থাকা সত্বেও এ খাতে সামগ্রিক অগ্রগতি অবহেলা করার মত নয়।তবে সবচেয়ে অগ্রগতি হয়েছে শিশুমৃত্যু হার কমায়।
আমরা পুর্বের পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখতে পাই,১৯৯০ সালে এদেশে প্রতি হাজারে ১৫১ টি শিশু মারা যেত। কিন্তু ২০০৯ সালে ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুহার ছিল হাজারে মাত্র ৫০ জন।এর পরের বছরগুলোতে যথাক্রমে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা কমে এসেছে ৪৭, ৪৪, ৪২ ও ২০১৩ সালে ৪১ জনে।
এর কারণ হলো এদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী সফলতা। তাছাড়া ডায়রিয়ার কারনে মৃত্যুহার খুবই কম হয়।
২.বাংলাদেশে গড় আয়ু বাড়ার কারন হিসেবে মৃত্যুহার কমা ছাড়াও আরও কিছু কারন হলো এদেশের অধিকাংশ মানুষ এখন পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে, মানুষের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এসেছে এবং দরিদ্র মানুষেরা সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর সুফল পাচ্ছে ।
৩.গড় আয়ু বাড়ার আরেকটি কারন ধরা যায় রেমিটেন্স বৃদ্ধি পাওয়াকে।যা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটায়।ফলে জীবনমান বেড়েছে।এর ফলে দেশের জনসংখ্যা আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করছে।যা তাদের বিভিন্ন অসুখ ও নিরাপত্তাহীনতা থেকে বাঁচায়।
৪. গড় আয়ু বাড়ার আরেকটি কারন হতে পারে নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি । যে কারনে পুরুষের তুলনায় নারীর গড় আয়ু বেশি বেড়েছে।
৫.আরও কিছু কারন হলো দেশের মানুষের ট্যাপ ও নলকূপের বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের হার ২০০৯ সালে ৯৮.১ শতাংশ ছিল; যা পরের বছরে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৩ সালে ৯৮.৫ শতাংশ হয়েছে।
গড় আয়ু বৃদ্ধির ফলাফল
মানুষ মাত্রই বাঁচতে চায়। গড় আয়ু বৃদ্ধির সংবাদে নিশ্চয়ই এদেশবাসী খুশি হবে।তবে এর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।যা দূর করার জন্য সরকারকে আবার নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
কারন গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ায় দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু তাদের জন্য যে ধরণের সেবা বা সুযোগ দরকার , তা পুরন করার মতো বিভিন্ন সেবা ও আর্থিক খাত তৈরি হয়নি।এখন দেশে ৬০ বছরের বেশি বয়সের মানুষ প্রায় সাড়ে ছয় শতাংশ। ২০৫০ সালে এটা ২০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে ধারনা করা হয় । যা দেশের অর্থনীতির উপর চাপ ফেলবে।তা দেশ কিভাবে মোকাবিলা করবে, সেটি বড় প্রশ্ন। তখন এই আয়ু বৃদ্ধি পাওয়া বয়স্কদের বোঝা মনে হতে পারে।
গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সরকার ‘দি পাবলিক সার্ভিস (রিটায়ারমেন্ট) এ্যাক্ট, ১৯৭৪ সংশোধন করে চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৫৯ বছর নির্ধারন করেছিল। আয়ু বৃদ্ধির ফলে ওই বয়সে কর্মক্ষম থাকার বিষয়টি ভেবে এই সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর ফলে দেশের সরকারি চাকুরীজীবিরা ২ বছর বেশি চাকরি করার সুবিধা পায়।
গড়ে আয়ু বৃদ্ধি পেতে কি করতে পারি
আসলে আমদের জন্ম ও মৃত্যু কখন হবে তা আমরা কেউ জানি না। মহান সৃষ্টিকর্তা সবকিছু ঠিক করে রেখেছেন।আমরা যেটা পারি সেটা হলো আমাদের জীবনকে সুন্দর করে পরিচালনা করতে।সুন্দর করে পরিচালনা করার প্রথম ধাপ হলো সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা।এরপর পরিমিত পরিশ্রম, বিশ্রাম ও ঘুম।আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। তবে এসব সুঅভ্যাস নিজে গড়লেই হবে না,পরিবার ও সমাজের সবার মাঝে এ অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।তাহলে সবার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।আর সুস্বাস্থ্যকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকার লক্ষন হিসেবে ধরা হয়।এছাড়া দূর্ঘটনা এড়াতে রাষ্ট্রীয় আইন কানুন মেনে চলার অভ্যাস করতে হবে।কারন প্রতিদিন দূর্ঘটনার জন্য নানা বয়সী অনেক মানুষ মারা যায়।
আরো দেখুনঃ
বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কত FAQ
১. বাংলাদেশের মানুষের আয়ুষ্কাল কত ছিল ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত?
২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে, বাংলাদেশের মহিলাদের জন্মের সময় গড় আয়ু ছিল প্রায় ৭৪.৮৯ বছর, যেখানে পুরুাষদের গড় আয়ু ছিল প্রায় ৭১.১৩ যা নারীদের তুলনায় ৩.৭৬ কম ছিল।
২. বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এত বেশি কেন?
দ্রুত অবকাঠামোগত ও অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের কারণে বাংলাদেশর মানুষের আয়ুষ্কাল ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ১৯৬০ সালের দিকে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুষ্কাল ছিল আনুমানিক ৪৬ বছল এবং ২০১৬ সাল নাগাদ তা বেড়ে ৭২.৫ বছরেরও বেশি বেড়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের গড় আয়ুও বৃদ্ধি পেয়েছে এই দেশে।
৩. বাংলাদেশে সবচেয়ে দীর্ঘজিবী ব্যক্তি কে?
স্থানীয় মানুষদের ধারণা তৈয়ব আলী বাংলাদেশের সবচেয়ে বয়োজোষ্ঠ ব্যক্তি। তিনি সিলেটের বাসিন্দা। স্থানীয়দের ধারনা তৈয়ব আলীর বয়স ১৩৫ বছর। ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে আরো জানা গেছে, তিনি শুধু বাংলাদেশই নন, সারাবিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি।
৪. গড় আয়ুষ্কাল সবচেয়ে বেশি কোন দেশে?
সবচেয়ে বেশি গড় আয়ুষ্কাল হংকং -এ সেখানের মানুষের গড় আয়ু ৮৫.২৯ বছর। এরপর রয়েছে জাপান, তাদের গড় আয়ু ৮৫.০৩ বছর। তিন নাম্বার অবস্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ড যাদের গড় আয়ু ৮৪.২৫ বছর হিসেব করা হয়েছে।
৫. পৃথিবীর মানুষের সাধারণ গড় আয়ু কত বছর?
পৃথিবীর মানুষের সাধারণ গড় আয়ু ৭২.২৭ বছর। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের গড় আয়ু বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে তাদের আবাসস্থল, খাদ্য, জীবন-যাপনের উপর নির্ভর করে।
৬. কোন দেশের মানুষের গড় আয়ু সবচেয়ে কম?
২০২০ সালের ফলাফল অনুযায়ী লেসোথোতে জন্ম নেওয়া পুরুষদের গড় আয়ু পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম। একইভাবে এই দেশে জন্ম নেওয়া মহিলাদেরও গড় আয়ু কম। মহিলারা গড়ে ৫৬ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকেন আর পুরুষদের গড় আয়ু ৫৪.৬৯ বছর।
৭. লেসোথোর মানুষের গড় আয়ু এত কম কেন?
লেসোথোর মানুষের গড় আয়ু কম হওয়ার মূল কারণ বিভিন্ন ধরণের রোগ। লেসোথোতে অসংক্রামক রোগের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগ উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে যার কারণে এই দেশের মানুষরা খুবই দ্রুতই মারা যান।
বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কত তা আজকের আলোচনায় স্পষ্ট হয়ে গেছে। এর পেছনে অনেক কারন আছে।আমাদের দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্যগ্রহণ আগের চেয়ে বেড়েছে। মানুষও সচেতন হয়েছে।সব কিছু মিলিয়ে এদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে।
আবার এরকম অবস্থা কিছুটা দুশ্চিন্তায় ফেলেছে সরকারকে।কারন এর সাথে সামাজিক,অর্থনৈতিক, সেবা খাত প্রভৃতির সম্পর্ক রয়েছে।তবে ভেবে চিন্তে সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিলে গড় আয়ু বাড়াকে নিয়ে আর চলে নত্তা করতে হবে না।কারন বয়স বাড়লেও আমরা যদি সুস্থ থাকি তাহলে কাজ করতে পারব যার ফলে বয়স্ক ব্যক্তিকে বোঝা মনে হবে না।