বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান | কর্ণফুলী টানেল বিস্তারিত তথ্য | কর্ণফুলী টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান
বর্তমান সময়ে আমাদের বাংলাদেশের চট্টগ্রামের কর্নফুলি নদীর নিচে অবস্থিত টানেল এর নাম হলো, বঙ্গবন্ধু টানেল। যাকে আমরা অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন নামে চিনি। যেমন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, কর্ণফুলি টানেল, বঙ্গবন্ধু সুড়ঙ্গ।
তবে এই টানেল কে ভিন্ন মানুষ ভিন্ন নামে ডাকলেও এর বর্তমান নাম হলো, বঙ্গবন্ধু টানেল। আর আজকে আমরা বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান জানবো। বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান নিচের আলোচনায় ধাপে ধাপে শেয়ার করা হলো।
টানেল কি? | টানেল বলতে কি বোঝায়?
সহজ কথায় বলতে গেলে টানেল হলো এক ধরনের সুড়ঙ্গপথ। যেটি অনেকটা দীর্ঘ ও সরু হয়ে থাকে। আর এই ধরনের টানেল গুলো কোনো পাহাড়, পবর্ত কিংবা জলের নিচে তৈরি করা হয়ে থাকে। আর সেই টানেল এর মধ্যে থাকা সুড়ঙ্গপথ দিয়ে যানবাহন কিংবা মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে। তো এই ধরনের বিশেষ সুড়ঙ্গ পথকে বলা হয়, টানেল।
আরো দেখুনঃ
কর্ণফুলী টানেল/বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন
আমাদের বাংলাদেশের মধ্যে বঙ্গবন্ধু টানেল হলো সর্বপ্রথম সড়ক টানেল। আর উক্ত টানেল এর উদ্বোধন করা হয়েছে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখে। এই উদ্বোধনী কার্যক্রমে বাংলাদেশের সরকার শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত ছিলেন।
আর এই বঙ্গবন্ধু টানেল মূলত চট্টগ্রাম শহরের সাথে আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে। যার মূল দৈর্ঘ্য ৩.৪৩ কিলোমিটার। তবে এর সঙ্গে ৫.৩৫ কিলোমিটারের সংযোগ সড়ক যুক্ত রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান
উপরের আলোচনা থেকে আমরা বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে বেশ কিছু বিষয় জানতে পেরেছি। তো এবার আমি আপনার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান শেয়ার করবো। যা থেকে আপনি বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয় জানতে পারবেন। যেমন,
০১ – কর্ণফুলী টানেল কেন দরকার?
চট্টগ্রাম শহর এড়িয়ে ঢাকা বা দেশের যে কোনো এলাকা থেকে কক্সবাজার বা দক্ষিণ চট্টগ্রামমূখী যানবাহন চলাচলের সময় ও দুরত্ব কমিয়ে আনার জন্য কর্ণফুলী টানেল এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
০২ – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্ণফুলী টানেল কত সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়?
এই বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই জেনে রাখা দরকার। তো ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।
তার ঠিক কয়েক বছর পর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ফেব্রয়ারি মাসের ২৪ তারিখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেলের মূল নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন।
০৩ – কর্ণফুলী টানেল এর গভীরতা কত ফুট?
কর্ণফুলী নদীর মধ্যভাগে সুড়ঙ্গটি ১৫০ ফুট গভীরে অবস্থিত। আর বঙ্গবন্ধু টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার। তো বঙ্গবন্ধু টানেল হলো আমাদের বাংলাদেশের প্রথম সুড়ঙ্গ পথ। এছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ।
০৪ – বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণকারী দেশ কোনটি?
বঙ্গবন্ধু টানেল এর নির্মানকারী দেশের নাম হলো, চীন। মূলত চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এই টানেল নির্মানের কাজ করেছে। আর উক্ত টানেল এর বিভিন্ন অংশ চীনের ঝেনজিয়াংয়ে তৈরি করার পর সেগুলো বাংলাদেশে আনা হয়েছে।
০৫ – কর্ণফুলী টানেলের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?
হ্যাঁ, কর্ণফুলী টানেলের ফলে আমাদের বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। আর যেসব কারণে দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়তে পারে। সেই কারণ গুলো হলো,
- দেশের মধ্যে রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।
- দারিদ্র দূরীকরণসহ দেশের ব্যাপক আর্থ সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হবে।
- জিডিপিতে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
- কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে ।
- এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযোগ স্থাপিত হবে।
তো কর্ণফুলী টানেল এর ফলে যেসব কারণে আমাদের দেশের অর্থনীতি প্রভাবিত হবে। সেই কারন গুলো উপরের তালিকায় শেয়ার করা হয়েছে।
০৬ – দেশের প্রথম টানেল এর নাম কি?
বঙ্গবন্ধু টানেল বাংলাদেশের প্রথম সুড়ঙ্গ পথ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ।
০৭ – কর্ণফুলী টানেলের খরচ কত?
কর্ণফুলী টানেল এর নির্মাণ ব্যয় হলো, ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা।
০৮ – বঙ্গবন্ধু টানেলের ব্যাস কত?
বঙ্গবন্ধু টানেল এর ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। এছাড়াও মূল টানেলের দৈর্ঘ্য হলো, ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। আর টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার।
আরো দেখুনঃ বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও মৃত্যু তারিখ এবং জীবনী.
কর্ণফুলী টানেল বিস্তারিত তথ্য
এতক্ষন থেকে আমি আপনাকে বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান শেয়ার করেছি। তবে অনেক মানুষ আছেন, যারা আসলে কর্ণফুলী টানেল বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে জানতে চায়। তো এবার আমি আপনাকে কর্ণফুলী টানেল বিস্তারিত তথ্য গুলো বলবো।
কর্ণফুলী টানেল এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস-
যদিওবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক আগে থেকে কর্ণফুলী টানেল তৈরি করার সিন্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসের ১৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রী সহো চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
তার পরবর্তী সময়ে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কর্ণফুলী টানেল এর অর্থায়ন-
২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং এর ঢাকা সফরে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। আর সেই চুক্তি অনুযায়ী চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদি ঋণ হিসাবে দুই শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে। কেননা, কর্ণফুলী টানেল তৈরির মোট ব্যায় হলো, ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা।
কর্ণফুলী টানেল এর নির্মান-
আমাদের বাংলাদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধু টানেল এর নির্মাণ কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। আর সেই টানেল এর বিভিন্ন অংশ গুলো চীনের ঝেনজিয়াংয়ে উৎপাদন করা হয়েছিলো।
তারপর সেগুলো আমাদের বাংলাদেশে আনা হয়েছে। তো ২০২২ সালের মধ্যে সুড়ঙ্গটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তুু এই টানেল এর নির্মান কাজ ২০২৪ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো।
আরো দেখুনঃ
কর্ণফুলী টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান FAQ
Q:কর্ণফুলী টানেল চালু হবে কবে?
A: ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখ রোজ শনিবার।
Q:কর্ণফুলী সুড়ঙ্গের নাম কি?
A: আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নামে পরিচিত।
Q:কর্ণফুলী টানেল খরচ কত?
A: ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা।
Q:কর্ণফুলী টানেল এর দৈর্ঘ্য
A:মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার।
আপনার জন্য আমাদের শেষকথা
প্রিয় পাঠক, আমাদের বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য মেগা প্রজেক্ট গুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু টানেল হলো অন্যতম। আর সে কারণে আজকে আমি বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান শেয়ার করেছি আপনার সাথে।
তো এরপরও যদি আপনার বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে আরো কোনো প্রশ্ন থাকে। তাহলে আপনার প্রশ্নটি নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
