রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প ২০২৪
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প ২০২৪ | Romantic Love Story 2024
আপনি কি রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প খুজছেন? -তাহলে আপনি একবারে সঠিক জায়গা তে চলে এসেছেন। কারণ, আজকে আমি আপনাকে এমন সব রোমান্টিক ভলোবাসার গল্প বলবো। যেগুলো পড়ার পর আপনার মনে কাঁটা দিয়ে উঠবে। আর আমার দীর্ঘ বিশ্বাস আছে যে, আজকের লেখা রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প গুলো আপনার অনেক ভালো লাগবে।
আরো দেখুনঃ 14 ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস.
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প
গল্পের নামঃ তোমার আমার ভালোবাসা
রাস্তার ওপাশে একটু আবছা অন্ধকারে দাড়িয়ে আছে, মোহনা। তবে সে দাড়িয়ে আছে বিষন্ন মন নিয়ে। কিন্তুু হঠাৎ করেই পাশে থেকে কে যেন বলে উঠলো, এই তোমার রেটে কত? -আর এই কথাটি শোনার পর থেকে মোহনা যেন অবাক হয়ে উঠলো। আর মনে মনে ভাবতে লাগলো, সে কি কোন ভুল কাজ করে ফেলেছে কিনা।
কারন, আজ মোহনার বিয়ে, তাই সে কোন কিছু চিন্তা না করে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। কারন, মোহনা প্রায় ৬ বছর ধরে একটি ছেলের সাথে রিলেশন করছে। কিন্তুু সে কখনও তার বাড়িতে তার সম্পর্কের কথা বলার সাহস পায়নি। তাই যখন তার পরিবার অন্য ছেলের সাথে মোহনার বিয়ের কথা পাকাপোক্ত করে। তখন থেকেই মোহনা কোনভাবেই এই বিয়ে কে মেনে নিতে পারছিলো না।
তাই, আজকের বিয়ের দিনে মোহনা ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। সে যে করেই হোক, তার ভালোবাসার মানুষকে ছাড়া অন্য কারো সাথে সংসার করতে পারবে না।
কিন্তুু হঠাৎ সেই লোকটি জোর গলায় আবার বললো, কিরে, তোর রেট কত বল তাড়াতাড়ি। আর এই কথাটি বলে সে একটা বিদঘুটে হাসি দিয়ে মোহনার আরো কাছে আসতে শুরু করলো। তখনি মোহনা প্রচন্ড ভয় পেতে শুরু করলো। আর একটা সময় লোকটি মোহনার হাত শক্ত করে ধরে বললো,
-তুই যা রেট চাইবি, তোকে আমি তাই দিবো। চল আমার সাথে, তোকে নিয়ে আজ সুখের সাগরে ভেসে যাবো।
কিন্তুু এই কথাটি শোনার পর মোহনা আবার কাঁদো কাঁদো সুরে বললো,
-দেখুন, আমি এই ধরনের মেয়ে না। আমি একটা ভদ্র পরিবারের মেয়ে। আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।
কিন্তুু সেই লোকটি একবারে নাছোড়বান্দা। সে মোহনা কে জোর করা শুরু করলো। এবং আরো উঁচু স্বরে বলতে লাগলো, দেখ, আমার কিন্তুু এতো নাটক পছন্দ হয়না। এখানে তুই কিসের জন্য দাড়িয়ে আছিস, সেটা কি আমি বুঝিনা ভাবছিস। এই কথাটি বলার পর সে মোহনা কে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করলো।
আর মোহনা কোনো উপায় না দেখে, সেই লোকটি কে একটা সজোরে ধাক্কা দিলো। আর বললো, আপনি ভুল করছেন, আমি এইসব কাজ করিনা। আর এই কথাটি বলার পর মোহনা কোন দিকে না তাকিয়ে সেখান থেকে প্রানপণে ছুটে যায়। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে ভাবতে থাকে, সে কি এটা ঠিক করছে। নাকি তার আবার বাড়িতে ফিরে যাওয়া উচিত।
এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ একজন বৃদ্ধ বয়সী মানুষ পেছন থেকে বলে উঠলো, -এই তুমি রফিক সাহেবের মেয়ে না?
এই কথাটি শোনার সাথে সাথে মোহনা যেন আকাশ থেকে পড়লো। কারন, সেই মানুষ টি তার বাবা কে চিনতে পেরেছে। তাই সে পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো। সেই বৃদ্ধ বয়সী মানুষ টি আর অন্য কেউ না। বরং সেই মানুষ টি হলো, তার বাবার বন্ধু। তাই মোহনা অমতা অমতা করে বললো, জ্বী আঙ্কেল, আসলামু আলাইকুম।
তখন সেই লোকটি বলে উঠলো,
-তোমার তো আজকে বিয়ে, কিন্তুু তুমি এতো রাতে বাইরে কি করছো?
– আঙ্কেল আমি আসলে….
সত্যি বলতে সেই সময় মোহনার বলার মতো কিছু ছিলোনা। আর সেই বাবার বন্ধটি আগে থেকেই জানতো যে, মোহনা রাগ করে বিয়ের দিনে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসেছে। এবং মোহনা কে খোজার জন্য সেই লোকটি বাইরে বের হয়েছিলো। তাই আর কথা না বাড়িয়ে সেই লোকটি বলে উঠলো, চল, বাসায় চলো।
সেই সময় মোহনার বাড়িতে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিলোনা। তাই সে তার বাবার বন্ধুর সাথে বাড়িতে যেতে শুরু করলো। আর মনে মনে একরাশ দুঃখ নিয়ে ভাবতে লাগলো। কিভাবে সে তার ভালোবাসার মানুষ কে ছেড়ে অন্য কারো সাথে সংসার করবে। এসব কথা ভাবতে ভাবতে একটা সময় সে তার বাড়িতে গিয়ে পৌঁছালো।
আর বাড়িতে গিয়ে দেখলো, সেখানে বিয়ে বাড়ির সব আয়োজন শেষ হয়েছে। মোহনা কে দেখে তার মা তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। আর কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলো, কেন তুই এত বড় সিন্ধান্ত নিলি। তুই কি একবারও আমাদের পরিবারের মান সম্মান এর কথা ভাবলি না।
সে পাশে তাকিয়ে দেখলো, যে বাবা কে সে এতোদিন সে পাষান আর পাথরে তৈরি মানুষ হিসেবে জেনেছে। সেই বাবার চোখেও আজ জল বইয়ে পড়ছে। তাই তখন মোহনার পরিবারের মতে বিয়ে করা ছাড়া মোহনার আর অন্য কোন উপায় ছিলো না। অবশেষে সেই দিনে মোহনা তার বুকে এক সাগর কষ্ট নিয়ে বিয়ের কাজ শেষ করলো। আর এখন মোহনার বাসর রাত।
আজ মোহনার বাসর রাত। মনের মধ্যে শত শত কষ্ট নিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে নেয়া বাসর ঘরে বসে আছে মোহনা। হঠাৎ, করে দরজার ওপাশে একটু ঠক করে আওয়াজ হলো। মোহনা বুঝতে পারলো, এবার তার বিবাহিত স্বামী ঘরের মধ্যে প্রবেশ করছে। তাই, সে নিজেকে একটু প্রস্তুত করে নিলো। আর যতোটা সম্ভব, শাড়ীর আঁচল দিয়ে নিজের মুখটা ঢেকে রাখার চেষ্টা করলো।
কিছু সময় পর, তার স্বামী ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলো। তারপর বিছানায় এসে বসলো। তখনও মোহনা তার শাড়ীর আঁচল দিয়ে নিজের মুখটা ঢেকে রেখে বসে আছে। তাই, তার স্বামী কাছে এসে আস্তে আস্তে তার মাথার উপর থেকে শাড়ি তুলতে লাগলো। কিন্তুু যখন তার স্বামী মোহনা মাথার উপর থেকে শাড়ী তুললো। তখন সে বলে উঠলো, মোহনা তুমি?
এবার মোহনা তার স্বামীর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো। আর সেও বলে উঠলো, নাঈম তুমি। তুমি এখানে কি করছো। এভাবে দুজন দুজনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। যেন, তারা অন্য একটা পৃথিবীতে এসে পৌঁছে গেছে। কারন, মোহনা যে ছেলেটি কে ভালোবাসতো। সেই ছেলেটি আর কেউ নয়। বরং যার সাথে তার বিয়ে হয়েছে। সেই নাঈম হলো, তার একমাত্র ভালোবাসার মানুষ।
কিন্তুু এটা কিভাবে সম্ভব? আর তারা দুজন দুজনকে ভালোবাসে। অথচ আজ তাদের বিয়ে, এরপরও কেন তারা জানতে পারলো না? এই প্রশ্ন গুলো তারা একে অপরকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো। হয়তবা আপনিও ভাবছেন যে, এটা আবার কিভাবে সম্ভব। তো যদি আপনি এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চান। তাহলে আপনাকে এই গল্পের আরো একটু গভীরে যেতে হবে।
সময়টা ছিলো শিক্ষাজীবনের, যে সময়ে মোহনা ও নাঈম একই ভার্সিটিতে লেখাপড়া করতো। যখন মোহনা ও নাঈম চুটিয়ে একে অপরের সাথে প্রেম করতো। সেই সময়ে রোজ পার্কে দেখা না করলে যেন তাদের দিন পূর্ণ হতোনা। তবে কথায় আছে, প্রকৃতির খেলা বোঝা বড় দায়।
কারন, অন্যান্য দিনের মতো সেইদিনও মোহনা ও নাঈম পার্কে বসে গল্প করছিলো। আর সেই সময়ে হঠাৎ করে চারপাশে যেন একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে গেলো। হঠাৎ করেই যেন বিকট শব্দে ককটেল বিস্ফোরিত হতে লাগলো। আর সেখানে থাকা সব মানুষ চারপাশে ছোটাছুটি করতে লাগলো। ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে উঠলো সেখানকার পরিবেশ। তখন তারা কি করবে ভেবে উঠতে পারছিলো না।
আর কোন কিছু বুঝে উঠার আগে যখন নাঈম মোহনা কে নিয়ে পালাতে যাবে। সেই সময় কয়েকটা পুলিশ এসে নাঈমেরে শার্টের কলার টেনে ধরলো। আর বলতে লাগলো, এই ব্যাটা, নেতামী করো, গুন্ডামি করো, ককটেল ফুটাও। চল তোরে আজকে থানায় নিয়া ইচ্ছামতো বানামু।
তখন নাঈম কিছু বলতে চাইলেও, পুলিশের লাঠির বাড়িতে কিছু বলতে পারলো না। আর তখনও আশে পাশে থাকা মানুষ গুলো যে যেখানে পারছিলো সেখানে দৌড়াদৌড়ি করছিলো। তাই নাঈমর কথায় পুলিশ আর কর্ণপাত করছিলো না।
এভাবে কেটে গেলো ২ টি বছর। মোহনা মুক্ত আকাশে চলাফেরা করতে পারলেও, নিরপরাধ নাঈম এখনও জেলে বন্দি হয়ে আছে। কারন, তার বিচারকার্য এখনও শেষ হয়নি। তবে সেই সময়ে নাঈম জেলে বন্দি থাকলেও মোহনার পরিবার আর বসে থাকেনি। বরং প্রতিনিয়ত মোহনা কে বিয়ে করার জন্য চাপ দিচ্ছিলো।
আর মোহনা ভেবে পাচ্ছিলো না যে, এখন সে কি করবে। তাই, আরো কয়েকটা মাস কেটে যাওয়ার পর মোহনা বাধ্য হয় বাড়ির পছন্দে বিয়ে করতে। এদিকে নাঈম জেল থেকে ছাড়া পেলেও, সে আর মোহনার সাথে যোগাযোগ করার সাহস পায়নি। কারন, কেউ তো চাইবে না একটা আসামীর সাথে তাদের পরিবার এর মেয়েকে বিয়ে দিতে।
তাই নাঈম জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। এই খবরটা মোহনা আর জানতে পারেনি। আর যেহুতু নাঈম জেলে ছিলো। তাই তার পরিবার যতো দ্রুত সম্ভব নাঈমর বিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছিলো। আর এ কারণে তাদের পারিবারিক ভাবে বিয়ে ঠিক হলেও। তারা যে দুজন দুজনকে বিয়ে করতে পারছে। সেটা তাদের কাছে অজানা থেকে গেছিলো।
আর যখন বাসর ঘরে তারা এই কথা গুলো জানতে পারে। তখন মোহনা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। নিজের অশ্রু ভেজা নয়নে জড়িয়ে ধরে নাঈম কে। কারন, আজ তারা তাদের ভালোবাসার মানুষ কে আপন করে পেয়েছে। এখন তারা একে অপরের সাথে কাটিয়ে দিতে পারবে বাকিটা জীবন।
হয়তবা, সবার জীবনে এমন ভালোবাসা আসবে না। তবুও চাই, সবার ভালোবাসা গুলো পূর্নতা পাক। সব ভালোবাসার মধ্যে স্বার্থকতা আসুক।
আরো দেখুন:
আরো রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পেতে চান?
প্রিয় পাঠক, কেমন লাগলো আজকের রোমান্টিক ভালোবাসার গল্পটি? -আশা করি, আজকের এই রোমান্টিক ভালোবাসার গল্পটি আপনার অনেক ভালো লেগেছে। আর আপনি যদি নিয়মিত এই ধরনের রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পেতে চান। তাহলে আমাদের সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ, এতক্ষন ধরে আমার লেখা রোমান্টিক ভালোবাসার গল্পটি পড়ার জন্য। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।