ভালোবাসা দিবস কেন পালন করা হয়?
ভালোবাসা দিবস কেন পালন করা হয়? | কে ভ্যালেন্টাইনস ডে আবিষ্কার করেন এবং কেন?
ভালোবাসা দিবস কি? ভালোবাসা দিবস কেন পালন করা হয়? সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে হল প্রেম, বন্ধুত্ব উদযাপন করার জন্য একটি বার্ষিক উৎসব খ্রিষ্টানদের। এটি ইউরোপের দেশে প্রতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে পালন করা হয়। আর এখন এটি সারাবিশ্বেই ছড়িয়ে পড়চে। প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি মানুষ নিজের সঙ্গী, পরিবার এবং বন্ধুদের ভালবাসা এবং স্নেহের বার্তা পাঠানোর মাধ্যমে এই দিনটি উদযাপন করে থাকে। দম্পতিরা ভ্যালেন্টাইন্স ডেতে একে অপরকে কার্ড, ফুল, এবং বার্তা পাঠানোর মাধ্যমে তার প্রকাশ করে।
কিন্তু এইভাবে ভালোবাসা প্রকাশ, একান্তে সময় কাটানো ইসলামিক দিক থেকে সম্পূর্ণরূপে হারাম বা নিষিদ্ধ। আমাদের আজকের পোস্টের উদ্দেশ্য আপনাকে সামনে আগত ১৪ ফেব্রুয়ারিতে এই দিবস পালন করতে উৎসাহী করা না বরঞ্চ এই দিবসের উৎপত্তি ও ভালোবাসা দিবস কেন পালন করা হয় সে সম্পর্কে তথ্য দেয়া।
ভালোবাসা দিবস কেন পালন করা হয়?
ভ্যালেন্টাইন ডে এর নামকরণ করা হয়েছে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নাম অনুসারে, যিনি ছিলেন একজন ক্যাথলিক ধর্মযাজক। যিনি ৩য় শতাব্দীতে রোমে বসবাস করতেন। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন সম্পর্কে অনেক গল্প আছে এবং সময়ের সাথে সাথে এই গল্পগুলি কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছে যা আমরা আজ জেনেছে।
ভ্যালেন্টাইনের জীবনের সময়, অনেক রোমান খ্রিস্টান ধর্মে রূপান্তরিত হয়েছিল, কিন্তু সম্রাট ক্লডিয়াস দ্বিতীয় একজন পৌত্তলিক ছিলেন এবং খ্রিস্টানদের পালন করার জন্য কিছু নিয়ম তালিকাভুক্ত করে দেওয়া হয়েছিলে এবং তা পালন করার জন্য কঠোর আইনও ছিল, যা না পালন করলে কঠোর শাস্তি পেতে হতো আস্বামীকে। ক্লডিয়াস বিশ্বাস করতেন যে, রোমান সৈন্যদের সম্পূর্ণরূপে রোমের প্রতি নিবেদিত হওয়া উচিত এবং তাই তাদের বিয়ে করা থেকে বিরত রাখার জন্য একটি আইন পাস করা উচিত।
কারণ নারীদের কাছ থেকে দূরে রাখতে পারলে পুরুষরা আরো বেশি আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে পারবে দেশের জন্য। কিন্তু এই নিয়ম ভাঙ্গতে উদ্যত হোন সেই সময়ের এক ব্যক্তি যার নাম ছিল সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন রোমের সৈন্যদের গোপনে খ্রিস্টান আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে করাতে শুরু করেন। আসলে এর পেছনে তার উদ্দেশ্য ছিল, তিনি সকলকে ভালোবাসা ও প্রেমের গুরুত্ব বোঝাতে চেয়েছিলেন তার এই কাজে মাধ্যমে।
রোমের রাজা কে এই ভ্যালেন্টাইন তার খোঁজ শুরু করলে এবং অবশেষে তাকে খুঁজে পাওয়া গেল এবং ক্লডিয়াসের বিরুদ্ধে তার কৃত অপরাধের জন্য জেলে যেতে হলো তাকে। বন্দী থাকাকালীন, ভ্যালেন্টাইন তার সহ বন্দীদের এবং তার জেলরের অন্ধ কন্যার যত্ন নিতেন। কিন্তু জেলে থাকা অবস্থায়ই তিনি প্রেমে জড়িয়ে পড়েন সেই মেয়েটির সাথে এবং অবৈধ সম্পর্ক তৈরি করেন এতে করে রোমের রাজা আরো বেশি ক্রোধান্বিত হন এবং তার জন্য মৃত্যুদন্ডের শাস্তি দেন। তার এই মৃত্যুদন্ড ৩৭০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কার্যকর করা হয়েছিল।
আরো দেখুনঃ
কে ভ্যালেন্টাইনস ডে আবিষ্কার করেন এবং কেন?
পোপ গেলাসিয়াস প্রথম প্রাথমিকভাবে 496 খ্রিস্টাব্দে ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদ্ভাবন করেছিলেন যখন তিনি ২০০ বছরেরও বেশি আগে এই একই দিনে মারা যাওয়া ভ্যালেন্টাইনের স্মরণে “দ্য ফিস্ট অফ সেন্ট ভ্যালেন্টাইন” দিবস চালু করেন।
মধ্যযুগে কবি চসারই প্রথম সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে রোমান্টিক প্রেমের সাথে যুক্ত করেছিলেন। এটি ছিল দরবারী প্রেমের ঐতিহ্যের সূচনা, সাধারণত গোপনে প্রেম এবং প্রশংসা প্রকাশের একটি রীতি। এই রীতি ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রেমের হাইকোর্টের গল্পগুলি বেড়ে ওঠে যেখানে মহিলা বিচারকরা প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রেম সম্পর্কিত সমস্যাগুলির উপর রায় দেবেন। ইতিহাসবিদরা বিশ্বাস করেন যে এই সভাগুলি প্রকৃতপক্ষে সমাবেশ ছিল যেখানে লোকেরা প্রেমের কবিতা পড়ে এবং ফ্লার্টেশনের খেলা খেলত।
কিন্তু আজ আমরা যে ভ্যালেন্টাইনস ডেকে চিনি, কার্ড এবং চকলেট দিয়ে, এর ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছিল ১৯৮৫ সালের শেষের দিকে। হলমার্ক যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ভ্যালেন্টাইন্স ডে বিজ্ঞাপন চালু করেছিল, এবং তারাই প্রথম নিজেদেরকে “দ্য ভ্যালেন্টাইন্স স্টোর” বলে দাবি করেছিল। আর সেখান থেকেই এই দিবসের শুরুটা হয়েছে। এই স্টোরে বিভিন্ন ধরণের ভালোবাসার আকৃতির কার্ড ও উপহার থাকতো যাতে ক্রেতারা কিনতে আগ্রহী হতে পারে। আর পণ্য কিনতে কিনতেই এটি দিবসে পরিণত হয়ে যায়।
বর্তমানে কিভাবে ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করা হয়?
বেশিরভাগ দেশে ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালিত হলেও বিভিন্ন সংস্কৃতি এই উৎসবের জন্য তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য গড়ে তুলেছে। বিশ্বের কিছু অংশে ভ্যালেন্টাইন্স ডে রোমান্টিক দম্পতিদের পরিবর্তে পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুদের মধ্যে ভালবাসা প্রকাশের দিন হিসাবে পালন করা হয়। কিছু ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে শিশুদের জন্য ললিপপ এবং উপহার রেখে যাওয়া এবং অন্যদের মধ্যে রয়েছে বন্ধুদের মধ্যে সম্প্রীতির প্রকাশ করা।
ভালোবাসা দিবস কেন পালন করা হয়? ভ্যালেন্টাইনস ডে সাধারণত রোমান্টিক প্রেমের সাথে জড়িত, প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভ্যালেন্টাইন্স ডে কার্ড বিনিময় করা হয় এই দিনে। ফুলের উপহার বা একটি একক লাল গোলাপ প্রিয়জনকে রোমান্টিক বার্তা সহ পাঠানো হয় এবং দম্পতিরা একসাথে বিশেষ সময় কাটায়।
অনেক দম্পতি রাতের খাবার, পিকনিক বা বিশেষ বাড়িতে রান্না করা খাবারের সাথে ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদযাপন করতে পছন্দ করে। অনেক রেস্তোরাঁ ভ্যালেন্টাইনস ডে ডিনার প্রচারের প্রস্তাব দেয়। আরেকটি জনপ্রিয় ভ্যালেন্টাইনস ডে ক্রিয়াকলাপ হল একটি বিলাসবহুল হোটেলে একটি সুন্দর অবস্থানে থাকা, যা একটি দম্পতিকে এগুলি থেকে দূরে সরে যেতে এবং একসাথে কিছু ভালো সময় উপভোগ করতে সুযোগ করে দেয়।
ভালোবাসা দিবসে বিবাহের প্রস্তাবগুলিও জনপ্রিয়, এবং এটি প্রায়শই তাদের ভালবাসা এবং প্রতিশ্রুতি প্রকাশের জন্য উপযুক্ত দিন হিসাবে বেছে নেওয়া হয়। কিছু বিয়ের প্রস্তাব খুব আকর্ষণীয়ভাবে করা হয়, যেমন পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণের পরে, বা বিলবোর্ডে একটি বার্তা পোস্ট করা। পদ্ধতি যাই হোক না কেন, ভালোবাসা দিবসে বিবাহের প্রস্তাবগুলি সাধারণত রোমান্টিক এবং স্মরণীয় হয়।
উপসংহার: আমাদের আজকের পোস্টের টাইটেল ছিল ভালোবাসা দিবস কেন পালন করা হয়, প্রথম এই প্রম্নের উত্তরে বলতে হয় এটি ইউরোপীয় সংস্কৃতি, মুসলিমদের নয়। কাউকে ভালোবাসা দোষের কিছু নয়, বরঞ্চ এটি মানুষের প্রকৃতিগত ফিতরাত যে, নারী-পুরুষ একে অপরকে ভালোবাসবে। কিন্তু তা অবশ্যই বৈধ পন্থায় হওয়া উচিত। আজকের পোস্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে এই দিবস পালন করানো আমাদের উদ্দেশ্য নয় বরঞ্চ তথ্য শেয়ার করাই ছিল মূল বিষয়।
কোন কিছু প্রেক্ষাপট খারাপ বা কষ্টের হলেই যে তা আমাদের জন্য ভালো হবে এমনটা নয়, খারাপ কিছুর উৎপত্তি যেভাবেই হোক তা সব-সময়ই নিন্দনীয়। তাই ভালোবাসা দিবস কেন পালন করা হয় তা জেনে এটা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয় একজন মুসলিম হিসেবে।