আধুনিক ইতিহাসের জনক কে? | ইতিহাস কাকে বলে?
ইতিহাস কি? | ইতিহাস কাকে বলে? | আধুনিক ইতিহাসের জনক কে?
আধুনিক ইতিহাসের জনক কে আজ যেটা বর্তমান কালকেই সেটা অতীত। কিন্তু পুরনো কিছু বিষয় ও ঘটনা এমন থাকে যা ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে এবং যুগের পর যুগ মানুষ তা পড়ে নিজেদের পূর্বপুরুষের অবস্থা, জীবনাচরণ, যুদ্ধবিগ্রহ তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া নানা বিষয়াদি সম্পর্কে জানতে পারে।
কিন্তু এই ইতিহাসের প্রবক্তা বা জনক কে? আধুনিক ইতিহাসের জনক কে এর উত্তরে যার নাম আসে তিনি হচ্ছেন হেরোডোটাস। হেরোডোটাস যিনি একজন প্রাচীন গ্রীক ইতিহাসবিদ ছিলেন। ইতিহাস হল একটি জাতির দর্পণ বা আয়নার মতো যার মাধ্যমে একটি জাতি নিজেদের শিকড়কে জানতে পারে এর অর্থ তারা নিজেদেরকেই দেখতে পারেন।
আরো দেখুনঃ
আধুনিক ইতিহাসের জনক কে, ইতিহাস কি, ইতিহাস কাকে বলে ও ইতিহাস সম্পর্কিত এমন কিছু বিষয় যা একজন মানুষকে ইতিহাস সম্পর্কে জানতে আগ্রহী করে তুলবে।
ইতিহাস কি? | ইতিহাস কাকে বলে?
সমস্ত মানব সমাজেরই একটি ইতিহাস রয়েছে। ইতিহাস হল অতীতকে জানা বিশেষ করে অতীতের মানুষ, সমাজ, ঘটনা এবং সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা করা।
ইতিহাস হল মহান ব্যক্তিত্ব, জয়-পরাজয়, যুদ্ধবিগ্রহের গল্পে ভরা এক আখ্যান। ইতিহাস আমাদের পরিচয় তুলে ধরে, আমাদের শেকরকে চেনায়। আমরা কোথা থেকে এসেছি তা একমাত্র আমরা ইতিহাসের মাধ্যমেই ভালোভাবে বুঝতে পারি। ইতিহাস আমাদের শেখায় মানুষ হওয়ার অর্থ কি, মানবজাতির কি কি অর্জন রয়েছে এবং তাদের সময় ঘটে যাওয়া বিপর্যয়গুলো কি কি কারনে হয়েছিল।
আধুনিক ইতিহাসের জনক কে?
আধুনিক ইতিহাসের জনক কে ইতিহাসের জনক হোরোডোটাস তার বিভিন্ন প্রাচীনতম কাজ পৃথিবীতে এখনোও বিদ্যমান রয়েছে তার জন্য তিনি বেশ সুপরিচিত ইতিহাসবিদদের মাঝে। পশ্চিমা বিশ্বে হেরোডোটাসকে ইতিহাসের জনক বলা হয় কারণ তিনিই প্রথম প্রামাণিক ঐতিহাসিক পাঠের লেখক ছিলেন সে সময়কালে। হেরোডোটাস রোমান রাষ্ট্রনায়ক সিসেরোর কাছ থেকে “ইতিহাসের জনক’ উপাধিক অর্জন করেন। হেরোডোটাসের বইটি গ্রিকো-পার্সিয়ান যুদ্ধের বিভিন্ন তথ্যপূর্ণ ডিগ্রেশনে পূর্ণ। যদিও তিনি কিছু ব্যপারে সমালোচিত ছিলেন।
বৈজ্ঞানিক ইতিহাসের জনক কে?
থুসিডাইডসকে বৈজ্ঞানিক ইতিহাসের জনক বলা হয়। থুসিডাইডস ছিলেন একজন অ্যাথিনিয়ান জেনারেল এবং ইতিহাসবিদ। পেলোপনেশিয়ান যুদ্ধের ইতিহাস লেখার কারণে তিনি উল্লেখযোগ্যভাবে ইতিহাসে সমাদিত।
থুসিডাইডস যখন পেলোপনেশিয়ান ইতিহাস লিখছিলেন তখন তিনি এক্ষেত্রে বেশ কঠোরতা অবলম্বন করেছিলেন। যার মধ্যে তিনি প্রত্যক্ষদর্শীদের স্বাক্ষর এবং যুদ্ধের সময় একজন জেনারেল হিসেবে তার নিজের ভূমিকা ও অভিজ্ঞতা যোগ করেছিলেন এই লেখনীতে।
ভারতীয় ইতিহাসের জনক কে?
ভারতীয় ইতিহাসের জনক বলা হয় মেগাস্থিনিসকে। তিনি পারস্যের সেলিউসিড রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা সেলুকাস আই নিকেটরের একজন রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি তার ইন্দিকা বইয়ের মাধ্যমে ভারত ভ্রমণের বিবরণ, ভূগোল এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে লিখেছিলেন। ভারতের মানুষের রীতিনীতি, সংস্কৃতি, সমাজের বর্ণনা, ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা জমির মালিকানা কি ধরণের ছিল এ সকল বিষয়ই ছিল তার লেখার মূল প্রতিপাদ্য।
ইতিহাস ও অতীত
যারা নতুন নতুন ইতিহাস নিয়ে পড়া শুরু করেছেন তারা প্রায়ই মনে করেন যে ইতিহাস এবং অতীত একই জিনিস। কিন্তু এই দুটি বিষয় কিন্তু এক নয় এর ভিতরে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। অতীত হলো পূর্ববর্তী সময় সেখানে বসবাসকারী মানুষ, সমাজ এবং সেখানে সংঘটিত ঘটনাকে বোঝায়।
অতীতে যা ঘটেছে তা সময়ের মধ্যে স্থির এবং তা কখনোই পরিবর্তন করা যায় না বা সম্ভব নয়। কিন্তু ইতিহাস নিয়মিত পরিবর্তিত হয়।
“হিস্ট্রি” বা ইতিহাস ইংরেজি শব্দ “স্টোরি” এই দুটি শব্দই ল্যাটিন হিস্টোরিয়া থেকে উদ্ভূত যার অর্থ অতীতের ঘটনার বর্ণনা বা বিবরণ। ইতিহাস নিজেই অতীত সম্পর্কে হাজার হাজার গল্পের একটি সংগ্রহ যা বিভিন্ন লোকের দ্বারা বলা হয়েছে।
ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস সম্পর্কে
প্রথম ঐতিহাসিক হেরোডোটাস সম্পর্কে আসলে খুব কমই জানা গেছে যেহেতু তিনি ও তার লেখনী খুব আগের। তাকে যা জানা গেছে তা তার লেখনীর মাধ্যমে জানা গেছে। তিনি তুরস্কের হ্যালিকারনাসাস শহরের বাসিন্দা ছিলেন যা পূর্ব পারস্য সাম্রাজ্যের একটি অংশ ছিল। হেরোডোটাস একজন ভ্রমণপিপাসু মানুষ ছিলেন তিনি মিশর, এথেন্স, সিরিয়া, ব্যাবিলনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করেছিলেন। তিনি ভ্রমণ করতে করতে দানিউব নদী এবং কৃষ্ণ সাগর পর্যন্ত পৌঁছেছেন। তার ভ্রমণে তিনি অনেক স্থানীয়দের সাক্ষাৎকার নেন এবং লিখিত বিবরণ সংগ্রহ করেন। হেরোডোটাস একজন কৌতূহলী মানুষ হওয়াতে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে লোকদের কাছ থেকে যা শুনতেন তা লিখে রাখার সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন।
হেরোডোটাস লেখায় সত্য এবং কল্পকাহিনীর একটি সূক্ষ্ম মিশ্রণ থাকায় তার লেখাগুলি অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিল। আর হেরোডোটাসের লেখার কারণে অনেক ইতিহাসবিদ ইতিহাস সম্পর্কে লিখতে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। হেরোডোটাসের মৃত্যুর ২৫০০ বছর পরে জনপ্রিয় হয়ে উঠে কারণ বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ মিশরের সভ্যতা ও সংস্কৃতি বোঝার জন্য তার বিবরণগুলো পড়তেন।
আরো দেখুনঃ
ইতিহাস বিখ্যাত কিছু উদ্ধৃতি
ইতিহাস সবসময় নিজেকে পুনরাবৃত্তি করে যা সম্পর্কে বিখ্যাত এবং অনুপ্রেরনামূলক কিছু উদ্ধৃতি রয়েছে যা একজন মানুষকে ইতিহাস সম্পর্কে জানতে আগ্রহী করে তুলবে।
- ইতিহাস সম্পর্ক মার্কাস গার্ভে বলেছেন, যে জাতি তাদের অতীত ইতিহাস, উৎপত্তি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অজ্ঞ সে জাতি শিকড়বিহীন গাছের মতো
- মাইকেল ক্রিকটন বলেছেন, আপনি যদি ইতিহাস না জানেন তবে আপনি কিছুই জানেন না। তুমি এমন একটি পাতা যে জানে না যে এটা গাছের অংশ।
- আর্নেস্ট ডিমনেট বলেছেন, অতীতের ইতিহাস আমাদের কেবল ততটা আগ্রহী করে যখন এটি বর্তামানের ইতিহাসকে আলোকিত করে।
- রবার্ট এ হেইনলেন বলেন, যে প্রজন্ম ইতিহাসকে উপেক্ষা করে তার কোনো অতীত নেই এবং ভবিষ্যৎও নেই।
- এডি ভড়ার বলেন, জীবন দ্রুত চলে। যতটা পারো, তোমার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
- কাল মার্কস বলেন, ইতিহাস নিজেকে পুনরাবৃত্তি করে, প্রথম ট্র্যাজেডি হিসাবে, দ্বিতীয় প্রহসন হিসাবে
- অস্কার ওয়াইল্ড বলেন,ইতিহাস যে কেউ গড়তে পারে কিন্তু একজন মহান মানুষই তা লিখতে পারেন।
- মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র বলেন, আমরা আসলে ইতিহাস তৈরি করি না, আমরা নিজেরাই ইতিহাস দ্বারা তৈরি হই।
উপরে আমি ইতিহাসের বিখ্যাত কিছু ব্যক্তির উক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি ইতিহাস সম্পর্কে। ইতিহাস একটি জাতির জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ তা এই বিখ্যাত ব্যক্তিরা তাদের ভাবপূর্ণ উক্তির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। আপনি উক্তি গুলো থেকেই ইতিহাসের গুরুত সম্পর্কে ধারণা করতে পারছেন আশা করছি।
সমাপ্তি: আধুনিক ইতিহাসের জনক কে ইতিহাস আসলে বারবার পুনরাবৃত্তি হয়। ইতিহাস থেকে আমরা আমাদের পূর্ব-পুরুষদের সম্পর্কে জানতে পারি, তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সামাজিক অবস্থান সবকিছু। তাই প্রতিটি মানুষের উচিত নিজেদের ইতিহাস সম্পর্কে জানা, নিজের শিকড় সম্পর্কে জ্ঞান আহোরণ করা এতে করে সে অনেক সমস্যার সমাধানও করতে পারবে। আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি আধুনিক ইতিহাসের জনক কে এই প্রশ্নের উত্তর।
আশা করছি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপনি আর্টিকেলটি পড়েছেন কারণ সম্পূর্ণ আর্টিকেলটিই ছিল তথ্যে ভরপুর যা আপনাকে আধুনিক ইতিহাসের জনক কে, ইতিহাস কি, বৈজ্ঞানিক ইতিহাসের জনক কে, ইতিহাস কাকে বলে এই সকল বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিবে।