ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা
ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা | গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা
ডাবের পানি গরমে খুবই উপকারি। আমাদের দেশে গরমে ডাবের পানি প্রচুর পরিমাণে খাওয়া হয়। নিয়মিত ডাবের পানি খেলে ডিহাইড্রেশন ও বিভিন্ন রোগ থেকে বেঁচে থাকা যায়। ডাবের পানিতে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, জিঙ্ক এবং ম্যাঙ্গানিজ শরীর ভালো রাখতে ও শরীর গঠণে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
ত্বকের উজ্জলতা, কিডনি রোগ দূর করতে, তারুণ্য ধরে রাখতে, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভাব কার্যকরী বেশ।তাই ডাবের উপকারিতা ও অপকারিতা আমাদের জানতে হবে।
আবার যাদের কিডনি রোগে সমস্যা আছে এবং ডায়াবেটিসে তাই ডাক্তারের পরামার্শ নিয়ে ডাব খাওয়া উচিত তাই ডাবের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে।
আরো দেখুন: কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
ডাবের পানির পুষ্টিগুণ
- পানি ১৫.৫%
- পটাশিয়াম – ০.২৫%
- ফসফরিক এসিড – ০.৫৬%
- ক্যালসিয়াম -০.৬৯%
- ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড – ০.৫৯.
- নাইট্রোজেন – ০.০৫%
- চিনি -০.৮০
ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা
ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে এই ইনফোটিতে আলোচনা করা হলো :
ডাবের পানির উপকারিতা
1.ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে:
ডাবের পানিকে বলা হয় প্রাকৃতিক টোনার। এটি ত্বককে বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণ রোগ থেকে সার্বিকভাবে রক্ষা করে। এর ফলে ত্বকের ঔজ্জ্বলতা বাড়ে ও মসৃণ থাকে। ত্বকে ক্রুণের প্রকোপ কমাতেও ডাবের জুরি মেলা ভার। তাই ভাবের উপকারিতা ও অপকারিতা জানা জরুরি।
2.ওজন হ্রাস করতে:
ডাবের পানি শরীরের লবণের পরিমাণকে ঠিক রাখে এর ফলে ওয়াটার রিটেনশন বেড়ে যায় যার ফলে ওজন বৃদ্ধিজনিত অশঙ্কাও কমতে থাকে। ডাবের পানিতে আছে বেশকিছু উপকারি এনজাইম যা হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। পাশাপাশি মেটাবলিজমের উন্নতিতেও কাজ করে থাকে। এর ফলে খার পর তা খুব ভালোভাবে হজম হয়ে যায় এবং কোন খারা অবশিষ্ট থাকে না হয় না এর অতিরিক্ত জমা খাবারের কারণে শরীরের মেদ হওয়ার কোন সুযোগ থাকে না আর। এর ফলে ধীরে ধীরে ওজন কমতে থাকে।
3.ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে:
ডাবের পানিতে রয়েছে ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম যা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ডাবে থাকা পটাশিয়াম শরীরের লবণের ভারসাম্য ঠিক রাখে যার ফলে ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত ডাবের পানি খাওয়া উচিত।
4.ব্লাড সুগারের নিয়ন্ত্রণে:
২০১২ সালের জার্নাল ফুড অ্যান্ড ফাংশন স্টাডিসের এক রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায় যে, ডাবের পানিতে থাকা ডায়াটরি ফাইবার এবং অ্যামাইনো এসিড রক্তে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে প্রাকৃতিকভাবেই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
5.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে:
ডাবের পানিতে রয়েছে থিয়ামিন, নিয়াসিন, পাইরিডোক্সিন এবং রাইবোফ্লবিন এই উপকারি উপাদানগুলো নিয়মিত ডাবের পানি খাওয়ার ফলে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে। এর ফলে শরীরের অভ্যন্তরের জীবাণু দ্বারা ক্ষতির কোন সুযোগই থাকে না আর। পাশাপাশি ডাবের পানিতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ এবং অ্যান্টি-ভাইরালের উপস্থিতি ফলে নানাবিধ সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে এই ভাবের পানি।
6.শরীরের পানির অভাব পূরণে:
ডাবের পানি গ্রহণের সাথে সাথে শরীরের পানির স্বল্পতা কমতে থাকে। ডাবের পানিতে ইলেকট্রোলাইট কম্পোজিশান থাকে যা বমি, অতিরিক্ত ঘামের পর খনিজের ঘাটতি পূরণে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে এই ডাবের পানি তাই গরমকালে ভার নিয়মিত খাওয়া খুব বেশি জরুরি
7.হার্টের টনিক:
ডাবের পানি শরীরের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমিয়ে তা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। তাই এক্ষেত্রে ডাবের পানির কোন বিকল্প হতে পারে না। দেহে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ ডাবের পানি বাড়িয়ে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস করে। তাই হার্টের সমস্যায় ডাবের পানি খাওয়া খুবই উপকারি।
আরো দেখুনঃ তুলসী পাতার উপকারিতা.
8.মাথা যন্ত্রণা দূর করতে:
শরীরে পানির অভাব বা মাইগ্রেনের সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক এক গ্লাস ডাবের পানি হতে পারে ভালো সমাধান ডাবের পানি খেলে কষ্ট কমতে থাকে। ডাবের পানিতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার চিকিৎসা হিসাবে কাজ করে।
9.তারুণ্য ধরে রাখতে:
তারুণ্য ধরে রাখতে ডাবের পানির জুরি নেই। ডাবের পানিতে রয়েছে সাইটোকিনিস নামের এক প্রকার অ্যান্টি-এজিং উপাদান যা ত্বকে বয়সের ছাপ ফেলতে দেয় না। এর সাথে ত্বককে সুন্দর ও মসৃণ রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
10.কিডনি ফাংশনের উন্নতিতে:
ডাবের পানিতে থাকা প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। সেই সাথে শরীরে উপস্থিত টক্সিন উপাদনকে ইউরিনের সঙ্গে বের করে। দেয়। এর ফলে নানাবিধ জটিল রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
11.মানটিস চাপ কমানোর ক্ষেত্রে:
ডাবের পানিতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম শরীরের ভিতর প্রবেশ করে স্ট্রেস কমায়, অতিরিক্ত অস্বস্থি ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। পেশিকে সচল রাখতেও ডাবের পানি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
12.হরমোনের সমস্যায় ভাবের পানি:
হরমোনাল সমস্যা দূর করার জন্য ডাব খুক্ত কার্যকরী। যাদের হরমোনের প্রবলেম আছে তারা নিয়মিত ডাব খেতে পারেন। হরমোনের সমস্যার কারণে চুল পড়া বা শারীরিক অন্য কোন সমস্যা হতে পারে তাই নিয়মিত ডাব খেলে উপকার পাবেন। প্রতিদিন সকালে ডাবের পানি খাওয়ার পর সকালের নাস্তা করুন। ডাবের সাদা অংশসহ ডাবের পানি খেয়ে নিন।
13.প্রস্রাবের সমস্যা দূর করতে ডাবের পানি:
ডাবের পানি মূত্রনালিকে ভালো রাখে। তাই যাদের প্রস্রাবের পর জ্বালা-পোড়ার সমস্যা রয়েছে তারা ডাবের পানি খেতে পারেন। ডাব ঠাণ্ডা হওয়ায় এটা জ্বালা-পোড়া কমাবে। প্রস্রাবের যাবতীয় সমাধানে ডাব খুবই উপকারী। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই কচি ডাবের পানি খেতে হবে।
ডাবের পানি খাওয়ার অপকারিতা:
ডাবের পানি খাওয়ার কিছু অপকারিতা ও রয়েছে এর উপকারিতার পাশাপাশি। চলুন জেনে নেই সেগুলি কি কি। তাই ডাবের পানির উপকারিতা এবং অপকারিতা জানা দরকার আমাদের।
1.কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে এক বিপদ:
আমরা ডাবের উপকারিতায় জেনেছি যে, ডাবের পানি কিডনি ভালো রাখতে খুবই কার্যকরী। কিন্তু যাদের কিডনির রোগ হয়ে গেছে তাদের ডাবের পানি খাওয়া সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। কারণ ভাবে থাকে পটাশিয়াম, কিডনি রোগীদের শরীরের অতিরিক্ত পটাশিয়াম কিডনির সমস্যার কারণে শরীর থেকে বের হয় ফলে ডাবের পটাশিয়াম এবং শরীরের পটাশিয়াম এক সাথে মিলে হৃদপিণ্ড অকার্যকর করে দেয়। এর ফলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তাই যারা কিডনি সমস্যায় ভুগছেন বা যাদের শরীরের প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আছে তাদের ডাবের পানি না খাওয়াই ভালো ডাবের পানি খেলে অবশ্যই তা খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।
2.ওজন কমানোয় বাঁধ:
যাদের ওজন বেশি তারা ভাবের পানি বেশি না খাওয়াই ভালো ভাবের পানি শরীরে ক্যালরির পরিমাণ বাড়ায় অন্যান্য পানীয় বা ক্রুসের তুলনায় ডাবের পানিতে চিনির পরিমাণ কম থাকে তারপরও ডাবের পানি খেলে প্রাকৃতিকভাবে শরীরে ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে যায়।
আরো দেখুনঃ
পরিসমাপ্তি: উপরোক্ত তথ্য বহুল ইনফোটিতে ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ডাবের পানির প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে যেমন : কিডনি রোগীদের, ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে। তাই নিয়মিত ডাব খাওয়া উচিত কিন্তু যাদের সমস্যা রয়েছে তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে উচিত। ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা জানা তাই জরুরি।