ঘি এর উপকারিতা ও অপকারিতা
ঘি এর উপকারিতা ও অপকারিতা (ঘি খাওয়ার নিয়ম)
যুগ যুগ ধরে একটি মজাদার খাদ্য হিসেবে আমাদের সকলের বেশ পরিচিত যে আইটেমটি তা হল ঘি। আপনি কি ঘি এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন?
বহুকাল আগে মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র মোক্ষম হিসেবে খাবারের অবস্থান ছিল সবার উপরে। বর্তমান যুগেও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য খাবারের কোন ধরণের বিকল্প নেই। সেই আদিকাল থেকে মানুষ খাবারের প্রাকৃতিক উৎসের উপর বেশি নির্ভরশীল ছিল। ফলে তাদের শারীরিক গঠন ছিল বেশ আলাদা। বহা বাহুল্য তাদের গড় আয়ু ছিল বর্তমান যুগে মানুষের তুলনায় অধিক।
বর্তমান সময়ে ভেজাল যুগেও খাবার গ্রহণের ফলে মানুষের শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানুসিক স্বাস্থ্যের বেশ অবনতি গঠছে। কিন্ত সকল ধরণের ভেজাল খাদ্যের মধ্যে এমন একটি খাদ্য রয়েছে যা আজ সেই প্রাকৃতিক খাবার হিসেবে আমাদের কাছে বেশ পরিচিত। আর সেই প্ৰাকৃতিক খাবারের নাম হল ঘি। ঘি এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে সাথেই থাকুন।
আরো দেখুনঃ ডায়াবেটিস কমানোর উপায়.
ঘি এর ইংরেজি কি?
যেকোনো বাড়ির ছোট বড় সকলের পছন্দের একটি আইটেম হল ঘি। ঘি একই সাথে উপকারী এবং মজাদার ঘরে ঘরে ঘি থাকা চাই ই চাই। যুগ যুগ ধরে এই আইটেমটি মানুষের মনের এক বিশেষ খাবার হিসেবে যুক্ত রয়েছে। ঘি বেশ শক্তিবর্ধক একটি উপাদান বিধায় সকল বয়সের মানুষ সমানতালে ঘি খেতে পারবে। ঘি পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। তবে ঘি আপনি যদি কোন সাধারণ খাদ্য মনে করেন এটি একটি খাদ্য উপাদানের পাশাপাশি বেশ স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর একটি আইটেম।
যখন আলোচনা আসে ঘি নিয়ে প্রথমে মাথায় যে জিনিসটি আসে তা হল ঘিয়ের তৈরি পদ্ধতি। ঘি বেশ মজাদার আইটেম হলেও আমরা অনেকে জানিনা যে ,ঘি কিভাবে তৈরী নিয়ে। মূলত গরুম দুধের ঘন আস্তরণ থেকে তৈরী করা হয় ঘি। প্রাকৃতিকভাবে যে ঘি তৈরী করা হয়ে থাকে তা যেমন ব্যয়বহুল ঠিক তেমনি বেশ পুষ্টিকর বটে। ঘি এর একটি সুবিধা হল যে ঘি খুব সহজে কোন ধরণের প্রিজারভেটিভ ছাড়া সংরক্ষণ করা যায়।
ঘি একটি বাংলা শব্দ। তবে ইংরেজিতে ঘি বলতে clarified butter বলা হয়ে থাকে। তবে অনেক ক্ষেত্রে ঘিরে ghee বলা যায়। অসম্ভব পুষ্টিগুণসম্পন্ন এবং স্বাদে অনন্য এই আইটেম সকলের কাছে বেশ মজাদার এবং পছন্দের আইটেম হিসেবে পরিচিত। ঘি শুধু খাবার হিসেবে খাওয়া হয় তা কিন্তু নয়। বরং নানান ধরণের মজাদার ডিশ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ঘি। ঘি এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে চোখ রাখুন আজকের আর্টিকেলের মধ্যে।
ঘি খাওয়ার নিয়ম | Rules For Eating Ghee
মজাদার একটি আইটেম হিসেবে ঘি কমবেশি সকলে বেশ পছন্দ করে থাকে। ঘি শুধুমাত্র একটি সুস্বাদু আইটেম তা কিন্তু নয়। বরং একটি পুষ্টিকর আইটেমের পাশাপাশি নানান ধরণের রোগ নিবারণের কাজ ব্যবহৃত হয়ে থাকে ঘি। কিন্তু আমরা অনেকেই ঠিক জানিনা ঘি খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে সম্পর্কে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ঘি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে-
আপনি যদি ঘি খেতে চান তাহলে আপনি প্রতিদিন সকালে এক চামচ ঘি খেতে পারেন। এতে আপনি নানান রজার হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবেন।
আপনি চাইলে গরম ভাতের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন মজাদার এবং সুস্বাদু ঘি।
আবার গরম ডালের সাথে মিশিয়ে আপনি ঘি খেতে পারেন।
পাউরুটির সাথে মিশিয়ে আপনি খেতে পারেন ঘি।
ঘি এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে সাথেই থাকুন।
ঘি এর উপকারিতা | Benefits Of Ghee
জনপ্রিয় একটি খাদ্য উপাদান হিসেবে আমরা সকলে ঘি কমবেশি চিনি।কিন্তু একটি খাবার হিসেবে ঘি যেমন হউক না কেম তার রয়েছে নানান ধরণের স্বাস্থ্য গুণাগুন। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ঘি এর উপকারিতা সম্পর্কে –
বাতের ব্যাথা প্রশমনে ভূমিকা:
যাদের শরীরে আর্থাইটিস কিংবা বাতের ব্যাথা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন সকালে এক চামচ ঘি খান তাহলে খুব তারাতারি শরীরে বাতের ব্যাথা প্রশমন করতে সাহায্য করবে।
ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে:
ঘি অনেক ফ্যাট জাতীয় আইটেম। যা নিয়মিত খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে ওজন বৃদ্ধি পাবে।তাই যারা ওজন বৃদ্ধি করতে চান তারা নিয়মিত ঘি খেলে বেশ উপকার পাবেন।
শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে:
আমাদের খাবারের অনিয়ম এর কারণে আমাদের শরীরে কোলেস্টরেলের পরিমাণ বেশ বেড়ে যায়। যা পরবর্তীতে হৃদরোগের কারণ হতে পারে।তাই আপনি যদি শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে চান তাহলে নিয়মিত ঘি খেতে পারেন। এতে বেশ উপকার পাবেন।
ব্যাথা নিরাময়ে:
আমাদের অজান্তে আমরা শরীরে নানান ধরণের ক্ষত কিংবা ব্যাথায় আক্রান্ত হয়ে থাকি।কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত ঘি খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার শরীরের নানান ধরানের ব্যাথা খুব সহজেই নিরাময় করতে পারবেন।
খাবার হজম করতে সাহায্য করে:
ঘি আমাদের খাবার হজম করতে সাহায্য করে। ফলে নিয়মিত ঘি খাওয়ার ফলে আমরা আমাদের পাকস্থলির নানান ধরানের সমস্যা থেকে সহজে মুক্তি পেতে পারি।
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সমাধানে:
নিয়মিত ঘি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে খুব সহজে মুক্তি পাওয়া যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
ঘিতে বিদ্যমান রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্টের মত উপাদান যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে আমাদের শরীরকে সুস্থ এবং সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।
ক্ষুধামন্দা দূর করতে সাহায্য করে:
ঘি এমন একটি উপাদান যার মধ্যে রয়েছে ওমেগা থ্রি।ওমেগা থ্রি আমাদের ক্ষুধামন্দা দূর করতে সাহায্য করে।তাই যারা ক্ষুধামন্দা আক্রান্ত তারা ঘি খাওয়ার ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
শরীরকে কর্মচঞ্চল করে:
নিয়মিত ঘি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর বেশ কর্মচঞ্চল হয়ে উঠে। ফলে আমাদের কাজে মনযোগ আসে।
রাগ কমাতে সাহায্য করে:
অনেক সময় প্রচন্ড রাগে মাথায় হিতাহিত জ্ঞান কাজ করে না।তাই আপনার যদি প্রচন্ড হয় তখন আপনি যদি ঘি এর গন্ধ নেন তাহলে খুব সহজেই আপনার রাগ কমে যাবে।
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখে:
ঘি আমাদের ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। সেই সাথে আমাদের ত্বককে মসৃণ এবং উজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে:
ঘি আমাদের মানবদেহে ক্যান্সারের জীবাণু শরীরে প্রবেশে বাধা প্রদান করে।এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ কার্যকর একটি ভূমিকা পালন করে থাকে।
দুধের পরিবর্তে ঘি:
অনেকেই দুধ খেতে পারেনা। তাই যাদের এই সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত খেতে পারেন ঘি।এতে আপনি বেশ উপকার পাবেন।
হ্রদরোগ প্রতিরোধে:
আমাদের শরীরে হ্রদরোগ প্রতিরোধ করতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ঘি।
ডায়বেটিক নিয়ন্ত্রণে:
ডায়বেটিক নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকরি ভূমিকা পালন করে থাকে ঘি।তাই যাদের ডায়বেটিক রয়েছে তারা নিয়মিত ঘি খেলে খুব সহজে ডায়বেটিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে:
ঘি নিয়মিত খাওয়ার ফলে খুব সহজে তা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে:
ঘি এমন একটি উপাদান যা আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে বেশ সাহায্য করে।
আরো দেখুনঃ থানকুনি পাতার উপকারিতা.
ঘি এর অপকারিতা
আপনাদের মাঝে এতক্ষণ আমরা ঘি এর উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি কিন্তু এর অপকারিতা রয়েছে। তবে ঘি এর উপকারিতার তুলনায় অপকারিতা অনেক কম। আর এর কারণ আমরা পূর্বে জেনেছি। তবে আমরা সকলে জানি যে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যেকোনো খাবার অতিরিক্ত সেবন করা হচ্ছে ক্ষতিকর। তাই আমরা যখন যে খাবার খাব অবশ্যই মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। যেকোনো খাবার পরিমাণ মতো খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকার বয়ে আনে। নিম্নে ঘি এর অপকারিতা দেয়া হলো-
- যে কোনো সুস্থ মানুষ যদি অতিরিক্ত পরিমাণে ঘি খেয়ে থাকে তাহলে তার দেহের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- ঘি অতিরিক্ত সেবন করার ফলে দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
- যে ধরনের ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাক বা হৃদ রোগ রয়েছে তাদের মাত্রাতিরিক্ত ঘি খাওয়া উচিত নয় এবং যদি তারা মাতৃত্ব খেয়ে ফেলে তাহলে তাদের মৃত্যু ঝুঁকি থাকে।
- যে সকল ব্যক্তি ডায়াবেটিস রয়েছে তারা অতিরিক্ত পরিমাণে ঘি খাওয়ার ফলে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত ঘি খাওয়ার ফলে দেহে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং সেইসাথে ওজন বৃদ্ধি পায়। আর আমরা সকলেই জানি যে দেহের ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়।
- যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা যদি অতিরিক্ত পরিমাণে ঘি খেয়ে ফেলে তাহলে তাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হবে এর পাশাপাশি পেট ফাঁপা এবং পেট ভারী মনে হবে।
- যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের ঘি খাওয়া থেকে বিরত থাকতেই হবে নতুবা তারা অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। বিশেষ উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস সমস্যাজনিত ব্যক্তিদের ঘি না খাওয়া ভাল।
- এছাড়াও যে সকল ব্যক্তির হাড়ের সমস্যা রয়েছে তাদের ঘি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
সুতরাং কোন ব্যক্তির অতিরিক্ত পরিমাণে ঘি খাওয়া উচিত নয়। যেকোনো ব্যক্তি সুস্থ এবং অসুস্থ অবস্থায় অবশ্যই ঘি খাওয়া হতে বিরত থাকা উচিত এবং যদিও ঘি খেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া যাবেনা। তবে আপনাদের উচিত নিয়মিত ঘি খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা এবং যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিকস, হূদরোগ, অতিরিক্ত ওজন, হার জনিত সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঘি খাবেন।
গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার উপকারিতা
একজন গর্ভবতী নারীর সব সময়ে খাবারের দিকে একটু বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।কারণ একজন শিশুর গর্ভাবস্থায় থাকতেই শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ ঘটে থাকে। আর শিশুর পরিপূর্ণ শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে এক বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে ঘি।তাই শিশুর পরিপূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে গর্ভাবস্থায় ঘি খেতে হবে নবাগত মাকে।চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে –
কোন গর্ভবতী যদি নিয়মিত ঘি খেয়ে থাকে তা তার অনাগত সন্তানের হাত এবং পা এবং সেই সাথে শরীরের হাড়ের গঠন মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
কোন গর্ভবতী যদি ঘি খেয়ে থাকে তাহলে তার অনাগত সন্তানের ব্রেন ডেভেলপমেন্টে তা বিশেষ সাহায্য করে।
প্রশবে ব্যাথা নিরাময়ে সাহায্য করে থাকে ঘি।
কোন গর্ভবতী যদি নিয়মিত ঘি খেয়ে তাহলে তার অনাগত সন্তান নানান ধরণের রোগ বালাই থেকে রক্ষা পেতে পারবে।
ঘি এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে সাথেই থাকুন।
আরো দেখুনঃ আমলকি খাওয়ার নিয়ম.
উপসংহারঃ মজাদার এবং পুষ্টিগুন সম্পন্ন একটি খাদ্য উপাদান হিসেবে ঘি বেশ সমাদৃত। আশা করি আজকের আলোচনার মাধ্যমে ঘি এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।তাই শরীরকে সুস্থ এবং কর্মচঞ্চল রাখতে চাইলে নিয়মিত ঘি খাবেন সেই কামনাই ব্যক্ত করি।