ভগ্নাংশ কাকে বলে?
ভগ্নাংশ কাকে বলে ? ভগ্নাংশের প্রকারভেদ
গণিতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ভগ্নাংশ। যে ভগ্নাংশগুলি আমরা আজকের দিনে ব্যবহার করি ১৭শতক পর্যন্তও তা ইউরোপে পরিচিত ছিল না? আসলে প্রথম প্রথম ভগ্নাংশগুলিকে তাদের নিজস্ব সংখ্যা হিসাবে মোটেও ভাবা হত না, একে অপরের সাথে সম্পূর্ণ সংখ্যার তুলনা করার একটি উপায় হিসেবে ভাবা হত।
ভগ্নাংশ বিষয়টি যিনি শিখেছেন তার কাছে মজার আর যিনি শিখেন নি তার কাছে কঠিন।হিসাব করতে ভগ্নাংশের ব্যবহার অপরিহার্য। প্রাথমিক গণিত বইয়ে ভগ্নাংশ নিয়ে বড় একটি অধ্যায় রাখা হয়েছে যাতে শিশুরা ছোট থেকেই ভগ্নাংশ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পায়।
আজকের আর্টিকেলে আমরা জানব, ভগ্নাংশ কাকে বলে? ভগ্নাংশ কি?ভগ্নাংশের প্রকারভেদ। কে প্রথম ভগ্নাংশ ব্যবহার করেন? তারা কি সবসময় একই ভাবে লেখা হয়েছে? ভগ্নাংশ কিভাবে আমাদের এখানে পৌঁছেছে? এই ধরণের প্রশ্ন যা আমরা আপনার জন্য উত্তর দিতে যাচ্ছি।
ভগ্নাংশ কাকে বলে?
ভগ্নাংশকে নানাভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। যেমন যার লব ও হর আছে সেটিই ভগ্নাংশ। আবার,দুটি পূর্ণ সংখ্যাকে ভাগ করলে যে রাশি পাওয়া যায় তাই ভগ্নাংশ বা Fraction।
একটি উদাহরণের সাহায্যে বুঝে নিই ভগ্নাংশ কাকে বলে। ধরি, হাতে একটা কাঠি আছে। কাঠিটা ৭ইঞ্চি লম্বা। কাঠিটার ওপরের দিকে যদি খানিকটা ভেঙে ফেলা হয় তাহলে দেখা যায় ভাঙা অংশটা হলো ৩ ইঞ্চি। এ ভাঙা টুকরোটা হলো আগের আস্ত কাঠিটার ‘ভাঙা অংশ’ মানে ভগ্নাংশ।গণিতের ভাষায় লিখলে এটা হবে ৩/৭।
আরো দেখুনঃ ভাগফল নির্ণয়ের সূত্র.
ভগ্নাংশের ইতিহাস
ভগ্নাংশ শব্দটির উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ থেকে যার অর্থ ভাঙা। খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০সাল থেকে মিশরীয়রা ভগ্নাংশ আকারে সংখ্যা লিখেছিল।তাদের পদ্ধতিটি ছিল কঠিন ও অগ্রহণযোগ্য। পরে ব্যাবিলনীয়রা ভগ্নাংশ নির্ণয়ে কেবল তাদের সংখ্যা বাড়িয়েছে কিন্ত তাদের কাছে শূন্য বা দশমিকের মতো কিছু ছিল না বলে এটি পড়ার ক্ষেত্রে সংখ্যাগুলিকে খুব বিভ্রান্তিকর করে তোলে।আসলে ব্যাবিলনীয়দের ভগ্নাংশ লেখায় ত্রুটি ছিল।
ভগ্নাংশের ইতিহাসে আমরা আজ যে বিন্যাসটি জানি তা সরাসরি ভারতীয় সভ্যতার কাছ থেকে আসে।ভারতীয়রা ব্রাহ্মী নামক লেখার পদ্ধতি থেকে একটি পদ্ধতি তৈরি করেছিল, যার নয়টি চিহ্ন বা সংখ্যা এবং একটি শূন্য ছিল। আবার আরবদের ব্যবসার মাধ্যমে এই ভারতীয় সংখ্যাগুলি আরবে ছড়িয়ে পড়ে ফলে সেখানে সেগুলি একই আকারে ব্যবহৃত হতে থাকে।এভাবে ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে ভগ্নাংশের এইনিয়ম ছড়িয়ে পড়ে।
ভগ্নাংশের প্রকারভেদ
ভগ্নাংশকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
সাধারণ ভগ্নাংশ এবং দশমিক ভগ্নাংশ।নিচে এগুলো নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো।
১.সাধারণ ভগ্নাংশ:
কোনো সংখ্যাকে নির্দিষ্ট ভাগে বিভক্ত করে তাকে হর দ্বারা এবং নির্দিষ্ট অংশ হতে গৃহীত অংশকে লব দ্বারা চিহ্নিত করে গাণিতিকভাবে প্রকাশ করলে যে ভগ্নাংশ তৈরি হয় তাই সাধারণ ভগ্নাংশ বলে।
সাধারণ ভগ্নাংশ আবার তিনভাগে বিভক্ত। যথা :
ক.প্রকৃত ভগ্নাংশ:
কোন ভগ্নাংশের লব ছোট ও হর বড় হলে তাকে প্রকৃত ভগ্নাংশ বলা হয়।যেমন – ৫/৭ , ২/৭, ৩/১০
খ.অপ্রকৃত ভগ্নাংশ:
কোন ভগ্নাংশের লব বড় ও হর ছোট হলে তাকে অপ্রকৃত ভগ্নাংশ বলা হয়।যেমন – ৭/৩ , ৭/৫ , ৮/৭
গ.মিশ্র ভগ্নাংশ;
যে ভগ্নাংশটি একটি অখণ্ড সংখ্যা এবং একটি প্রকৃত ভগ্নাংশের সমন্বয়ে গঠিত হয় তাকে মিশ্র ভগ্নাংশ বলে।
২.দশমিক ভগ্নাংশ:
কোন ভগ্নাংশকে যখন দশমিক(.) চিহ্নের দ্বারা প্রকাশ করা হয়,তখন তাকে দশমিক ভগ্নাংশ বলে। যেমন – ৬/১২ = ০.২
দশমিক ভগ্নাংশ আবার দু প্রকার।যথা:
ক.সসীম দশমিক ভগ্নাংশ:
যে দশমিক ভগ্নাংশের দশমিক বিন্দুর ডানে সসীম সংখ্যা থাকে তাকে সসীম দশমিক ভগ্নাংশ বলে।
যেমন- ১৫/২=৭.৫
খ.অসীম দশমিক ভগ্নাংশ:
যে দশমিক ভগ্নাংশের দশমিক বিন্দুর পর অঙ্কগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটলে তাকে অসীম দশমিক ভগ্নাংশ বলে।যেমন ১৩ কে ৩ ভাগ করলে, ৪.৪৪৪এরকম একই সংখ্যা বার বার পুনরাবৃত্তি হবে। এগুলিই হলো অসীম দশমিক ভগ্নাংশ।
এগুলো ছাড়াও আরও কয়েক ধরণের ভগ্নাংশ আছে।যেমনঃ
সমতুল ভগ্নাংশ:
যদি দুইটি ভগ্নাংশের মধ্যে প্রথম ভগ্নাংশের হর ও দ্বিতীয় ভগ্নাংশের লব এবং দ্বিতীয় ভগ্নাংশের হর ও প্রথম ভগ্নাংশের লব এর গুনফল যদি সমান হয় তবে তাকে সমতুল ভগ্নাংশ বলে।
আংশিক ভগ্নাংশ:
যখন কোন ভগ্নাংশকে একাধিক ভগ্নাংশের যোগফলরূপে প্রকাশ করা হয়,তাহলে যাদের যোগফলরূপে প্রকাশ করা হয়,তাদের প্রত্যেকটিকে প্রথমোক্ত ভগ্নাংশটির আংশিক ভগ্নাংশ বলা হয়।
সমহর ভগ্নাংশ:
দুইটি ভগ্নাংশে হর একই হলে তাকে সমহর ভগ্নাংশ বলে।যথা :১/৫,২/৫
সমলব ভগ্নাংশ:
দুইটি ভগ্নাংশে লব একই হলে তাকে সমলব ভগ্নাংশ বলে।যথা:২/৩,২/৫
আরো দেখুনঃ গুণ কাকে বলে?
পরিশেষে: আজকের আর্টিকেলে আমরা ভগ্নাংশ কাকে বলে, এর ইতিহাস, প্রকারভেদ সম্পর্কে জানলাম।আশা করি শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত হবে। আর গণিত শেখাও সহজ হবে।আপনার যদি ভগ্নাংশ কাকে বলে নিয়ে আর কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানান।