বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও মৃত্যু তারিখ
বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও মৃত্যু তারিখ | বঙ্গবন্ধুর জীবনী ইতিহাস
বাংলার অবিসংবাদিত নেতা তিনি। তার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ আজও বাঙ্গালির মুখে মুখে ভেসে বেড়ায়। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। এক মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। ১৭ মার্চ ১৯২০ সাল, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে বঙ্গবন্ধুর জন্ম।
টুঙ্গি নাম এসেছে টঙ্গ থেকে। মাঝ বরারবর জলাভূমি আর পূর্বে ঘাঘোর নদী আর পশ্চিমে মধুমতি। শহর ছেড়ে ৬০ মাইল দূরের দক্ষিণ-পশ্চিমে টুঙ্গিপাড়াগ্রাম যা গোপালগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত। এ গ্রামের এক বনেদি মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমন। তিনি ছিলেন বাবা মায়ের তৃতীয় সন্তান। মুজিব নামের অর্থ সঠিক উত্তরদাতা। শেখ মুজিবরের নানা শেখ আবদুল মজিদ তার নাম দিয়েছিলেন মুজিব। তার বাবা-মা তাকে খোকা নামেই ডাকতেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও মৃত্যু তারিখ
শেখ মুজিবুরের জন্য কত সালে (বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও মৃত্যু তারিখ):
১৭ মার্চের ১৯২০ সাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম সায়েরা খুতন ও বাবার নাম লুৎফর রহমান। তিনি ছিলেন পিতা-মাতার তৃতীয় সন্তান।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু কত সালে (বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও মৃত্যু তারিখ):
১৫ আগস্টে শেখ মুজিবকে সহপরিবারে হত্যা করা হয় তার নিজ বাসভবনে। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় তারা বেঁচে যান।
আরো দেখুনঃ
বঙ্গবন্ধুর বংশ-পরিচয় | বঙ্গবন্ধুর জীবনী ইতিহাস
শেখ বোরহানউদ্দিন তার তিন পুত্র সন্তান। শেখ কুদরত উল্লা, শেখ একরাম ও শেখ তা মোহাম্মদ। শেখ জাকির ও শেখ ওয়াসিমউদ্দিন ছিলেন শেখ একরামের দুই পুত্র। শেখ মুজিবরের দাদার নাম ছিল আব্দুল হামিদ। আব্দুল হামিদ হলেন শেখ জাকিরের পুত্র। আব্দুল হামিদেরেও ছিল তিন পুত্র- শেখ শফিউর রহমান, শেখ হাবিবুর রহমান ও শেখ লুৎফর রহমান। শেখ মুজিবরের পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান।
শেখ মুজিবর রহমান তার নিজের লেখ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকে জানা যায় যে, তাদের বাড়ির যে দালান ছিল তা প্রায় দুইশত বছরেরও বেশি হবে পুরনো। শেখ বোরহান উদ্দিনের পরে তার কোন বংশ পাওয়া যায়নি। প্রায় ৩-৪ পুরুষ পর্যন্ত। কিন্তু তার ছেলের ছেলে বা এক-দুই পুরুষ পর তার ভাইয়ের বংশের হিসাব পাওয়া যায়। দুই ভাইয়ের ইতিহাস জানা যায়। পরে, এরা একজন হলেরন শেখ একরাম উল্লাহ ও শেক কুদরত উল্লাহ।
শেখ মুজিবের যে বংশ এখন তা এই দুই ভাইয়েরই বংশধর। জমিদারদের সাথে এই দুই ভাইয়ের ব্যবসা-বাণিজ্যও ছিল এবং তারা সেই সময়ে খুব অর্থ সম্পদের মালিকও ছিলেন। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে শেক একরাম উল্লাহ সমাজের নেতা বিশেষ ছিলেন, বিচার-আচার, আইন-কানুন দেখতেন তিনি। অপরদিকে কুদরত উল্লাহ মানুষ ও সংসারম মনোযোগী ব্যাক্তি ছিলেন।
তেকড়ী শেখের পুত্র হলেন শেখ বোরহান উদ্দিন। তিনি বহুকাল সোনারগাঁএে বসবাস করেছেন। শেখ জহির উদ্দিন ছিলেন তেকড়ী শেখের পিতা। শেখ আউয়ালের পুত্র ছিলেন শেক জহির উদ্দিন। শেখ আউয়াল উদ্দিন দরবেশ আউয়াল নামেও বেশ সুপরিচিত ছিলেন।
শেখ মুজিবরের বাবা ও দাদার পর, সোনারগাঁএে তেকড়ী শেখ বহুকাল বাস করেছিলেন। ব্যবসার কারণে একসময় তিনি খুলনায় চলে যান। তেকড়ী শেখের উত্তরাদিকারীরা শেখ বোরহান উদ্দিন টুঙ্গিপাড়া গ্রামটির নাম শোনেন যা মধুমতি ও ঘাঘর নদীর মাঝখানে জেগে উঠেছিল। শেখ বোরহান উদ্দিন তারপর রূপসা নদী পাড়ি দিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় চলে আসেন এবং সেখানে এসে বিয়ে করেন। আর এভাবেই টুঙ্গিপাড়ায় গোড়াপত্তন ঘটে শেখ পরিবারের.
আরো দেখুনঃ পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান.
বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম
১৯২০ সাল শেখ মুজিবুরের জন্ম তারিখ (বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও মৃত্যু তারিখ)
১৭ মার্চের ১৯২০ সাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম সায়েরা খতন ও বাবার নাম লুৎফর রহমান। তিনি ছিলেন পিতা-মাতার তৃতীয় সন্তান।
১৯৩৮ সাল শেখ মুজিবের বিবাহিত জীবন:
বঙ্গবন্ধু বিয়ে করেছিলেন ফজিলাতুন্নেসাকে। যাকে তিনি রেণু বলে ডাকতেন সবসময়। বিয়ের সময় তার বয়স ছিল ১৮ বছর। তার ছিল ৫ সন্তান। ২ কন্যা ও ৩ পুত্রের সংসার ছিল তার। ২ কন্যা হলেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পুত্ররা হলেন; শেখ কামাল, জামাল ও শেখ রাসেল।
বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাজীবন (১৯২৭ সাল):
গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমান সাত বছর বয়সে ভর্তি হন। গোপালগঞ্জের পাবলিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক পাশ করার পর নয় বছরে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। এরপরে তিনি গোপালগঞ্জের মিশনারি স্কুলে পড়াশোন শুরু করেন। খুবই দুষ্ট প্রকৃতির ছিলেন তিনি বাল্যকালে। খেলাধূলা ও মাঠকে কেন্দ্র করেই তার শৈশব কেটেছে অনান্য দূরন্ত বালকদের মত। তিনি ছিলেন অসম্ভব মেধার অধিকারী। স্কুল জীবনে মেধাবী হিসেবে তিনি নাম কামিয়েছিলেন। ফুটবল খেলায় তার ঝোঁক ছিল। প্রতিযোগিতামূলক খেলায় তিনি অসংখ্যবার পুরষ্কার অর্জন করেছেন ভালো ফুটবলার হিসেবে।
১৯৪২ স্নাতক অর্জন:
গোপালগঞ্জের মিশনারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশের পর তিনি কলকাতায় চলে যান। সেখানকার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হয়ে যান। বর্তমানে এই কলেজের নাম মৌলানা আজাদা কলেজ। ১৯৪৭ সালে এই কলেজ থেকে তিনি স্নাতক পাশ করে বের হন।
আরো দেখুনঃ মেট্রোরেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান.
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন
১৯৪৩ সাল শেখমুজিবেরর মুসলিম লীগে যোগদান:
বাংলার প্রাদেশিক মুসলিম লীগে শেখ মুজিবর রহমান যোগদানের পর সেখানের কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন। এটি ছিল অল ইন্ডিয়া লীগের শাখা।
ভারত বিভাজনের পূর্ব পর্যন্ত এখানে তিনি তার দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন ১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত।
১৯৪৬ সাল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অংশগ্রহণ:
শেখ মুজিব যখন তখন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লাগে। বলতে গেলে প্রতিদ্বন্দিতাবিহীন তিনি তিনি ইসলামিয়া কলেজের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৬ আগস্ট ১৯৪৬ সালে কুখ্যাত ক্যালকাটা কিলিং যাকে বাংলায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলে যা শুরুর মাধ্যমে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রতি নষ্ট ও হানাহানি শুরু হয়। হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য তিনি কাজে নেমে পড়েন এবং এর মাধ্যমে তিনি বহু নিরীহ হিন্দু-মুসলিমদের জীবন রক্ষা করেন।
১৯৪৭ সাল ভারত বিভাজন:
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় নতুন এক স্বত্ত্বার আবির্ভাব। হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির শান্তি মিশন চলার সময় মহাত্মা গান্ধীর সাথে সাক্ষাৎ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন বাংলাকে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশের জন্য শেখ মুজিবুর রহমনা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে যোগদান করেন আন্দোলনে। ভারত ও পাকিস্তানের পাশাপাশি তিনি বাংলাকে তৃতীয় রাষ্ট্র হিসেবে ও স্বন্ত্রভাবে দেখতে চেয়েছিলেন। যদিও তা সফল হয়নি কিন্তু এর মাধ্যমেই নতুন রাষ্ট্রের বুনিয়াদ গড়ে উঠেছিল।
১৯৪৮ সাল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম বিরোধী দলীয় ছাত্র সংগঠণ প্রতিষ্ঠা করেন। যা পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ নামে পরিচিত ছিল। খাজা নাজিমউদ্দিন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে মেনে নিতে হবে এই ঘোষণার পর ছাত্রদের নিয়ে সক্রিয়ভাবে প্রতিবাদ জানান। ২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফজলুল হক হলে “সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ” গঠণ করেন। এরপর ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষার দাবিতে ছাত্রদের নিয়ে ধর্মঘট করার কারণে তারা গ্রেফতার হন। ছাত্রদের এই আন্দোলন বজায় থাকার কারণে তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৫ মার্চ তারা ছাত্রনেতাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
১৯৪৯ সাল শেখ মুজিবুরের যুগা সম্পাদক নির্বাচিত হওয়া শেখ মুজিবুর রহমান চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী-কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা বিধান করার জন্য তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সমর্থন জানান। এজন্য অনান্য ছাত্র নেতাদের সাথে মিছিল বের করার প্রস্তুতির সময় তিনি উপচার্যের বাসভবন থেকে গ্রেফতার হন। পূর্ব পাকিস্তানের অধিনে আওয়ামী মুসলিম লীগ ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন তিনি কারাগারে বন্দি ছিলেন। বন্দি থাকা অবস্থায়ই যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে তাকে নির্বাচিত করা হয়।
১৯৫২ সাল ভাষা আন্দোলন:
যখন তৎকালীন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন ঘোষণা দেন যে “একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।” তখন বাংলার প্রতিটি ভাষা প্রেমীর হৃদয়ে জ্বলে উঠে এক আগুন। তারা কখনোই তাদের মায়ের ভাষার বদলে অন্য কোন ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে চায় না দেখতে। তাদের একটাই দাবি বাংলাই হবে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।
ফেব্রুয়ারি মাসের ১৬ তারিখ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত তিনি টানা ১১ দিন কারাবন্দি ছিলেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি তাকে মুক্তি দেয়া হয়। জেল থেকে বের হয়ে তিনি বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার জন্য ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ধর্মঘটের আহ্বান করেন। ছাত্ররা যখন ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে মিছিলে অগ্রসর হয় তখন পাকিস্তানি পুলিশ বাহিনী নিরস্ত্র ছাত্রদের উপর অকাতরে গুলি চালায়। এই মিছিলে শহীদ হন রফিক, সালাম, জব্বার, বরকত শফিউরসহ আরো নাম না জানা অনেক বঙ্গভাষী ছাত্রজনতা।
১৯৫৩ সাল বাঙ্গালি নেতা হয়ে উঠা:
আওয়ামী মুসলিম লীগেরর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার শেখ মুজিবুর রহমানের বাঙ্গালি নেতা হিসেবে নতুন পরিচয় যোগ হয়।
১৯৫৪ সাল পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন:
১৯৫৪ সালের ১০ই মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের অধিনে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২২৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসনে জয়লাভ করে অপরদিকে আওয়ামী লীগ ১৪৩ টি আসনে একাই জয় পায়। ১৫ই মে শেখ মুজিব গোপালগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হন এবং বন ও কৃষি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ১৯৪৭ সালের ২৯ মে ভারত স্বাধীনতা আইন পাশ করে কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকার যুক্তফ্রন্ট ভেঙ্গে দেন। ৩০ মে ঢাকায় আসলে শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয়। ডসেম্বরের ২৩ তারিখে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।
১৯৫৫ সাল আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু:
সকল ধর্মের মানুষের অন্তর্ভুক্তির জন্য শেখ মুজিবর রহমান সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের নাম থেকে মুসলিম’ শব্দটির পরিবর্তে ‘আওয়ামী’ শব্দটি ব্যবহার করা শুরু করেন। ২১-২৩ অক্টোবর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে। ডিসেম্বরের ৬ তারিখে তিনি পুনরায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের।
১৯৫৬ সাল শেখ মুজিবুরের মন্ত্রীসভা ত্যাগ:
খান আতাঙর সরকারের মন্ত্রীসভায় থাকাকালীন তিনি বাঙ্গালির অধিকার আদায়ে আরো সচেষ্ট হতে চেয়েছিলেন। তাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে থেকেই তিনি বাঙ্গালির মুক্তির পথকে আরো বেগবান করার নিমিত্তে তিনি মন্ত্রী সভা থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের সময় তার মন্ত্রীপদের সময়সীমা ছিল মাত্র নয় মাস।
১৯৫৭ সাল চীনে সফর:
১৩-১৪ জুন পুনরায় আওয়ামী লীগের সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর ২৪ জুন তিনি চীন সফরে যান। যা ১৩ জুলাই পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। I
১৯৫৮ সাল পুনরায় গ্রেফতার:
প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা ও জেনারেল প্রধান আইয়ুব খান রাজনৈতিক সকল কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করেন ৭ ই অক্টোবর সামরিক শাসন জারি করার মাধ্যমে। ১১ই অক্টোবর শেখ মুজিব গ্রেফতার হন তারপর। জেলগেইট থেকে তাকে আবার গ্রেফতার করা হয় ১৪ মাস পর তাকে মুক্তি দেয়ার পর।
১৯৬১ স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ গঠণ:
হাইকোর্ট থেকে মুক্তির পর তিনি স্বাধীনতাকামী ছাত্রদের নিয়ে একটি সংগ্রামী পরিষদ গঠণ করেন। উদ্যমী ছাত্রদের নেতৃত্বে এই গোপন পরিষদের নাম দেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’।
১৯৬২ সাল গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠণ:
আইয়ুব সরকারের আমলে শেখ মুজিবকে আবার গ্রেফতার করা হয়। চার বছর সামরিক শাসনের অবশান হয় ২ জুন। তারপর ১৮ জুন শেক মুজিবকে মুক্তি দেয়া হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে শেখ মুজিব অন্যান্য বিরোধীদলকে সাথে নিয়ে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট তৈরি করেন।
১৯৬৪ সাল আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবন:
শে মুজিবের মুক্তির পর বিশেষ এক সভায় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এটি জাতীয় ফ্রন্ট থেকে আলাদা।১১ মার্চ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে শেখ মুজিব দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির কার্যক্রম শুরু করেন।
১৯৬৬ সাল ছয় দফা দাবি উত্থাপন:
৫ ফেব্রুয়ারি বিরোধী দলগুলোর সম্মেলনে ছয় দফা দাবি উন্থাপন করেন শেখ মুজিবর রহমান। যা ছিল বাঙ্গালির মুক্তির সনদ। মুক্তিকামী বাঙ্গালির হয়ে তিনি এই দাবি তুলে ধরেন। বাঙ্গালি জাতির উপর পাকিস্তানের যেই নির্বিচারে নির্যাতন ও দমন-পীড়ন তার অবশানের জন্যই এই দাবি। বাঙ্গালির অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তির দিক এখানে তুলে ধরা হয়। এই দাবির মাধ্যমে তিনি ঔপনিবেশিকক শাসকদের আঘাত করেন। তারপর জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি গণসংযোগ শুরু করেন। এইজন্য শেষ মুজিবুর রহমানকে ৮ বার গ্রেফতার করা হয়। ৮ই মে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। টানা ৩ বছর তাকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়।
১৯৬৮ সাল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা:
তৎকালীন আইয়ুব সরকার ৩৫ জন বাঙ্গালির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা করেন। এর মধ্যে ছিলেন রাজনীতিবিদ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও সরকারি অফিসার। পাকিস্তানকে বিছিন্ন করার দায়ের করে শেখ মুজিবসহ অনান্য ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। শেখ মুজিব ছিলেন ১ নাম্বার আসামি। আগরতলার ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্তদের মুক্তির দাবিতে সমগ্র বাংলা গণবিক্ষোভে ভেঙ্গে পড়ে। ১৯ জুন আগরতলা মামলার বিচারকার্য শুরু হয়।
১৯৬৯ সাল ছাত্র আন্দোলন:
ছাত্রদের কঠোর আন্দোলনের মুখে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে সকল বন্দীদেরকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় তৎকালীন আইয়ুব খানের সরকার। মুক্তির পর শেখ মুজিবুর রহমন রেসকোর্স ময়দানে বর্তমানে যা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নামে পরিচিত এই উদ্যানে ২৩ শে ফেব্রুয়ারি বাঙালির মুক্তির দাবিতে লাখো মানুষের উদ্দেশ্য সেই ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এই ভাষণের ময়দানেই শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু নামে অভিহিত করা হয়। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের এক জনসভায় পূর্ব পাকিস্তানের নাম বাংলাদেশ” রাখেন শেখ মুজিবুর রহমান।।
১৯৭০ সাল নির্বাচনী জয়:
ছয় দফা দাবি আদায়ে বাঙ্গালি জাতি আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে।প্রতীক হিসেবে থাকে নৌকা। ডিসেম্বরের ৭ তারিখে তার ডাকে সাড়া দিতে সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয় এবং আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং জয়যুক্ত হয়। ১৬৭ আসন পায় ১৬৯ আসনের মধ্যে। প্রাদেশিক পরিষদের মধ্যে ২৯৮ টি আসন পায়। সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ ৩১০ টি আসনের মধ্যে।
১৯৭১ সাল ভয়াল কালরাত্রি:
নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে জয়লাভ করার পরও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তরের গড়িমসি শুরু করেন। বরঞ্চ তিনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরুর আগেই অধিবেশন বন্ধ করে দেন। এর প্রতিবাদে বাঙ্গালি জাতি বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় রেসকোর্স ময়দানে তিনি এক বিশাল জনসমুদ্রের মাঝে তার সেই ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” অধিবেশন করার জন্য দফায় দফায় আলোচনা হয়। কিন্তু কোন ফলপ্রসূ সমাধান আসেনি। তারপর ২৬ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
১০ই এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয় এবং শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রপ্রতি ঘোষণা করা হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হন। শেখ মুজিবের অনুপস্থিতে। বাংলার প্রধানমন্ত্রী হন তাজউদ্দীন আহমদ। নয় মাসের যুদ্ধের পর ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৭৫ বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু তারিখ:
১৫ আগস্টে শেখ মুজিবকে সহপরিবারে হত্যা করা হয় তার নিজ বাসভবনে। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় তারা বেঁচে যান।
আরো দেখুনঃ সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য.
পরিসমাপ্তি: শেখ মুজিবুর ছিলেন বাংলাদেশের এক অবিসংবাদিত নেতা। বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও মৃত্যু তারিখ জানাটা তাই আমাদের দরকার। বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও মৃত্যু তারিখ আমাদের ইতিহাসের একটি অংশ। তার রেসকোর্স ময়দানের সেই ভাষণ আজও বাঙ্গালির রক্তে আগুন ধরায়। তার সেই বজ্রকণ্ঠ আজ বাতাসে ভেসে বেড়ায়। তারা সমগ্র রাজনৈতিক জীবন এক ইতিহাস। তার সমগ্র রাজনৈতিক জীবনে তিনি মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছেন।
রাজনৈতিক ভাবে তিনি পরবর্তীতে হত্যার শিকার হন তার পরিবারসহ। সমগ্র বাংলা ও বাঙ্গালিকে সংঘবদ্ধ করতে তিনি কাজ করে গেছেন। তার অবদান বাঙ্গালি জাতি আজীবন মনে রাখবেন। ভারত বিভাজনের পর থেকে পাকিস্তানের আগ্রাসন ও নির্যাতন থেকে বাঁচাতে তিনি একাগ্রচিত্তে কাজ করে গেছেন।