জানাজার নামাজের দোয়া অর্থসহ
জানাজার নামাজের দোয়া | জানাজার নামাজের নিয়ম
জানাজার নামাজের দোয়া কখন পড়া হয়? আমরা সবাই জানি যে প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। আর যখন মানবজাতির যেকোনো একজন ব্যক্তি মারা যায় তখন তার জানাযা পড়া হয়। সে যে কোন বয়সের ব্যক্তি অথবা নারী অথবা পুরুষ হতে পারে। প্রত্যেক মুসলমান মানুষের জানাজা দেয়ার পর তাকে মাটি দেয়া হয়। কিন্তু এই জানাযা পড়ার জন্য জানাজার নামাজের দোয়া রয়েছে। আমরা কম-বেশি অন্যান্য সকল নামাজের দোয়া জানলেও জানাযা নামাজের দোয়া অনেকেই জানিনা। কিন্তু আমাদের এই দোয়াটি জানা অবশ্যই উচিত।
কারণ একজন মুসলিম হিসেবে অন্য আরেকজন মুসলিম ভাই ও বোনের জানাজায় অংশগ্রহণ করা একজন মুসলমান হিসেবে কর্তব্য। সুতরাং আমরা আপনাদের জন্য জানাযা নামাজের দোয়া সম্পর্কিত একটি আর্টিকেল নিয়ে এসেছি। যেখান থেকে আপনারা জানাযা নামাজের দোয়া এবং অন্যান্য সকল কিছু জানতে পারবেন। তাহলে চলুন শুরু করি আমাদের আজকের জানাজার নামাজের দোয়া মূল বিষয়।
জানাজার নামাজ
প্রত্যেক মুসলমানকে কবর দেয়ার পূর্বে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত করা হয় তাকেই জানাজা বলা হয়। আর সেই জানাজাকে জানাজার নামাজ হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এটি একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য ফরজে কেফায়া বা সমাজের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু যদি কোন এলাকা গোত্র পক্ষ থেকে একজন ব্যক্তি নামায আদায় করে তাহলে সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যায়।
জানাজার নামাজ সম্পর্কে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন যে, “ কোন মুসলিম মৃত ব্যক্তির জানাজা নামাজে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরীক করে নাই এমন 40 জন লোক জানাজার নামাজ আদায় করবে এবং মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে তাদের সুপারিশ আল্লাহতালা কবুল করবেন।” ( মুসলিম)।
জানাজার নামাজের জন্য ইমামের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়ে থাকে। আর সেই ঈমানের পেছনে সকল মুসলিম ভাইরা অংশগ্রহণ করে থাকেন। মুসলিম ভাইয়েরা প্রত্যেক কাতারে বিজোড় সংখ্যক ভাবে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে চার তাকবীরের নামাজ আদায় করে থাকেন।
আরো দেখুনঃ কবর জিয়ারতের নিয়ম.
জানাজার নামাজের নিয়ম
এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে তাহলে জানাজার নামাজের সঠিক নিয়ম কি? হ্যাঁ, অবশ্যই আপনাদেরকে আমরা জানাযা নামাজের সঠিক নিয়ম জানিয়ে দিব। আমরা আগেই জেনেছি যে জানাজার নামাজ তার চার তাকবীর এর হয় আর সেইটা তাকবীরের নামাজ কিভাবে পড়া হয় এবং ইমাম সাহেব জানার জন্য কিভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় সেই সাথে লাশ কিভাবে রাখতে হয় তার নিয়ম জানিয়ে দিব।
জানাজার নামাজের নিয়ম হচ্ছে-
- জানাজার নামাজ আদায় করার জন্য প্রথমে একজন মুসলমান ভাইকে অবশ্যই দিতে হবে।
- এরপর যে ব্যক্তির জানাজা পড়ানো হবে সেই ব্যক্তিকে কিবলার দিকে রাখতে হবে।
- মৃত ব্যক্তি যদি পুরুষ হয় তাহলে মাথার পাস বরাবর ইমাম সাহেব দাঁড়াবেন। আর যদি মৃত ব্যক্তির মহিলা হয়ে থাকেন তাহলে ইমাম সাহেবকে মৃত মহিলা ব্যক্তির মধ্যবর্তী স্থানে দাঁড়াতে হবে। ( এটি হচ্ছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সুন্নাত)।
- এরপর ইমাম সাহেবের পেছনেই সকল মুসলমান ভাইয়েরা সারিবদ্ধ ভাবে বিজোড় সংখ্যক হয়ে দাঁড়াবে।
- জানাজার নামাজ চার তাকবীর এর হয়ে থাকে। তাই প্রথম তাকবীরের পর ছানা পড়া হয়।
- দ্বিতীয় তাকবীর এরপর দুরুদ শরীফ পাঠ করা হয়
- তৃতীয় তাকবীরের পর দোয়া পাঠ করা হয়
- এবং চতুর্থবার তাকবীর এরপর সালাম ফিরানো হয়।
- তবে জানাজা নামাজে শুধুমাত্র প্রথম তাকবীরে হাত ওঠাতে হবে এছাড়া বাকি তাকবীরের কোন হাত উঠানোর বিধান নেই।
- যেহেতু জানাযা নামাজের পর কোন দোয়া বা মোনাজাত করা হয় না কারণ ইসলামের বিধান অনুসারে এই নামাজের মধ্যে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা হয়।
- জানাযা শেষ হওয়ার পর মৃত ব্যক্তিকে গুরুস্থানে নিয়ে যেতে হবে এবং ইসলামিক রীতি অনুসারে খবর তৈরি করে দাফন কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
সুতরাং এভাবে মৃত ব্যক্তির জানাজা পড়ানোর জন্য এই নিয়ম অনুসরণ করা হয়।
জানাজার নামাজের নিয়ত
জানাযা নামাযের নিয়ত এর ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা বিধান রয়েছে। যদি কোন পুরুষ/ ছেলের লাশের দাফন এর জন্য জানাযা পড়া হয় তাহলে নিয়ত এ সময় সেখানে “লেহাযাল মাইয়্যেতে” এবং যদি কোন নারী/ মেয়ের জানাযা পড়ানো হয় তাহলে সেখানে জানাযা নামাযের নিয়ত হবে “ লেহাযিহিল মাইয়্যেতে”।
তবে যদি কোন ব্যক্তি জানাযা নামাযের নিয়ত আরবীতে না পড়েন তাহলে বাংলায় পড়তে পারবেন। আর বাংলায় পড়ার জন্য আপনারা এভাবে জানাযা নামাযের নিয়ত করতে পারেন- “ আমি চার তাকবীর এর সহিত ফরজে কিফায়া জানাযার সালাত কিবলামুখী হয়ে ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে মরহুম নারী/ পুরুষ এর জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করছি। আল্লাহু আকবার”।
আপনারা যারা আরবিতে জানাযা নামাযের নিয়ত করতে চান তাদের জন্য আরবিতে জানাযার নিয়ত দেয়া হলো বাংলা উচ্চারণ সহকারে।
জানাজা নামাজে মহান আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা ও রাসূল সাঃ এর উপর দরুদ পাঠ করা হয় আপনারা যদি বাংলায় নিয়োগ করেন তবে বাংলায় এবং আরবীতে নিয়ত আরবীতে নিয়ত করতে পারবেন। এবং আপনারা যখন নিয়তে তাকবীর তাহরিমা অর্থাৎ আল্লাহু আকবর’ বলার পর হাত তুলে নিতে হবে। যেমন করে অন্যান্য নামাজে হাত বেঁধে নেয়া হয়। বাঁধার পর সানা পড়তে হবে।
সুতরাং আমরা এর আগে জানাযা নামাযের নিয়ম উল্লেখ করেছি সেই অনুযায়ী সম্পূর্ণ জানাজার নামাজ চার তাকবীর ব্যবহার করে সমাপ্ত করতে হবে।
জানাজার নামাজের দোয়া
জানাজার নামাজ আদায় করার জন্য যে সকল দোয়া পাঠ করা হয় সেই সকল দোয়া সমূহ নিম্নে আরবি এবং বাংলা উচ্চারণ সহকারে দেয়া হলো-
সানা:
জানাজার নামাজের চার তাকবীর বলা হয়। আর প্রথম তাকবীর পড়ার পর সানা পড়তে হয়।
দুরুদ শরীফ:
জানাজার নামাজে দ্বিতীয় তাকবীর পড়ার পর দুরুদ পড়া হয়।
জানাযার দোয়া:
জানাজার নামাজের তৃতীয় তাকবীর পড়ার পর জানাযার দোয়া পড়া হয়।
আরো দেখুনঃ তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম.
জানাজার নামাজের মাসায়েল
জানাযা নামাজের কিছু জরুরি মাসায়েল রয়েছে আর এই সকল মাসায়েল গুলো অবশ্যই পালন করতে হয়। জানাযা নামাজের জরুরী মাসায়েল গুলো হচ্ছে-
- সানা, দুরুদ, এবং দোয়া পাঠ করার পর আরও তিনবার তাকবীর বলতে হয় এবং সেই সময় ইমাম এবং তার দীর্ঘ হাত বাঁধা অবস্থায় থাকবে।
- জানাজার নামাজ যে ইমাম পড়াবে সেই ইমাম তাকবীর ব্যতীত সকল দোয়া সমূহ চুপে চুপে পাঠ করবে এবং তাকবীর উচ্চস্বরে বলবে। সেইসাথে মোক্তাদিরা তাকবীর সহ সকল দোয়া আস্তে আস্তে বলবে।
- জানাজার নামাজে সালাম ফিরানোর সময় যখন ডান দিকে সালাম ফিরাবে তখন সাথে সাথে ডান দিকের হাত এবং যখন বাম দিকে সালাম ফিরাবে তখন সাথে সাথে বাম দিকের হাত নামিয়ে ফেলতে হবে।
- জানাযার ছালাতে পরে কোনরকম দোয়া মোনাজাত ধরার কোন বিধান নেই।
- যদি কোন কারণে জানাজা নামাজ ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে তা এমন করে জানাজায় শরিক হওয়া যাবে।
- জানাজার নামাজের জুতা পায়ে রেখে জানাজার নামাজ পড়া যাবে। তবে শর্ত অনুসারে যে জুতা পড়ে নামাজ পড়া যাবে সে জুতার নিচে যেন কোন নাপাক কিছু না থাকে। তবে যদি জুতা খুলে জুতার উপর পা রেখে নামাজ পড়তে চায় তবুও পড়া যাবে কিন্তু বাজে স্থানে রাখবে সে স্থানটি পাক হতে হবে।
জানাজার নামাজের ফজিলত
জানাজার নামাজের ফজিলত সম্পর্কে আপনারা অনেকে জানতে চান তার জন্য আমরা জানাযা নামাজের ফজিলত নিয়ে হাজির হয়েছি। আমরা পূর্বে জেনেছি যে জানাজার নামাজ হচ্ছে ফরজে কেফায়া। আর এই নামায ফরজে কেফায়া হওয়ার কারণে যদি সমাজে কিছু মানুষ সে নামাজ আদায় করে তাহলে সকল সমাজের মানুষ দায় মুক্ত হয়ে যাবে।
তবে এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে যদি কেউ এই নামাজ আদায় না করে তাহলে সমাজের সকল ব্যক্তিবর্গ পাপের ভাগীদার হয়ে যাবে। আর যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে অন্য কেউ নামাজ পড়লে গুনাহ হবে না।
হাদীস শরীফে এসেছে জানাজার নামাজে উহুদ পরিমাণ সওয়াব আদায় হয়। আর এই সুযোগ যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি পায় তাহলে এই সুযোগটি হাতছাড়া করা উচিৎ নয়। তাছাড়া একজন প্রতিবেশী হিসেবে অন্য আরেকজন প্রতিবেশী জানাজার নামাজ আদায় করা ওই মুসলমানের দায়িত্ব এবং কর্তব্য।
আরো দেখুনঃ সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম.
উপসংহারঃ আশা করছি আপনারা আমাদের এই আর্টিকেল থেকে জানাজার নামাজের দোয়া সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এবং সেইসাথে জানাজা নামাজের অন্যান্য বিষয় সমূহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন। আমাদের একজন মুসলিম ভাই বা বোন যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে তার জানাজায় আমাদের অংশগ্রহণ একজন মুসলমান হিসেবে দায়িত্ব এবং কর্তব্য। তবে আপনারা যদি জানাজার নামাজের দোয়া সম্পর্কে আরও বিস্তারিত অথবা আরো অন্যান্য বিষয় জানতে চান তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। জাযাকাল্লাহ।