কবর জিয়ারতের নিয়ম
কবর জিয়ারতের নিয়ম | কবর জিয়ারতের দোয়া
মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য একমাত্র নিজস্ব স্থান হচ্ছে কবর। যেখানে প্রত্যেক মুসলমানকেমৃত্যু হবার পর শায়িত করা হয়। আখিরাতের জীবনের সূচনা হয় কবর জীবন হতে। আর এই কবর জীবনে যখন নিজস্ব কেউ চলে যায় তখন তার কবর জিয়ারত করা হয়। কবর জিয়ারত করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কবরবাসীর জন্য দোয়া প্রার্থনা করা। তাই আমাদের সকলকে কবর জিয়ারতের নিয়ম জানতে হয়।
কারণ কবর জিয়ারত করার ফলে আমাদের হৃদয় বিনম্র হয় এবং মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়। তার পাশাপাশি আখিরাতের জীবন কেমন হবে তা সম্পর্কে আমরা সতর্ক হয়ে যায় এবং পাপ কাজ থেকে নিজেদেরকে মুক্ত রাখতে পারি। এর পাশাপাশি হালাল এবং সৎ কাজের প্রতি আমাদের আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তাছাড়া আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কবর জিয়ারত করা কি সুন্নত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
আরো দেখুনঃ সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম.
কিন্তু আমরা অনেকেই এই কবর জিয়ারত সম্পর্কে জানি না আর এর ফলে আমরা সুন্নত ইবাদাত হতে বঞ্চিত হই। তাই আজ আমরা আপনাদের জন্য এমন একটি আর্টিকেল নিয়ে এসেছি যেখানে আপনাদেরকে কবর জিয়ারতের নিয়ম সম্পর্কে জানানো হবে।
কবর জিয়ারত কি?
কবর জিয়ারত করা সুন্নত। কবরবাসীদের দোয়া প্রার্থনা এবং পরকাল কে স্মরণ করে নিজের আখিরাতের প্রতি উৎসাহ সৃষ্টি করাই হচ্ছে কবর জিয়ারত। ইসলামের সূচনার দিকে কবর জিয়ারত করার কোন অনুমতি ছিল না। তবে এখন আর তা নেই। এখন কবর জিয়ারত করা সুন্নত হয়ে গিয়েছে। কারণ কবর জিয়ারত করলে পরকাল অর্থাৎ আখিরাতের জীবনের কথা স্মরণ হয়ে যায়। তাছাড়া এক হাদীসে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“আমি তোমাদের কবর জিয়ারতের নিষেধ করেছিলাম কিন্তু এখন থেকে তোমরা কবর জিয়ারত করো। কারণ তা দুনিয়া বিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়”। ( সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ১৫৭১)।
কবর জিয়ারত কেন করা হয়?
এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে কবর জিয়ারত করা হয় কেন? শুধুমাত্র কি নিজের মৃত্যুর কথা বা নিজের আখিরাতের কথা স্মরণ করার জন্য? তা নয়, কবর জিয়ারত করার উদ্দেশ্য হচ্ছে দুটি। তার মধ্যে একটি হচ্ছে নিজের লাভ এবং অন্যটি হচ্ছে মৃত ব্যক্তির লাভ। আমরা পূর্বে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর একটি হাদিস আপনাদেরকে জানিয়ে যেখানে কবর জিয়ারত করার ফলে নিজের লাভের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এখান থেকে বুঝা যায় যে কবর জিয়ারত করলে নিজের লাভ হয়ে থাকে।
কিন্তু মৃত ব্যক্তির কি লাভ হয়? কবর জিয়ারত করার ফলে মৃত্যু ব্যক্তিকে উপকৃত করা হয়। মৃত ব্যক্তি বা মাইয়াতকে সালাম দিলে এবং তার জন্য কেবলামুখী হয়ে দোয়া করলে মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর পক্ষ হতে শান্তি বর্ষিত করেন এবং তার কবরের আজাব হবে। ইনশাআল্লাহ।
কবর জিয়ারতের সময়
কবর জিয়ারত করার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। তবে জুমার দিন যদি কোন ব্যক্তি কবর জিয়ারত করে তাহলে সেটি সুন্নত। কারণ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন যে, যে প্রতি তার বাবা যেকোনো একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে ও তিনি মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কারীদের মধ্যে গণ্য হবে। ( আল-মু’জামুল আউসাতঃ ৬১১৪)।
কবর জিয়ারতের নিয়ম
আপনারা যারা কবর জিয়ারত করতে জানেন না তাদের জন্য নিম্নে কবর জিয়ারতের নিয়ম দিয়ে দিচ্ছি-
- কবর জিয়ারত করার পূর্বে অবশ্যই আপনাদের পাক-পবিত্র এবং অজু করে যেতে হবে।
- প্রথমে কবরের পাশে গিয়ে দোয়া পড়তে হবে। আর সেই দোয়াটি হচ্ছে- “ আসসালামু আলাইকুম দারা ক্বাওমিম মুমিনিন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লা-হিকুন। (সহিহ মুসলিমঃ ২৪৯)”
- এরপর দুরুদ শরীফ পাঠ করতে হবে।
- দুরুদ শরীফ পাঠ করার পর সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সূরা ইখলাস এবং যে সকল সূরা আপনাদের কাছে সহজ মনে হয় সেগুলো মৃত ব্যক্তিররুহুল অপর সব পাঠিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পাঠ করতে হবে।
- কবর জিয়ারত করার সময় আপনারা যদি হাত না ধুলে মনে মনে দোয়া করেন তাহলে তা করতে পারেন।
সুতরাং আপনারা এভাবে কবর জিয়ারত করতে পারেন।
আরো দেখুনঃ জানাজার নামাজের দোয়া.
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে জানা যায় যে,, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নিম্নের এই দোয়া পড়তেন-
তাছাড়া আবু হুরায়রা (রা.) থেকে জানা যায় যে, একবার রাসুল (সা.) একটি কবর জিয়ারতে গিয়ে নিম্নের এই দোয়াটি পরেছেন –
কবর জিয়ারতের নিয়ম FAQ
১. আসসালামুয়ালাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর অর্থ কি?
আরবি ভাষায় “আসসালামুয়ালাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর” এর অর্থ হলো “আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক”। একজন কবরবাসী যেন তার কবরের আজাব থেকে রক্ষা পান এই জন্য এই দোয়া করা হয়ে থাকে।
২. মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়ম কি?
মহিলাদের জন্য তাদের আপনজনদের কবর জিয়ারত করা জায়েজ। পুরুষদের কবর যেমন সকল পুরুষরা জিয়ারত করতে পারবেন কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে তা নয়। নারীদের ক্ষেত্রে অবশ্যই তার মাহরাম অর্থাৎ যাদের সাথে বিবাহ বৈধ নয় তারাই জিয়ারত করতে পারবেন। যদিও কেউ জিয়ারত করতে চায় (শুধুমাত্র একজন কবরবাসী হিসেবে) একজন গায়রি মাহরাম তাহলে জীবিত অবস্থায় যেভাবে পর্দা করা হতো সেভাবে পর্দার খেয়াল রেখে জিয়ারত করতে পারবেন।
৩. ঘরে বসে কবর জিয়ারতের নিয়ম.
হ্যাঁ, ঘরে বসে আপনি কবর জিয়ারত করতে পারবেন। প্রথমে ‘আসসালামু আলাইকুম দারা ক্বাওমিম মুমিনিন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লা-হিকুন। (সহিহ মুসলিম : ২৪৯)। এরপর দরুদ শরিফ, সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সূরা ইখলাস ও অন্যান্য কিছু সূরা (যে সকল সূরায় বেশি ফজিলত রয়েছে সেগুলি পড়তে পারেন), এই সব সূরা পড়া শেষে দোয়া করে মৃত ব্যক্তির রুহের ওপর সওয়াব পাঠিয়ে দিন। এই দোয়া আপনি নামাজে এমনকি নামাজ ছাড়াও পড়তে পারেন।
৪. কবর জিয়ারতের জন্য কি অজুর প্রয়োজন আছে?
না, কবর জিয়ারতের জন্য অজুর প্রয়োজন নেই। কারণ অজু হচ্ছে এক প্রকার দোয়া, সালাত নয়। তাই কবর জিয়ারতের ক্ষেত্রে অজু শর্ত নয়। যেহেতু কবরস্থান একটি পবিত্র জায়গা তাই সেখানে অজু করে যাওয়া উত্তম।
উপসংহারঃ আপনারা যারা ইতিমধ্যে কবর জিয়ারতের নিয়ম জানতেন না তারা আশা করছি আমাদের এই ওয়েবসাইট থেকে জানতে পেরেছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। সকল মুসলিম ভাই ও বোনেরা যেন ইসলামের আখিরাতকে স্মরণ করে নিজেদেরকে পাপ মুক্ত রাখতে পারে এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া পড়তে পারে সেই তৌফিক দান করুক। তবে আপনারা যদি আমাদের পক্ষ হতে কবর জিয়ারত সম্পরকিত বা অন্যান্য ইসলামিক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। জাযাকাল্লাহ খাইরান।