জুম্মার নামাজের নিয়ত ২০২৪ | জুম্মার নামাজ কয় রাকাত
জুম্মার নামাজের নিয়ত ২০২৪ | Jumma Namaz Niyat 2024 | জুম্মার দিনের আমল ২০২৪
শুক্রবার জুম্মার দিন। এই দিন একজন মুসলিম যেখানেই থাকুক না কেন মসজিদে গিয়ে কাতারবদ্ধ হয়ে নামাজ পড়েন। মুসলিমদের কাছে শুক্রবার একটি বিশেষ দিন। প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করা ফরজ। বলা হয়ে থাকে যে শুক্রবার ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদ। এই দিন সাধারণ নিয়মে জোহরের নামাজের পরিবর্তে দুই রাকাত জুম্মার নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ।
যিনি সারা সপ্তাহ জুড়ে এক ওয়াক্ত নামাজ পড়েন না তিনিও চেষ্টা করেন জুম্মার দিন জুম্মার নামাজ আদায় করার জন্য। এর ফলে দেখা যায় জুম্মার নামাজের নিয়ত সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। জুম্মার নামাজের নিয়ত নামাজ শুরুর পড়ার আগে জানা জরুরি। আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব কিভাবে আপনি জুম্মার নামাজের নিয়ত করবেন।
আরো দেখুনঃ জুম্মা মোবারক স্ট্যাটাস.
জুম্মার দিন সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “শুক্রবার হল সর্বোত্তম দিন যেদিন সূর্য উদিত হয়েছে। এই দিনেই আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছিল, এই দিনে তাকে জান্নাতে বসানো হয়েছিল, এই দিনেই তাকে জান্নাত থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল এবং এই দিনেই বিচার দিবস আসবে- জুমার দিন। আত-তিরমিযী)।
জুম্মার নামাজ কত রাকাত ও কি কি?
জুমার নামাজ সর্বমোট ১০ রাকাত। এই দশ রাকাতের আট রাকাত সুন্নত নামাজ আর দুই রাকাত ফরজ। সর্বপ্রথম মুসল্লিরা জামাতের সাথে ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ে নেন তারপর ২ রাকাত ফরজ এবং সর্বশেষ ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ে ১০ রাকাত পূর্ণ করেন।
- দুই রাকাত ফরজ।
- চার রাকাত বাদাল জুমা।
- চার রাকাত কাবলাল জুমা।
জুম্মার নামাজের নিয়ত
জুম্মার নামাজ প্রতিটি মুসলিম উম্মাহর জন্য এক আল্লাহর রহমত কারণ এই দিন এমন এক সময় রয়েছে তখন যা কিছু আল্লাহর কাছে চাওয়া হয় তিনি সব কবুল করেন। সপ্তাহে একদিন পড়তে হয় বিধায় অনেকেই জুম্মার নামাজের নিয়ত সঠিকভাবে করতে জানেন না। সঠিকভাবে কিভাবে আপনি জুম্মার নামাজের নিয়ত করবেন সেটি নিয়ে তুলে ধরলাম।
জুম্মার দুই রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত
অর্থ: আমার উপর জোহরের ফরজ নামাজ আদায়ের যে দায়িত্ব রয়েছে, আমি কেবলামুখী হয়ে, জুম্মার দুই রাকায়াত ফরজ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে তা পালনের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।
চার রাকাত বাদাল জুমার নিয়ত
বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকাআতি ছালাতি বাদাল জুমুয়াতি, সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তয়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ ক্বাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আক্বার।
অর্থ: আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহ্র ওয়াস্তে চার রাকাত বাদাল জুমা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।
চার রাকাত কাবলাল জুমার নিয়ত
বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকাআতি ছালাতি কাব্লাল জুমুয়াতি, সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তয়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ ক্বাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আক্বার।
অর্থ: আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহ্র ওয়াস্তে চার রাকায়াত কাবলাল জুম্মার সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।
জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম ২০২৪
জুম্মার দিন ইসলামী শরিয়া আইন অনুযায়ী মোট ১০ রাকাত জুম্মার নামাজ পড়তে হয়। জুম্মার দিনে ২ রাকাত ফরজ নামাজ পড়তে হয়। এই দুই রাকাত ফরজ নামাজের আগে ৪ রাকাত ও পরে ৪ রাকাত মোট ৮ রাকাত সুন্নত পড়তে হয়। ইমাম নামাজগুলো পড়ানোর আগে মুসল্লিরা ২ রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ে নেন। যদিও এই দুই রাকাত সুন্নত নিয়ে আলেমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে কিন্তু ২ রাকাত ফরজ নিয়ে কোন মতপার্থক্য নেই।
২ রাকাত ফরজ নামাজের আগে ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ পড়াকে কাবলাল জুমা এবং পরে ৪ রাকাত সুন্নত নামাজকে বাদাল জুম্মা বলে।
উল্লেখ্য: জুম্মার নামাজ অবশ্যই জামাতের সাথে পড়তে হবে না হলে সেটি জুম্মার নামাজ হবে না।
জুমার নামাজের আদেশের প্রমাণ
সর্বশক্তিমান আল্লাহর বাণী (অর্থ): “হে ঈমানদারগণ! জুমার দিনে নামাযের জন্য ডাকা হলে আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা ছেড়ে দাও। সুতরাং এটা তোমাদের জন্য উত্তম হবে যদি তোমরা জানতে” (সূরা “সমাবেশ”, আয়াত 9)।
জুমার নামাজ পড়ার গুরুত্ব
জুম্মার নামাযের অনেক হিকমত ও উপকারিতা রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি হল মুসলমানরা এই দিনে একে অপরের সাথে মিলিত হতে পারেন। তারা আল্লাহর নির্দেশে জড়ো হন, যা তাদের ঐক্য এবং সম্প্রীতিকে শক্তিশালী করে। শুক্রবারের নামায, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আল্লাহর ইবাদত করা, একে অপরের প্রতি মুসলমানদের ভালবাসাকে শক্তিশালী করে, পরিচিতি বৃদ্ধি করে এবং মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহায়তাকে উৎসাহিত করে। এছাড়াও, এই বৈঠক তাদের আশেপাশের সমাজে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি সম্পর্কে জানার সুযোগ দেয়।
তাই, শরিয়া মুসলমানদের জুম্মার নামাজে যোগ দিতে উৎসাহিত করে এবং এর পরিত্যাগ বা অবহেলার বিরুদ্ধে সতর্ক করে। বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি তিন জুম্মার নামায বাদ দেয়, তা অবহেলা করে আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দেন”।
যাদের জন্য আবশ্যক নয় জুম্মার নামাজ পড়া-
- ইসলাম জুম্মার নামাজ একজন অমুসলিমের জন্য আবশ্যক করেনি এই অর্থে যে ইসলাম গ্রহণ ব্যতীত তার ইবাদত বৈধ হবে না।
- অল্প বয়স্ক বালক যার উপর এখনো নামাজ ফরজ হয়নি।
- যে ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ বা জ্ঞান বুদ্ধিহীন তার উপরও জুম্মার নামাজ আদায় আবশ্যক নয়।
- জুম্মার নামাজ শুধু পুরুষদের জন্য নারীদের জন্য জুম্মার নামাজ ফরজ নয়।
- শারীরিকভাবে এমন অসুস্থ ব্যক্তি যিনি অসুস্থতার কারণে মসজিদের যাওয়া বা থাকা কঠিন বলে মনে করেন তার উপর পড়া আবশ্যিক নয়।
- যদি কোন ব্যক্তি অসুস্থ ব্যক্তির দেখাশোনা করে এবং ঐ ব্যক্তি জুম্মার নামাজ আদায় করতে গেলে অসুস্থ ব্যক্তির তাকে প্রয়োজন হতে পারে তাহলে তারও জুম্মার নামাজ আদায় আবশ্যক নয়।
আরো দেখুনঃ
জুম্মার দিনের আমল
- জুম্মার নামাজের আগে গোসল করে নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
- হাদিসে বর্ণিত নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বোত্তম পোষাক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
- নামাজের আগে নখ এবং গোঁফ কাটা
- যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নামাজ পড়তে যাওয়া।
- বাড়ি থেকে হেঁটে হেঁটে মসজিদে পৌঁছানো কারণ হাদিসে বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি জুম্মার দিন নামাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয় তার প্রতি কদমে নেকি লেখা হয়।”
- সপ্তাহের সেরা একটি দিন হচ্ছে জুম্মার দিন
- ভালোভাবে মেসওয়াক করা নামাজের আগে।
- পারফিউম বা সুগন্ধি লাগানো।
- সূরা আল কাহাফ পড়া। সম্পূর্ণ সূরা না পড়লেও অন্তত সূরা কাহাফ এর প্রথম দশটি ও শেষ দশটি আয়াত পড়া। সম্পূর্ণ সূরা কাহফ পরা আরো উত্তম। রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা আল-কাহফ পাঠ করবে, সে দুই জুমার মাঝখানে আলোয় আলোকিত হবে।” (আল-হাকিম কর্তৃক বর্ণিত; আল-আলবানীর গ্রেড সহীহ)
- মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর উপর প্রচুর পরিমাণে দুরুদ ও দোয়া পড়া। আওস ইবনে আওস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন হল শুক্রবার। সেদিন আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল; যেদিন তিনি মারা যান; সেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে এবং সেদিন সমস্ত সৃষ্টি নিঃস্ব হয়ে যাবে। অতএব আমার উপর অনেক বেশি দরূদ পাঠাও, কেননা তোমার দোয়া আমার প্রতি প্রদর্শিত হবে।”
- আসর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ে প্রচুর দোয়া করা। “শুক্রবার একটি বিশেষ সময় রয়েছে, যে সময়ে সমস্ত প্রার্থনা আল্লাহ কবুল করেন এবং উত্তর দেন, সমস্ত মহিমা ও প্রশংসা তাঁরই।”
- মসজিদে প্রবেশের পর দুই রাকাত সালাত আদায় করা।
- খুতবার সময় কথা না বলা।
জুম্মার নামাজের ফজিলত
জুম্মার দিনের নামাজের অগণিত দোয়া ও ফজিলত রয়েছে। শুক্রবারে একটি বরকতময় সময় রয়েছে যে সময় একজন ব্যক্তি আল্লাহ সুবহানাতায়ালা কাছে বৈধ এবং ভালো যেকোনো কিছু চাইতে পারেন। শুক্রবারের এই সময়টি এতই বরকতময় যে আল্লাহ তায়ালা দোয়ার জবাব দেন যা হাদিস থেকে প্রমাণিত। বিভিন্ন হাদিস এ বিষারদের গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, এই সময়টি আসর থেকে মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়। “শাহিদ” শব্দটি দ্বারা শুক্রবারকে বোঝায় ।শুক্রবারের চেয়ে ফজিলতপূর্ণ কোন দিন নেই।
একজন মুসলমান যদি জুমার রাতে বা দিনে মারা যায় তাহলে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা তার কবরের আজাব মাফ করে দেন। তাই বৃহস্পতিবার থেকেই জুম্মাতুল মোবারকের প্রস্তুতি নিতে হবে।
ইমাম আহমাদ রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন যে, কিছু কিছু দিক থেকে জুমআর রাতের মর্যাদা লাইলাতুল কদরের চেয়েও বেশি। এর একটি কারণ এই যে, এই রাতেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মায়ের গর্ভে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আবির্ভাব দুনিয়া ও আখিরাতে এত কল্যাণ ও বরকতের কারণ ছিল যে তা গণনা করা যাবে না।
জুম্মার নামাজের নিয়ত -FAQ
১. জুম্মার নামাজ পড়ার কারণ কি?
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম একা প্রার্থনা করার চেয়ে একসাথে প্রার্থনার গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই নবীজি জুম্মার দিনের নামাজ আদায় করতে বলেছেন। কারণ এই দিনে নামাজ পড়া পুরো এক বছরের নামাজ ও রোজা রাখার সমান।
২. জুম্মা সম্পর্কে কোরআন কি বলে?
৩. জুম্মার দিনে কি গোসল করা জরুরী?
অধিকাংশ পন্ডিতের মতে শুক্রবারে গোসল করতে বলা হয়েছে জোরালোভাবে।
৪. জুম্মার নামাজ প্রথম কে শুরু করেন?
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মদিনার পরিধিতে অবস্থিত মসজিদ আল জুম্মা যেখানে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর পরই জুম্মার নামাজ আদায় করা হয় প্রথমবারের মতো। আর এই নামাজের ইমাম ছিলেন নবীজি নিজেই।
৫. মহিলারা জুম্মার নামাজ পড়তে পারবে?
হ্যাঁ, মহিলারাও জুম্মার নামাজে উপস্থিত হতে পারবেন কিন্তু এটি পড়া তাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
জুম্মার নামাজের নিয়ত (সমাপ্তি)
ইবনে মাজাহ থেকে বর্ণিত, “হে মুসলমান! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এই দিনটিকে (শুক্রবার) ঈদের দিন বানিয়েছেন। তাই এই দিনে গোসল করুন, যার কাছে সুগন্ধি আছে সে যেন তা লাগায় এবং মিসওয়াক (অর্গানিক টুথব্রাশ) ব্যবহার করে।”
ফজিলতপূর্ণ আমলপূর্ণ এই দিনে প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উচিত জুম্মার নামাজ আদায় করতে যাওয়া। আজ আমি জুম্মার নামাজের নিয়ত ও আমল বিস্তারিত শেয়ার করেছি। যারা আগে এই নামাজের ফজিলত সম্পর্কে জানতেন না তারা নিশ্চয়ই পরের জুম্মা থেকে ইনশাআল্লাহ জুম্মার নামাজ আদায় করবেন আশা করছি।