সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম | সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত
সালাতুল হাজত নামাজ কি? | সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও নিয়ত | সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম কি? বা সালাতুল হাজত নামাজ কিভাবে পড়তে হয়? আপনারা অনেকেই নামাজ এর নাম শুনেছেন কিন্তু জানেন না কিভাবে পড়তে হয়। তাই আজ আপনাদের জন্য সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম নিয়ে এসেছি। যাতে করে আপনারা আমাদের এখান থেকে সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম টি জানতে পড়ে নামাজ আদায় করতে পারেন।
আমাদের সকলের জীবনে কোনো না কোনো সমস্যা হয়। আর এই সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা একে অন্যের কাছে পরামর্শ নিয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের জীবনে এমন অনেক সমস্যা বা বিপদ রয়েছে যেখানে আমরা সেই বিপদের কথা কারো কাছে শেয়ার করতে পারিনা, তবে এই সকল বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনারা সালাতুল হাজত নামাজ পরতে পারেন এবং মহান আল্লাহতালার কাছে আপনাদের বিপদের কথা বলে সাহায্য চাইতে পারেন। তাহলে চলুন জেনে নেই সালাতুল হাজত নামাজ পড়তে হয় কিভাবে এবং এই নামাজের অন্যান্য বিষয় সমূহ।
সালাতুল হাজত নামাজ কি?
সালাতুল নামাজ হচ্ছে যখন কোন মানুষ বিপদের সম্মুখীন হওয়া এবং তার প্রয়োজন অনুসারে যে কোনো বৈধ প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে নফল নামাজ আদায় করা হয় তাকে সালাতুল হাজত বলে।
তাছাড়া যখন কোন বিপদে পৃথিবীর কোন মানুষ সাহায্য করতে পারে না বা আমাদের আশেপাশে যারা আছেন তারা সাহায্য করতে পারছেন না তখন একমাত্র মহান আল্লাহতালা রয়েছেন যেখান থেকে সাহায্য চাইলে অবশ্যই পাওয়া যায়। তিনি সকল বিপদ থেকে তাঁর বান্দাদের রক্ষা করেন। এবং এমন ভাবে বিপদ থেকে মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে হেফাজত করেন যা বান্দা নিজেও ভাবতে পারেনা।
আরো দেখুনঃ সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম.
এছাড়াও সালাতুল হাজত নামাজের দিকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহতালা বলেছেন যে, “হে ঈমানদারগণ, তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” ( সূরা বাকারাঃ আয়াত- ১৫৩)।
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত
আমরা সকলেই জানি যে নিয়েছে ইচ্ছা পোষণ করা। অর্থাৎ যেকোন জিনিস করার উদ্দেশ্যে আমরা যখন ইচ্ছা পোষণ করি সেটি হচ্ছে নিয়ত। ঠিক তেমনি আমরা যখন নামাজ পড়ার পূর্বে সে নামাজ আদায় করব সে নামাজের জন্য ইচ্ছা পোষণ করা হচ্ছে সেই নামাজের নিয়ত। তবে আপনারা চাইলে উচ্চারণ করে অথবা মনে মনে নামাজের নিয়ত করতে পারেন।
উচ্চারণ করে যে নামাজের নিয়ত করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আপনারা চাইলে আরবিতে উচ্চারণ করে নামাজের নিয়ত করতে পারেন অথবা নিজ ভাষায় উচ্চারণ করে নামাজের নিয়ত করতে পারেন।
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম
সালাতুল হাজত নামাজ সম্পর্কে জানার পর আপনাদের মনে এখন প্রশ্ন আসবে যে সালাতুল হাজত নামাজ কিভাবে পড়তে হবে? আমরা আপনাদেরকে যে নিয়মটি বলে দিব সে নিয়মে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সালাতুল হাজত নামাজ পড়তেন।
সালাতুল হাজত নামাজ আদায় করার জন্য কোন নির্ধারিত সময় বা দিন বা নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। হাদীসে এসেছে- মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন যে, “ যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে প্রয়োজন দেখা দেয় তখন সে যেন উত্তমরূপে অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করেন এবং রাসুল (সাঃ) এর উপর দরুদ পাঠ করেন”। ( তিরমিজি)।
সুতরাং সালাতুল হাজত নামাজের কোন নির্দিষ্ট নিয়ম। আমরা যেভাবে দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করি ঠিক সেভাবে সালাতুল হাজতের দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে হবে।
- প্রথমে আমাদের অজু করে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াতে হবে।
- এরপর মহান আল্লাহতালার সাহায্য পাওয়ার উদ্দেশ্যে সালাতুল হাজত নামাজের 2 রাকাত নফল নামাজ নিয়ত করতে হবে।
- ছানা দোয়া, সূরা ফাতিহা এবং এর সাথে যে কোন একটি সূরা মিলিয়ে সাধারণ নামাজের রুকু এবং সেজদা দিতে হবে। এভাবে দ্বিতীয় রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে এবং তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ এবং মাসুরা পাঠ করে সালাম ফিরিয়ে মোনাজাত ধরতে হবে।
সুতরাং আপনারা এভাবে সালাতুল হাজত নামাজ পড়তে পারবেন। তবে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে সালাতুল হাজত নামাজ পড়ার সময় কোন বিশেষ সূরা রয়েছে কিনা। সালাতুল হাজত নামাজের বিশেষ কোনো সুরাহা নেই আপনারা যেভাবে নফল নামাজ আদায় করেন ঠিক সেভাবে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে হবে। তবে নিয়ত করার সময় অবশ্যই সালাতুল হাজত নামাজ উল্লেখ রাখতে হবে।
আরো দেখুনঃ তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম.
সালাতুল হাজত নামাজের সময়
সালাতুল হাজত নামাজের নিদৃষ্ট কোন সময় নেই তা আমরা পূর্বে জেনেছি। কিন্তু তবুও আপনাদের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে অন্যান্য কিছু নামাজের নির্দিষ্ট কোন সময় বাধ্য করা দিয়ে আছে কিন্তু সালাতুল হাজত নামাজের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই?
সালাতুল হাজত নামাজ হচ্ছে নফল নামাজ। আর এই নামাজ পড়া হয় শুধুমাত্র মহান আল্লাহতালার কাছে সাহায্য এবং পানাহ চাওয়ার জন্য। পৃথিবীতে প্রত্যেক ব্যক্তির কোন না কোন সমস্যা হয়ে থাকে। আর এই সমস্যা থেকে নিজেদেরকে উত্তোলন করার জন্য বান্দারা মহান আল্লাহতায়ালার নিকট সাহায্য চেয়ে থাকেন এই সালাতুল হাজত নামাজের মাধ্যমে।
সুতরাং আপনারা যারা সালাতুল হাজত নামাজ আদায় করতে চান তারা দিনের যেকোনো সময় সালাতুল হাজত নামাজ আদায় করতে পারবেন। তবে অবশ্যই আপনাদের মনে রাখতে হবে সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত এবং দ্বিপ্রহর সময়ে নামাজ পড়া যায় না। এই সময়গুলোতে নামাজ পড়লে নামাজ মাকরুহ হয়ে যায়। তাই এই সময়গুলো ব্যতীত অন্যান্য যেগুলো রয়েছে সেই সময়ের যেকোনো সময় আপনারা সালাতুল হাজত নামাজ পড়তে পারবেন।
সালাতুল হাজত নামাজের দোয়া
আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি যে সালাতুল হাজত নামাজ কেন পড়া হয় এবং এই নামাজের জন্য দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে হয় সেই সাথে দুরুদ পাঠ করতে হয়। কিন্তু আমরা এখনও স্পষ্ট হয়নি যে সালাতুল হাজত নামাজের কোন দরুদ পাঠ করা হয়। সালাতুল হাজত নামাজের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওপর দরুদ পাঠ করা উত্তম।
সালাতুল হাজত নামাজের দোয়া হচ্ছে-
ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﺤَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﻜَﺮِﻳﻢُ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢِ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻣُﻮﺎﺕِ ﺭَﺣْﻤَﺘِﻚَ ﻭَﻋَﺰَﺍﺋِﻢَ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺗِﻚَ ﻭَﺍﻟْﻐَﻨِﻴﻤَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺑِﺮّ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼَﻣَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺇِﺛْﻢٍ ﻻَ ﺗَﺪَﻉْ ﻟِﻲ ﺫَﻧْﺒًﺎ ﺇِﻻَّ ﻏَﻔَﺮْﺗَﻪُﺟِﺒَ ﻭَﻻَ ﻫَﻤًّﺎ ﺇِﻻَّ ﻓَﺮَّﺟْﺘَﻪُ ﻭَﻻَ ﺣَﺎﺟَﺔً ﻫِﻲَ ﻟَﻚَ ﺭِﺿًﺎ ﺇِﻻَّ ﻗَﻀَﻴْﺘَﻬَﺎ ﻳَﺎ ﺃَﺭْﺣَﻢَ ﺍﻟﺮَّﺍﺣِﻤِﻴﻦَ
সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত
সালাতুল হাজত নামাজের কথা জানার পর আপনাদের অবশ্যই জানতে ইচ্ছে করবে যে সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত কি। তাই আমরা আপনাদের জন্য সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত নিয়ে এসেছি। আপনারাই ফজিলত থেকে সালাতুল হাজত নামাজের গুরুত্ব সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারবেন। রাসুল (সাঃ)- তার জীবনে যে কোন সমস্যা বা প্রয়োজনে মহান আল্লাহ তাআলার নিকট নিজেই নামাজ পড়ে দোয়া করতেন এবং তার সাহাবায়ে গ্রামকে এ নামায পড়ার নির্দেশ দিতেন।
হাদীসে এ নামাযের অনেক গুরুত্ব পাওয়া গিয়েছে। হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন যে, “ রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সামনে যখন গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রয়োজন বা বিষয়ে চলে আসতো তখন তিনি সাথে সাথে নামাজে দাড়িয়ে যেতেন”। ( আবু দাউদ)।
সুতরাং মুমিনগণ রা যখন শারীরিক অথবা মানসিক অথবা পারিবারিক বা সামাজিক ভাবে যেকোন বিপদে পড়লে তখন যদি ধৈর্য সহকারে মহান আল্লাহতালার কাছে দোয়া করেন এবং তার কাছে সাহায্য চান তাহলে সকল বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে সালাতুল হাজত নামাজ পড়ার মধ্য দিয়ে যে কোন বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং এই নামাজের দরুদ পাঠ করার কোনো বিকল্প নেই।
উপসংহারঃ আশা করছি আপনারা আমাদের এই আর্টিকেল থেকে সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম জানতে পেরেছেন। এবং সেই সাথে আপনারা সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম সম্পর্কে যারা জানেন না তারা জানতে পেরেছেন। মহান আল্লাহতালা মুসলিম উম্মাহকে সকল কঠিন বিপদ থেকে এই সালাতুল হাজত নামাজ এবং দুরুদের মধ্য দিয়ে সকলকে সাহায্য করার তৌফিক দান করুক। আপনারা যদি সালাতুল হাজত এবং ইসলামিক অন্যান্য ইবাদত সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। জাযাকাল্লাহ।